The villain lover

The villain lover ।। পার্ট : ০৬

আমি যতো চাইছি নিজেকে সামলাতে ততো ওর কাছে যেতে বাদ্ধ্য হচ্ছি। ছোয়া সেভাবেই চেষ্টা করছে কুচি ঠিক করার।
– হঠাৎ রুদ্র কাশি দিয়ে উঠলো রুদ্রের কাশির আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই ছোয়া দেখলো সামনে রুদ্র দাড়িয়ে আছে, ছোয়া তাড়াহুড়া করে নিজেকে সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো, ছোয়া কোনো রকম শাড়িটা চেপে ধরলো নিজের সাথে।

– আ- আপনি?

-হুম আমি,আমার রুম তাই আমি। আর বউটাও তো আমার তাইনা?

– প্লিজ আপনি রুম থেকে বেড় হয়ে যান!

– কেনো???

-আমি শারিটা পড়বো তাই।

– আমিকি তোমাকে ধরে রেখেছি?

শারিটা পরে ফেললেই তো হয়,

– প্লিজ আপনি বেড় হয়ে যান!আমি আপনার সামনে বদলাতে পাড়বো না

-আচ্ছা তুমি শারি পরো আমি বাহিরে যাচ্ছি,

রুদ্র রুমের বাহিরে দাড়িয়ে আছে, ছোয়া শাড়ি পরা শেষ করে রুদ্রকে ডাক দিলো।

– আমার শেষ হয়ে গিয়েছে আপনি আসতে পারেন।

– রুদ্র রুমেই ঢুকেই দেখলো ছোঁয়ার শাড়ি পরা শেষ, হালকা সবুজ কালারের শাড়ি পরেছে ছোয়া।

রুদ্রের ইচ্ছা করছে যেয়ে ছোয়াকে ছুয়ে দিতে কিন্তু সে জানে ছোয়া তাতে রেগে যাবে, তাই নিজেকে সামলে নিলো রুদ্র।

– ছোয়া,

– বলুন??

– আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে!

– কিসের??

-আমাদের দুজনের বিয়ের,সবাইকে জানাতে হবে যে তুমি আমার বউ।

– এসবের কোনো দরকার নেই,

– কেনো???

– কেনোনা,আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানিই না।

– কিন্তু আমি তোমাকে বউ হিসেবে মেনে নিয়েছি আর ভালো ও বাসি।

– চুপ করুন।কিসের ভালোবাসা,খুনি ধোঁকাবাজ আপনার মুখে ভালোবাসার কথা আমি শুনতে চাইনা।

রুদ্র ছোয়াকে আচমকা চেপে ধরে,

– আমাকে তোমার মানতে হবে, আর একবারা আমাকে অস্বীকার করার চেষ্টা করোনা। কারন রুদ্র তোমাকে কোনো এই বুক থেকে আলাদা করবে না।

ছোয়া করুন চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।

– সন্ধ্যায় পার্লার থেকে মেয়েরা আসবে তোমাকে সাজাতে,চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো সেজে থাকবে,

আর হ্যা আজ ভালো মেয়ের মতো থাকলে কাল সকালে দোহাকে দেখতে পাবে,বলেই ছোয়া বিছানায় ফেলে রুদ্র হন,হন করে বেড়িয়ে গেলো।

ছোয়া শুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, নিজেএ অজান্তেই চোখ দিয়ে পড়লো দু- ফোটা অশ্রু।

এই কি সেই হাসিখুসি রুদ্র যাকে,যার জন্য একদিন ছোয়া তার অন্তরে আলাদা কিছু অনুভাব করে ছিলো?( নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করে ছোয়া)

 

অতীত,,,

– সবাই বাস থেকে নামলো হালকা নাস্তা করার জন্য,অনেকটা পথ সবাই ক্লান্ত।

– ওয়াও যায়গাটা কতো সুন্দর( ছোয়া)

– তোমার ভালোলাগে( রুদ্র)

– হুম অনেক ভালোলাগে, ইস সারাজীবন যদি এমন যায়গায় থাকতে পাড়তাম।

– একটা কাজ করো এখানকার কোনো ছেলেকে বিয়ে করে এখানেই থেকে যাও, হাহাহা( রুদ্র)

বিয়ের কথা শুনে ছোয়ার মুখ মলিন হয়ে গেলো, কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো, ছোয়া।

– আমি কখনো বিয়ে করবোনা ভাইয়া!

