The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2)

The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 14

গাল দুটো কেমন লাল হয়ে আছে মেয়েটার।ব্যাপারটা খুব বেশি আকর্ষনীয় লাগছে আরাভের।ইয়ারাবীর গালে আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করলো আরাভ।ইয়ারাবীর চোখ জোড়া বুজে নিয়েছে।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।আচমকা ইয়ারাবীর ঝুঁটি করা চুল গুলো খুলে দিলো আরাভ।ইয়ারাবী বড় বড় চোখ করে আরাভের দিকে তাকায়।লোকটার চেহারায় ডোন্ট কেয়ার ভাব।
-এগুলো বাঁধার চেষ্টা করবেনা।স্পেশালী আমার সামনে না।বলে উঠে আরাভ।
-ইয়ারাবী আরাভের দিকে অবাক হয়ে বলল কেন?
-এত কোয়েশ্চেন করো কেন?ভ্রু কুঁচকে বলল আরাভ।
ইয়ারাবী চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আরাভ ইয়ারাবীর চুলের গভীরে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে ওর কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে সরে এসে এমন ভাব দেখালো যেন যা হচ্ছে সব নরমাল।কোন ব্যাপারই না।
ইয়ারাবী গায়ের কোটির কলার কে একটু ওপরে উঠে চুপ করে রইলো।হঠাৎ ওদের মনে হতে লাগলো এসির থেকে গরম বাতাস বেরুচ্ছে।আরাভ গাড়ি থামায়।এসির থেকে খুব গরম বাতাস বের হচ্ছে।
আরাভ অনেকসময় পর্যন্ত ঠান্ডা বাতাস আনার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা।এসি অফ করে বেরিয়ে গেলো আরাভ।কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে ও।
ইয়ারাবী মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরাভ কে দেখছে।তার দাঁড়ানোর স্টাইল খুব সুন্দর।কেমন যেন জেঠুর মতো লাগে সাইড আর পিছন থেকে।
কিছুক্ষন পর আরাভ ভিতরে এলো।
-কিছুক্ষন বসতে হবে।একজন লোক এসে এসি টা ঠিক করে দিবে।তারপরই আমরা রওনা হবে।একনাগাড়ে কথা গুলো বলে চুপ হয়ে যায় আরাভ।
আরাভ এক এক করে নিজের শার্টের ওপরের তিনটা বোতাম খুলে দিলো।
ইয়ারাবী আড় চোখে আরাভকে দেখছে বারবার।ওর শার্টের ওপরের তিনটা বোতাম খোলা।ধবধবে সাদা বুক দৃশ্যমান।বুকের একটা সাইডে কেমন যেন লাল হয়ে আছে যেন পোকার কামড় লেগেছে।তবে বুকের ডান সাইডে একটা কালো তিল আছে যেটা অসম্ভব সুন্দর।ইয়ারাবীর তাকানো নজর এড়ায় নি আরাভের।ঠোঁটে বাঁকা হাসি এনে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।হঠাৎ আরাভের চোখ মুখ কুঁচকে এলো। দ্রুত চোখ খুলে একটা বক্স বের করে সেখান থেকে দুটো টেবলেট নিয়ে বোতলের পানি দিয়ে খেয়ে নিলো।
ইয়ারাবী কৌতুহল সামলাতে না পেরেই বলে উঠলো,
-ওগুলো কিসের টেবলেট?
