I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 17

নিলয়কে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বর্ষার সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো মেঘ। বর্ষা বাগানের দোলনাটায় বসে ছিলো। নিলয়কে এভাবে ফেলে দিতে দেখে বর্ষা দোলনা থেকে উঠে দাড়িয়ে অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।

বর্ষাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ গিয়ে নিলয়কে কলার ধরে টেনে তুলে বললো

— এবার বল নিলয় এক বছর আগে কি করেছিস তুই আর কেনো করেছিস?

মেঘের কথা শুনে বর্ষা ভ্রু কুঁচকে মেঘের দিকে একবার আর নিলয়ের দিকে একবার তাকিয়ে আছে। নিলয় আমতা আমতা করে মেঘকে বললো

— প্লিজ দোস্ত ছেরে দে না আমায়। আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি আমায় মাফ করে দে। যেতে দে আমায়,,

— বুঝেছি তুই সোজা কথায় মানবি না তাইতো? দাড়া তোকে কি করে মানাতে হয় আমি দেখাচ্ছি।

কথাটা বলেই মেঘ আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো। তারপর বাগানের পাশে একটা বাঁশের টুকরা দেখতে পেয়ে সেটা গিয়ে নিয়ে এসে বললো

— এবার বল নিলয় তুই এটার বারি খাবি নাকি সত্যিটা বর্ষাকে বলবি?

মেঘের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পাড়ছে না বর্ষা। তাই বর্ষা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলেই ফেললো

— কি হয়েছে কি মেঘ, তুই এভাবে নিলয় ভাইয়াকে ভয় দেখাচ্ছিস কেনো? আর কি সত্যি বলবেন উনি আমায়?

বর্ষার কথার উত্তর না দিয়ে মেঘ নিলয়ের বাহুতে একটা বারি মেরে দিলো। তারপর বললো

— তুই কি সত্যিটা বলবি নিলয় নাকি আমি তোকে এটা দিয়ে আদর করে সব সত্যিটা বলাবো?

মেঘের হাতের বাঁশের টুকরা দেখে আর ওটার বারি খেয়ে ভয়ে ঢোক গিলে একে একে সব কিছু বলে দিলো বর্ষাকে নিলয়। সব কথা শুনে বর্ষা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে এই নিলয় নামের আপদটার জন্যে আজকে ওর আর মেঘের মাঝে এত ভুলবোঝা বুঝি। সব কিছুর মুলে তাহলে এই নিলয়।

কথাটা ভাবতেই রাগে বর্ষার মুখটা লাল হয়ে গেলো। বর্ষার রাগ বুঝতে পেরে মেঘ নিজের হাতে থাকা বাঁশটা বর্ষার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

— এই নে বর্ষা তোর মনের রাগ মিটা। আমাদের মাঝের সব ঝামেলার জন্যে একমাত্র দায়ি এই নিলয়ের বাচ্চা নিলয়। তুই মার ওকে বর্ষা মার এটা দিয়ে।

মেঘের কথা শুনে শাড়ির আঁচলটা কোমোড়ে বেঁধে মেঘের হাত থেকে বাশটা নিয়ে নিলয়কে এলোপাথাড়ি পিটানো শুরু করলো বর্ষা। আর মেঘ নিলয়ের হাত দুটো ধরে রাখলো যেনো নিলয় কিছু করতে না পারে। নিলয়কে পিটাচ্ছে আর বলছে বর্ষা

— হারামি শয়তান রামছাগল ব্যাটা কুমির তোর জন্যে আজকে আমার এই অবস্থা। শালা তোকে আমি আজকে মেরেই ফেলবো। ব্যাটা হনুমান আমায় ভালবাসিস তুই তাইনা। তোর ভালবাসা আজকে আমি কেলিয়ে বের করবো।

এসব কথা বকছে আর ইচ্ছা মতো নিলয়কে বাশ দিয়ে ধোলাই করছে বর্ষা। এদিকে নিলয় সমানে চিৎকার করে বর্ষাকে থামতে বলছে মাফ চাইছে। সেদিকে বর্ষার কোনো হেলদল নেই। বেশ কিছুক্ষণ পেটানোর পর বর্ষা ক্লান্ত হয়ে বাশটা ফেলে দোলনায় গিয়ে বসে পরলো। তারপর বললো

— দাড়া ব্যাটা হাতির হবু জামাই এনাকন্ডা, একটু জিরিয়ে নেই তারপর তোরে আবার ধোলাই করবো।

এদিকে নিলয়ের হাল বেহাল। বেচারা মাটিতে বসে পড়েছে। আর মেঘ পাশে দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। মেঘের আগে থেকেই ধারনা আছে বর্ষার রাগ সম্পর্কে। কলেজে পড়া কালিন একটা বখাটে ছেলে বর্ষাকে দেখে শিশ বাজিয়ে বাজে কথা বলায় বর্ষা আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়েছিলো ছেলেটাকে। আর ছেলেটা কিছু বলতে পারেনি কারন বর্ষার সাথে মেঘ ছিলো। তাই ইচ্ছা করেই নিলয়কে নিজে না মেরে বর্ষার কাছে নিয়ে এসেছে মেঘ।

একটু পর মেঘের লোকেরা পুলিশ নিয়ে এলো মেঘের বাসায়। মেঘ নিলয়কে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে কিছু টাকা দিয়ে নিলয়ের কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা বলে দিলো। সাথে মানহানি আর ইফটিজিং করার মামলা করলো।পুলিশ নিলয়কে নিয়ে চলে গেলো।
,
,
,
নিলয়কে নিয়ে পুলিশ চলে গেলে মেঘ এসে বর্ষার পাশে দোলনায় বসে বললো

— অনেকদিন পর খুব ভালো একটা বিনোদন পেলাম। তোর সেই ডাকিনি রুপটা আবার দেখতে পেলাম। ইশশ রাগলে তোকে কি দারুন লাগে রে সরিষা।

মেঘের কথা শুনে মেঘের দিকে মুচকি হেসে তাকালো বর্ষা। তারপর দাতে দাত চেপে বললো

— হুমম আমার ডাকিনি রুপটা সত্যিই অনেক সুন্দর তাইনা রে কুম্ভভুত। কিন্তু বিনোদন টা তো এখনো শেষ হয়নি। তবে এবার হবে।

বর্ষার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মেঘ বললো

— নিলয়কে তো পুলিশ নিয়ে গেলো। তাহলে আর বিনোদন কি করে হবে?

— দাড়া দেখাচ্ছি কি করে হবে,,

কথাটা বলেই সেই বাঁশটা আবার হাতে তুলে নিলো বর্ষা তারপর মেঘের দিকে এগিয়ে এসে মেঘকে মারতে মারতে বলতে লাগলো

— ব্যাটা কুম্ভভুত, রাক্ষস খোক্কশ বান্দর হনুমান কুমড়োপটাশ তুই ভালো করে খোজ না নিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছিস আমায়। আজকে তোকে হারে হারে বোঝাবো সন্দেহ করার মজা কাকে বলে। দাড়া বলছি দাড়া কোথায় পালাচ্ছিস তুই ব্যাটা ডাইনোসর।

কথাগুলো বলছে আর মেঘের পিছু হাটতে হাটতে মেঘকে মারছে বর্ষা। বর্ষার হাতের মার খেয়ে মেঘ সমানে পিছাচ্ছে আর বলছে

— আমার ভুল হয়ে গেছে বর্ষা প্লিজ এবারের মতো মাফ কর। উফ আমার লাগছে তো। আউচ ছেড়ে দেনা আমায় প্লিজ বর্ষা আমি না তোর স্বামী।

কথাগুলো বলে পিছাতে পিছাতে সুইমিংপুলের কাছে গিয়ে ধপাৎ করে সুইমিং পুলে পা পিচলে পরে গেলো মেঘ। মেঘকে পানিতে পরতে দেখে বর্ষা হাসতে হাসতে বললো

— বেশ হয়েছে ভালো হয়েছে এবার থাক তুই পানিতে। আমি তোকে একটুও উপড়ে আসতে দিবো না। উপড়ে উঠতে নিলেই এটার মাইর খাবি।

বর্ষার কথা শুনে মেঘ একবার পানিতে ডুবছে তো একবার উঠছে। এমন করছে আর বলছে

— বর্ষা আমায় বাচা আমি সাতার জানি না। আমি ডুবে যাচ্ছি আমায় বাচা বর্ষা।

মেঘের এমন অবস্থা দেখে বর্ষার হাত থেকে বাঁশের টুকরাটা পরে গেলো। বর্ষা এতক্ষণ রেগে থাকলেও এখন সব রাগ চলে গিয়ে ভয় বাসা বাধলো বর্ষার মনে। মেঘকে ডুবে যেতে দেখে বর্ষা কিছু না ভেবেই সুইমিংপুলে ঝাপ দিলো।

কিন্তু সুইমিংপুলে ঝাপ দেওয়ার পর মেঘকে কি বাঁচাবে উল্টো বর্ষাই ডুবে যেতে লাগলো। কারন বর্ষা সাতার জানেনা।

বর্ষাকে ডুবে যেতে দেখে মেঘ দ্রুতো সাতার কেটে বর্ষাকে পারে তুলে কোলে করে উপড়ে উঠিয়ে আনলো। ততক্ষণে বর্ষা বেশ কয়েক ঢোক পানি খেয়েছে। তবে বর্ষার এখনো সেন্স আছে।

সুইমিংপুল থেকে উপড়ে উঠেই মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে জিগ্যেস করলো

— তোর কিছু হয়নি তো বর্ষা? তুই ঠিক আছিস তো? তুই কেনো লাফ দিতে গেলি যখন সাতার জানিস না এটা জেনেও। কি দরকার ছিলো তোর জলে লাফ দেওয়ার।

কথাগুলো বলতে মেঘের চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। বর্ষা কাশতে কাশতে উঠে বসে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো

— তুই ডুবে যাচ্ছিলি তাই তো আমি ঝাপ দিলাম। কিন্তু তুই আমায় মিথ্যে বললি কেনো?যে তুই সাতার জানিস না?

— আমি তো তোর মাইরের হাত থেকে বাচার জন্যে মজা করে বলেছি। আমি কি জানতাম আমার মজা করা টাকে তুই সিরিয়াসলি নিয়ে লাফ দিবি। তুই কি সারাজীবন মাথা মোটাই থেকে যাবি বর্ষা, তোর কি একবারও মনে হলো না যে আমি সাতার না জানলে কি আমার বাড়িতে সুইমিংপুল থাকতো?

মেঘের কথা শুনে মাথা নিচু করে বর্ষা বললো

— আমি তখন এতটা ভাবিনি। আমার শুধু মনে হয়েছে তুই ডুবে যাচ্ছিস তোকে বাচাতে হবে আমার। সেটা যে কোনো কিছুর মুল্যেই। তখন আমি ভুলে গেছিলাম আমি সাতার জানিনা।

বর্ষার কথা শুনে মেঘ বর্ষার কাছে বসে নরম সুরে বললো

— আমার কিছু হলে তোর কি বর্ষা? আমি না তোকে সন্দেহ করে কত কষ্ট দিয়েছি কত বাজে কথা বলেছি তবুও আমায় ডুবে যেতে দেখে তুই কেনো আমায় বাঁচাতে গেলি নিজের জীবনের কথা না ভেবে। আমি মরলে তোর তাতে কি?

মেঘের কথা শুনে বর্ষা কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে আবার গুটিসুটি মেরে বসে গেলো বর্ষা। কারন বর্ষার গায়ের হলুদ রঙের শাড়িটা পানিতে ভিজে একদম লেপ্টে গেছে বর্ষার শরীরের সাথে। বর্ষার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বর্ষাকে কোলে তুলে নিলো মেঘ। তারপর ওকে কোলে নিয়ে সোজা চলে গেলো নিজের রুমে। রুমে গিয়ে ওয়াশরুমের সামনে বর্ষাকে নামিয়ে দিলো মেঘ। তারপর অন্য দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বললো

— তুই ফ্রেশ হয়ে তারাতারি কাপড় পাল্টে নে নইলে অসুস্থ হয়ে পড়বি।আমি অন্য ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।

কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো মেঘ। বর্ষা মেঘের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
,
,
,
বিকেলে একা একা ছাদে দাড়িয়ে আছে বর্ষা। আজ অনেক দিন পর নিজেকে কেমন মুক্ত পাখির মতো মনে হচ্ছে বর্ষার। মনের মাঝে অজানা একটা ভালো লাগা কাজ করছে বর্ষার। খুব সুন্দর বাতাস বইছে চারিদিকে। বাতাসে বর্ষার খোলা চুলগুলো উড়ছে। সাথে উড়ছে বর্ষার ওড়নার আঁচলটাও। আনমনে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। তখনি বর্ষার পাশে এসে দাঁড়ালো মেঘ। মেঘের দৃষ্টিও আকাশের দিকে।

বেশ কিছুক্ষণ সব কিছু নিরবতায় ভরা রইলো। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো

— আমাকে কি আর একটা সুজোগ দেওয়া যায় না বর্ষা? শেষ বারের মতো আর একটি বার কি আমায় ক্ষমা করে আপন করে নেওয়া যায়না বল? আমি যে আর পারছি না তোর থেকে দুরে থাকতে। তোকে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার চাইতে অনেক বেশি অনুতপ্ত হয়েছি আমি। প্লিজ বর্ষা আর একটিবার ক্ষমা করে দে না আমায়?

মেঘের কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়েই সেখান থেকে চলে যেতে নিলো বর্ষা। তখনি খপ করে বর্ষার হাতটা ধরে ফেললো মেঘ। তারপর বর্ষার সামনে হাটু গেরে বসে বর্ষাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বর্ষার হাতের মধ্যে একটা ধারালো ছুরি দিয়ে বলতে লাগলো

— তুই যদি আমায় এখনো ক্ষমা না করিস তাহলে এই ছুরিটা দিয়ে আমায় এখানেই শেষ করে দিয়ে যা বর্ষা। আমি আর পারছি না এভাবে বেচে থাকতে। সব সময় নিজের ভুলের কারনে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাওয়ার চাইতে। একেবারে তুই মেরে ফেল আমায়। আর না হলে আমায় ক্ষমা করে আপন করে নে বর্ষা। তবুও প্লিজ তুই এভাবে আমার থেকে আর দুরে সরে থাকিস না।

মেঘের কথা শুনে রাগে বর্ষার চোখ মুখ লালবর্ণ ধারন করলো। বর্ষা হাতের ছুরিটাকে শক্ত করে ধরে উপড়ের দিকে তুলে ধরলো তারপর,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *