The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 122

→মেয়ের রুমে বিয়ের শাড়ী নিয়ে এলেন নীরা হামিদ।ওনার চোখে পানি।সামায়রা শাড়ী দেখে অবাক।বিয়ের কথা জানেইনা ও। নীরা হামিদ শাড়ীটা বের করে সামায়রা গায়ের ওপর দিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,
”পরী লাগছে আমার বাচ্চাটাকে।”
সামায়রা একবার শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে মাকে দেখে।ওর মা কাঁদছে কেন আর শাড়ীটাই বা কেন ওর গায়ে দিচ্ছে।বুঝতে পারেনা কি হচ্ছে?সামায়রা ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
”মা কি হয়েছে?কাঁদছো কেন?”
”তুই চলে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো বল?আমার একটাই তো মেয়ে তুই।”
”কি বলছো মা?আমার যেতে দেরি আছে।”
সামায়রা কথার জবাব না দিয়ে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন নীরা হামিদ।সামায়রার খুব খারাপ লাগছে।ওর মা কাঁদছে কেন এভাবে?যেখানে ওর বিয়ে হতে একবছর বাকি।ফাহমিন হয়ত ঠিক করে বলতে পারবে কি হয়েছে?সামায়রা ফোন বের করে কল করে ফাহমিন কে।দুবার রিং হতেই কল কেঁটে যায়।পরমুহূর্তে ফাহমিনের কল আসে সামায়রার নম্বরে।সামায়রা কানে ফোন রেখে খুব ধীরে বলল,
”আছেন?”
”তো কল কে দিলো?ভূত?”
”না মানে কথা ছিলো।”
”বলো।”
”মা একটা শাড়ী এনে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো।কাঁদছিলো মা। কি হয়েছে?”
”জানো না তুমি?”
”না কিছু হয়েছে?”
”হুম।কাল বিয়ে। ”
”কার?”
”তোমার জামাইয়ের।”
আঁৎকে উঠে সামায়রা।বুক ধক করে উঠে।কি বলল লোকটা?সামায়রা ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
”অন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছেন?কেন এমন করলেন?আপনি না আমাকে ভালবাসেন।তাহলে কেন এমন করলেন?প্লিজ এমন করবেননা।”
কেঁদেই দিলো সামায়রা।ফাহমিন অবাক না বুঝে কেঁদেই দিলো মেয়েটা?ফাহমিন বলল,
”রিল্যাক্স সামায়রা!!কি বলছো এসব?”
”আমি কি বললাম।বললেন আপনি।”
”আরে বাবা কাল আমাদের বিয়ে। ”
একটু শান্ত হলো।পরক্ষনে বুক কেঁপে উঠলো পরিবার কে ছেড়ে যাবার কথা ভেবে।সামায়রা বলল,
”একবছর পর না হওয়ার কথা ছিলো।”
”দেখো আমাদের বাহিরে যেতে হবে।জার্মানীতে চলে যাবো পার্মানেন্টলি।তোমার সাথে এ্যাংগেজমেন্ট করে আমি কিভাবে সেখানে যাবো বলো?কবে আসি না আসি সেটার ঠিক নেই।”
”আমি থেকে যাই।”
”সামু পাগল হয়ে গেলা।তুমি আমার লিগ্যাল ওয়াইফ হবা বিয়ের পর।এভাবে আমাকে ছাড়া থাকলে দশ জন দশধরনের কথা শোনাবে।তুমি আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবা?”
”এখন যেভাবে আছি।পারবো থাকতে।”
”ধুর!!”
কল কেঁটে দেয় ফাহমিন।সামায়রা ফোন সরিয়ে কেঁদে দেয়।লোকটাও রেগে গেলো।মাও কাঁদছে। ও কি করবে?ও থাকতে পারবে এখানে লোকটা কেন বুঝতে চায়না?শুধু শুধু রাগ করলো।সামায়রা আবার কল দেয় ফাহমিনকে।কল কেঁটে গেলো ঠিকই কিন্তু আর আসলো না।এদিকে আশফিনার কপালে চুমু দিয়ে ওর গলায় মাথা রাখে রামীন।আশফিনা মুচকি হেসে রামীনের মাথার চুলে বিলি কাঁটছে।রামীন বলল,
”আশু আমাদের বাবুটা কবে আসবে?বলতে পারো?”
”যখন আল্লাহ তা’লা চাইবেন।”
”আমি অপেক্ষা করতে পারছিনা।”
আশফিনার দিকে তাকিয়ে বলল।আশফিনা রামীনের চুল গুলো কে হাত দিয়ে আউলিয়ে বলল,
”না পারলে নেই।ঘুমোবো আমি।”
আশফিনা শুয়ে পড়তে চাইলে রামীন ওকে সোজা করিয়ে দিয়ে বলল,
”আই নিড বেবি এ্যাজ সুন এ্যাজ পসিবল।সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।”
বলেই আশফিনার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় রামীন।আর না করতে পারেনা আশফিনা।কেমন অজানা নেশায় ডুবে যায় ওর শরীর মন।দ্রিধা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে দ্বিগুন শব্দে।রোয়েন খাটে আধশোয়া হয়ে আছে।রুহী মেয়েকে খাওয়াতে চাচ্ছে দ্রিধা খাবেইনা আবার কাঁদছে ও।
রুহীর অশান্তি লাগছে মেয়ের কান্নায়।ও বলেই বসলো,
”মারে এমন করতেছোস কেন?খাবি ও না কান্না ও বন্ধ করবিনা।থাপড়ায়া গাল ফাটাবো অসভ্য মেয়ে।”
রোয়েন রেগে গিয়ে বলল,
”রুহী এমন করছো কেন?ওর হয়ত খারাপ লাগছে।”
রুহী চুপচাপ মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে।রোয়েন হেসে শাড়ীর ফাঁকে রুহীর পেটে আলতো চিমটি দিচ্ছে রুহী দাঁত কড়মড় করে তাকাতেই ঠোঁটজোড়া চোখা করে রোয়েন।রুহী আবার ও মেয়ের দিকে মন দেয়।রোয়েন তখন আবার রুহীর পেটে দাগ টেনে দিতেই রুহী আবার ও রেগে তাকাতেই রোয়েন উঠে বসে ওর ওষ্ঠজোড়ায় আলতো করে ছুঁয়ে বলল,
”তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়াও।এখন তোমাকে আমার লাগবে।”
”একদম চুপ করে ঘুমাও।মেজাজ খারাপ হচ্ছে।”
রেগে চলল রুহী।রোয়েন দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,
”অতসতো বুঝিনা।যতো রাত হোক আই ডোন্ট কেয়ার।”
রুহী বিরক্তি ভাব নিয়ে মেয়ের প্রতি মন দিলো।কান্না যেন কিছুটা কমে এসেছে।রুহী এবার ওকে খাওয়াতে চেষ্টা করে।দ্রিধা ও খেয়ে নেয়।রোয়েন পাশ থেকে বলল,
”মেয়ে ঠিকই বুঝছে বাবাকে অপেক্ষা করানো যাবেনা।খালি মেয়ের মাটাই বুঝলোনা।”
রুহীর হাসি পায়।মুখ চিপে হেসে বলল,
”বেহায়া কোথাকার।”
”রুহী প্রেম ভালবাসায় বেহায়া বেশরম লুচু নাহলে মজা নেই।এসব না হলে ভালবাসা যায়না।যতো বেশি বেহায়া হবা ততো বেশি আদর করা যায়।যেখানে সেখানে যেকোন স্থানে।”
”হুহ। লুচুর প্রতিযোগিতা হলে তুমিই ফার্স্ট হবে নিশ্চিত।”
”ভীষন খুশি হবো।লুচু তো বৌয়ের জন্যই তাই না?”
