Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 73
রেহান থেকে চোখ সরিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সরে আসে রুপন্তী।কোনভাবেই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেনা ও।বুকে গভীর কষ্ট গুলো বাঁধা মানতে চাইছেনা।গাড়িতে ঢুকে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো রুপন্তী।রোয়েন রুহীকে দেখছে যতো দেখে ততো বেশি দেখতে মন চায়।দেখুক কার কি যায়?বৌটা তো ওরই।ভেবেই রুহীর গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় রোয়েন আচমকা।রুহী অবাক চোখে রোয়েনকে দেখে আশেপাশে তাকাতে থাকে।রোয়েন সেই সুযোগে আবার ও রুহীর গালে ঠোঁট বুলিয়ে ওর কানের মুখে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো আশেপাশে না তাকিয়ে বরটার ভালোবাসা গুলো উপভোগ করো।
রুহী চোখ বড় করে রোয়েনের দিকে তাকায়।রোয়েন বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে।রুহীর হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিতে থাকলো।রুহীর ঠোঁটের কোনে বিশ্বজয় করা হাসি।আর রোয়েনের চোখে মনহরন করা প্রেম প্রেম ভাব।
রুহী হাত ধরে সেই আদিবাসী মেয়ে গুলোর জায়গায় নিয়ে এলো।রুহীর কোমড়ে একহাত রেখে রুহীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।অপর হাত দিয়ে রুহীর হাতের পাতাকে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নিলো।
আদিবাসী মেয়ে গুলো সরে গেছে।
ওদের দেখে আদিবাসী একটা ছেলে গান গাইতে লাগলো তাদের ভাষায়।গানটার অর্থ না বুঝলেও এই মুহূর্তটায় গানটাকে ও প্রেমে টইটম্বুর মনে হচ্ছে ওদের।
রুহীকে নিয়ে আস্তে আস্তে নাচতে আরম্ভ করলো রোয়েন।সবাই হাত তালি দিচ্ছে।
আজিজ রায়হান আনিলা বেগম কে দেখিয়ে তানহা আজিমের সাথে হালকা ড্যান্স করতে শুরু করলেন।
আনিলা বেগম রাগে ফুঁসছে স্বামীকে দেখে।
বেশকিছুক্ষন পর রুপন্তী এসে ওদের মাঝে এলো।সাইফ রাহমান মামীর সাথে ফুঁসুড়ফুঁসুড় করছেন যেন নবদম্পতি।
মামী ও লজ্জায় লাল হয়ে হাসছেন।মামা সুযোগ পেয়ে মামীর গাল ধরে হালকা টেনে দিচ্ছেন।ওনার মুখে দুষ্টুমির হাসি।মামী নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে নিচ্ছেন বারবার।রেহান রোয়েন আর রুহীর নাচ দেখতে দেখতে পাশে তাকায়।রুপন্তীকে দেখতে কেমন যেন লাগছে।মুখটা লাল হয়ে গেছে।চোখ জোড়া ও লাল হয়ে এসেছে।
রুপন্তীর কাঁধে হাত রাখলো রেহান।কাঁধে হাতের ছোঁয়া পেয়ে পাশে তাকায় রুপন্তী।রেহান ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো সব ঠিক আছে কিনা।
রুপন্তী মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।রেহান মুচকি হেসে পিছন থেকে একহাত দিয়ে রুপন্তীর কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
রুপন্তী রেহানের হাত সরিয়ে একটু দূরে দাঁড়ালো।
রেহান আবার ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।
-কি হলো?(রেহান)
-কিছুনা।ভালো লাগছেনা।বলে উঠে রুপন্তী।
-কাল ও ভালো লাগছিলোনা তোমার।বলে উঠে রেহান।
-ভালো না লাগলে কি করবো বলো?কিছু করার আছে?ভালো লাগছেনা ব্যাস।বেশ রাগ করেই রুপন্তী সরে এসে মামীর পাশে দাঁড়ালো।
রুপন্তীকে এভাবে আসতে দেখে রায়না রাহমান বলে উঠলেন,কিরে মা ভালো লাগছেনা?
-না মামী।মাথা নিচু করে বলল রুপন্তী।
-কেন রে মা?কি হলো তোর?রুপন্তীর মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন রায়না রাহমান।
রুপন্তী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
রায়না রাহমান রুপন্তীকে ভালো মতো দেখার চেষ্টা করলেন।তারপর বললেন,
-কিরে চেহারার এ কি হাল বানালি?
-না মামী ও কিছুনা।বলে উঠে রুপন্তী।
-রেহান কিছু বলেনি তো?জিজ্ঞেস করে উঠেন রায়না রাহমান।
-না মামী।ওনি কিছু বলেনি।বলে উঠে রুপন্তী।
-আচ্ছা ঠিক আছে।মানলাম এখন একটু হেসে দেখা রুপন্তির চিবুক ধরে বললেন রায়না রাহমান।
রুপন্তী মলিন হেসে মামীর দিকে তাকায়।
-হাসি টা ভালো লাগেনি।বলে উঠেন রায়না রাহমান।
রুপন্তী এবার মিথ্যা হাসলো।
-এই তো আমার মামনি টা এবার হেসেছে।কতো সুন্দর মাটা মাশাল্লাহ। হেসে রুপন্তীর মাথায় হাত বুলালেন রায়না রাহমান।
বেশ কিছু সময় সেখানেই পার হয়ে যায়।
রোয়েন রুহীর নাচ শেষ হতেই সবার সামনে রুহীকে বুকে জড়িয়ে নিলো রোয়েন।রুহী ও ভীষন লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিলো রোয়েনের বুকে।
সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠে চড়ে বসলো রোয়েন।
আজ লং ড্রাইভ করবে সবাইকে নিয়ে।রুপন্তীকে দূর থেকে দেখে লম্বা নিশ্বাস ছাড়লো রেহান।রুপন্তীর এমন বিহেভিয়ার আশা করে নি ও।রুপন্তী চুপচাপ বসে আছে রুহীর পাশে। রুহী বোনকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু রুপন্তী কোন কিছু বলছেনা।
রোয়েন ড্রাইভিং এর ফাঁকে রুহীকে দেখছে লুকিং গ্লাসে।আগের থেকে আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে এ কয়েকদিনে।সুন্দরী হওয়াটা তো শুধু বাহানা রোয়েনকে ঘায়েল করার চেষ্টায় আছে ওর মায়াবতী।প্রথম দিন সেই ক্লাবে রুহীকে দেখেই ঘায়েল রোয়েন।এরপর থেকে যতোবার যতোভাবে রুহীকে দেখেছে ততোবারই হাজার ভাবে ঘায়েল হয়েছে এই মাফিয়া প্রিন্স।সেদিনের মতো লং ড্রাইভ শেষে রিসোর্টে ফিরে আসে সবাই।রুহী ফ্রেশ হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচছে। রোয়েন হাতে দুটো কাপ ফ্লাক্স নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।রুহী আয়নায় রোয়েনকে দেখে মৃদু হাসলো।রোয়েন রুহীর দিকে তাকিয়ে টিটেবিলের ওপর সেগুলো রেখে রুহীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ওর চুলের ওপর চুমু দিলো।
রুহী চোখ বুজে ফিল করছে স্বামীর ছোঁয়া।রুহীর হাত ধরে খাটে বসালো রোয়েন।হাতে তোয়ালে নিয়ে রুহীর চুল মুছে দিতে লাগলো রোয়েন।রুহী হেসে মুখের সামনে কফি মগটা নিতেই কেমন যেন লেগে উঠলো ওর।দ্রুত মগটা টেবিলে রাখলো রুহী।রোয়েন কিছুটা অবাক হয়ে রুহীর সামনে বসলো।
-কি হলো খাচ্ছো না যে?ভালো লাগছেনা?
-ভালো লাগছেনা।কেমন যেন ঘ্রান।অসুস্থ গলায় বলল রুহী।
রোয়েন নাকের সামনে কফিটা ধরলো।
-কই ঠিক আছে তো।বলে উঠে রোয়েন।
-রুহী কিছু বলতে পারেনা।ওর ভালো লাগছেনা কিছু।
রোয়েন ভ্রু কুঁচকে রুহীর দিকে তাকিয়ে আছে।রুহীর কপালে হাত রাখে।রুহী দূর্বল হয়ে রোয়েনের কাঁধে মাথা রাখলো।রোয়েন রুহীর মাথা নিজের কোলে রেখে ওর চুল হাত বুলাতে শুরু করলো।
আরো দুইতিনদিন সেখানে কাঁটিয়ে ঢাকায় ফিরে আসে ওরা।বাংলাদেশে আছে আর পনের দিন।ঢাকায় বেশ কিছু কাজ পড়ে আছে রোয়েনের।এদিকে রুহীর শরীরটা ও ভালো নেই। কিছুই খেতে পারছেনা।কথায় কথায় রেগে যাওয়া,অল্পতেই কেঁদে দেয়া,অল্পতেই খুশি হওয়া ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে রোয়েনকে।অপরদিকে রুপন্তী ভীষন মনমরা হয়ে থাকে বেশির ভাগ সময়।রেহানের সাথে আগের মতো কথা বলেনা।রেহান ভালোবেসে কাছে টানলে সরে যায়।সবসময় চুপচাপ থাকে।আনিলা বেগমের সাথে কথা বলতে দেখা যায় না রুপন্তীকে।যতক্ষন কথা বলে মামীর সাথে নাহলে রুহীর সাথে ফোনে।
রুপন্তীকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে রেহান। কিন্তু রুপন্তী কওছুই বলেনা।
সেদিন রোয়েন আর রুহী বেড়াতে আসলো আজিজ রায়হানের বাসায়। রোয়েনের সামনে এসে দাঁড়ালো রেহান।
-ভাইয়া একটা কাজ করবেন?প্লিজ!!!বলে উঠে রেহান।
-কি? ভ্রু কুঁচকালো রোয়েন।
-রেহান সব খুলে বলল।সবাইকে নিয়ে একটু বাহিরে গেলে ওর সাথে কথা বলতে পারি।
রোয়েন ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলো।ওকে ডান।রেহান হাসলো।রোয়েন সবাইকে নিয়ে চাইনিজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।রুম থেকে বেরিয়ে এলো রুপন্তী।রুহী আর রোয়েনের কণ্ঠস্বর শুনে।বাহিরে এসে কাউকে পেলো না ও।পুরো বাসা খালি।কই গেলো সবাই?ভাবতে ভাবতে রুপন্তী রুমে এসে দাঁড়ায়।হঠাৎ দরজা আটকানোর শব্দে চমকে উঠে রুপন্তী।পিছনে তাকিয়ে রেহানকে দেখতে পায় রুপন্তী।রেহান দরজা বন্ধ করে ওর সামনে দাঁড়ালো।
রুপন্তী রেহানের পিছনে তাকায়।দরজা আটকালেন কেন?
-আমাকে বুঝাও।রুপন্তীর দুকাঁধে দুহাত রেখে বলল রেহান।
-রেহানের হাত সরিয়ে চলে আসতে নিলে রেহান শক্ত করে রুপন্তীর কাঁধ চেঁপে ধরলো।কি হলো?কথা বলছি দেখছোনা?
কথার জবাব না দিয়ে কোথায় যাচ্ছো?বেশ রাগ করেই বলে রেহান।
-কিছু বলার নেই সরে যান।রেহান থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো রুপন্তী।রেহান আরো জোরে ওকে চেঁপে ধরলো।
-আজই সকল জবাব চাই?কেন এমন করছো?এমন মনমরা হয়ে কেন থাকো?কি হলো তোমার?এভাবে অবহেলার মানে কি রুপন্তী?চিৎকার করে উঠলো রেহান।
-কিছুই নেই বলার।বলে উঠে রুপন্তী।
-আমার কসম লাগে রুপন্তী।বলো কি হয়েছে তোমার?চিৎকার করে বলল রেহান।
রুপন্তী কাঁদতে শুরু করলো।আমি এ বাসার এ বংশের কেউনা রেহান।আমার বাবা নেই মা ও নেই।আমার জন্মের ঠিক নেই।আমি কে রেহান আমার পরিচয় কি?আমার বাবা কে?আমি কার মেয়ে?
রেহান যেন জমে গেছে।কি বলছো এসব?এসব আজেবাজে কথা কে বলেছে তোমায়?রুপন্তী আমার দিকে তাকাও(রুপন্তী দুগালে দুহাত রেখে)বলো কি হয়েছে?জিজ্ঞেস করে উঠে রেহান।রুপন্তী কাঁদতে কাঁদতে সেদিনকার সব কথা বলে দিলো।আজিজ রায়হান আর আনিলা বেগমের কথা।আপনাকে বলিনি আপনাকে হারানোর ভয় খুব কষ্ট দিচ্ছিলো তাই।
কাঁদতে কাঁদতে বলল রুপন্তী।
-পাগল তুমি?ভালোবাসাটা কি এতোই ঠুনকো?
রেহান সবসময় তোমাকে ভালোবাসবে।যা হয়ে যাক সেটা রেহান কেয়ার করেনা করবে ওনা।আগে জানতাম তুমি আমার ফুপাতো বোন।এখন জানি আমার হবুস্ত্রী।আর সামনে জানবো মিসেস রুপন্তী রেহান রাহমান হিসেবে।আই লাভ ইউ বেবি।বিশ্বাস রেখো আমার ওপর।রুপন্তীর একটা হাত নিজের বুকে রেখে রেহান বলল এই বুকটা সবসময় তোমার আশ্রয় হয়ে থাকবে।এই হাত তোমাকে সারাজীবন নিজের বুকের সাথে আগলে রাখবে।আর।এই মানুষটা সারাজীবন তোমাকে উষ্ণ ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবে।রুপন্তী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।রেহানের প্রত্যেকটা কথা ওর বুকের মাঝে শীতল শিহরন বয়ে গেলো।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে রুপন্তী।রেহান রুপন্তী কপালে ঠোঁট রাখতেই বুঝলো কাঁপছে রুহী।রেহান রুপন্তীকে শক্ত করে জড়িয়ে ওর গালে কপালে অনবরত চুমু দিয়ে ওর ঠোঁটজোড়াকে নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে নিলো।
রেহানের নেশায় মাতাল আজ রুপন্তী।নিজের পুরোটুকু দিয়ে রেহানকে চুমু খাচ্ছে রুপন্তী।
রেহান রুপন্তী রসালো ঠোঁটজোড়াকে শুসে নিতে নিতে রুপন্তীকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।রুপন্তীর ঠোঁট থেকে সরে এসে ওর পেটের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে সেখানে চুমু দিলো রেহান।
নিশ্বাস আটকে আসছে রুপন্তীর।উত্তেজনায় ওর পেটে কাঁপন অনুভব করছে রেহান।
রুপন্তীর পেট থেকে সরে এসে ওর গলায় মুখ ডুবালো রেহান।
চাইনিজে খাবার সেড়ে রেহান রুপন্তীর জন্য কিছু খাবার পার্সেল করে পাঠালো রোয়েন।রুহীকে নিয়ে দ্রুত ঘরে ফিরে এলো ও।ঘরে ঢুকেই দৌড়ে ওয়াশরুমে রুহী।
রোয়েন দৌড়ে রুহীর পিছনে গেলো।ভিতর থেকে বমির শব্দ ভেসে আসছে।
বুক কেঁপে উঠলো রোয়েনের।
-রুহী আর ইউ ওকে?বাহির থেকে চিৎকার করে বলল রোয়েন।
-ভিতর থেকে জবাব না আশায় চিন্তিত হয়ে পড়ে রোয়েন।
-রুহী কি হলো?আমি আসবো?বেশি খারাপ লাগছে?চিৎকার করে বলল রোয়েন।কিছুক্ষন পর পানি ছাড়ার শব্দে শান্ত হলো রোয়েন।রুহী মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসতেই রোয়েন ওকে কোলে নিয়ে খাটে বসালো।
-কি হলো?বমি করছিলে কেন?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-খাওয়ায় প্রবলেম হয়েছে মনে হয়।বলে উঠে রুহী।
-রোয়েন চিন্তিত হয়ে রুহীকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো।
-রুহী কাল রফিকের বাসায় একটা পার্টি আছে।স্পেশালী আমাদের জন্যই ওরা পার্টিটা এ্যারেঞ্জ করেছে।বলে উঠে রোয়েন।
-হুম।কখন?জিজ্ঞেস করে উঠে রুহী।
-সন্ধ্যা সাতটায় বের হবো।বলে উঠে রোয়েন।
-ওকে।যাবো বলেই হাসলো রুহী।রোয়েন রুহীর ঠোঁটজোড়াকে নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে শুয়ে পড়লো।
চলবে