The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 56
আরাবী সরে এলো আর্ভিন থেকে।ঠোঁট জোড়া হাত দিয়ে জোর করে মুছে নিয়ে বলল ছিহ ডিসগাস্টিং আপনি। তারপর ঠোঁট মুছতে মুছতে রুমে চলে যায় আরাবী।কাপড় চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।আর্ভিন আরাবীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।ঠোঁটে হাত দিতে নিয়ে ও দিলোনা।যদি তার স্পর্শটা হারিয়ে যায়।
রুহী কফি বানানোর মাঝেই উপর থেকে রোয়েনের চিৎকার শুনতে পায়।রোয়েন চিৎকার করে রুহীকে ডাকছে।রুহী চুলা বন্ধ করে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে রুমে এলো।
রোয়েন কাঁপছে।রুহী স্বামীর কাছে এসে দাঁড়ালো।রোয়েন কিছু বলতে পারছেনা।চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে।
এদিকে রোয়েনের চিৎকারে ইয়ারাবী ও রুমে চলে এসেছে।
রুহী রোয়েনের কাঁধে হাত রাখলো।তারপর ঝাঁকিয়ে বলল,
-কি হলো তোমার? এভাবে চিৎকার করছো কেন রোয়েন।
-রুহী হাসপাতালে যেতে হবে আমাদের।কাঁপা গলায় বলল রোয়েন।
-হাসপাতাল কেন?জিজ্ঞাস করে রুহী।
-আরাভ!!!!
-আরাভের কি হয়েছে? রোয়েন কিছু বলো প্লিজ ভয় লাগছে আমার।
-ইয়ারাবী জেঠু আর খালার পাশে এসে দাঁড়ালো।রোয়েন ভাতিজিকে দেখে কেঁদে দিয়ে বলল ট্রাকের সাথে আরাভের গাড়ি এ্যাক্সিডেন্ট করেছে।
রুহী নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
-কি বলছো এসব রোয়েন?আমার ছেলে কই?কেঁদে দিলো রুহী।
ইয়ারাবী সেই পরিস্থিতিতে ও নেই।মাথা কাজ করছে না ওর।তারপর কোনমতে কান্না সংবরন করে জিজ্ঞাস করলো ও,
-জেঠু ওনি ঠ ঠ ঠিক আ আ আছে ত ত তো?
-ওকে ল্যাবেইডে এডমিট করা হয়েছে।
কথাটা শুনে রুহী চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।ইয়ারাবী কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।ওর জীবনটা কি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো।ভাগ্য ওর সাথে এ কি খেলা খেলছে।কাঁদতে ও পারছেনা ইয়ারাবী।আরাভের মুখটা বারবার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে।নিজেকে আর আটকাতে পারলো না ইয়ারাবী কোনমতে দৌড়ে রুমে চলে এলো।বাথরুমে গিয়ে মুখে বারবার পানির ঝাঁপটা দিতে লাগলো।আরাভের শেষ বায় বলাটা বার বার কানে বাজছে।ওয়াশরুমের দেয়ালে পিঠ ঠেঁকে গেলো ইয়ারাবীর। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো ও।
আরাভ কই আপনি?কেন এমন করছেন?প্লিজ ফিরে আসুন না।
রোয়েন হাসপাতালে এসেছে রুহী আর ইয়ারাবীকে নিয়ে।রুহী আর ইয়ারাবী অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।রোয়েন রিসিপশন থেকে জেনে নিলো আরাভ কে কয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।রোয়েন রুহী আর ইয়ারাবীকে নিয়ে ওটির সামনে এসে দাঁড়ালো।আরাভের ওটির দরজার সামনে একদলা রক্ত মাখা।কিছু ক্লিনার ছেলেরা পরিষ্কার করতে করতে সামনে এগুচ্ছে।রক্ত দেখে রুহীর কান্না গতিবেগ বেড়ে গেলো।ইয়ারাবী কাঁদছে খুব কাঁদছে।ক্লিনার রক্ত গুলো পরিষ্কার করে চলে গেলো।কিছুসময় পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো।রোয়েনের সামনে এসে দাঁড়ালো ডাক্তার,
-ওনার শরীর থেকে প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।আর্জেন্ট রক্ত লাগবে আমাদের।
-আ আমার ছেলের কি অবস্থা ডাক্তার?জিজ্ঞাস করে রোয়েন।
