1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃChildhood marriageলেখাঃ সানজিদা সেতু

Childhood marriage 3 !! লেখাঃ সানজিদা সেতু [ Season- 3 ]

Childhood marriage 3

ডক্টরঃ সরি মি. মহসিন,আমরা আপনার বন্ধু আর তার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি
মহসিনঃ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)আর বাচ্চাটা?
ডক্টরঃ She is now out of danger,কিন্তু জ্ঞান ফেরার আগে ওর কন্ডিশনটা ঠিক বলা যাবে না
মহসিনঃ আপনি কি কোনকিছু সন্দেহ করছেন?
ডক্টরঃ না মানে Sorry to say we assume she will lose her memory…
(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে পড়লেন মহসিন সাহেব,উদাস চোখে আইসিইউর দিকে তাকিয়ে থাকলেন)

(ঘণ্টাখানেক আগে)
চৌধুরী ম্যানসন…
বিশাল এরিয়ার উপর গড়ে তোলা সুবিশাল প্রাসাদপ্রতীম বাড়িটাতে আজ পুরো সাজ সাজ রব।হবে নাই বা কেন,বাড়ির একমাত্র ছেলের জন্মদিন বলে কথা!অবশ্য এটাই একমাত্র উপলক্ষ্য নয়,এতো আয়োজনের পেছনে আরেকটা গোপন উদ্দেশ্য আছে চৌধুরী সাহেবের যা আপাতত সবার কাছেই অজানা।
ঘড়ির কাঁটাতে ঠিক রাত আটটা,আর কিছুক্ষণের মধ্যেই গেস্টরা আসতে শুরু করবে।হঠাৎই বাড়ির ল্যাণ্ডফোনটা বেজে উঠলো,কাজের ছেলেটা ছুটে এসে মহসিন সাহেবকে ডেকে নিয়ে গেল…Childhood marriage 3
– হ্যালো আমি সিটি হসপিটাল থেকে বলছিলাম
– হ..হসপিটাল!
– আপনিইতো মহসিন সাহেব?
– জ্বি
– আপনি যেখানেই থাকেন না কেন এক্ষুণি চলে আসুন।কিছুক্ষণ আগে একটা অ্যাক্সিডেন্টের কেস এসেছে,স্পটে আপনার নেম কার্ডটা পাওয়া গেছে
(ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে গেল,স্পিকারটা নামিয়ে রেখে এক মুহূর্তের জন্য স্থবির হয়ে গেলেন মহসিন চৌধুরী তারপরই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লেন)