-আমার পায়ে পেইন করছিলো। (আরাভ বাম পায়ে প্রত্যেক সপ্তাহে ইনজেকশন পুশ করে সেখানে মাঝে মধ্যেই প্রচন্ড পেইন হয়।সেই পেইন কমাতেই টেবলেট গুলো খাওয়া ওর।)
-ওহ।মন খারাপ হয়ে যায় ইয়ারাবীর।
হঠাৎ একটা লোক এসে জানালায় নক করলো।আরাভ ইয়ারাবীকে বলল গাড়ি থেকে বের হও।এসি ঠিক করবে।ইয়ারাবী মাথা নেড়ে বেরিয়ে পড়লো।গাড়ির কিছুটা সামনেই একটা গাছের পাশে আরাভ আর ইয়ারাবী দাঁড়িয়ে আছে।ইয়ারাবীর চোখ আকাশের প্রজ্জ্বলিত তারা গুলোর দিকে আর আরাভের চোখ পাশের চাঁদটির দিকে।আরাভ ইয়ারাবীর চোখ নাক কান ঠোঁট সবগুলোয় একবার নজর দিলো।ওর সব কিছুই ইন্ডিভিজুয়ালি খুব সুন্দর।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?তারা দেখতে দেখতেই বলে উঠে ইয়ারাবী।
-হুম।ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বলল আরাভ।
-আপনি এখানে কবে এলেন?আমাকে বলেননি।বলে উঠে ইয়ারাবী।
-খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ এসে পড়েছিলো।তাই এলাম।বলে উঠে আরাভ।
-ওহ।সেখানে কে থাকে?মানে আপনার ফেমিলিতে?বিয়ে করেছেন কি?জিজ্ঞেস করলো ইয়ারাবী।
-চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় আরাভ।হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
-না এমনি।উদাসীন ভাবে হাসে ইয়ারাবী।
-That’s good।তা তোমার বাসার সবাই কেমন আছে?জিজ্ঞেস করলো আরাভ।
-ভালোই কিন্তু জেঠু!!!!!!মন খারাপ করে বলল ইয়ারাবী।
-জেঠু!!!!কি হলো ওনার?বলে উঠে আরাভ।
-আজ পার্টি থেকে রুমে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।
ইয়ারাবীর কথায় ভ্রু কুঁচকায় আরাভ।হঠাৎ এমন কেন হলো?জেঠুর প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিলো তাই।বলে উঠে ইয়ারাবী।আরাভ কিছু বলতে যাবে তখনই!!!
স্যার আপনার এসি ঠিক হয়ে গেছে।পিছন থেকে লোকটা চেঁচিয়ে উঠে।আরাভ ইয়ারাবী কে নিয়ে আসে গাড়ির কাছে।লোকটার পাওনা মিটিয়ে গাড়িতে উঠে বসে ওরা।ইয়ারাবী জানালার বাহিরে দেখছে।গাড়ি চলছে একমনে।আরাভ ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে ইয়ারাবীর বেশ কয়েকটি ছবি তুলল।গাড়ি ভিতর হালকা সোনালী আলো জ্বলছে।সেই আলোয় ইয়ারাবী কে মায়াময়ী লাগছে।ওর লম্বা খয়েরী চুলগুলো পুরো পিঠে ছড়িয়ে আছে।আরাভ একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে শুরু করলো।
সিগারেটের গন্ধে পাশ ফিরে তাকায় ইয়ারাবী।আরাভ ডান হাতের দুআঙ্গুলের মাঝে সিগারেটটাকে রেখেছে।
একটু জানালা টা খুলে দিবেন প্লিজ।বলে।উঠলো ইয়ারাবী।এসি চলছে।গম্ভীর ভাবে বলল আরাভ।আমার দম আটকে আসছে এটার গন্ধে।বলে উঠে ইয়ারাবী।আরাভ তৎখনাৎ নিজের আঙ্গুল দিয়ে সিগারেটটাকে দুমড়েমুচড়ে দিলো।
ইয়ারাবী অবাক। লোকটার হাত কি জ্বলছেনা?কি করে আঙ্গুল দিয়ে সিগারেট টাকে দুমড়েমুচড়ে দিলো?আধঘন্টা জার্নির পর ঘরে পৌছে যায় ইয়ারাবী।সবে মাত্র দেড়টা বাজতে চলেছে।ইয়ারাবী গাড়ি থেকে বেরিয়ে চলেই যাচ্ছিলো।
-মিস ইয়ারাবী!!!!জোরে ডেকে উঠে আরাভ।
-পিছু ফিরে তাকায় ইয়ারাবী।জি!!!!!