-এখনো কিছু বলতে পারছিনা।অবস্থা সিরিয়াস প্লিজ যা করার জলদি করুন।তিনজন ডোনারের ব্যাবস্থা করুন প্লিজ।সময় বেশি নাই।
কথা গুলো বলে ডাক্তার ভিতরে চলে গেলো।ঠিক তখনই আরাবী দৌড়ে এলো।কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে মেয়েটা।আর্ভিন ও পিছন থেকে দৌড়ে এলো।রেহান রুপন্তী আজহার পরিবার ও এলো।রক্তের কথা বলতেই আরাবী বলল,
-বাবাই আমি রক্ত দিবো আমার ভাইকে।
নার্স এসে আরাবীকে নিয়ে গেলো।বাকি দুজন ডোনার হলো রোয়েন আর রেহান।ইয়ারাবী কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়েছে।রুপন্তী মেয়েকে দেখছে।নিজের ও ভীষন কষ্ট হচ্ছে।সব রাগ অভিমান ঝেড়ে রেহান রুপন্তী এসে মেয়েকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলো।বাবা মার স্পর্শে ইয়ারাবী কাঁদতে থাকে।একসময় ঐভাবেই বাবা মার বাহুডোরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ইয়ারাবী।রুপন্তী আর অর্পন ইয়ারাবী কে চটজলদি অারেকজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো দুজন নার্সের সাহায্যে।ইয়ারাবী ডাক্তারের সামনে শুয়ে আছে।ওর পুরো চেহারা ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।ডাক্তার বলল,
-আপনার প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশনস। বেবি টা কে এবর্শন করিয়ে নিন।
-আমি জানি এসব। আমি করাবো কিন্তু আমার হাসবেন্ড আগে সুস্থ হোক।এরপর ওনার সাথে কথা বলেই এবর্শন করাবো।
-আপনার ফেমিলির সাথে আমার কথা বলতে হবে।বলে উঠেন ডাক্তার।
-না প্লিজ।সবাই কান্না কাটি করছে।এসময় তাদের আরো বেশি টেনশন দিতে চাইনা আমি।আপনি ও কাউকে বলবেননা প্লিজ।
-ওকে বলবো না।কিন্তু যা করার ইমেডিয়েটলি করতে হবে।
ইয়ারাবী মাথা ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে আসে।রুপন্তী ডাক্তার থেকে মেয়ের খবর জানতে চাইলে ওনি জানান ইয়ারাবী ঠিক আছে।অনেকসময় পর্যন্ত না খাওয়ার কারনে ক্লান্ত হয়ে গেছে।রুপন্তী ইয়ারাবীকে নিয়ে ওটির সামনে চলে আসে।রুহী গুমরে গুমরে কাঁদছে।আরাবী রক্ত দিয়ে এসেছে রেহান গেছে এখন।রোয়েনকে সিরিয়ালে রেখে গেছে নার্স।আর্ভিন ও খুব কষ্ট পেলে ও নিজেকে নানান কাজে ব্যাস্ত রেখেছে।ইয়ারাবী কাঁচের গ্লাসে আরাভকে আবছা দেখতে পেলো। ওর অপরেশন চলছে।ইয়ারাবী জ্বলজ্বল স্বামীকে দেখেছে।রুপন্তী মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ায়।
-কিছু খাবি মা?
-না মাম্মা প্লিজ কিছু খেতে বলোনা।কান্না জড়িত গলায় বলল ইয়ারাবী।
-তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি।
-সমস্যা নেই।ওনি উঠলেই খাবো।
রুপন্তী কিছু না বলে মেয়ের মাথায় হাত বুলালো।ঘন্টাখানিক পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো।রোয়েন ওনার কাছে এলো দ্রুত।ডাক্তার হালকা হেসে বলল,
-আপনাদের পেশেন্ট আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিলো।রক্ত বন্ধ করাতে পারছিলাম না।
-আমার ছেলের সাথে দেখা করতে পারবোনা?
-একজন যান।তবে বেশি কথা বলাবেননা।
রোয়েন মাথা ঝাঁকিয়ে সবার কাছে এলো।তারপর বলল,
-রুহী আরাভের সাথে যেয়ে দেখা করে আসো।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
রুহী দ্রুত উঠে ছেলের কাছে এলো।আরাভের শরীর চাদরে ঢাকা।মুখের চারপাশে ও ব্যান্ডেজ করা।রুহীর আরাভের পাশে দাঁড়ায়।আরাভ একটু তাকায়।রুহী ছেলেকে ধরতে পারছেনা।কই ধরবে?ব্যান্ডেজ করা।
-আব্বু এখন কেমন লাগছে তোর?
-মাথা একটু নাড়ায় আরাভ।
-থাক আব্বু কথা বলিস না।
রুহীর ছেলের পাশে কিছু সময় কাঁটিয়ে বেরিয়ে এলো।এদিকে ইয়ারাবী হাঁসফাঁস করছে।আরাভকে একটা নজর দেখতে ওর চোখ জোড়া অস্থির হয়ে আছে।রুহী নার্সের সাথে কথা বলে ইয়ারাবীর কাছে এগিয়ে এলো।
-যা একবার দেখা করে আয় আমার ছেলেটার সাথে।
ইয়ারাবী মাথা ঝাঁকিয়ে আরাভের কাছে এসে দাঁড়ায়।আরাভ ইয়ারাবীর দিকে তাকায়।ইয়ারাবীর চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।কোন বাঁধা মানছেনা।আরাভ চোখ বুজে নিলো।ইয়ারাবী আলতো করে আডাভের চোখের ওপর হাত বুলিয়ে ঠোঁটের কাছে আসতেই আরাভ ঠোঁট ছোঁয়ায় ইয়ারাবীর হাতের পাতায়।
-আপনি বের হন।ওনার ঘুমের সময় হয়ে এসেছে।নার্স বলে উঠে।
-ইয়ারাবী পিছনে তাকিয়ে বিনয়ের সুরে বলল আরো পাঁচটা মিনিট প্লিজ।
-আপনি বুঝতে পারছেননা। রোগী দূর্বল আপনি বের হন।কাল যতো ইচ্ছা কথা বলে নিয়েন।
ইয়ারাবী হাত সরিয়ে আরাভের অনেক কাছে চলে আসে।তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
-আমি আবার আসবো।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।আরাভের চোখের পাতায় চুমু খেলো ইয়ারাবী।
-আরাভ একটু হাসলো।
ইয়ারাবী বেরিয়ে এলো।সেদিন ইয়ারাবী বাসায় গেলে ও মন কিছুতেই টিকছিলো না।পরদিন বিকেলে আরাভকে কেবিনে দেয়া হলো।সবাই আবার এলো আরাভকে দেখতে।ইয়ারাবী আরাভের সব কাজ করে দিলো।খাওয়া নো ঔষধ দেয়া সব।রাত বাড়তেই সবাই চলে গেলো।শুধু মাত্র আরাবী আর ইয়ারাবী থেকে গেলো।দুদিন পার হয়ে গেলো হাসপাতালে।সবাই এসে দেখে যেতো।ইয়ারাবী হঠাৎ দাঁড়ানো থেকে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো আরাভের সামনেই আরাভ উঠার চেষ্টা করলো।আরাবী আরাভ কে ধরলো।তারপর নার্স কে বলল ডাক্তার ডেকে আনতে।সেই একই ডাক্তার কে আনা হলো।
-ওনার প্রেশার লো তাছাড়া সবই ঠিক আছে।
ডাক্তার চলে গেলো।হাসপাতালে দশদিন কেঁটে গেলো ওদের। ১১ দিনের দিন আরাভকে ঘরে আনা হলো।ইয়ারাবী একদম মন প্রান দিয়ে আরাভের যত্নআত্তী করছিলো।ওর প্রেগন্যান্সির সাড়ে তিনমাস চলছে।শরীরটা বড্ড দূর্বল লাগে।তারপর ও আরাভের যত্নে ত্রুটি রাখেনি ইয়ারাবী।রুপন্তী রেহান অনেক বার মেয়ে আর ভাগীনাকে দেখে গেছে।আরাভ এখন কিছুটা সুস্থ।তবে অফিসে যাওয়া শুরু করেনি এখনো।
একদিন ইয়ারাবীর নম্বরে একটা রিমাইন্ডার এলো ইয়ারাবীর রিপোর্ট আনতে যাওয়ার।আরাভ মনে করতপ পারছেনা কিসের রিপোর্ট। এর মধ্যে কোন টেস্ট করানো হয়নি ওর।আরাভ উঠে কাপড় বদলে নিলো।তারপর কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো।রিপোর্ট আনতে যাওয়ার পর ডাক্তার আরাভকে দেখে একটু হেসে বলল,
-ভালো আছেন?
-আরাভ মাথা নাড়ায় একটু।
-আসলে এসময়ে বেশি ভালো থাকাও যায়না।
-মানে কোন সময়ে?কি বলছেন এসব?
-আপনার ওয়াইফ আপনাকে এবরশনের কথা কিছু বলেনি?
-না। এবরশন কেন করাবে?কি হয়েছে বলুন তো।
-ওনি আসলে মানা করেছিলেন।যতোবার বলা হয়েছিলো ওনি বিভিন্ন এক্সকিউজ দিয়ে ফিরে গেছে।ওনার প্রেগন্যান্সি তে প্রচুর কমপ্লিকেশনস।ইমেডিয়েটলি এবরশন না করালে ওনি বাঁচবেননা।
-হোয়াট!!!!উঠে দাঁড়ায় আরাভ।
-শান্ত হোন মিঃ আরাভ।আপনি যদি চান তাহলে ওনার এবরশন টা করিয়ে নেন যতো দ্রুত সম্ভব।
আরাভের খুব রাগ হচ্ছে ইয়ারাবীর ওপর।মেয়েটা ওকে কেন বললোনা এই ব্যাপারটা।আজ ওর খবর নিয়েই ছাড়বে।খুব বেশি বড় হয়ে গেছেন ওনি।সব সিদ্ধান্ত একাই নেবেন।আরাভ রাগে কটমট করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
চলবে