The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 38

→খুলনা হতে ফেরার পরদিন রোয়েন সিদ্ধান্ত নেয় যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের সাথে ও কথা বলবে।কারন পঞ্চাশটা পরিবারই খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।অন্তত তাদের সাথে একবার দেখা করা উচিৎ।সেটা রোয়েনের বড় দায়িত্বের মাঝে পড়ে।কিন্তু ওর পায়ের অবস্থা ভালো নয় হাঁটতে ও পারছেনা।এমতাবস্থায় কাজ টা কঠিন তবে সবার সাথে কথা কথা বলাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।সেদিন অনেক ভেবেই হুইলচেয়ারের বন্দোবস্ত করতে বলে শামীমকে।পরদিন সকালেই শামীম হুইল চেয়ার নিয়ে আসে।রোয়েন শামীমকে বলে আজ বিকেলে চারটায় সব পরিবারকে নিচে থাকতে।সবার সাথে কথা বলবে ও।শামীম মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানিয়ে চলে যায়।রুহী নাস্তা বানিয়ে রোয়েনের রুমে আসে।লোকটাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ভালো লাগছেনা ওর।অসুস্থ কিন্তু চেহারায় সেটার কোন প্রভাব বিস্তার করেনি।চেহারায় সবসময়কার মতো ফুঁটে উঠেছে কাঠিন্য ভাব।ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকানো।চোখজোড়ায় বেশ গম্ভীর ভাব।হাত দুটো বুকের ওপর আঁড়াআঁড়ি ভাবে বাঁধা।রুহী নাস্তার ট্রে নিয়ে রোয়েনের বেড সাইড টেবিলে রেখে খাটে এসে বসে।রুহীকে দেখে রোয়েন এবার কিছুটা এগিয়ে আসার চেষ্টা করে কিন্তু পারছেনা।রোয়েন এমন করতে দেখে রুহী বলল,
.
.
-”আমি আসছি কাছে।আপনি বসুন।”
.
.
রুহী নাস্তার প্লেট নিয়ে রোয়েনের কাছে এসে বসলো।রুটি ছিড়ে সেখানে ভাজি আর ডিম নিয়ে রোয়েনের মুখের সামনে ধরে।নাস্তা শেষ করে নেয় রোয়েন।দুপুরে লাঞ্চ শেষে শামীম রোয়েনের বাসায় আসে।রোয়েনকে রুহী রেডি করিয়ে দিয়েছে।রোয়েনকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয় শামীম।তারপর রুহী সহ তিনজন বেরিয়ে আসে।অফিসের সামনে সবাই জড়ো হয়ে আছে।সবাই এসে উপস্থিত।শামীম আর রুহী ও রোয়েনকে নিয়ে চলে এসেছে।মৃতদের পরিবারের সবাই কাঁদছে।রুহীর ও কান্না চলে আসে।রোয়েন সবার চেহারার দিকে একবার চেয়ে দেখে।তারপর গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করে,
.
.
-”খুলনার মিশনে আপনাদের সবার বড় রকমের ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে।এবং এর ক্ষতিপূরন কোনভাবেই সম্ভব না।আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।দেশের জন্য এবং মানুষের জন্য কাজ করছি এবং চিরকাল করবো।এবং মিশনে দুর্ঘটনাক্রমে যাদের প্রানহানি হয়েছে তাদের পরিবারের কষ্টলাঘব করার জন্য একান্ত চেষ্টা করবো আমি।এ সুবাদে আপনাদের পঞ্চাশটা পরিবারের সত্তুর পার্সেন্ট ব্যায়ভারের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।এবং আপনাদের এই পঞ্চাশটা পরিবারে এমন অনেকেই আছেন যাদের সামর্থ্য আছে কিন্তু বেকার।তাদের সবার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যাবস্থা করবো।এটা আমি রোয়েন কথা দিচ্ছি আপনাদের।যদি কোনভাবে এর কোন একটা শর্ত পালন করতে ব্যার্থ হই তাহলে আমি আমার জায়গা ছেড়ে দিবো।”
.
.
রোয়েনের এই কথা শুনে সবাই চমকে উঠে।রামীন বলল,
.
.
-”কি বলছিস তুই?”
-”আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।আপনারা সবাই ঘরে যেতে পারেন।আমার কথা শেষ।”
.
.
ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুটা হলে ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।রোয়েন শামীমকে বলল ঘরে নিয়ে যেতে।শামীম আর রুহী রোয়েনকে ঘরে নিয়ে আসে।শামীম চলে যেতে চাইলে রুহী তাকে বসায়।রোয়েন শামীমের সামনে হুইল চেয়ারে বসে আছে।রুহী চা বানাতে গেছে শামীমের জন্য।
রোয়েনকে দেখে কিছুটা গলা পরিষ্কার করে বলল,
.
.
-”স্যার ব্যান্ডেজ কবে খুলবে?”