-এটা কি ভদ্রতা?আরাভ বলে উঠলো।ইয়ারাবী আশেপাশে তাকাচ্ছে।কি করেছে ও এমন অভদ্রতার।
-আরাভ ইয়ারাবীর কাছে এগিয়ে এলো।ইয়ারাবী আরাভের দিকে চেয়ে আছে।
আরাভ কিছু না বলে ইয়ারাবী কে বুকে জড়িয়ে নিলো।ইয়ারাবী চোখ বড় করে ফেলেছে।
একটু পর সরে আসে আরাভ।তারপর বলে উঠে মনে থাকে যেন আর না দাাঁড়িয়ে গাড়িতে ঢুকে বসে আরাভ।
ইয়ারাবী মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।কি হলো এইমাত্র?সেদিন আর চোখজোড়া এক করতে পারেনি আরাভ।বুকের মাঝে তীব্র যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে ওর।এদিকে ইয়ারাবী চোখ বন্ধ করতেই আরাভের সাথে কাঁটানো মুুহূর্ত গুলোর প্রতিচ্ছবি ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে।লোকটাকে না করতে পারেনি ও।না করার দরকার ছিলো কিন্তু পারেনি।কয়েকদিনের কথাবার্তা মাত্র আর এতো কাছে আসা হলো ভাবতেই লজ্জা ইয়ারাবীর মুখখানা লাল হয়ে এলো।
★★★★
পরদিন বিকেলে আরাভ রোয়েনের বাসায় চলে আসে।নাহলে যে আর শান্তিই পেতো না।রুহী আর রোয়েন ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছিলো।কলিংবেলের শব্দে রুহী উঠে দরজার কাছে আসে।দরজা খুলতেই আরাভ কে দেখতে পায়।
-তুমি?বলে উঠে রুহী।ছেলেটার চেহারা দেখলেই আরাভের কথা মনে পড়ে যায় রুহীর।তখনই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে।
-জি আমি।আঙ্কেলের সাথে একটু কথা ছিলো।বলে উঠে আরাভ।মাকে সামনে পেয়ে কেমন লাগছে সেটা হয়ত আরাভ ছাড়া কেউ বুঝবে না।
রোয়েনের দিকে তাকায় রুহী।আরাভ এসেছে রোয়েন আকরাম আজহার ভাইয়ের ছেলে।বলে উঠে রুহী।রোয়েন দরজার দিকে তাকায়।আরাভ ভিতরে এলো।রোয়েন উঠে দাঁড়ায়।আরাভ রোয়েনের কাছে এসে দাঁড়ায়।
তুমি হঠাৎ? জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।জি আপনার সাথে একটু কথা ছিলো আঙ্কেল।বলে উঠে আরাভ। আমার সাথে আসো বলে সামনে হেঁটে যেতে লাগলো রোয়েন।আরাভ ও ওর পিছে পিছে যাচ্ছে।স্টাডি রুমে এসে পড়লো ওরা।আরাভ আর রোয়েন পাশপাশি দুটি চেয়ারে বসে আছে।
-তা কি দরকার ছিলো?বলো।বলে উঠে রোয়েন।
-আপনি বিজনেস সম্পর্কে খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারেন।আমাকে যদি একটু দিতেন।বলে উঠে আরাভ।
-অতোটা ভালো ও না বাবা।কি জানতে চাও বলো।
ওদের মাঝে বিজনেসের বিভিন্ন কথা বার্তা চলতে থাকে।
হঠাৎ কথার মাঝেই আরাভের চোখ চলে যায় দেয়ালে টানানো ওর ১৭ বছর বয়সী ছবিটার দিকে।বুকটা কেমন যেন করে উঠে আরাভের।
-আঙ্কেল এই ছবিটা কার?জিজ্ঞেস করে আরাভ।
-আমার ছেলে ছবিটার দিকে এগিয়ে যায় রোয়েন।
আরাভ ও এসে রোয়েনের পাশে দাঁড়ায়।রোয়েনের চোখের কোনা জ্বলজ্বল করছে।
-ওনি কই?জিজ্ঞেস করলো আরাভ।
-নাই।বলে উঠে রোয়েন।
-মারা গেছেন?জিজ্ঞেস করলো আরাভ।
-মুখ শক্ত হয়ে আসে রোয়েনের।মারা কেন যাবে?আমার ছেলে বেঁচে আছে।যেখানে আছে ভালোই আছে।রেগে বলল রোয়েন।আ’ম সরি।বাট ওনি এখানে কেন থাকেননা?জিজ্ঞেস করলো আরাভ।
রোয়েন সেদিনকার কাহিনী খুলে বলল।চোখ লাল হয়ে আসে আরাভের।
যা শুনা যায় সবসময় সত্যি হয়না।হয়ত প্রিন্সিপাল মিথ্যা বলছিলো।হয়ত,,,,,,,,,,,,,,আর কিছু বলতে পারেনা আরাভ।
দেখো সেদিন ওকে না মারলে টিসি দিয়ে দিতো।তখন ওকে কই ভর্তি করাতাম?আমার ছেলেটার জীবন শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যেতো।কথা গুলো বলার সময় রোয়েনের গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো।আরাভ আর কিছু বলতে পারলোনা।
কিছুক্ষন পর সার্ভেন্ট দুকাপ কফি নিয়ে এলো।স্যার ম্যাম বলছে ওনারে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসতে কফি শেষ করে।
কফি শেষ করে আরাভ কে নিয়ে ডাইনিংরুমে চলে আসে রোয়েন।টেবিল ভর্তি খাবার তারওপর আবার ওর পছন্দের খাবার।
আরাবীর কাছে পড়তে এসেছে ইয়ারাবী।পড়া শেষ করে ইয়ারাবীকে নিয়ে বেরিয়ে ডাইনিংরুমে আসে আরাবী। ডাইনিংটেবিলে আরাভকে দেখে বুক ধক করে উঠে ইয়ারাবীর।আরাভ ওকে এখনো দেখেনি।
-আজ আমার ছেলে মেয়ের জন্মদিন।ওদের সাতাশ বছর পূর্ন হতো আজ।মেয়েটা তো আছে কিন্তু ছেলেটা!!চোখ ভরে আসে রুহীর।
রোয়েন রুহীর হাত ধরলো।রুহী নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়।আমরা এভাবে ওদের জন্মদিন পালন করি।কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকেনা।বলে উঠে রুহী।
-আরাবী ইয়ারাবীকে নিয়ে বস না।বলে উঠে রুহী।
মায়ের কথায় মাথা তুলে তাকায় আরাভ।ইয়ারাবী আজ আকাশী রং এর স্যালোয়ার কামিজ পরেছে।চুল গুলো পাঞ্চক্লিপে বাঁধা ওর।আরাভ দুষ্টু হেসে ইয়ারাবীর দিকে তাকায়।তারপর নিজের ঠোঁটের কোনে আঙ্গুল ছোঁয়ায়।ইয়ারাবী ধপ করে উঠে বসলো আপু আমি এখানে বসবোনা।
-কেন আম্মু কি হলো?জিজ্ঞেস করলো রোয়েন।
-ন না ম ম মানে জেঠু পাপা আসছে মনে হয়।কাঁপা গলায় বলল ইয়ারাবী।
-পাপা আসলে পাপা ও খাবে।বসো তুমি।বলে উঠে রোয়েন।
-ইয়ারাবী ভয়ার্ত চোখে আরাভের দিকে তাকিয়ে বসলো।
রুহী আরাভের বাটিতে একটু ক্ষীর দিলো।এটা আমার ছেলের সবচেয়ে প্রিয় খাবার ছিলো।ও যাওয়ার পর দশটা বছর ক্ষীর আমি খাইনি।ওর বাবা ও খায়নি।টেবিলে রুহীর অশ্রু গুলো টুপটুপ করে পড়তে থাকে।আরাভ খেতে গিয়ে হঠাৎ কেশে উঠলো।রোয়েন চটজলদি পানি এগিয়ে দেয়।
একটু শান্ত হয় আরাভ।ইয়ারাবী খাওয়ার মাঝে খেয়াল করলো ওর পায়ে আর পায়ের ছোঁয়া পাচ্ছে।ইয়ারাবী নিরীহ মুখে উপরে তাকায়।আরাভ খাওয়ার ফাঁকে ইয়ারাবীর দিকে মুচকি হেসে তাকালো।
পা টা ওর পায়জামাকে পায়ের একটু ওপরে তুলে দিলো।ইয়ারাবী ঠিকমতো খেতেই পারছেনা।
-রুহী ইয়ারাবী কে খাইয়ে দাও।মেয়েটা খাওয়া নিয়ে বসে আছে।
রুহী এসে ভাগনীকে খাইয়ে দিতে লাগলো।ইয়ারাবী আরাভকে দেখছে আর আরাভ নিজের কাজ করে যাচ্ছে।
চলবে