– কেনো, সবাই এমন বলে। বাট একদিন না একদিন তো করতেই হয়।

– সবার জীবন আর আমার জীবন এক না ভাইয়া, আমার জীবনটা স্রোতের তালে ভাসমান, চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনা।( আনমনে কথাগুলো বলে ছোয়া)

পরোক্ষনেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় ছোয়া, স্বাভাবিক হয়ে বলে।

ভাইয়া বাদ দিন তো, আসলে বিয়ে হলে আম্মু আর দোহাকে ছেড়ে থাকতে হবে,আমিতো পারবোনা থাকতে তাই আর কি।

( এটা হচ্ছে মেয়েদের বিশেষ একটা গুন, সবার কথা জানিনা তবে আমি এমন করি, মনের কষ্টগুলো কাওকে বুঝতে দিতে চাইনা। যদিওবা কখনো ভুলে প্রকাশ করি, আবার স্বাভাবিক হয়ে যাই)

– রুদ্র বেশ ভালোই বুঝতে পাড়ছে যে তার জন্য ছোয়ার মনে কতোটা ক্ষোভ জমে আছে, আছে কতোটা ঘৃনা।

তবুও সে ছোয়াকে চায়,ছোয়ার ভালোবাসা চায়।

কারন ছোয়াকে দেখার পর সে ফিরে পেয়েছে বেচে থাকার মানে,

মনে, মনে এসব ভাবছে আর পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আছে ছোয়ার দিকে,,

– ভাইয়া,এই যে ভাইয়া কি হলো?

ছোয়ার ডাকে ঘোর কাটলো রুদ্রর।

– হ্যা না কিছুনা,তুমি তোমার মা আর বোনকে অনেক ভালোবাসো বুঝতে পেরেছি,

আচ্ছা ছোয়া এমন কেও যদি তোমার জীবনে আসে যে,তোমার বিয়ে করবে আর তোমার মা, বোনের থেকেও তোমাকে আলাদা করবে না?

– ইউ মিন ঘর জামাই, হাহা ভালোই হবে তাইলে( দুষ্টুমি করে)

ছোয়ার দুষ্টুমি ভঙ্গীতে কথা বলা দেখে রুদ্র মুচকি হাসলো।

ভাইয়া তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন, ছোয়া বেস ঝাল দিয়ে শিঙারা খেয়ে যাচ্ছে,

রুদ্র খাওয়ার জন্য শিঙারা হাতে নিতেই।

– আরে কি করছেন ভাইয়া?

– কেনো কি করলাম?

– এটাতে খুব ঝাল আর আপনি তো ঝাল খেতে পাড়েন না।

– তুমি কি করে জানলে,(অবাক হয়ে রুদ্র)

– আপনি দেখি খুব ভুলো মন,ওইদিন কফি সোপে কি হয়েছিলো( ঠোট বাঁকিয়ে)

– ওহ হ্যা,,

– এই মামা এখানে ঝাল ছাড়া শিঙারা দিন।

রুদ্র অবাক হয়ে আছে,কতো কিছু নোটিশ করে মেয়েটা। অচেনা মানুষের জন্য এতো কেয়ার তবে অচেনাদের জন্য কতো হবে, আচ্ছা ও যখন আমার আসল পরিচয় জানবে তখন কি এমনি থাকবে নাকি।

 

বর্তমান,,

সারাদিন রুদ্র বাড়ি ফেরেনি বাড়িতে অনেক লোকজন,বাড়ি সাজাচ্ছে। আর দুটো মেয়ে সার্ভেন্ট বার,বার এসে ছোয়াকে খাওয়ার জন্য ডাকছে,

-ম্যাম প্লিজ খেয়ে নিন, আপনি না খেয়ে আছেন শুনলে আমাদের চাকরি থাকবে না।

ছোয়ার একটু মায়া হলো,আর খুধাও ছিলো পেটে তাই ছোয়া খেয়ে নিলো।

 

বিকেলে পার্লার থেকে লোক আসলো ছোয়াকে সাজাতে, ছোয়া একপ্রকার বাদ্ধ্য হয়েই সাজতে বসেছে কারন রুদ্র বলেছে আজ ভালো হয়ে থাকলে কাল দোহাকে দেখতে দেবে,

আর কতো নিচে নামবে রুদ্র, নিজের কাজের জন্য মাসুম একটা বাচ্চাকে ব্যাবহার করছে, এসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছোয়া।

পার্লারের মেয়েরা ছোয়াকে সাজিয়ে যাচ্ছে, পুতুলের মতো বসে ছোয়া সেজে যাচ্ছে। কারন তার যে কিছুই করার নেই,আজ সে নিজের জন্য বাচছে না, বাচছে বোন আর মা কে বাচাতে।

– ম্যাম আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে, স্যার এর চয়েজ আছে।

না চাইতেও আয়নায় চোখ বুলালো ছোয়া, কিন্তু অনুভূতিহীন সে চাওয়া,এ বউ সাজ সে চায়নি। চায়নি রুদ্রের মতো কাওকে,আজ নিজের বাবার খুনির জন্য সাজতে হচ্ছে কথা মনে করতেই যেন হাত,পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ছোয়ার।

আপনারা সবাই বাহিরে যেতে পারেন,

দরজার সামনে থেকে কারো এমন কথা শুনে সবাই তাকালো দরজার দিকে,

দাড়িয়ে আছে রুদ্র,অবশ্য তাকেও কোনো দিক দিয়ে কম লাগছে না।

হোয়াইট শার্ট, ব্লু ব্লেজার আর হাতে ব্রেন্ডের ঘড়ি, চুলে হালকা জেল।

দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে রুদ্র।

রুদ্রের কথা মতো সবাই বাহিরে চলে গেলো,

তখনো মাটির পুতুলের মতো বসে আছে ছোয়া,আর চোখে জমে আছে বিন্ধু জল।

রুদ্র ছোয়ার কাছে যেয়েই ছোয়াকে দাড় করিয়ে দেখতে লাগলো,

ছোয়া নীল কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে, ঠোটে গারো লাল লিপস্টিক হাত ভর্তি চুড়ি আর বউ সাজ। যেমনটা তাকে রুদ্র দেখতে চেয়েছিলো।

রুদ্র অপলক দেখে যাচ্ছে ছোয়াকে, আর ছোয়া নিজের দিকে তাকিয়ে আছে,

রুদ্র ছোয়ার পেছনে যেয়ে মাথার গোমটা ফেলে দিলো, ঘাড়ের থেকে আলতো করে চুল সরিয়ে, রুদ্রের আনা একটা ডায়মন্ড এর হার ছোয়াকে পড়িয়ে দিলো,

রুদ্রের আবারো নেশা, নেশা লাগছে ছোয়ার এতো কাছে আসলে যেন তার নেশা ধরে যায়।

রুদ্র ছোয়ার ঘাড়ে আলতো করে একটা চুমু দিলো।

তারপর ছোয়ার সামনে এসে ছোয়ার মুখ হাত দিয়ে উচু করে বললো,

– তুমি শুধু আমার,আর আমারই থাকবে আজীবন।

ছোয়ার চোখে বিন্দু, বিন্দু জল।

রুদ্র ছোয়ার মাথায় আবার সুন্দর করে ওড়না দিয়ে দিলো,আর ছোয়ার হাত ধরে বললো চলো,

রুদ্র ছোয়াকে নিয়ে যাচ্ছে আর বাদ্ধ্য মেয়ের মতো ছোয়াও যাচ্ছে, আজ কোনো বাধা দিচ্ছে না,রাগ ও করছে না,কারন সে যেই রুদ্রকে চেনে সে অনেক কতোটা ভয়ানক তা ছোয়ার ভালো করে জানা আছে।

 

ছোয়াকে নিয়ে রুদ্র বলতে লাগলো,

– আজকের সন্ধ্যাটা আমার জন্য খুব সুন্দর, কারন আজ আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে সবার সাথে পরিচয় করিতে দিতে চাই,আর সে হলো আমার দেখা সেরা সুন্দরি, আমার বউ। মেহেক ছোয়া খান।

যাকে ঘিরে আমার সব স্বপ্ন।

ছোয়া দাড়িয়ে কারন আজ তার জীবনের সাথে বদলে গিয়েছি তার পদবী।

সবাই ছোয়ার সাথে পরিচিত হচ্ছে,আর রুদ্রও ও হেসে পরিচয় করাচ্ছে সবার সাথে,

রুদ্রকে তার কিছু বন্ধু ডেকে নিয়ে গেলো,

– জান আমি একটু আসছি, বলেই চলে গেলো রুদ্র।

ছোয়া দাড়িয়ে আছে,

– একটা ছেলে ছোয়াকে বলতে লাগলো, হাই ভাবি আমি রুদ্রের বন্ধু অনিক, ভাবি পুরোটা সময় আপনাকে লক্ষ করছিলাম আপনি খুব মনমরা হয়ে আছে কোনো সমস্যা?

– না ভাইয়া তেমন কিছু না।

– আসলে ভাবি আমার একটা ছোট বোন আছে আপনার মতোই বয়স,এক বছর হলো বিয়ে হয়েছে প্রায় হাসবেন্ড এর সাথে অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে রাখে,আমি জানি।

ভাবি সংসার জীবনে এমন হবেই তা বলে মন খারাপ করে রাখবেন না,আপনি আমার বোনের মতো ভাই হয়ে জাস্ট সাজেস্ট করলাম।

অনিকের কথা শুনে ছোয়া মুচকি হাসিলো, কারন ছোয়ার কোনো ভাই নেই,আজ তার ভাই থাকলে হয়তো তাকে এভাবেই বোঝাতো।

-ভালো থাকবেন ভাবি,আমাকে ডাকছে আসছি আমি। বলেই অনিক চলে গেলো,

আর এসব দাঁড়িয়ে,দাঁড়িয়ে দেখছিলো রুদ্র, ছোয়া কারো সাথে হেসে কথা বলছে এটা দেখতেও রুদের মাথায় যেন আগুন ধরে গেলো।

রুদ্র রাগে টগবগ করছে, অন্যবন্ধুদের সাথে যেয়ে অনবরত ড্রিংক করেই যাচ্ছে রুদ্র।

অনেক ড্রিংক করে চেঁচিয়ে বললো রুদ্র, the party is over, সবাই যেতে পাড়েন।

রুদ্রের কথা শুনে কিছুক্ষনের মাঝেই চলে গেলো সবাই।

ছোয়া আর রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে,

রুদ্র যেয়ে ছোয়ার হাত ধরলো,

– আমার সাথে ছাড়া সবার সাথে বেশ হেসে কথা বলা তাইনা? চলো

 

বলেই ছোয়াকে টানতে, টানতে রুমে নিয়ে যাচ্ছে রুদ্র।

চলবে,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *