Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 102
খুব সকালেই রুহী আর রোয়েনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আরাবী আরাভের কান্নার শব্দে।ওরা দুজনে উঠেই ওদের কোলে নিয়ে কান্না থামাতে চেষ্টা করে।রুহীর চোখ এখনো ফুলে আছে।ঘুমের ঘোরটা যে এখনো কাঁটেনি।রোয়েন রুহীর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি ঘুমাও ওদের আমি দেখছি।না ওরা অনেক বিরক্ত করবে। ওদের ঝাঁকি দিলে ঘুমিয়ে যাবে।বাবুদের ঘুম পাড়িয়ে রুহী আধঘন্টা চোখ বুজে।হঠাৎ আজহান রায়হান চৌধুরীর ডাকে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়।লোক টা সকাল হলেই এমন করে।জোরে জোরে গলা খাঁকারি দেয়,মাঝে মধ্যে জোরে বায়ু দূষন ও করে।আর যতো রুম পার করবে সব গুলোর দরজায় জোরে বাড়ি লাগাবে।রুপন্তী তো ভীষন রেগে আছে এই লোকের ওপর।তার ওপর সেদিন রুহীকে কথা শুনিয়েছে শুধু সেদিনই না রুহীকে দেখলেই কথা শুনাতে থাকে।রুপন্তীতো ভেবেই নিয়ে আজ কিছু বললে ও নিজে ও শুনাবে কথা।বুড়ো হয়েছে বলে কি যা ইচ্ছে করবে নাকি।সবারই মানইজ্জত আছে।আপি কিছু বলে কি হয়েছে ও শুনাবে এই লোককে হুহ।নিজে নিজেই বলতে থাকে।এদিকে রেহান কানে বালিশ চেঁপে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।
রোয়েনের রুমের সামনে এসে দরজায় বাড়ি দেয়ার আগেই দরজা খুলে রোয়েন।রুহী শোয়া থেকে উঠে বসে আড়মোড় ভাঙ্গছে।রোয়েনকে দেখে হাসেন আজহান।কি বড় নাতি ঘুম ভাঙ্গলো নি?জি দাদা ভেঙ্গেছে।বলে উঠে রোয়েন।তা নাতনীর তো এখনো ঘুম ভাঙ্গলো না?এমন দেরি করেই কি ঘুম ভাঙ্গে?জিজ্ঞেস করেন আজহান রায়হান।না দাদা কাল সবাই বেশ রাত পর্যন্তই জেগেছে।বলে উঠে রোয়েন।হু দেখছি।ওনার মাথায় রুহীর নাচটাই চলছে।কথা শুনিয়ে দিতে পারলে যেন ওনার পেটের ভাত হজম হতো।রোয়েনের রুমের সামনে থেকে চলে আসেন আজহান রায়হান।রুহী মন খারাপ করে মাথা নিচু করে আছে।রুহীর দিকে তাকায় রোয়েন।রুহী প্লিজ মন খারাপ করোনা।আমরা আছি তোমার সাথে।বলে উঠে রোয়েন।কাল নেচেছিলাম ওনি হয়ত সেজন্য আমার ওপর রেগে আছেন।মন খারাপ করে বলে রুহী।রোয়েন কাছে এসে রুহীর কপালে চুমু দিয়ে বলে “কথা শুনিয়ে দেখুক তো আমার বৌ আপুকো ওনাকে গ্রামে পাঠাবো তৎখনাৎ।”হোয়াট বৌ আপু!!রোয়েন সিরিয়াসলি!!!!কিছুটা রেগে বলে রুহী।বিছানা থেকে নেমে আসে রুহী।রোয়েন পিছিয়ে যেতে যেতে বলল অবশ্যই দেখো ফাস্ট অফ অল আমার চাচাতো বোন তুমি আর তেমার সাথে বিয়ে ও হয়েছে।তার মানে তো তুমি আমার বৌ।তাহলে বৌ আপুই তো হলা তাইনা?বলতে বলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় রোয়েন।রুহী রোয়েন কে ধাওয়া করতে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই দরজা লাগিয়ে দেয় রোয়েন।রুহীকে আটকে ফেলে রোয়েন দেয়ালের সাথে।আজ রুপন্তীর গায়ে হলুদ আর মেহেদী।ফাহিমা আর নিতু এসেছে সাহায্য করতে।সবাই একটু একটু বসে হলুদ বেঁটে দিচ্ছে।রুহীকে ও বসতে হলো।বড় বোন বলে কথা।রুহী হলুদ একটু হলুদ বেঁটে উঠে এলো।রুমের কাছে আসতেই রোয়েন ওর হাত টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে নিজের সাথে চেঁপে ধরলো।
আজ রুপন্তীর হলুদ আর মেহেদী।ফাহিমা আর নিতু আগেই চলে এসেছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।
হলুদ বাঁটা হবে এখন।রুপন্তী ছাড়া মেয়েরা সবাই একটু একটু হলুদ বাঁটছে।রুহীকে ও বাঁটতে হবে বড় বোন বলে কথা।হলুদ বেঁটে ময়লা হাত নিয়ে উঠে যায় রুহী।রুমের কাছে এগিয়ে আসতেই রোয়েন রুহীর হাত চেঁপে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়।
আর একটু হলে রুহী যেন হার্ট এটাক করতো।রোয়েন রুহীকে নিজের সাথে চেঁপে ধরে।নেশাজড়ানো চোখে তাকিয়ে থাকায় শীতল বাতাসে রুহীর ভিতরটা কেঁপে উঠে।রুহী একটু হেসে রোয়েনের গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়।রোয়েন মুখ রুহীর দিকে এনে রুহীর গালের সাথে গাল লাগিয়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়।শিহরনে চোখ বুজে নেয় রুহী।রুপন্তী হলুদের লেহেঙ্গা ভাজ করে রাখছিলো।হঠাৎ রেহান পিছে থেকে দৌড়ে এসে দুহাত দিয়ে ওর গালে হলুদ ঘঁষে ঘঁষে লাগিয়ে দিতে থাকে।সামলাতে না পেরে রুপন্তী খাটে পড়ে যায়।রেহান ওর ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে।রুপন্তীর চেহারায় আলাদা এক উজ্জ্বলতা শোভা পেয়েছে।রেহান কে দেখে আতঙ্কিত গলায় রুপন্তী বলে এখানে কেন?চলে যাও।সবাই কি ভাববে?
রেহান রুপন্তীর ওপরে শুয়ে থেকেই বলল সবাই কি ভাবলো না ভাবলো সেটা দিয়ে আমি কি করবো?রুপন্তীর মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেছে।আজহান রায়হান যদি জানেন এক রুমের ভিতর ও আর রেহান।তাহলে তো তুফান খাড়া করবেন।রেহান প্লিজ চলে যাও।দাদ,,,,,,রুপন্তীর ঠোঁটে ঠোঁট চেঁপে ধরেছে রেহান।রুপন্তীর শরীরের মিষ্টি ঘ্রান পাগল করছে রেহানকে।রেহান রুপন্তীর উড়নায় হাত দিতেই রুপন্তী ধাক্কা দিয়ে সরায় রেহানকে।ছি!!রেহান।চলে যাও।কালই তো বিয়ে আমাদের।বিরক্তি নিয়ে বলল রুপন্তী।আ’ম সরি জানিনা তোমার কাছে এলে নিজেকে রাখতে পারিনা।আমি আসি।বলে বেরিয়ে যায় রেহান।রুপন্তীকে সাজিয়ে দিচ্ছে রুহী।বিকেল সাড়ে চারটা বাজতে চলেছে।হলুদ লেহেঙ্গায় পরী লাগছে রুপন্তীকে।রায়না রাহমান বাবুদের নিয়ে ব্যাস্ত।ওদের নিয়েই ওনার সময় চলে যায়।ভীষন ভালোবাসেন ওদের।ওনার কলিজার টুকরাই তো ওরা।
হলুদ ফুলে রুপন্তী শোভিত।কি মায়াবী চেহারা ও।রুহীতো বোনকেই দেখছে।রোয়েন রেহানকে রেডি করিয়ে দিলো।সাদা পাঞ্জাবী পরেছে রেহান।একসাথেই হলুদ হবে ওদের।রুপন্তীকে রেডি করিয়ে নিজে ও রেডি হলো রুহী।হলুদ সিল্কের শাড়ী। সোনালী পাড় আছে শাড়ীটিতে।খোঁপায় গাঁদা ফুলের মালা জড়ালো রুহী।বিকেল থেকে বরটা কে একটু ও দেখেনি ও।খুব পেট পুড়ছে তার জন্য।ছাদে অনুষ্ঠান হবে।অবশ্য বিয়ের জন্য গুলসানের একটা কমিনিউটি সেন্টারকে চুজ করা হয়েছে।রুপন্তীকে রুহী আর রায়না রাহমান নিয়ে এলো স্টেজে।আর রোয়েন সাইফ রাহমান নিয়ে এলো রেহানকে।ঠিক তখনই রোয়েনকে রুহী দেখতে পায়।যেন বহুল প্রতীক্ষিত মানুষটার দেখা পেয়েছে রুহী।তেমনই হাসি ওর মুখে।রুপন্তী আর রেহানকে স্টেজে দিয়ে রোয়েন রুহী পাশাপাশি সোফায় বসলো।রুহীর সেলাইয়ের জায়গা টা কেমন ব্যাথা করছে।ওদের পাশেই আরাভ আরাবী বেবি কারে শুয়ে আছে।রুহীর হাত চেঁপে নিজের পায়ে রাখলো রোয়েন।রুহী ও হাত জোরে ধরে আছে স্বামীর।রুপন্তী আর রেহানের গালে হলুদ দেয়া হলো।খুব মজা ও হলো।তারপর কিছু মেয়ে কে এনে বৌ আর বাকি সব মেয়েদের খুব সুন্দর করে মেহেদী পরানো হলো।মেহেদী দিয়ে রুহী নিচে আসতেই ওকে থামালেন আজহান রায়হান চৌধুরী।
.
.
.
.
.
.
.
কি রুহী তুমি নাকি কাজ করতে পারবানা।তোমারে কাঁটছে দেইখা।কিন্ত কাইল তো ঠিকই নাচলা রোয়েনের লগে তখন কি কিছু অয়নাই?
রুহীর চোখজোড়া ভিজে এসেছে।দাদা সবসময় এভাবে কেন কথা বলেন?আমি কি আপনার কেউ না।আমি তো আব্বুর মেয়ে।কেঁদে দিয়ে বলল রুহী।চুপ থাক।সকাল সাত আটটা পর্যন্ত ঘুম।খুব আরামে আছিস বাপের বাসায়।রোয়েনের বাসায় তো কাজ ও করিসনা মনে হয়।বেচারা তোকে বিয়ে করে ঠোঁকেছে।অপারেশন করেছে বলে কাজ করবেনা ঠিকই লাফাইতে পারোস।বেহায়া আজন্মা মেয়ে কোথাকার।
ঠিক তখনই রুপন্তী এসে ওদের সামনে।দাদু কি প্রবলেম আপনার?মাথায় কি সমস্যা আছে আপনার?নাকি কিছু খেয়ে এসেছেন।আচ্ছা লোক তো আপনি?আসার পর থেকে আপির পিছনে পড়েই আছেন।আব্বু আপনার ভাইয়ের ছেলে।আপনার ছেলে না।সো লিমিট বজায় রাখেন।আপি আপনার কি কোন ক্ষতি করেছে?নাকি আপনার গোয়ালের ধান চুরি করেছে?
বলেন? চুপ কেন বলেন?বেশ রেগেই যায় রুপন্তী।
রুপন্তী প্লিজ চুপ কর।কিছু বলিসনা।বদদোয়া লাগবে।কাঁদতে কাঁদতে বলল রুহী।আপি বদদোয়া লাগুক।একদিন না একদিন লাগারই কথা ছিলো।ওনি তোর সাথে যা তা ব্যাবহার করছে।আপনি আমাদের দাদা।অনেক সম্মানীয় আর শ্রদ্ধার পাত্র।এমন ব্যাবহার করবেননা যেন আমরা আমাদের লিমিট ভুলে যাই।বলেই সরে যায় রুপন্তী।
সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।রোয়েন রুহীকে আর বাবুদের নিয়ে রুমে ঢুকে গেলো।
রুহী অবাক বোনের আচরনে।অপরদিকে আজহান রায়হান মুর্তির মতো আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন।আজিজ রায়হান কিছু বলতে যাবেন।তৎখনাৎ আজহান রায়হান নিজের রুমে চলে আসেন।সেদিনকার রাতটা যেমনতেমন করে কেঁটে যায়।পরশু রুপন্তীর বিয়ে।এই দুইদিন আজহান রায়হান কোন প্রকার কথাই বলেননি রুহী আর রুপন্তীর সাথে।
রুহী খুব বকে রুপন্তীকে।কারন ওনি যাই করুক যাই বলুক মুরব্বী মানুষ তাও আবার দাদা।রুপন্তী শুধু একটা কথাই বলে ওর বোনকে কেউ কিছু বললে ও সহ্য করতে পারেনা।আর ওনাকে কথা গুলো শোনানোর দরকার ছিলো বলে মনে করে রুপন্তী।
রুপন্তীর বিয়ের দিন এসে গেছে।সকাল থেকেই কাজের খুব ধুম পড়ে গেছে।
গ্রাম থেকে আরো কিছু গেস্ট এসেছে।কিছু দূরসম্পর্কের গেস্ট ও আছে।বাচ্চাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘর কোলাহল পূর্ন। এদিকে আরাবী আরাভ একটু ঘুমাতে ও পারছেনা।এমনকি জাগনা থেকে ও শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।শব্দে ভয় পায় ওরা।
রোয়েন ছেলে মেয়েকে নিয়ে বসে আছে।দুজনের কান্না সামলাচ্ছে ও।
রুহী ও একটু ও ফ্রী হতে পারছেনা কাজ থেকে।ওকে অবশ্য অনেক বার বাবুদের কাছে যেতে বলেছিলো রায়না রাহমান কিন্তু কাজ ছেড়ে চলে আসা যায় নাকি?
কিন্তু তারপর ও সময় করে বাচ্চাদের খাইয়ে এসেছে রুহী।
কাজের কারনে বাচ্চাদের সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করতে পারেনা ও।
এদিকে গ্রামের গেস্টরা রেহান আর রুপন্তীকে একবাসায় দেখে ওনাদের খুব বিরক্ত লাগলো।এক বাসায় থাকলে বিয়ে করার কি হলো?ঢং!!!আগেই তো সব করে ফেলেছে।আর এখন বিয়ে করে দেখাচ্ছে কতো ভালো তারা।
এমন কাঁনা ঘুষা চলতেই থাকে গ্রামের মানুষগুলোর মাঝে।
রুপন্তীর বান্ধুবীরা ও চলে এসেছে সকাল সকাল।
রোয়েন রুম থেকে বের হতেই অপ্সরার সামনে পড়ে রোয়েন।মেয়েটা রুপন্তীর খুব ভালো বান্ধুবী।রোয়েনকে আপাদমস্তক দেখে নিলো মেয়েটা।মনে মনে ভাবছে ইসস কি হ্যান্ডসাম।এমন একটা বর হতো আমার।উফ!!!এনিই তো হতে পারে।যাই রুপন্তীর থেকে জেনে আসি ওনি কে?রোয়েন ভ্রু কুঁচকে অপ্সরাকে দেখছে।
মেয়েটা কেমন করে দেখছে ওকে।তারপর অপ্সরা কিছু না বলে রোয়েনের সামনে থেকে দৌড়ে রুপন্তীর রুমপর দিকে চলে গেলো।
রুপন্তী রুমেই ছিলো।অপ্সরা রুপন্তীর পাশে দোস্ত!!বলে উঠে অপ্সরা।কি রে?হেসে বলল রুপন্তী।তোদের বাসায় ঐ যে হ্যান্ডসাম ড্যাশিং হট লোকটা কে রে?প্লিজ দোস্ত একটু সুযোগ করে দেনা প্রেম করার।
কি পরে আছে সে?আর কেমন দেখতে?জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।কেমনে বলবো লজ্জা করছে।চল দেখাই।বলে উঠে অপ্সরা।রুপন্তীকে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে ও।রোয়েনের সামনে এনে দাঁড় করায় অপ্সরা রুপন্তীকে।রুপন্তীকে গুঁতো দিচ্ছে অপ্সরা।এই তো ওনি।
চলবে