I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 04
জানালার ধারে বসে পুরোনো কথাগুলো মনে পরতেই আনমনে হেসে উঠলো বর্ষা। প্রথম পরিচয়টা ওদের এভাবে ঝগড়া দিয়েই শুরু হয়েছিলো সেদিন,,
,
,
,
হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘোর কাটে বর্ষার,,
— বর্ষা এই বর্ষা দরজাটা খোল দেখ কে এসেছে।
মায়ের ডাক শুনে দরজা খুলে দেয় বর্ষা। আর দরজা খুলতেই সামনে দেখতে পায় মেঘ বাকা হেসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা টিশার্ট ব্লু জিন্স চোখে সানগ্লাস, হাতে দামি ওয়াচ,সিল্ক চুলগুলো বাতাসে হালকা উড়ছে। আর মুখের বাকা হাসিতে যেনো একদম কিলার লুকে দাড়িয়ে আছে মেঘ। গত এক বছর পরে মেঘকে এভাবে দেখে যেনো হুশ হাড়িয়ে গেছে বর্ষার। বর্ষা দরজা খুলেই মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বর্ষাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ গলা ঝাড়ি দিয়ে বর্ষার মায়ের উদ্যেশে বললো
— আন্টি আপনি যান আমি বর্ষার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
— আচ্ছা বাবা তুমি থাকো আমি দেখি ওদিক টা সামলাই তোমাদের বিয়ের জন্যে কত কাজ পরে আছে।
কথাটা বলেই হাসি দিয়ে চলে গেলেন বর্ষার মা। বর্ষার মা চলে যেতেই বর্ষাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে পরলো মেঘ। তারপর চোখের সানগ্লাসটা খুলে মাথার সাথে আটকে রাখতে রাখতে বর্ষার উদ্যেশে বললো
— কি খবর রে তোর মিস সরিষা?
মেঘের মুখে সরিষা কথাটা শুনে আজ আর রাগ হচ্ছে না বর্ষার। বর্ষা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে বললো
— হুমম ভালো, তুই কেমন আছিস মেঘ ভাইয়া?
বর্ষার কথা শুনে বাকা হেসে বিছানায় বসতে বসতে মেঘ বললো
— হঠাৎ আমায় দেখে এত লজ্জা পাচ্ছিস যে? আমি তো ভেবে ছিলাম সেদিনের ঘটনার পর তুই আমায় দেখলেই সেদিনের মতো শুধু থাপ্পড়ই মারতে চাইবি। বাট এখানে তো দেখছি সব পুরো উল্টো। কি ব্যাপার বলতো?
— মেঘ ভাইয়া আমি আসলে,,,,,
এতটুকু বলে আর কিছু বলতে পারলো না বর্ষা। তার আগেই মেঘ বলে উঠলো
— তোর কোনো কথা শুনতে চাই না এখন। তুই থাক আমি সবার সাথে দেখা করে আসছি। বাকি কথা না হয় বাসর ঘরেই হবে কি বলিস?
কথাটা বলেই বর্ষাকে একটা চোখ টিপ মেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মেঘ। বর্ষা মেঘের কথার অর্থ কিছুই বুঝতে পারছে না।মেঘ ওর ওপর রেগে আছে নাকি আগের মতোই ওকে ভালবাসে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা বর্ষা।
,
,
,
দেখতে দেখতে চলে এলো সেই কাংখিত দিন। বর্ষা আর মেঘের বিয়ে হয়ে গেলো সবার উপস্থিতিতে। বিদায় বেলা বর্ষার হাত মেঘের হাতে তুলে দিয়ে আশরাফ খান বললেন
— মেঘ বাবা আমার একমাত্র মেয়ে আমার ঘরের লক্ষি আমার কলিজার টুকরাকে আজ তুলে দিলাম আমি তোমার হাতে। তুমি ওকে যত্ন করে রেখো। কখনো কষ্ট পেতে দিওনা আমার মেয়েটাকে। আজ থেকে আমার বর্ষার সব দ্বায়ীত্ব তোমার। তুমি আমায় কথা দাও বাবা তুমি সারাজীবন আমার মেয়েটার পাসে থাকবে, ভালবাসবে ওকে? কখনো ওকে ছেরে যাবে না।
আশরাফ খানের কথা শুনে মেঘ বর্ষার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো
— আপনি চিন্তা করবেন না আংকেল। আমি থাকতে বর্ষাকে কেউ কষ্ট দিতে পারবে না। ওর জীবনটা নতুন ভাবে গরে দিতেই আমি ওকে বিয়ে করলাম। আর ওকে ছেরে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা। আজ থেকে আমিই তো ওর জীবনটা বদলে দিবো আংকেল।
মেঘ কথাগুলো ভালো করে বললেও বর্ষার কেমন জানি অস্বস্তি হতে লাগলো মেঘের কথায়। সাথে মেঘ ওর হাতের খুব বাজে ভাবে স্পর্শ করছে। যাতে করে হাতে খুব ব্যাথা অনুভব করছে বর্ষা। কিন্তু মুখে কিছু বলছে না।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে মেঘের বাসায় চলে এলো বর্ষা। মেঘের মা ছোট বেলায় মারা যাওয়ায় মেঘদের বাড়িতে মেঘ মেঘের বাবা আহসান চৌধুরী আর বর্ষা ছারা আর কেউ নেই।
বাসর ঘরে বসে আছে বর্ষা। অনেক সুন্দর করে রুমটা সাজানো হয়েছে শুধু লাল গোলাপ দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে যেনো কোনো গোলাপ বাগানে বসে আছে বর্ষা। পুরো রুমটা চেয়ে চেয়ে দেখছে আর খুশিতে মনটা ভরে যাচ্ছে বর্ষার। সব কিছু যেনো স্বপ্নের মতো লাগছে ওর কাছে।
,
,
,
মেঘ বাসর ঘরে ঢুকবে ঠিক সেই মুহুর্তে আহসান চৌধুরী মেঘকে ডেকে বললো
— দাড়াও মেঘ, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বাবার ডাকে অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে মেঘ বললো
— কি কথা আব্বু? যে এই মুহুর্তেই আমায় বলতে চাও তুমি?