”হুহ।বিয়ের আগ থেকেই এমন তুমি।”
”বিয়ের আগে এর কোনা ও করিনি।নাহলে এতোদিনে দ্রিধারা দু ভাই বোন থাকতো।দুই তিন বছর বয়সের।”
রুহী রেগে রোয়েনের দিকে চেয়ে বলল,
”অসভ্য জানোয়ার।”
রোয়েন শুধু এতটুকুই বলল,
”সময় নষ্ট হচ্ছে আমার।ওকে শুইয়ে আসো আমার কাছে।”
রুহী কিছু না বলে মেয়ে কে দোলনায় শুইয়ে দোলনাটিকে হালকা দুলাতে থাকে।দ্রিধার চোখ ও বুজে আসে।দ্রিধা ঘুমিয়ে যেতেই রুহী ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ে নেয়।মেয়েটা হওয়ার পর থেকে চুল পড়ছে খুব।কান্না পায় রুহীর।চুল আঁচড়ালেই ওর ব্রাশটা কালো হয়ে যায়।গোসলে গেলে ফ্লোরে চুল ছাড়া কিছু পাওয়া যায়না।রুহী ব্রাশ থেকে চুল গুলো নিয়ে ফেলে দিয়ে বিছানায় এসে বসে।রোয়েন লাইট অফ করে দিয়ে রুহীর গালে গলায় ঠোঁট বুলাতে থাকে।জোরে নিশ্বাস নিয়ে রোয়েনের মাথা চেঁপে ধরে নিজের সাথে।রুহীকে শুইয়ে ওর ওপর হালকা ভর ছেড়ে দিয়ে ওকে নিয়ে ভালবাসার অতল সাগরে ডুব দেয় রোয়েন।রাত এগারোটা।রোয়েন রুহী এখন ও ভালবাসায় মগ্ন।তখনই দ্রিধা কেঁদে উঠে।রোয়েন রুহীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রুহী উঠতে চাইলে পা দিয়ে রুহীর পা কে চেঁপে ধরতেই ও বলল,
”ও কাঁদছে দেখছো না?”
”কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাবে।বিরক্ত করোনা আমায়।”
”রোয়েন সরো।আজব মানুষ তুমি।মেয়েটা কাঁদছে আর উনি নিজেকে নিয়ে পড়ে আছে।”
রোয়েন কে সরিয়ে রুহী মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।তারপর বারান্দায় গিয়ে হাঁটতে থাকে।ভালবাসতে ও পারলোনা বৌটাকে।মেয়েটা ও কাঁদার সময় পেলোনা।মাত্রইতো শুরু হয়ে ছিলো।মেয়েটা পন্ড করে দিলো সব।বারোটায় কান্না থামে দ্রিধার ওকে শুইয়ে দিয়ে বিছানায় এসে দেখলো ঘুমিয়ে গেছে সে।রুহী মৃদু হেসে রোয়েনের কপালে ঠোঁট বুলিয়ে ওর বুকে শুয়ে পড়ে।
এদিকে সামায়রা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।লোকটা কল ও দিলো না কথা ও বলছেনা।কেন এমন করছে সে?ও কি ভুল কিছু বলেছে?বাবা মাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে?ওর হ্যামস্টার গুলোর কি হবে?কে দেখবে ওদের?কে খাওয়াবে?হঠাৎ সামায়রার ফোনে মেসেজ আসে।সেখানে লিখা,
”নিচে তাকাও।”
সামায়রা নিচে তাকিয়ে দেখলো ওর লোকটা হাত নাড়ছে ওর দিকে।সামায়রা হাত নাড়তেই ফাহমিন মই লাগিয়ে উঠতে থাকে।সামায়রা ভয় পেয়ে জোরে বলল,
”কি করছেন?”
”শশশ।চুপ থাকো।”
”পড়ে যাবেন তো।”
”চুপ থাকো।আস্তে বলতে পারোনা?”
সামায়রা কিছু না বলে চুপ করে রইলো।ফাহমিন উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামায়রা কে বুকে টেনে বলল,
”পাগল একটা বিয়ে করছি আমি।কি ভাগ্য?”
সামায়রা সরে আসতে চায়।ফাহমিন ওকে শক্ত করে ধরে আছে।সামায়রা সেভাবেই বলল,
”তখন কল কেঁটে দিলেন।আর এখন এসে ঢং দেখাচ্ছেন।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফাহমিন বলল,
”ভিতরে চলো।”
”না।আপনি চলে যান।কথা নেই।”
ফাহমিন সামায়রাকে একটানে কাঁধে তুলে নিয়ে ভিতরে এসে ওকে খাটে বসিয়ে দিয়ে ওর পাশে এসে বসে।সামায়রা সরে যেতে চাইলে ফাহমিন ওর হাত শক্ত করে ধরে বলল,
”বাচ্চামো করোনা সামু।তখন মেজাজ ঠিক ছিলো না।”
”আমি যাবো না। আপনি বুঝতে চেষ্টা করেন।”
তাহলে বিয়েটা ও না করো।কাল সকালে তোমার বাবাকে বলবে বিয়ে করছোনা।”
”এভাবে কেন বলছেন?”