-”এই মাসের ২৫ তারিখ।”
-”ওহ আজ তো ১০ তারিখ।”
-”হুম।”
.
.
কিছুক্ষনের মাঝে রুহী চা নিয়ে আসে।শামীম আর রোয়েন কে চা দেয় রুহী।এদিকে রামীন অসুস্থতার কারনে আশফিনার সাথে দেখাও করতে পারছেনা।এমনকি ওদের এখন আর একসাথে বসে চা খাওয়াও হচ্ছেনা।ভালো লাগছেনা আশফিনা।সম্পর্কের এতো কম সময়ে এতোটা দূরুত্ব তারওপর আশফিনার দুবাই ফেরার সময় ও ঘনিয়ে আসছে।কান্না আসে ওর।সেদিন বিকেলে ফ্লাক্সে গরম চা নিয়ে ছুটে যায় রামীনের বাসার উদ্দেশ্যে।কলিংবেল বাজতেই জোয়ান করে একজন রমনী এসে দরজা খুলে।মহিলার গায়ে বাঙ্গী কালারের শাড়ী। চুল গুলো খোপা করা।রামীনের পরিবার সম্পর্কে তেমন একটা ধারনা নেই আশফিনার।তাই কিছু টা ভয় পেয়ে যায় আশফিনা তাকে দেখে।সে মুখ খুলল,
.
.
-”জি আপনি?”
-”রা রামীন আছেন?”
-”জি আছে।তুমি কে?
.
.
আশফিনা কিছু বলতে যাবে সেই মুহূর্তে রামীনের কন্ঠস্বর ভেসে আসে পাশের রুম থেকে।
.
.
-‘কে ভাবি?”
-”রামীন একটা মেয়ে এসেছে দেখ।”
.
.
রামীন শার্ট পরে এলো ভিতর থেকে।তারপর দরজার দিকে এগুতেই দেখে আশফিনা দাঁড়িয়ে আছে।
.
.
-”আশু তুমি?”
-”জি।আপনার চা এনেছিলাম।”
-”ওহ।আসো আমার সাথে এসো।”
.
.
আশফিনার হাত ধরে রুমে নিয়ে আসে রামীন।আশফিনা আশেপাশে তাকিয়ে রুমে ঢুকে।
.
.
-”রুমে আনলেন?আপনার বাবা মা দেখে ফেললে?”
-”এখানে থাকলে তো দেখবে।বসো কাপ আনতে বলি।”
.
.
ভিতর থেকে কাজের লোককে ডাক দেয় রামীন।আশফিনা বলল,
.
.
-”কই থাকেন ওনারা?”
-”অস্ট্রিয়া।আসলে আমার জন্ম ওখানে রোয়েনের ও।ও এখানে চলে এসেছিলো তাই আমিও।”
-”ওহ।তা কেমন আছেন?”
-”এইতো।আর দু একদিনে চাঙ্গা হয়ে যাবো।”
-”হুম।”
.
.
ওদের কথার মাঝেই কাজের লোক দুটো কাপ দিয়ে যায়।আশফিনা কাপ দুটোয় চা ঢেলে নেয়।রামীন কে একটা কাপ দিয়ে দুজনে পাশাপাশি বসলো।
.
.
-”চা টাকে খুব মিস করছিলাম।”
-”ওহ।আমি ও খুব মিস করছিলাম।”
-”কি?”
-”আপনার সাথে কাঁটানো বিকেল গুলো।”
.
.
লজ্জা মাখা হেসে বলল আশফিনা।রামীন আশফিনার দিকে একটু হেসে চায়ে চুমুক দেয়।আশফিনা বলল,
.
.
-”নেক্সট মান্থ চলে যাচ্ছি।”
-”ওহ।ভালো তো।”
.
.
রামীনের মুখে এমন কথার জন্য প্রস্তুত ছিলো না আশফিনা।রামীন ওকে থেকে যেতে বলবেনা?আর যদি নাই বলে তাহলে এ ভালবাসার মানে কি?নানান প্রশ্ন আশফিনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।আশফিনার চেহারা দেখে রামীন বলল,
.
.
-”দেখো তোমার বাবা মা আছে সেখানে যাবে তুমি।যাওয়া উচিৎ নয় কি?”
-”আমাকে মিস করবেননা?”
– ”তোমাকে তো সেখানে যেতেই হবে।আফটার অল তোমার বাবা মা আছেন সেখানে।”
-”আপনি আমাকে মিস করবেন?বলেননা প্লিজ”কেঁদে দেয় আশফিনা।
.
.
রামীন ওকে বুকে জড়িয়ে বলল,
.
.
-”দুষ্টুমিও বুঝোনা?মিস করবো না আবার আমার জান পাখিটাকে!!!”
-”সত্যি করবেন মিস??”
-”হান্ড্রেড পার্সেন্ট”।
.
.
হঠাৎ রামীনের ভাই পত্নী রুমে ঢুকে দেবর কে এমন অবস্থায় দেখে লজ্জা পেয়ে যান।ওদের কোন খবর নেই।ওনি বলে বসেন,
.
.
-”সরি সরি!!!!!”
.
.
আচমকা ভাবির কথায় ঘোর কাঁটে দুজনের।সরে আসে একে অপর থেকে।দুজনের মুখে লজ্জা মাখা হাসি। কেমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে ওদের।কিছু সময় রামীনের সাথে কাঁটিয়ে বেরিয়ে পড়ে আশফিনা।আশফিনা বের হতেই ভাবি রামীনের সামনে আসেন।তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে বলেন,
.
.
-”খবর কি দেবর জি?”
-”কোন খবর ভাবি??”না জানার ভান করে।
-”তোমার ভাই আসুক।ওনিই বলবেন কোন খবর।”
-”লক্ষী ভাবি। ভাইকে এসব বলেনা।”
-”পাম দেয়া হচ্ছে।তবে মেয়েটা কিন্তু বেশ রুপবতীরে!!!!”
-”ভালো লেগেছে তোমার?”
-”হুম।খুব ভালো লেগেছে। নাম কি?”
-”ইশরাত জাহান আশফিনা।”
.
.
এদিকে বিছানায় রোয়েন আর রুহী পাশাপাশি বসে আছে।রুহী রোয়েনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে।রোয়েন চোখের কোনা দিয়ে রুহীকে দেখে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
.
.
-”ওভাবে কি দেখে হাসছো?”
-”আপনাকে।”
-”আমাকে দেখে হাসার কি হলো?”
-”আপনাকে না হনুমানের মতো লাগছে।”
.
.
বলেই হেসে দেয় রুহী।রুহীর কথায় কিছুটা অবাক হয় রোয়েন।রাগী গলায় জিজ্ঞাস করলো,
.
.
-”কিসের মতো?”
-”হনুমানের মতো,হাহাহা।”
-”হঠাৎ করে হনুমান দেখাবে কেন আমাকে?নেশা করে আসোনি তো?”
-”না তা করিনি।বিশ্বাস না হলে নিজেকে একবার দেখুন।”
.
.
রুহী এবার নিচে নেমে ছোট্ট একটা আয়না রোয়েনের সামনে ধরে।রোয়েন নিজেকে দেখতে পায়।আসলেই হনুমান লাগছে।দাড়ি মোচ বেড়ে গেছে।রোয়েন এবার গম্ভীর ভাবে রুহীর দিকে তাকায়।এবার বলল,
.
.
-”দেখো এখন তো আমার হাতে ব্যান্ডেজ পায়ে ব্যান্ডেজ।তো এখন হেঁটে ওয়াশরুমে তো যাওয়া পসিবল না।তাহলে তুমিই শেভ করিয়ে দাও।”
-”জি।”
.
.
রুহী শেভিং ক্রীম আর রেজার এনে সযত্নে শেভ করায় রোয়েনকে।তারকর মুখ ধুয়ে গামছা দিয়ে মুখ মুছে দেয়।রোয়েন এবার গালে হাত ছোঁয়ায়।বেশ ভালো ভাবেই করেছে তবে একেবারেই ক্লিন শেভ করেছে রুহী যেটা রোয়েন কখনো করেনা।
.
.
-”কি হলো ভালো হয়নি?”
-”হুম।”
.
.
রুহীকে এবার টেনে কাছে নিয়ে আসে রোয়েন।রুহীর কোমড় একহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রুহী রোয়োনের কাঁধে হাত রেখে সরে যেতে চাইছে।রোয়েন এবার আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে বলল,
.
.
-”এমন করছো কেন?”
-”আপনার পা!!”
-”তো?”
-”ব্যাথা লাগবে।”
-”সেটা আমি বুঝবো।আমাকে রোম্যান্সের সময়ে বিরক্ত করে কি মজা পাও তুমি?”
.
.
ঝাঁঝালো গলায় জিজ্ঞেস করে রোয়েন।রুহী এবার কেঁপে উঠে চুপ করে রইলো।রোয়েন নিজের ভালো হাত খানা রুহীর চুলের ভিতর ঢুকিয়ে ওর উষ্ণ ঘাড় স্পর্শ করে।রুহী কেঁপে উঠে চোখ বুজে নেয়।রোয়েন এবার রুহীর গলার কাছে ঠোঁট নিয়ে আসে।তারপর গলার খাঁজে ঠোঁট চেঁপে ধরে।রুহীর বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।রোয়েন গলায় আলতো চুমু তে ভরিয়ে দিতে থাকে।কিছুক্ষন পর সরে এসে রুহীর ঠোঁটের ওপর আলতো করে একবার চুমু খায়।
রুহী সরে আসে।
রোয়েনের প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখছে রুহী।এভাবে রোয়েনের অনেক খেয়াল রাখতে শুরু করে রুহী।এদিকে রোয়েনের ব্যান্ডেজ খোলার দিনটা ও চলে আসে।
চলবে