— আমার সাথে আমার রুমে আসো মেঘ।
কথাটা বলেই নিজের রুমের দিকে হাটা দিলেন আহসান চৌধুরী। আহসান চৌধুরীর এমন আচরনে কিছুটা অবাক হয়ে পিছু পিছু যেতে লাগলো মেঘ। আহসান চৌধুরীর রুমে যাওয়ার পর, আহসান চৌধুরী দরজা লাগিয়ে মেঘের দিকে ঘুরে বলতে শুরু করলো
— আমি খুব ভালো করেই জানি মেঘ, বর্ষাকে যে মানুষটা কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে জোর করে কাবিননামায় সই করিয়ে বিয়ে করেছে সে আর কেউ নয় সে তুমি। আর তুমি বর্ষার বিয়ের দুদিন আগে দেশে ফিরেছো সেটাও আমার অজানা নয়। তুমি ইচ্ছা করে বর্ষার নামে কলঙ্ক ছরিয়েছো ওর বিয়ে ভেঙেছো সেটাও আমি জানি। তবে আমি এটা জানিনা যে তুমি কেনো ওর সাথে এমন করেছো। কিন্তু আমি আমার ছেলেকে বিশ্বাস করি। তাই আমি কখনোই চাইনা আমার ছেলে ভাল মানুষের আরালে কোনো অমানুষ হয়ে থাকুক।
তুমি যখন ঐ বাড়ি থেকে বিদায়ের সময় আশরাফের কাছে বর্ষার ব্যাপারে কথা গুলো বলছিলে তখন আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতে পেরেছি, তোমার কথা গুলোয় ভালোর আরালে রাগ লুকিয়ে ছিলো। তুমি অবশ্যই কোনো না কোনো কারনে বর্ষার সাথে খুব খারাপ কিছু করতে চাইছো। আমি জানি তুমি বর্ষাকে ভালবাসো। কিন্তু কি কারনে তুমি বর্ষা মায়ের সাথে এমন করছো সেটা আমি জানিনা। তবে শুনে রাখো মেঘ, বর্ষার ওপর তুমি যদি কোনো প্রকার অন্যায় বা অত্যাচার করো আমি কিন্তু ছেলে বলে তোমায় ছেরে দিবো না। তুমি যেমন আমার একমাত্র ছেলে তেমনি বর্ষাও আমার বৌমা নয় আমার মেয়ে।তাই আমার মেয়ের যদি তোমার জন্যে কোনো প্রকার কষ্ট হয় আমি কিন্তু সেটা মেনে নিবো না। আশা করি তুমি আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছো মেঘ। এখন তুমি নিজের রুমে যেতে পারো। মনে রেখো একটি মেয়ে নিজের সর্বশ্য ত্যাগ করে একটা ছেলের ঘরে বউ হয়ে আসে। তাই তার কোনো প্রকার কষ্ট যেনো না হয় তার দায়ীত্ব কিন্তু ছেলেটারই নিতে হয়।
আহসান চৌধুরীর কথাগুলো এতক্ষণ মাথা নিচু করে সব শুনছিলো মেঘ। তারপর কোনো উত্তর না দিয়েই চলে যেতে নিলো মেঘ। আর তখনি আহসান চৌধুরী মেঘকে আবারও ডেকে বললো
— আরেকটা কথা মেঘ, আমি কাল সকালে বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে যাচ্ছি। আমি ফিরতে ফিরতে তিন মাস পর হয়তো দেশে ফিরবো। আমি যেনো দেশে ফিরে আমার বর্ষা মাকে সুখি দেখতে পাই তোমার সাথে। কথাটা মনে রেখো।
বাবার কথা শুনে কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো মেঘ। তারপর বাইরে বেরিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিয়ে মনে মনে বললো
— তুমি তো আমার কাজটা আরো বেশি সহজ করে দিলে আব্বু। তুমি তিন মাস বাসায় থাকবে না, বর্ষা আর আমি একা থাকবো এর চাইতে ভালো সুজোগ আর কি হতে পারে।
কথাগুলো ভেবেই বড় একটা গোলাপ হাতে নিজের রুমের দিকে হাটা শুরু করলো মেঘ।
,
,
এদিকে প্রায় ২ ঘন্টা হলো বাসর ঘরে একা একা বসে আছে বর্ষা মেঘের অপেক্ষায়। এতক্ষণ এক টানা বসে থাকার কারনে কোমড়ে কিছুটা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে ওর। হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে ঘোর কাটে বর্ষার। মেঘকে রুমে আসতে দেখে সালাম দেয় বর্ষা। মেঘ বর্ষার সালামের উত্তর নিয়ে বর্ষার পাশে এসে বসে বর্ষার মাথার ঘুমটা টা সরিয়ে বর্ষার থুঁতনিতে হাত রেখে মুখটা একটু উচু করে ধরে বলে
— এমন সঙ সেজে বসে আছিস কেনো রে সরিষা? তোকে কি আমি আজকে প্রথম দেখছি?
মেঘের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকায় বর্ষা। বর্ষাকে অবাক হতে দেখে বর্ষার দিকে হাতের ফুলটা এগিয়ে দিয়ে মেঘ বলে
— তুই গোলাপ খুব পছন্দ করিস তাইনা রে সরিষা? এই নে এটা তোর জন্যে, বাসর ঘরে বউকে কিছু দিবো না তা কি হয় বল।(ডেভিল হেসে)
মেঘের কথাগুলো কেনো জানি খুব অস্বস্তি লাগছে বর্ষার। তবুও হাত বারিয়ে মেঘের হাত থেকে গোলাপ ফুলটা নিতে যায় বর্ষা আর তখনি বর্ষার দুটি আঙ্গুলে গোলাপের কাটা ঢুকে অনেকটা কেটে যায়। বর্ষা আহ শব্দ করে হাতটা সরিয়ে নেয়। গলগল করে রক্ত পরতে থাকে বর্ষার আঙ্গুল থেকে। বর্ষার আঙ্গুলে রক্ত দেখে মেঘ ফুলটা টেবিলের ওপর রেখে বলে
— ইশশ খুব লেগেছে তাইনা রে? আসলে কি বলতো কথায় আছে না গোলাপ তুলতে গেলে কাটা খেতে হয়, তোরও ঠিক তাই হয়েছে। তুই বস আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই উঠে গেলো মেঘ। একটু পর কিছু একটা হাতে করে এনে বর্ষার কাটা হাতটা শক্ত করে ধরে তাতে লাগিয়ে দিলো। মেঘের হাতের জিনিসটা কাটা জায়গায় লাগানোর সাথে সাথে জ্বালা পোড়ায় চিৎকার করতে নিলো বর্ষা। আর তখনি মেঘ বর্ষার মুখটা চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো
— খবর দার বলছি চিৎকার করবি না একদম। চিৎকার করলে তুই ভাবতেও পারবিনা আমি তোর সাথে ঠিক কি কি করবো।
খুব জ্বালা করছে তাইনা রে, করবেই তো কারন এটা তো মলম নয় এটা তো মরিচের গুড়া লাগিয়ে দিয়েছি আমি। খুব শখ না তোর আমার মতো বড় লোক ছেলের বউ হওয়ার? আজ থেকে তোর জীবনটা নরকে পরিনত করার দায়ীত্ব আমার। যতটা কষ্ট গত এক বছর ধরে আমি তোর জন্যে পেয়েছি। তা শুধে আসলে তোর থেকে আদায় করবো আমি। আজকের এটা তো শুধু নমুনা ছিলো মাত্র। নিজেকে প্রস্তুত কর আগামির জন্যে।
কথাগুলো বলে বর্ষার মুখটা ছেরে দিলো মেঘ। বর্ষার দুচোখ বেয়ে গরিয়ে পরছে অঝোর ধারায় পানি। হাতের কাটা জায়গা টায় যেনো কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে বর্ষা কিন্তু মেঘের ভয়ে চিৎকার করতে পারছে না ও। বর্ষা মেঘের সামনে থেকে নেমে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। তারপর কলের নিচে নিজের হাতটা ধরে পানি দিয়ে ধুতে লাগলো আর অঝোড়ে কাঁদতে লাগলো,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,