I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 02

সারারাত কান্না করতে করতেই কেটে গেলো বর্ষার, ভোরের দিকে চোখ লেগে আসলে ফ্লোরে বসেই খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে বর্ষা।

সকাল ৯.০০ টা
হোটেলের কেয়ারটেকার এক মহিলার ডাকে ঘুম ভাঙে বর্ষার।

– এই যে ম্যাডাম শুনছেন, ম্যাডাম আমি আপনাকে বলছি আপনি কি শুনতে পারছেন?

মহিলাটার ডাক শুনে ঘুম ঘুম চোখে মাথা তুলে মহিলাটার দিকে তাকায় বর্ষা। রুমে শুধু ঐ মহিলা নয় সাথে আরো অনেকেই উপস্থিত আছেন। হোটেলের ম্যানেজার বর্ষাকে তাকাতে দেখে বলে ওঠে

— ম্যাডাম আপনি কি ঠিক আছেন? এভাবে ফ্লোরে বসে ঘুমাচ্ছেন কেনো? আর আপনাকে নিয়ে যিনি এসেছিলো উনি মানে আপনার হাসবেন্ড কোথায়?

বর্ষা শুধু হা করে তাকিয়ে সবাইকে দেখছে আর সবার কথা শুনছে। ওর কানে যেনো কোনো কথাই পৌছাচ্ছে না। বর্ষার এমন অবস্থা দেখে ম্যানেজার আর বর্ষাকে কিছু জিগ্যেস না করে ঐ কেয়ারটেকার মহিলাটাকে কি যেনো বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ম্যানেজারের সাথে সবাই চলে গেলো রুম থেকে শুধু ঐ মহিলাটা ছারা।

— এই যে ম্যাডাম দেখুন আমার দিকে। কি হয়েছে আপনার? আপনার বাসার ঠিকানা বলুন বা আপনার বাড়ির কারো ফোন নাম্বার দিন আপনার অবস্থা আমাদের ভালো ঠেকছে না।

মহিলাটার কথা শুনে যেনো এতক্ষণে হুশ এলো বর্ষার। বর্ষার একে একে মনে পরে গেলো গত কালকের সব কথা। মনে পরার সাথে সাথে বর্ষা আর এক মুহুর্তও দেরি না করে উঠে দাড়িয়ে দৌড়ে চলে গেলো বাইরের দিকে। বর্ষার পিছু পিছু ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকতে ডাকতে মহিলাটাও বের হলো কিন্তু কোনো কাজই হলো না। মহিলাটার ডাক যেনো কান পর্যন্ত পৌছালো না বর্ষার। বর্ষা দৌড়ে হোটেল থেকে বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। ও ঠিক মতো চিনতেও পারছে না ও এখন কোথায় আছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু চিনতে না পেরে ফুটপাত ধরে এক প্রকার দৌড়াতে লাগলো বর্ষা। রাস্তার লোকেরা সব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে। সেদিকে ওর কোনো হেলদল নেই।
,
,
,
বেলা ১২.৫৫ মিনিট
বর্ষাকে ঘিরে ধরে দাড়িয়ে আছে বর্ষার বাবা মা সহ সকল আত্বিয় সজন। বর্ষা একদম চুপচাপ হয়ে বসে আছে ওর মুখে কোনো কথা নেই। আশেপাশের কিছু মহিলা একে অপরকে বলাবলি করে বলছে

— দেখেছেন ভাবি কি নির্লজ্জ মেয়ে। কালকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়ে আজকে আবার ফিরে এসেছে কোন মুখে কে জানে?

— আর বলবেন না ভাবি আজকালকার যুদের ছেলে মেয়েগুলোর কি আর লজ্জ শরম আছে নাকি। দেখেন গিয়ে কালকে হয়তো কোনো নাগরের হাত ধরে পালিয়ে ছিলো সে হয়তো রাত কাটিয়ে ছেরে চলে গেছে তাই এখন নির্লজ্জর মতো আবার ফিরে আসছে।

আশেপাশের মানুষের এমন কথা শুনে অসুস্থ হয়ে পরেছেন বর্ষার বাবা আশরাফ খান। হঠাৎ সবাই কে ধমক দিয়ে বর্ষার বাবার সব চাইতে কাছের বন্ধু আহসান চৌধুরী বলে উঠলেন

— আপনারা কি মানুষ নাকি অন্য কিছু হুমম। আপনারা খুব ভালো করেই দেখতে পাচ্ছেন এখানকার অবস্থা। আপনারা ওদের প্রতিবেশি হিসাবে ওদের শান্তনা দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন কি তা না করে এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন? আপনারা কি মানুষ নাকি অন্য কিছু?

আহসান চৌধুরীর ধমক খেয়ে সবাই চুপ করে গেলো। কিন্তু সবার মধ্যে থেকে একজন লোক বলে উঠলো

— আহসান ভাই আপনাকে আমরা সবাই অনেক সম্মান করি। সাথে আপনার বন্ধু আশরাফ খানকেও। কিন্তু আপনিই বলুন যে মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়ে আবার পরের দিন বাড়ি ফিরে আসে তাও আবার অন্য পোশাকে। তাকে মানুষ কিই বা বলবে। এদেরও আর দোষ কি?

লোকটার কথা শুনে আশেপাশের সবাই ওনার সাথে যোগ দিলো। এসব দেখে রাগ উঠে গেলো আহসান চৌধুরীর। সে বর্ষার কাছে এগিয়ে গিয়ে বর্ষার বাহু ধরে ঝাকুনি দিয়ে বললো

— বর্ষা মা আর কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক আমি তোকে বিশ্বাস করি। মেঘ যেমন আমার ছেলে তেমন তুইও আমার মেয়ে। তোদের দুজনকে কখনো আলাদা চোখে দেখিনি আমি। তুই আমায় সব কিছু খুলে বল মা। কি হয়েছিলো তোর কালকে? বিয়ের আসর থেকে কোথায় গিয়েছিলি তুই?

আহসান চৌধুরীর কথা শুনে হু হু করে কেদে দিলো বর্ষা। তারপর কাদতে কাঁদতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো

— চাচ্চু বিশ্বাস করো আমি কালকে বিয়ের আসর থেকে পালাইনি। কালকে যখন বর আসার কথা শুনে সবাই আমায় একা রুমে রেখে বর দেখতে যায়, তখন কেউ আমার মুখে রুমাল জাতিয় কিছু একটা চেপে ধরে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই, যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি নিজেকে একটা হোটেলের রুমে এই পোষাকে আবিষ্কার করি। আর আমার সামনে তিনজন মাস্ক পরা মহিলা ছিলো তারা আমায় দিয়ে একটা কাগজে সই করায় জোর করে। আর বলে তাদের বসের সাথে নাকি আমার কাবিন হলো। ঐ কাগজটা একটা কাবিননামা ছিলো। কিন্তু কাগজটার কোনো লেখাই ওরা আমায় পড়তে দেয়নি।

তারপর ওরা আমায় রুমে আটকে রেখে চলে যায়। অনেক ডাকার পরেও কেউ দরজা খোলেনি। সকালে যখন দরজা খোলে তখন আমি দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসি। আর তখনি তোমরা আমায় খুজতে খুজতে রাস্তায় পাও।

— আমি তোর সব কথা বিশ্বাস করি বর্ষা। আমি জানি তুই কখনো মিথ্যে বলতে পারিস না। তুই কি সেই হোটেলটা দেখলে চিনতে পারবি বর্ষা? আমাকে নিয়ে যেতে পারবি সেই হোটেলে?

— হ্যা আমি চিনতে পারবো চাচ্চু। আমায় যে রাস্তায় তোমরা পেয়েছো সেই রাস্তা ধরে একটু সামনে গেলেই সেই হোটেল।

বর্ষার কথা শুনে আহসান চৌধুরী বর্ষার হাত ধরে দাড় করিয়ে বললো

— চল বর্ষা চল আমার সাথে আমরা এখনি সেই হোটেলে যাবো। ওখানে গেলে নিশ্চই জানতে পারবো কে করেছে তোর সাথে এমন।

কথাটা বলেই বর্ষার হাত ধরে বর্ষাকে নিয়ে আহসান চৌধুরী গাড়ি করে চলে গেলেন সেই হোটেলের উদ্যেশে। ১ ঘন্টা পর গিয়ে পৌছালেন সেই হোটেলের সামনে। হোটেলের ভিতরে গিয়ে রিসিপশনে থাকা লোকটাকে জিগ্যেস করলে সে সরাসরি অশ্বিকার করলো বর্ষার কথা। তারপর আহসান চৌধুরী হোটেলের ম্যানেজারকে ডাকলে সেও বর্ষার কথা অশ্বিকার করে বললো সে বর্ষাকে আগে কখনো দেখেনি। আর কালকে বর্ষা এখানে আসেও নি। বর্ষা সবার এমন আচরনে অবাক হয়ে বললো

— আপনারা কেনো এভাবে মিথ্যে কথা বলছেন। আপনিই তো আজ সকালে আমায় ডেকে জিগ্যেস করছিলেন আমার কি হয়েছে। আমি আপনাদের হোটেলের ঐ দিকের একটি রুমে ছিলাম। কেনো সব কথা অশ্বিকার করছেন এভাবে আপনারা?

— দেখুন ম্যাডাম আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথায় কোনো সমস্যা হয়েছে। আমরা তো বলছি আপনাকে এর আগে আমরা কখনো দেখিনি আর না আপনি এখানে এর আগে এসেছেন। আর ঐ দিকের রুমের কথা বলছেন,ঐ দিকের সব রুমগুলো তো গত সাতদিন হলো সব বুক করা। তাহলে আপনি কখন এলেন?

ম্যানেজারের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলো বর্ষা। এই অল্প কিছু সময়ের ব্যাবধানে কি করে সব কিছু বদলে যেতে পারে কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওর। বর্ষার এমন আচরন দেখে আহসান চৌধুরী কিছু একটা ভেবে বর্ষাকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো।

বাসায় ফিরতেই আশেপাশের সব লোকজন এসে ঘিরে ধরলো বর্ষা আর আহসান চৌধুরীকে আর একের পর এক প্রশ্ন ছুরে দিতে লাগলো ওদের দিকে। বর্ষা একাধারে কান্না করে যাচ্ছে কিছু বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ও। বর্ষার মা বাবাও জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহসান চৌধুরীর দিকে। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আহসান চৌধুরী বলে উঠলো

— আপনারা সবাই দয়া করে একটু চুপ করুন। আমি বর্ষাকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেই হোটেলে। সেখানে গিয়ে দেখেছি বর্ষা যা বলেছে সব সত্যি শুধু কাবিনে সই নয় বরং বর্ষা একটা চেক বইয়ে সই করেছে। ওকে যারা কিডন্যাপ করেছিলো তারা বর্ষার বিয়ের সব দামি দামি গয়না আর জামা কাপড় সহ বর্ষার ব্যাংক একাউন্টে যা টাকা ছিলো তা সব নিয়ে গেছে। আমি আসার সময় পুলিশকে বলে এসেছি পুলিশ দ্রুতোই কিডন্যাপারদের ধরবে। বর্ষার এখানে কোনো দোষ নেই।

আহসান চৌধুরীর কথা শুনে অবাক চোখে ওনার দিকে তাকায় বর্ষা। আহসান চৌধুরী বর্ষার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বর্ষাকে শান্ত থাকতে বলে। তারপর আবারও সবার উদ্যেশে বলে ওঠে

— আমি আরেকটা কথা বলতে চাই। আমার আগে থেকেই অনেক শখ ছিলো বর্ষা মাকে আমার ছেলে মেঘের বউ করে আমার ঘরে তুলতে। কিন্তু আশরাফ ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলায় আর বলতে পারিনি। এখন যখন বিয়েটা হয়নি তাই আমি চাই বর্ষা মাকে আমার পুত্রবধূ করে ঘরে তুলতে।কি আশরাফ দিবি তো আমায় আমার বর্ষা মাকে?(বর্ষার বাবাকে উদ্যেশ্য করে বললো মেঘের বাবা আহসান চৌধুরী)

আহসান চৌধুরীর কথা শুনে আশরাফ খান কান্না করে দিয়ে আহসান চৌধুরীকে বুকে জরিয়ে ধরে বললো

— তুই সত্যিই আমার প্রকৃত বন্ধু রে আহসান। তোর মতো একটা বন্ধু পাওয়া সত্যিই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। তুই না থাকলে আজ আমার পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করা ছারা কোনো উপায় থাকতো না। আমার মেয়ের অনেক কপাল ভালো তাই ও মেঘ বাবার মতো একটা স্বামী পাবে। কিন্তু মেঘ, মেঘ এই বিয়েতে রাজি হবে তো?

— হ্যা আশরাফ তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। মেঘ অবশ্যই বর্ষা মাকে বিয়ে করবে। তুই বিয়ের ব্যাবস্থা কর। আগামি শুক্রবারেই মেঘের সাথে বর্ষার বিয়ে। মেঘ আজকের ফ্লাইটেই দেশে ফিরবে।
,
,
,
সকলের মুখের চিন্তার ছাপ কেটে গিয়ে হাসি ফুটে উঠেছে। সবাই নতুন করে বর্ষার বিয়ের তোরজোড় করতে ব্যাস্ত। কিন্তু বর্ষার মন ভালো নেই ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এসব। হোটেলের ব্যাপারটা নিয়ে ভিষন ভাবে ডিপ্রেশন করছে বর্ষা। সাথে মনে একটা ভালো লাগা কাজ করছে মেঘের সাথে বিয়ের কথা ভেবে।

জানালার কাছে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে বর্ষা ডুব দিলো তিন বছর আগের অতিতে মেঘের সাথে সেই প্রথম দেখা হওয়ার সময়ে,,,,,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *