Love Right

Love Right ! Part- 18

নিশু:আমি তোমাকে ছাড়বো না নীল!
ইশু বিরক্ত হয়ে বললো…পাগলের সাথে পাগল মেলে।নিশুর সাথে দৌঁড় লাগিয়ে ও নিজেও বেশ হাঁপিয়ে গিয়েছে।
নীল এখনো হাসছে নিশুর দিকে তাকিয়ে।নিশুর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।
নীল:শিক্ষা হয়েছে?
নিশু রাগে কথা বলতে পারছে না।নীল বেরিয়ে যেতেই ও রুমে বসে ভাবছে কি পাপ করেছিলো জীবনে যে নীল শয়তানটাকেই ওর ভালোবাসতে হলো?..আস্ত শয়তান একটা!

নীল ব্রেকফাস্টের জন্য নিচে নামতেই ইলারা বেগম জিজ্ঞেস করলেন….নিশু কোথায়?
নীল নিশুকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেই ইলারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো…ওর ডায়রিয়া!
ইলারা বেগম:😮মানে?
নিশু:(ছিহ!…আল্লাহ তোর বিচার করুক!)
ইলারা বেগম নিশুকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলেন।নিশু কাছে আসতেই ইলারা বেগম জিজ্ঞেস করলেন….কখন থেকে?
নিশু:কি?
ইলারা বেগম:ডায়রিয়া?
নীল হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম।
নিশু কেঁদে দেওয়ার অবস্থা।ছি!ছি!ছিহ!..ওর মানইজ্জত বলে আর কিছু রাখলো না শয়তানটা।
ইলারা বেগম:কি হলো বল?
উনি নীলকে ধমক দিয়ে বললেন….বদমাশ ছেলে তুই হাসছিস কেন?….তারপর নিশুর দিকে তাকিয়ে বললেন….কি হলো বল?
নীলের হাসি থামছে না।ইশু এসে ডাইনিং এ দাঁড়িয়েছে।ইশুকে দেখেই ইলারা বেগম বললেন….কি রে মেয়েটার যে শরীর খারাপ আমাকে বলিস কি কেন?
ইশু:কি হয়েছে ওর?
ইলারা বেগম:ডায়রিয়া!
নীল কিছুতেই হাসি কন্ট্রোল করতে পারছে না।নিশুর চেহারাটা দেখার মত।
ইশু:😐কে বলেছে?
ইলারা বেগম:নীল!
ইশু নীলের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বললো….ভাইয়া??
ইশু ইলারা বেগমকে সব খুলে বলতেই উনি নীলের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।
ইলারা বেগম:আসতে না আসতেই ওর পেছনে লেগেছিস?
নীল:আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।আমি আসছি।
নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো…চলো?
ইলারা বেগম:ও ব্রেকফাস্ট করবে না?
নিশু:না!
নীল ভালো করেই জানে নিশু এখন নীলের ওপর রাগ করে কিছু খাবে না।
নীল:একদিন না খেলে কিছু হয় না?
নিশু:😐
নীল ওকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইলারা বেগমকে ইশারায় বোঝালো যে ওকে বাইরে খাইয়ে নিবে।

গাড়ীটা একসাইডে পার্ক করে নীল নিশুকে নিয়ে লিফটে উঠলো।ও তিন তলায় বাটন ক্লিক করতেই নিশু ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো।
নীল:ক্যান্টিনে যাবো!
নিশু:আমি কিন্তু কিছু খাবো না নীল!
নীল:তো?….আমি তোমাকে খেতে বলেছি?…তখন ঠিকমত ব্রেকফাস্ট করে আসতে পারি নি তাই।
নিশু:(ইশসস!…কি লজ্জা!কি লজ্জা!)
নীল ক্যান্টিনে বসে খাবার অর্ডার করলো।খাবার আসার ফাঁকে নীল ওকে প্রশ্ন করলো….তোমার কাজ কি বলতো?
নিশু:কি??
নীল:তুমি আমার পি.এ তাই না?
নিশু:হুম!
নীল:তাহলে তোমার কাজ কি?
নিশু:তোমাকে হেল্প করা!
নীল:এক্সজেক্টলি!…তো তুমি এখন কি করবে?…আমি যে খাবারগুলো অর্ডার করেছি তুমি সব টেস্ট করে দেখবে।
নিশু:মানে?
নীল:বাংলা বোঝো না?
নিশু:😐
খাবার টেবিলে আসতেই নীল ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো…শুরু করো?
নিশু:পারবো না।
নীল:না পারলে আর কি করা লারাকে ফোন করে বলতে হবে রুশাকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।
নিশু:ও আসুক শুধু একবার!
নীল:তুমি শুরু করবে?…নাকি আমি ফোনটা করবো?
নিশু:খাচ্ছি তো!
নিশু সব আইটেম থেকে একটু একটু করে খেয়ে বলছে কোনটা কেমন?…নীল ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছে এমনি খেতে বললে..ম্যাডাম নাটক শুরু করে দিতো।তারচেয়ে বুদ্ধিটা ভালোই কাজে দিয়েছে।
ওর খাওয়া শেষ হতেই নীল বললো….আমার একটাও পছন্দ হয় নি।আমি খাবো না।…চলো উঠি?
নিশু:ইচ্ছে করে এমন করেছো না?
নীল:😁

নীল চলে গেলে নিশু ক্যান্টিনে বসে বসে নীল বকছে।শয়তানটা কেমন চালাকি করলো ওর সাথে?
এমন সময় আয়াত এসে ওর সামনে চেয়ারে বসলো।
নিশু:আয়াত?….তুমি?..হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ!
আয়াত:গতকাল ঢাকায় ফিরেছি!…তারপর বলো তোমার কি খবর?…নীলাস হাসানকে সোজা করতে পেড়েছো?
নিশু বিরক্ত হয়ে বললো….বলো না শয়তানটার কথা।আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে?
আয়াত:আমি যতদূর জানি নিশিতা জামান অন্যের মাথা খারাপ করতে ওস্তাদ।উনার মাথা খারাপ করার সাহস নীলের হলো কি করে?
নিশু ওকে এইকয়দিনের সব ঘটনা খুলে বললো।অবশ্য ফোনেও বলেছিলো কিন্তু সামনাসামনি সব বলার মজাই আলাদা!
আয়াত হাসতে হাসতে বললো….তারমানে নীল আজকে তোমাকে ভালোই দিয়েছে?
নিশু:হুম!
আয়াত:কোন ব্যপার না!এর মানে ও তোমাকে ভালোবাসে।তা না হলে তোমাকে নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যথা থাকতো না।
নিশু:আমি জানি!…কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে রুশা এই অফিসেই কাজ করে।আর তুমি তো জানো ও আমাকে কি শর্ত দিয়েছিলো।
আয়াত গালে হাত দিয়ে চিন্তিত গলায় বললো…এই রুশাটা আবার কি করবে কে জানে?
নিশু:আস্ত বজ্জাত একটা!

নীল একমনে ফাইল দেখছিলো।নিশু এসে দরজায় টোকা দিলো।
নিশু:আসবো?
নীল:(আল্লাহ জানে কি শয়তানি করার জন্য এসেছে এই মেয়ে?)ইয়েস!…কাম ইন!
নিশু:তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
নীল ব্যস্ত থাকার ভান করে ফাইল থেকে মুখ না উঠিয়েই বললো….নিশু আমি একটা ইম্পটেন্ট কাজ করছি।তোমার যদি সত্যিই জরুরী কিছু বলার থাকে বলে তাড়াতাড়ি বিদায় হও।আর না হলে ডিস্টার্ব করবে না।
নিশু ওর সামনে গিয়ে ফাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো…আমি জানি তোমার কোন ইম্পটেন্ট কাজ নেই!…তুমি বাহানা বানাচ্ছো?
নীল:(হরিণের চোখ এই মেয়ের)….বলো কি বলবে?
নিশু:আয়াত এসেছে?
নিমিষেই নীলের মুখটা কালো হয়ে গেলো।অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।
আয়াত:আসতে পারি?
নীল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।এতগুলো বছর পর আয়াতকে দেখে ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।
আয়াত নিশুর দিকে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো….ইউর এক্সিলেন্সি?…দয়া করে আমাকে কিছুক্ষণ মি.নীলাস হাসানের সাথে একা কথা বলার অনুমতি দান করুন!
নিশু ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো…আমি আমার নীলকে একা কারো সাথে ছাড়ি না।যেহেতু তুমি ছেলে তাই আবেদন মঞ্জুর!
নিশু বেরিয়ে যেতেই আয়াত নীলের দিকে তাকিয়ে বলল…তো মি.নীলাস হাসান?…কি খবর আপনার?
নীল:ভালো!…তোর কি খবর?
আয়াত:মনে আছে তাহলে?
নীল চুপ করে আছে।আয়াত ওর রুমের চারপাশে চোখ বুলাতেই দেখলো একপাশে ওর আর নীলের একটা ছবি টাঙ্গানো।
আয়াত আর দিকে তাকিয়ে বললো…ছবি আছে,তারমানে ভালোবাসাও আছে?
নীল:সবসময় ছিলো এবং থাকবে।আমি জানি তোর কোন দোষ ছিলো না।
আয়াত:উহুঁ!…তুই শুধু অর্ধেকটা জানিস!…তার আগে একটা প্রশ্ন!
নীল:কি প্রশ্ন?
আয়াত:এত কিছুর পরও ওকে ভালোবাসিস?
নীল:…….
আয়াত:কেন?…এতকিছুর পরও কেন ওকে ভালোবাসিস?
নীল:ও আমার সবচেয়ে বড় সত্যি।ওর চোখের দিকে তাকালে আমার বাকি সব কিছু মিথ্যে মনে হয়।
আয়াত:নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাও?
নীল:হুম!….আমি জানি আমার নিশু আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারে না।
আয়াত ভীষণ মুগ্ধ হয়ে নীলের কথা শুনছে।এতকিছুরপরও নিশু??..Really.. .They are made for each other!
নীল:কি ভাবছিস?
আয়াত:এবার তাহলে আসল কথা বলি?
নীল:মানে?
আয়াত:নিশুরও কোন দোষ ছিলো না।ও বাধ্য হয়ে এসব করেছিলো…তুই জানিস তুই চলে যাওয়ার প্রায় নয়মাস পর্যন্ত ওর কতটা অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলো?…ওকে নিয়ে মালিহা আন্টি অনেক চিন্তায় পড়ে গেছিলো।প্রায় ফোন করে আমার কাছে কান্নাকাটি করতো।
নীলের পুরো শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো।কি বলছে আয়াত এসব?…নিশুতো ওকে এসব কিছুই বলে নি?
আয়াত:আমি আর নিশু শুধু মাত্র ভালো বন্ধু।যেমন তুই আর ইশু!
নীল:আয়াত??
আয়াত:হ্যাঁ!
নীল:কিন্তু কি কারনে নিশু এসব করতে বাধ্য হয়েছিলো?
আয়াত:সেটা সময় হলে নিশুই তোকে বলবে?…কিন্তু তুই ওকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন?
নীল:ওই তো আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
আয়াত হাসতে হাসতে বললো…করতেই হবে!…নীলাস হাসানের বউ বলে কথা!
ওদের দুজনকে হাসতে হাসতে বেরোতেই দেখে নিশু এসে পথ আগলে দাঁড়াল।নীল আয়াতের দিকে তাকিয়ে ফিসিফিসিয়ে বললো…ড্রামাকুইন হাজির!
নিশু:আমাকে বের করে দিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
আয়াত:তোমার শ্বশুরবাড়ি।খালামনির সাথে দেখা করতে!
নীল:একে বিয়ে করবে কে?(মুচকি হেসে)
নিশু:আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না আবার বড় বড় কথা বলে?
নীল:😐তুমি আড়ি পেতে আমাদের সব কথা শুনেছো?
নিশু:তারমানে তুমি সত্যি সত্যি একথা বলেছো?
নীল:মোটেও না!
নিশু:আয়াতা??
আয়াত:আমি কিছু জানি না।
আয়াত বেরোনোর সময় নীলের দিকে তাকিয়ে বললো…তোরা গাড়িতে বোস আমি আসছি। তারপর লারার কাছে গিয়ে বললো…এই যে আম,জাম,কাঁঠাল,লিচু তরমুজের চারা গেলাম
লারা:আরেকবার যদি একথা বলেছো আমি তোমার নামে মান হানির মামলা করবো।
আয়াত:তোমার এই বিদঘুটে নামটা কে রেখেছে বলতো?
লারা:আমার নাম ইলারা আহমেদ।স্যারের মায়ের নাম ইলারা বলে উনি আমাকে ছোট করে লারা বলে ডাকেন।অফিসে সবাই এই মানেই ডাকে।আমার কাছে তো নামটা মোটেও বিদঘুটে মনে হয় না?
আয়াত:সেজন্যই তো তুমি তরমুজের চারা,আর আমি আয়াত রহমান।
আয়াত আর দাঁড়ানো ঠিক মনে করলো না।লারা যা রেগেছে এইমুহূর্তে ওর সামনে থাকাটা বিপদের লক্ষণ।অফিসে ঢুকেই লারার সাথে ওর ছোটখাটো একটা ঝগটা হয়েছিল।ও কিছুতেই নীলের পারমিশন ছাড়া কোন ইনফরমেশন দিবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *