Psycho is Back

Psycho is Back !! Part- 15

দিন গুলো ভালই যাচ্ছিল।।
একদিনে ইউসুফ ভাইয়া ও অনেক পাল্টে গেছে,আগের মতো নেই।।আগে কথায় কথায় কপাট রাগ দেখাতো কিন্তু এখন তার সেই রাগটি নেই।।।
তার মাঝে অনেক পরিবর্ত ও হয়েছে ।।
একদিনে তার সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়ে উঠে,,।।তিনি মাঝে মধ্য রাতের বেলা আমাকে নিয়ে ঘুড়তে যায়।।যেমন –পরশুদিন দিন আমাকে নিয়ে মধ্যরাতে চন্দ্রবিলাস করতে গেছেন।।
সেই রাতটা ছিল আমার কাছে বেষ্ট।।সেদিন ছিল আমার আম্মুর মৃত্যুবার্ষিকী।। সারাটা দিন আমার মনটা অনেক খারাপ ছিল।।সেদিন ফকির খাওয়ানো হয় বাসায়।।সাথে মিলাদও পড়ানো হয়।।সারা দিন কেঁদে কেঁটে আমার নাক মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি।।নানুমারও একি হাল।।
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।। সেদিন ইউসুফ ভাইয়া সারাদিন বাসায় ছিল না।।দেশের বাহির থেকে তার ক্লায়েন্ট আশায় তিনি মিটিং ব্যাস্ত ছিলেন।।
সন্ধে বাসায় আসে।।আর আমাকে ও অবস্থায় দেখে তিনি আমার রুমে আসেন।।আর ভাল মন্দ জিগাসা করতে লাগেন।।কথার এক পর্যায় তিনি বলে উঠেন,,
—-বাবুই পাখি একটা জায়গায় যাবি??
—-কই??
—-উম,,,এখন বলবো না…!!রাতে রেডি থাকিস..!!
আমি মাথা নাড়ালাম যে হ্যাঁ রেডি থাকবো।। তিনি আমার চুলে হাত বুলিয়ে, মুচকি হেসে চলে গেলেন।।
রাত তখন ১২ টা বেজে ৩৪।। ভাইয়ার আসার খবর নেই,,,আমি রেডি হয়ে বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম।।তখনি দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।। আমি দরজা খুলে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে বাইরে।। ভাইয়াকে খুব সুন্দর লাগচ্ছে।।তিনি ফুল ব্ল্যাক পড়েছেন।।যাতে আরো অস্থির লাগছে।। ভাইয়াকে দেখে প্রতিবারের মতো আবার ক্রাশ খেলাম।।
আজকে ভাইয়া বাইক নেননি।। গাড়ি নিয়েছেন।।গাড়ি সেই ঘন্টাখানিকের মতো চলছে।।
—-ভাইয়া আমরা কথায় যাচ্ছি??
—-সারপ্রাইজ।। মুচিকে হেসে বলল ইউসুফ।।
গাড়ি আরো কিছুক্ষন চলার পর একটি উঁচু জায়গায় এসে থামলো।।যেখান থেকে পুরো ঘুমন্ত শহরটা দেখা যাচ্ছিল।।চারিদিক নানা রঙ্গের লাইট জ্বলছিল।। তার সাথে সাপের মতো পেঁচানো রাস্তা গুলো দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর একটা দুটো গাড়ির আনাগোনা চলচ্ছে।।সব চেয়ে বেশী আকর্ষণ করছে আকাশের সেই এক চিলতে চাঁদটুকু।।এই উঁচু টিলায় কোনো লাইট নেই।।কিন্তু সেই চাঁদের আলোয় সবটুকু জায়গায় জুড়ে চকচক করছে।।আকেশের চাঁদকে সেই তারা গুলো যেন সঙ্গ দিচ্ছে।। আমি উঁচু জায়গাটার মাঝে দাড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করছিলাম।।তখনি ইউসুফ ভাইয়া গাড়ির পিছন থেকে একটা পাটি এনে বিছিয়ে সটান করে শুয়ে পরলেন তার দু হাত মাথার নিচে গুঁজে।। আমি অবাক চোখে হাসি দিয়ে বললাম,,
—-কি করছেন কি ভাইয়া??আশেপাশে কত পোকামাকড় থাকতে পারে।। আর আপনি মাটি শুয়ে পড়লেন??
—–কিছু কিছু জিনিস উপভোগ করতে অনেক সময় অনেক কিছু মানতে হয় না,,আবার অনেক নিয়ম ভাঙ্গতেও হয়।।এই চন্দ্রিমাতে পোকা-মাকড় ও তার সঙ্গীর সাথে ব্যাস্ত।। তারা আসবে না এখানে বাবুই পাখি।।এখানে শুয়ে দেখ মনে হবে তুই আকাশটাকে নিজের হাতে ছুঁতে পারবি।আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলল।।
—-ওকে….!! আমি ভয়ে ভয়ে তার পাশে বসলাম।।তখনি ভাইয়া আমাকে টান দিয়ে তার সাথে মিশেয়ে নিলেন।।এবং তার বুকের সাথে চেঁপে ধরেন।।
—-দেখ এখন বাবুই পাখি।।কত সুন্দর লাগছে আকাশ টা।।
ইউসুফ ভাইয়ার এমন কাজে যেমন আমি অবাক তার থেকে বেশী লজ্জা লজ্জা লাগছে।।কিন্তু খুব ভালও লাগছে।।
এভাবেই কেঁটে যায় কিছুক্ষণ ইউসুফের হাতে মাথা রেখে তাকিয়ে আছি মাথার উপর এই বিশাল আকাশের দিকে।। দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।।
নিরবতা ভেঙ্গে ইউসুফ ভাইয়া বলে উঠে,,
—-বাবুই পাখি? দেখ আকাশের তারা গুলো দিয়ে আমরা নানার রকম আকৃতি বানাতে পারি!!
—–হুম…!! কিন্তু কিভাবে ভাইয়া??
ইউসুফ ভাইয়া তার ডান হাত উঁচু করে নানান রকম ভাবে দাগ টানার মতো করে বললেন,,,
—-এইভাবে দেখ??
বলে তিনি কখনো ফুল, কখনো ফল,, কখন মানুষ,,কখনো কার্টুন তৈরি করে চলেছেন তিনি।।আমিতো এসব দেখে হেসে কুটকুট হচ্ছি।।সারাদিনের বিষণ্ণতার ছাপ যেন একেবারেই মুছে গেছে আমার।।আমি খিলখিল করে হেসে যাচ্ছি।।আর ইউসুফ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে পলকহীন ভাবে।।ঠোঁটে তার সেই মারাত্মক হাসি।।যেটি দেখে হাজার বার মেয়েরা প্রেমে পড়তে রাজি।।কিন্তু আমি চাইলেও তা পারবো না!!কারণ একটি, সে যে আমার ভাইয়া,,তার থেকে বড় করণ আমি আর প্রেম করতেই চাইনা,, শুধু ভালবাসতে চাই।।কিন্তু কেন যানি ভাইয়াকে দেখলে তার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয়।।তখনি এই গানটি মনে পড়ে যায়..!!
,,””” প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ,
আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ।
এদিকে ইউসুফ তার কাতিলানা নিগাহে দিয়ে দেখে যাচ্ছি তার বাবুইকে।।সারাদিন কেঁদে কেঁটে মুখের ১২ টা বাজিয়ে ছিল তার।।তাই নিয়ে এসেছি তোমাকে বাবুই পাখি।।তোমার এই হাসি মুখটি যে দেখলে আমার বুকের যে শান্তি অনুভব হয়।।বুঝাতে পারবো না।।তোমার এই মাসুম চেহেরা দেখেই তো প্রথম দিন ভালবেসে ফেলি।।আমি চাইনা বাবুই পাখি তুমি আমাকে আবার ভুল বুঝো, আবারে সেই আগের মতো ভয় পাও।।এতে যে ভালবাসাটা পাওয়া হবে না।।সারাজীবন ভয়ে কুঁকড়ে থাকবে আমাকে দেখে তা আমি চাই না বাবুই পাখি।।আমি চাই তুমিও আমাকে ভালবাসো।।বেশি না হোক একটু হলেও চলবে,, বাকিটা আমার ভালবাসা দিয়ে না হয় পুষিয়ে নিব।। এসব ভাবছে আর মুচকি হাসচ্ছে ইউসুফ।।
আমরা অনেকক্ষণ চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকলাম।।চারিদিক ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।। ভাইয়া হুট করেই উঠে বসেন আর আমার ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যেতে লাগলেন…!!
—–ভাইয়া আমরা আবার কই যাচ্ছি??
—-একটু চুপ থাকো এখনো বুঝতে পারবা।।
বলে ভাইয়া একটা ঝোপের ধারে নিয়ে আসলো।। ঝোপের আশেপাশে থেকে একটু ছোট ইটের টুকরা নিল।।। এবং সে ইটটি ঝোপের মাঝে ঢিল মারলো।। আমি তোর বাচ্চার মা কাজগুলো দেখে বিস্ময় চোখে দেখতে লাগলাম।। উনাকে আজ না দেখলে কখনোই বুঝতাম না যে উনার মধ্যে একটা ছোট বাচ্চার বসবাস।। ঢিল মারার সাথে সাথে কতগুলো জোনাকি উরতে লাগলো।। পরক্ষণেই অন্ধকার জায়গাটি ছোটছোট মৃদু আলোয় আলোকিত হতে লাগলো।। একটা দেখে এতই খুশি হলাম যে পাগলের মতো ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে থ্যাংক ইউ বলতে লাগলাম।। আমার ছোট থেকে এমন জোনাকি দেখার ইচ্ছে ছিল।।তাই আর ধরে রাখতে পারি নি নিজেকে খুশির ঠেলায়,তাকে জজড়িয়ে ধরে ফেলে।। ভাইয়া ও আমাকে জড়িয়ে ধরে।।
—–বাবু তুই খুশি হয়েছিস তো।।
—-হুম অনেক অনেক অনেক।।
এতো খুশি হয়ে ছিলাম যে আমার হুঁশ ছিল না।। যখন বুঝতে পারি ভাইয়া জড়িয়ে ধরে রেখেছি সাথে সাথে ছেড়ে দিই আর লজ্জা পাচ্ছিলাম।।আর মাথা নত করে কিছুক্ষণ আগের করা বোকামির কথা ভাবতে লাগলাম।। ভাইয়া হয়তো বুঝতে পারছে তাই তিনি বলতে লাগে,,
—–বাবুইপাখি জোনাকি পোকা গুলোকে ধরে দেখবি না।।
আমি মাথা নাড়িয়ে ঝোপের ধারে চলে গেলাম।। আর জোনাকিপোকা দের সাথে খেলতে লাগলাম।। একটু পর পর তারা আমার হাতে বসতে সে,আবার উড়ে চলে যাচ্ছে খুব মজা লাগচ্ছিল।।এদের সাথে খেলতে।।আমি কয়েকটা জোনাকি পোকা দু হাতের মাঝে ভরে ইউসুফ ভাইয়ার সামনে নিয়ে যাই।। তারপরই তার মুখে সামনে নিয়ে হাতটা খুলে দেই।। আর সাথে সাথে জোনাকিপোকা গুলো উড়ে যেতে লাগে।। এরি মাঝে আকাশ গুরমুর করে শব্দ করতে লাগলো।।ধীরে ধীরে রাতের আকাশে কালো মেঘ জমতে লাগলো।।
—–বাবুই পাখি…..!! চলো এবার বৃষ্টি নামবে…!!
—–ভাইয়া আরেকটু থাকি না….!!
—-আমি আরেকদিন নিয়ে আসবো বাবুইপাখি…!! এখন চল…!!
আমার মন খারাপ হয়ে গেল।। বৃষ্টি বুঝি আর আসার সময় পেল না?? এখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে।।
এদিকে ইউসুফ তার বাবুপাখির মন খারাপ দেখে তারও লাগে…!!তাই কিছু একটা ভেবে বলতে লাগে,,
—–বাবুই লং ড্রাইভে যাবি?? বৃষ্টির দিন কিন্তু লং ড্রাইভে যেতে খুব মজা।।
আমি সাথে সাথে খুশিতে গদ গদ হয়ে বললাম,,
—–আবার জিগায়।।
বলেই গাড়িতে উঠে বসি।।ভাইয়া হেসে উঠে বসে।।তারপর গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগে।।বৃষ্টির বেগ বাড়ছে।।তখন বৃষ্টিতে আমার জামা ভিজে ছিল হালকা তাই ঠান্ডা লাগচ্ছে খুব।।ভাইয়া হয়তো বুঝতে পেরেছেন।।তাই তিনি তার জ্যাকেট এগিয়ে দিলেন।। আমি তা নিয়ে পড়ে নিলাম।।এখন কম ঠান্ডা লাগছে।।তার জ্যাকেট থেকে একটি মন মাতানো সুভাষ ছড়াচ্ছিল।।ইউসুফের চোখের আড়ালে যা বার বার ঘ্রাণটা নিয়ে ছিলাম।।আজ সত্যিই কতো আলাদা কিছু অনুভুতি অনুভব করলাম।।গাড়ি এখন কই যাচ্ছে আমার জানা নেই।।তাও কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে।।গাড়িটি আজ না থামতো।।পাশের ব্যাক্তিটির সাথে সারা জিবন এভাবেই চলে যেত।।পরক্ষণে মনে পড়ে যা এসব ভাবা ভুল।।তাই সব অনুভুতি মনের কোনে রেখে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।।বাহিরে এখন তুলমুল ভাবে ঝড় শুরু হচ্ছে।।যার জন্য ভাইয়া ড্রাইভ করতে পারছেন না, ধীরে ধীরে ড্রাইভ করছেন।।তাই একটি সেইফ জায়গা দেখে দাড় করাতে চাইছেন।।
ভাইয়া ড্রাইভ করে চলছেন।।কিন্তু আমার বোরিং লাগচ্ছে এখন একটি সং শুনতে পেলে খুব ভাল লাগতো।।তখনি ভাইয়া একটি সং প্লে করেন।।
চলবে,,😶