I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 11

ডাক্তারের কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পরলো মেঘ। বর্ষা অন্তঃসত্ত্বা কি করে হতে পারে। ওদের তো কখনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কই হয়নি। তাহলে বর্ষার পেটের এই বাচ্চাটা কার? এমন হাজারও প্রশ্ন উকি দিয়ে উঠলো মেঘের মনে। কিন্তু মেঘ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে ডাক্তারকে বললো

— আপনি ঠিক বলছেন তো ডাক্তার, আমার ওয়াইফ সত্যিই প্রেগন্যান্ট?

মেঘের কথা শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলো ডাক্তার। তারপর মেঘের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো

— মিস্টার মেঘ আপনি কি আপনার বেবি হওয়ার কথা শুনে হ্যাপি নন? এমন প্রশ্ন করছেন যে?

ডাক্তারের কথা শুনে মেঘ মুখে জোর পুর্বক হাসির রেখা টেনে বললো

— নাহ ডাক্তার আমি অনেক খুশি। প্রথম বার বাবা হবো এর চাইতে খুশির কি কিছু হতে পারে? আচ্ছা ডাক্তার আমি বর্ষাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো কখন?

— আপনি কাল সকালেই আপনার ওয়াইফকে নিয়ে যেতে পারবেন মিস্টার মেঘ। তবে একটা কথা, ওনার যত্ন করতে হবে। উনাকে এই সময় ভালো ভালো খাবার খাওয়াতে হবে। আমি চেকাপ করে যতটুকু বুঝেছি আপনার ওয়াইফ এর শরীর খুব দুর্বল আর এই দুর্বলতার জন্যেই উনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তাই এখান থেকে নিয়ে গেলেও ওনার যত্ন করতে ভুলবেন না।

ডাক্তারের কথা শুনে মুখে হাসির রেখা টেনে দাতে দাত চেপে মেঘ বললো

— আপনি এ নিয়ে ভাববেন না ডাক্তার, আমি বর্ষার এমন যত্ন করবো যেমন যত্ন পৃথিবীর কোনো স্বামী তার স্ত্রীর জন্যে করে না।

মেঘের কথা শুনে মুচকি হেসে চলে গেলেন ডাক্তার। আর মেঘ বর্ষার কেবিনের দরজা খুলে বর্ষার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে ডেভিল হাসলো।
,
,
,
পরের দিন সকালে বর্ষাকে নিয়ে বাসায় চলে এলো মেঘ। বর্ষা ওর বেবির কথা শুনে অনেক খুশি। বর্ষা মনে মনে ভাবছে এবার হয়তো মেঘ সব রাগ ভুলে ওকে আপন করে নিবে। বর্ষা বার বার নিজের পেটে হাত ছোঁয়াচ্ছে আর তৃপ্তির হাসি হাসছে। প্রথমবার মা হওয়ার অনুভুতিটা যে কতটা মধুর হয় সেটা বুঝতে পারছে বর্ষা।

বাসায় পৌছে বর্ষাকে গাড়িতে রেখেই গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভিতরে চলে গেলো মেঘ। মেঘের এমন আচরনে কিছুটা অবাক হলো বর্ষা। তবুও ধিরে ধিরে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে যেতে লাগলো। বাসার ভিতরে যেতেই বর্ষা দেখলো মেঘ মাথা নিচের দিকে দিয়ে সোফায় বসে আছে। বর্ষা মেঘকে কিছু বলবে তার আগেই মেঘ শান্ত গলায় নিচের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো

— বাচ্চাটা কার বর্ষা?

মেঘের এমন প্রশ্ন শুনে থমকে গেলো বর্ষা। তারপর কাপা কাপা গলায় জিগ্যেস করলো

— তুই কি বলছিস মেঘ?

— আমি জিগ্যেস করেছি তোর পেটের বাচ্চাটা কার? কার পাপের ফসলকে তুই আমার নামে চালাতে চাইছিস। কার সন্তান আছে তোর পেটে?

মেঘের কথা শুনে যেনো আকাশ ভেঙে পরলো বর্ষার মাথায়। বর্ষা দু পা পিছিয়ে গিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো। ও যেনো নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। মেঘ কি করে পারলো এত বড় একটা কথা বলতে। মেঘের কি সেদিন রাতের কথা কিছুই মনে নেই?

বর্ষাকে চুপ করে নিচে বসে থাকতে দেখে সোফা থেকে দৌড়ে উঠে দিয়ে বর্ষার চুলের মুঠি ধরলো মেঘ। তারপর দাতে দাত চেপে বললো

— আর কত ঠকাবি আমায় তুই বর্ষা। কলেজে একটা কিস করতে চেয়েছিলাম বলে তুই আমায় থাপ্পড় মেরেছিলি। আমায় থাপ্পড় মারার পর আমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোর কাছে ক্ষমা চাইবো বলে ঠিক করি তখন তুই কলেজের সবাইকে উস্কে দিয়ে আমায় ধর্ষক বানিয়ে গণপিটুনি খাইয়েছিলি। তবুও তোকে ভালবাসতাম বলে সেই তোকেই বিয়ে করেছি আমি। কিন্তু তুই আমার বউ হওয়া সত্যেও কি করে পারলি অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে তার সন্তানের মা হতে? কেনো এভাবে ঠকালি তুই আমায় কেনো বর্ষা কেনো?বল আমায় কার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছিস তুই। তোর পেটে কার পাপের ফসল বেরে উঠছে?

মেঘের কথা গুলো যেনো ধারালো ছুরির মতো বিঁধছে বর্ষার গায়ে। বর্ষা নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেঘকে নিজের থেকে শরিয়ে ঠাশ করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো মেঘের গালে। তারপর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো ফাকা একটা রুমে। আর ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।

এদিকে বর্ষা মেঘকে থাপ্পড় মেরে চলে যাওয়ার পর। মেঘও ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো। আর বলতে লাগলো

— কেনো বর্ষা কেনো? কেনো এভাবে ঠকালি আমায়, কি অপরাধ ছিলো আমার। যে সারাটা জীবন শুধু আমায় ঠকিয়েই গেলি। আমি তোকে ছারবো না বর্ষা। তোর পেটের ঐ অবৈধ বাচ্চা সহ তোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবো আমি।
,
,
,
সারাদিন বাসায় ছিলো না মেঘ। সকালে বর্ষাকে বাসায় নিয়ে আসার পরেই বেরিয়ে যায় ও। বর্ষাও সারাদিন একটি রুমে দরজা দিয়ে থেকেছে। আর চিন্তা করেছে ওর ঠিক কি করা উচিৎ এই মুহুর্তে। অনেক চিন্তা ভাবনার পর বর্ষা একটা ডিসিশন নিয়ে নিলো। আর খাতা কলম নিয়ে বসে পরলো একটি চিঠি লিখবে বলে।

রাতে ড্রিংক করে বাসায় ফিরলো মেঘ। বাসায় ফেরার পর বর্ষাকে অনেক ডাকাডাকি করলো কিন্তু বর্ষা মেঘকে মাতাল অবস্থায় দেখে আর মেঘের সামনে এলো না। কারন বর্ষা চায় না এর আগে মেঘ মাতাল হওয়ার পর ওর সাথে যেটা হয়েছে সেটা আবার হোক। বর্ষাকে অনেক ডাকাডাকির পরও যখন বর্ষা সামনে এলো না তখন মেঘ গিয়ে সোফার ওপর উপর হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো। মেঘ ঘুমানোর পর বর্ষা ওর রুমের দরজা খুলে মেঘের সামনে এসে হাটু গেরে বসে বলতে লাগলো

— জানিনা মেঘ এক বছর আগে কি করে ছিলাম আমি। কেনই বা আমার ওপর তোর এত রাগ। তবে তুই আজ যেটা করেছিস এর পর আর আমি তোর কাছে থাকতে পারবো না মেঘ। আমি তোর আর আমার সন্তানকে বাচাতে চাই। আমি জানি আমি যদি এখানে থাকি তাহলে তুই আমার সন্তানকে মেরে ফেলবি সেটা আমি হতে দিতে পারি না। তাই আমি চলে যাচ্ছি মেঘ। তোকে ছেরে অনেক দুরে চলে যাচ্ছি আমি।

কথাগুলো বলেই মেঘের হাতের কাছের টেবিলের ওপর একটি চিঠি গ্লাসের নিচে চাপা দিয়ে রেখে বর্ষা বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। গেইটম্যান ঘুমিয়ে থাকায় বাইরে যেতে খুব একটা সমস্যা হলো না বর্ষার।
,
,
,
সকালে সূর্যের আলো মুখে এসে লাগায় ঘুম ভাঙলো মেঘের। ঘুম ভাঙতেই ধিরে ধিরে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো মেঘ। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ও বাইরের রুমের সোফাতেই ঘুমিয়ে পরেছে। মেঘ মনে করার চেষ্টা করলো রাতে ওর সাথে কি হয়েছে। কিন্তু মেঘের কিছুই মনে নেই। মেঘ সোফা ছেরে উঠে যাবে তখনি ওর চোখ পরলো বর্ষার রেখে যাওয়া সেই চিঠির দিকে। মেঘ ভ্রু কুচকে চিঠিটা হাতে নিয়ে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো,,

প্রিয় মেঘ
তুই যখন এই চিঠিটা পাবি তখন হয়তো আমি তোর থেকে অনেক দুরে চলে যাবো। আর সাথে করে নিয়ে যাবো তোর আর আমার অনাগত সন্তানকে। যাকে তুই আজ অবৈধ সন্তান ভেবেছিস। জানিস মেঘ আমি চাইলেই পারতাম তোকে বলতে যে এই বাচ্চা আর কারো নয় এই বাচ্চা তোর। কিন্তু আমার কথা হয়তো তুই বিশ্বাস করতি না। আর বিশ্বাস করবিই বা কি করে বল। গত একটি বছর মনের মাঝে অবিশ্বাসের বেড়াজাল যে তৈরি করে রেখেছিস তুই, সেখানে যে বিশ্বাস নামের শব্দটা বড়ই বেমানান।

আমি জানিনা মেঘ এক বছর আগে আমি কি করেছিলাম তোর সাথে যার প্রতিশোধ তুই এখনো আমার থেকে নিচ্ছিস। তুই আমায় বলেছিলি না মেঘ? যে তুই আমায় ভালবাসিস? আরে তুই কি জানিস ভালবাসা কাকে বলে? তুই যদি আমায় ভালবাসতি তাহলে সঠিকটা জানার চেষ্টা না করে আমার ওপর এভাবে প্রতিশোধ নিতে পারতি না।

আমার পেটের যে সন্তানকে তুই অবৈধ সন্তান বলে গালি দিলি সেটা আর কারো নয় তোর সন্তান মেঘ তোর সন্তান এটা। তুই হয়তো ভুলে গেছিস সেদিন তুই ড্রিংক করে বাসায় ফেরার পর তুই আমায় কাছে টেনে নিয়েছিলি। সকালে ঘুম ভাঙার পর হয়তো সব ভুলে গেছিস। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি মেঘ যে তুই আমার সন্তানকে একটা নষ্টা সন্তান বলে ভাববি। আমি আর কখনো ফিরবো না মেঘ তোর কাছে। আর কখনো ফিরবো না আমি। আমি তোকে ভালবাসি মেঘ তাই তোর আর আমার ভালবাসার স্মৃতি হিসাবে এই সন্তানকে নিয়েই আমি কাটিয়ে দিবো বাকিটা জীবন। তুই যেখানেই থাকিস ভালো থাক। কিন্তু আমায় আর খোজার চেষ্টা করিস না মেঘ। আমি আর কখনো ফিরতে চাইনা তোর কাছে।

ইতি
তোর অবহেলার পাত্রি
বর্ষা

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *