The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 04
শনিবার মানেই হলিডে।আর হলিডে বলেই যে বেলা ১২ টা একটা পর্যন্ত ঘুমোতে হবে তেমনটা আরাভের ক্ষেত্রে নয়।সকাল ৬ টায় উঠে পড়ে আরাভ।তারপর ফ্রেশ হয়ে মর্নিং ওয়াক এ চলে যায়।২ঘন্টা ত্রিশ মিনিটের মতো হেঁটে ঘরে ফিরে আরাভ।তারপর সুইমিংপুলে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করে গোসল টা ও সেড়ে নেয়।
এদিনে আরো একটা কাজ করতে খুব পছন্দ করে আরাভ।আর তাহলো স্কেটিং করা।হ্যা আরাভ স্কেটিং করতে ভীষন ভালোবাসে।ওদের বাড়ির থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরেই একটা জায়গায় স্কেটিং করতে যায় আরাভ।
আজ তার ব্যতিক্রম নয়।সকালে মর্নিং ওয়াক থেকে রুমে নি গিয়েই ফিরে সুইমিংপুলে নেমে পড়ে।সুইমিংপুলের সামনে অর্পন বসে ফোনে কথা বলছিলো।ভাইকে দেখে আজ ওর ও শখ হলো সুইমিং করার। তাই দেরি না করে গায়ের কাপড় খুলে পুলে নেমে যেতেই চোখ মুখ খাড়া করে ফেলে অর্পন।ওর পুরো শরীরে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেলো।হাত দুটো বুকে শক্ত করে ভাজ করে নেয় অর্পন।ওর ওপরের পাটির দাঁত আর নিচের পাটির দাঁত একে অপরের সাথে বাড়ি খাচ্ছে।
দ্রুত পানি থেকে উঠে পাশেই বসে পড়ে অর্পন।ভাইয়ের অবস্থা দেখে হাসি পেলে ও নিজেকে নিয়ন্ত্রনে আনে আরাভ।তারপর এতো জোরে ডুব দিলো যে অনেক গুলো পানি অর্পনের গায়ে এসে ঝাপটা খেলো।অর্পন দ্রুত উঠে ঘরের দিকে দৌড়ে পালালো।
আরাভ আরো কিছুক্ষন সুইমিং করে রুমে এসে সাওয়ারটা নিয়েই নেয়।
অর্পন মোটা লেদার জ্যাকেট আর স্কেট বোড নিয়ে হাজির।আরাভ চকলেট ব্রাউন কালারের জ্যাকেট আর জিন্সপ্যান্ট পরে নিয়েছে।
চুল গুলো কে আচড়ে নিয়ে অর্পন কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্কেটিং করার জায়গাটির উদ্দেশ্যে।
এখানে অনেকে স্কেটিং করতে আসে।আরাভ কে দেখে গার্ড মাইকেল হাসলো।কারন সে জানে আর কেউ না আসলে ও আরাভ আর তার ভাই ঠিকই আসবে।মাইকেল মাথা নুইয়ে ওয়েলকাম জানায় আরাভ কে।আরাভ হেসে তার উত্তর দিলো।স্কেট বোর্ড নিয়ে স্কেটিংয়ে নেমে গেলো আরাভ আর অর্পন।আরাভ বিভিন্ন স্টাইলে স্কেটিং করছে।তবে অর্পন ও বেশ ভালোই পারে স্কেটিং করতে।সে ও ভাইয়ের মতো বিভিন্ন স্টাইলে স্কেটিং করছে।
আশেপাশের সবাই মুগ্ধ চোখে আরাভ কে দেখছে।এদের মধ্যে অনেকেই আরাভকে দেখে এই জায়গায় একই দিনে।স্কেটিং করে গাড়িতে এসে বসে পড়ে আরাভ আর অর্পন।আরাভ খেয়াল করলো অর্পন কাউকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে।পাশে তাকাতেই রাগ হয় আরাভের।গাড়ির গ্লাস লাগিয়ে সামনে তাকায় আরাভ।অর্পনের টেস্ট এতো বাজে ধারনা ছিলো না আরাভের।কিভাবে এমন পোশাক পরিহিত মেয়ের দিকে তাকাতে পারে ভাই?ভেবে পায়না আরাভ।হঠাৎ জানালা লেগে যাওয়ায় আরাভের দিকে তাকায় অর্পন।আর ততক্ষনে গাড়ি চলতে শুরু করেছে।
-ভাই এমন করতে পারলে?নিশ্পাপ মুখ বানিয়ে বলল অর্পন।
-নিঃশ্বব্দে বসে বাহিরের দৃশ্য দেখছে আরাভ।
-ভাই মেয়েটা অনেক হট না?দুষ্টু হেসে বলল অর্পন।
-ডোন্ট ইউজ দিস ড্যাম ডিসগাস্টিং ওয়ার্ডস।বিরক্তিকর মুখ নিয়ে বলল আরাভ।
-সরি!!!বলে অপরপাশে তাকিয়ে বলল অর্পন।
ঘরে পৌছে অারাভ ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো।আর আঙ্গুল গুলো খুব দ্রুত কিপ্যাডে চলছে।কিছুক্ষন পর মেইড সার্ভেন্ট এসে আরাভের এস্প্রেসো দিয়ে গেলো।
এদিকে সেদিন আরাভের ছবি দেখার পর থেকে ইয়ারাবীর কৌতুহুল মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।আরাভ কেন চলে গিয়েছিলো?আরাবী আপু ও তেমন কিছু বলেনি ওকে।আরাভের ছবিটার প্রতি প্রচন্ড আকর্ষন কাজ করছে ইয়ারাবীর।
তার চেহারায় একটা নেশা ধরানো ভাব আছে যেটা ইয়ারাবীর আর কারোর প্রতি মনে হয়নি।মুখে হাসি নেই,কিন্তু তার দৃঢ় চাহনি,দাঁড়ানোর স্টাইল,বিশেষ করে তার চোখ যেন ইয়ারাবীকে এক অদ্ভুত নেশায় মত্ত করে দিয়েছে।
রোয়েন সেদিন ঘরে ফিরে এসে একদম চুপচাপ হয়ে যায়।খুব চিন্তায় পড়ে যায় ও।কোনমতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা রোয়েন।
স্বামীকে এভাবে চিন্তিত দেখে রুহীর বুক হাহাকার করে উঠে।রোয়েনকে উপরে চলে যেতে দেখে রুহী টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
.
.
.
.
.
-রোয়েন খেতে আসো।জোরে ডাকতে লাগলো রুহী
রোয়েন চুপচাপ রুমে চলে গেলো।রুহী প্লেটে খাবার বেড়ে দৌড়ে চলে গেলো।রোয়েন খাটে বসে আছে।চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে।
-তুমি ঠিক আছো তো?মন খারাপ করে বলল রুহী।
-রোয়েন চুপচাপ বসে আছে।
রুহী এবার পা টিপে টিপে এসে রোয়েনের পাশে বসে। রোয়েনের কাঁধে হাত রাখে রুহী।শুনো কি হলো?না খেয়ে চলে এলে যে?জিজ্ঞেস করে রুহী।রোয়েন এবার রুহীর দিকে চেয়ে ওর বুকে মাথা রাখে।রুহীর বুক কেমন যেন করে উঠে।রোয়েনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুহী।
-কি হলো রোয়েন?সংকিত গলায় বলে রুহী।
-রুহী প্লিজ কথা বলোনা।আমাকে শুধু জড়িয়ে ধরে রাখো।
রোয়েনের কথায় রুহী চুপচাপ জড়িয়ে ধরে রাখলো রোয়েনকে।ধীরে ধীরে রোয়েনের চুলে হাত বুলাতে শুরু করলো রুহী।মাথা নিচু করে রোয়েনের কপালে চুমু দেয় রুহী। রোয়েন রুহীর গলায় ঠোঁট বুলিয়ে আবার ও আগের মতো রুহীর মাথা রাখে।
-একটু খেয়ে নাও প্লিজ।মন খারাপ করে বলে রুহী।
রোয়েন ভাবছে এভাবে নিজের চিন্তা গুলো মায়াবতীর সঁপে দিতে পারিনা আমি।নিজে যতো বেশি চিন্তা করবো তার থেকে বেশি কষ্ট পাবে বৌটা।এর থেকে ভালো কষ্ট গুলো নিজের মাঝেই রেখে দেই।রোয়েন এবার রুহীর থেকে সরে এসে বসে। তারপর রুহীর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে বলল,
-ফ্রেশ হয়ে আসি।তারপর একসাথে খাবো।
ওয়াশরুমের দিকে চলে যায় রোয়েন।রুহীর মুখে হাসি ফু্ঁটে উঠলেও চিন্তার রেশ কাঁটেনি।রোয়েন ফ্রেশ হয়ে এলে নিজ হাতে স্বামীকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নেয় রুহী।সেদিন রাতে রুহীকে খুব জোরে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে রোয়েন।
পরদিন সকাল হাসপাতালে যেয়ে নিজের চেম্বারের সামনে আসতেই রোয়েনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা।দুজন কালো কোট ওয়ালা অফিসার দাঁড়িয়ে আছে চেম্বারের বাহিরে।আর পাঁচছয় জন পুলিশ অফিসার রোয়েনের রুমের সব কিছু উলোটপালট করছে।
রোয়েন কালো কোট ওয়ালা অফিসারদের কাছে এসে দাঁড়ায়।
-কি হচ্ছে এখানে?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-রেইড পড়েছে আপনার চেম্বারে।একজন অফিসার বলে উঠে।
-কেন?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-অফিসাররা কিছু বলতে যাবে তখনই একজন পুলিশ অফিসার একটা কার্টুন নিয়ে এলো ওদের সামনে।তারপর বলতে শুরু করলো।স্যার ওনার চেম্বারে এই ড্রাগস অার অনেক গুলো ডেট এক্সপায়ার্ড মেডিসিন পাওয়া গেছে।রোয়েন যেন কিছুই বুঝতে পারছেনা।কি হচ্ছে ওর সাথে।
তারপর গলায় দৃঢ়তা এনে বলল দেখুন অফিসার এক্সেক্ট প্রমান ছাড়া এমন করতে পারেননা আপনারা।এগুলো আমার নয়।জিনিস গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল রোয়েন।
দেখুন প্রফেসর মেডিসিনস ড্রাগস এগুলো আপনার চেম্বার থেকে পাওয়া গেছে।আপনি কি বলতে চাচ্ছেন কেউ নিজের ঘুম নষ্ট করে রাত ভর এই জিনিস গুলো আপনার চেম্বারে সাজিয়ে রেখেছে।কড়া গলায় কথা গুলো বলল অফিসার।
দেখুন সেটা আমি বলিনি।বলে উঠে রোয়েন।তো কি বলতে চান?আমরা রেখেছি?অফিসাার দুজন বলে উঠে।আপনারা আরেকটু খোঁজ করুন ইনভেস্টিগেশন করুন।কারন আমি জানি এগুলো আমার নয়।প্রত্যেক মাসে মেডিসিনের এক্সপায়ারি ডেট চেক করি আমি।শুনুন প্রফেসর এগুলো আমাদের বলে লাভ নেই।মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলেন আপনারা।মানুষের লাইফ নিয়ে বিজনেস করেন।ছেড়ে দিন এগুলো বলে।অফিসার দুজন আর বাকি পুলিশ অফিসার গন কার্টুন টাকে নিয়ে বের হওয়ার সময় সব ডাক্তার নার্স রিসিপশনিস্টদের বের করে দিলো।সবাই কানা কানি করছে।অতঃপর চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতালে সিলগালা পড়লো।রোয়েন অফিসারদের খুব করে বুঝাতে চেষ্টা করে কিন্তু তাদের মন গলেনি।
চলবে