”এভাবেই বলবো।তুমি কেন বুঝতে পারছোনা বিয়ে টা আমার আর তোমার।আমাদের একসাথে থাকতেই হবে।বিয়ে টা হলো একসাথে থাকার একে অপরের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা। কেন বুঝছোনা?”
”মা কাঁদছিলো।”
কেঁদে বলল সামায়রা।ফাহমিনের মায়া লাগে।ও বলল,
”সামু সব মেয়েকেই এভাবে চলে আসতে হয়।খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক তাইনা?ওনি তোমার মা।তুমি একটা মাত্র মেয়ে ওনার খারাপ লাগবেই।”
”হুম।আমি কি করবো?”
”যা হচ্ছে সেটাকে মেনে নাও।”
”আমি পারবোনা।”
”কেন পারবেনা?আমি আছি তোমার সাথে।”
”সারাজীবন থাকবেন?”
”সারাজীবন থাকবো।যতক্ষন পর্যন্ত এই নিশ্বাস টিকে থাকবে।”
সামায়রা লজ্জা পেয়ে নিচে তাকায়।ফাহমিন ওকে বুকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।সামায়রা বলল,
‘”চলে যান এখন।”
”পরে যাবো।তুমি ঘুমাও।”
”বাবা মা চলে আসবে।”
”সেটা সকালে।তার আগেই যাবো আমি।”
”আচ্ছা।একটা গল্প শুনাবেন?”
”বলছি।চোখ বন্ধ করো।”
সামায়রা চোখ বুজে নেয়।ফাহমিন গল্প বলতে থাকে।পরদিন রোয়েন রুহী আর বাকি মেহমানরা চলে আসে সামায়রাদের বাসায়।রুহী,আশফিনা আর তাঞ্জুম সামায়রাকে রেডি করছে।রুহী রানী গোলাপী রং এর শাড়ী পরেছে।চুল গুলো কে পিঠের ওপর এলিয়ে দিয়েছে।সামায়রা কে এটা ওটা বুঝাচ্ছে তাঞ্জুম।সামায়রা মাথা নেড়ে যাচ্ছে।ফাহমিনরা ও চলে এলো।সাথে বাকি বন্ধুরাও।জুয়েল বলল,
”মামা জোয়ান বৌ পাচ্ছিস।ফিলিং কেমন?”
রাজীব পিছন থেকে বলল,
‘সেটা ওর মুখ দেখে বুঝতেছোস না?”
রামীন বলল,
”হ তোরে বুইড়া বয়সে ভীমরতি পাইছে।”
ফাহমিন রেগে বলল,
”বুড়া তোরা। সাবধান মেজাজ খারাপ করবিনা।”
”তোরে কি কমু তাহলে?বাবু!!!”
সাজিদ হেসে বলল।রোয়েন বলল,
”দেখ ওর বৌ সবচেয়ে ছোট।আমাদের বৌ থেকে সো সেই হিসেবে ওদের জোড়া হলো বুড়ো বাবু কাপল।”
রোয়েনের কথায় সবাই হেসে দেয়।ফাহমিন বলল,
”নে নে মজা নে।আমি ও দেখাবো।”
”কি?দিনে আটটা পয়দা করবি?সেটা হইতো না।তোর বৌকে পালতেই তিনশ বছর পেরিয়ে যাবে।”
রামীন হেসে বলল।রোয়েন বলল,
”তিনশ বছর বাঁচলে তো।সামায়রা এখন বাবুদের মতো।ওর ম্যাচিউরড হতে হবে।”
ফাহমিন বলল,
”চেষ্টা কম করিনি।তবে সামনে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
”হুম।আমার নাতি পুতিরা তোদের বাচ্চার বিয়ে দেখবে।বিরিয়ানীর প্লেট বেশি করে রাখিস।”
জুয়েল বলে উঠলো।সামায়রার সাজ পরিপূর্ন। একদম পরী লাগছে ওকে।আজ একে বারেই বাচ্চা লাগছেনা বরং যুবতী লাগছে।
সামায়রা কে নিয়ে নিচে আসে রুহী আশফিনা আর তাঞ্জুম।নীরা হামিদ এসে মেয়ের সামনে দাঁড়ায়।তারপর ওকে নিয়ে আলাদা রুমে চলে যায় সেখানে কাজী আছে।
চলবে