(দুদিন পর)
প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরেছে মেয়েটার।ছোট্ট একটা মেয়ে,কতই বা বয়স হবে?খুব বেশি হলে বছর সাতেকের মতো হবে,এতটুকু মেয়েটার উপর দিয়ে এতো বড় একটা ঝড় বয়ে গেল…
চোখ মেলেই বড় বড় করে আশেপাশে তাকাতে লাগলো,দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কনফিউজড।তখনই মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলো
আসমাঃ কেমন আছিস মা?খুব কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?তুই একটু থাক আমি ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে এক্ষুণি আসছি
(কিছুক্ষণ পর)
ডাক্তার এসে হালকা চেক আপ শেষ করে মেয়েটার দিকে মুচকি করে একটু হাসলো
ডক্টরঃ কি নাম তোমার খুকী?
– আ..আমা..র নাম!কি নাম আমার?
ডক্টরঃ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই,মেমোরি লস বাট পার্মানেন্ট নাকি টেম্পোরারি আর ডেমেজ ঠিক কতখানি সেটা জানতে সময় লাগবে
– আমার নাম কি?আমি কিছু মনে করতে পারছি না কেন?উফ…
আসমাঃ কি হয়েছে মা?অমন করছিস কেন?
– আমার মাথা…প্রচণ্ড…আমার কিছু মনে পড়ছে না কেন?আহ…
আসমাঃ সব মনে পড়বে মা,একটু ধৈর্য্য ধর…
– তুমি আমার নাম জানো?বলো না আমার নাম কি?বলো না…আমার না খুব Childhood marriage 3 কষ্ট হচ্ছে,কিছু মনে করতে পারছি না।বলো না তুমি আমার নাম জানো?
আসমাঃ জানিতো,তোর নাম ছোঁয়া
ছোঁয়াঃ ছোঁয়া?
আসমাঃ হ্যাঁ ছোঁয়া,আমাদের সকলের খুব আদরের ছোঁয়া
ছোঁয়াঃ তুমি কে?আমি কি তোমাকে চিনি?
আসমাঃ (মুচকি হেসে) আজ থেকে মনে কর আমি তোর আরেক মা
ছোঁয়াঃ মা?
আসমাঃ হ্যাঁ মা আর এই মা তোকে আর কক্ষণও কোন কষ্ট পেতে দেবে না,সবকিছু থেকে তোকে রক্ষা করবে
ছোঁয়াঃ (জড়ানো কণ্ঠে) আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে
আসমাঃ বেশ তাহলে তুই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়,আমি তোর পাশেই আছি সবসময়
(ছোঁয়া ঘুমিয়ে পড়লো,আসমা বেগম পরম মমতায় ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন)
(কিছুক্ষণ পর)
মহসিন সাহেব ডক্টরের চেম্বারে বসে আছেন,ডক্টর সাহেব গম্ভীর মুখে ছোঁয়ার রিপোর্টগুলো নাড়াচাড়া করছেন,যতই সময় যাচ্ছে ততই তার ভ্রু কুঞ্চিত হচ্ছে
মহসিনঃ কি বুঝলেন ডক্টর?
ডক্টরঃ যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই,বলতে পারেন তার থেকেও খারাপ অবস্থা
মহসিনঃ মানে?
ডক্টরঃ মানে পুরো আঘাতটাই লেগেছে মেয়েটার মাথায়,পুরো শরীরের আর কোথাও তেমন মারাত্মক কোন আঘাত নেই আর সেটাই সবচেয়ে চিন্তার বিষয়
মহসিনঃ রিপোর্ট দেখে কি বুঝলেন ডক্টর?
ডক্টরঃ মেমোরি লসতো হয়েছেই তবে সেটা পার্মানেন্ট নাকি টেম্পোরারি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।আপাতত যদি টেম্পোরারিও ধরে নেই,ঠিক কবে আবার সবকিছু মনে পড়বে ঠিক বলা যাবে না।আর যদি পার্মানেন্ট ধরি তাতেও সমস্যা,আদৌ কখনও ফিরে আসবে কি আসবে না তারও কোন ঠিক নেই

সায়ন,মহসিন চৌধুরী আর আসমা চৌধুরীর একমাত্র সন্তান,এই পড়ন্ত বিকেলে বাড়ির কাজের লোকগুলোকে নিয়ে ক্রিকেট খেলছে,খেলছে মানে জোর করে ফিল্ডিং করাচ্ছে বলতে পারেন।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার প্রচণ্ড রকমের জেদী আর একরোখা।বছর দশেক বয়স হলে কি হবে,এই বয়সেই বাড়ির কাজের মানুষগুলোকে হাতের আঙুলের ইশারায় নাচিয়ে ছাড়ে।অত্যধিক নম্র,ভদ্র,কিউট আর ইনোসেন্ট চেহারাধারী এই ছেলেকে দেখলেই তাই কাজের মানুষগুলো অসহায়ের মতো থরথর করে কাঁপে।
সাদা গাড়িটা বাসার সামনে আসতেই দারোয়ান তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিল।বাবা-মায়ের হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে আসা অত্যধিক ফর্সা কিন্তু মোটাসোটা নাদুস-নুদুস মেয়েটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সায়ন।
মহসিনঃ সায়ন…এদিকে এসো,তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।ওর নাম ছোঁয়া,আজকে থেকে ও এ বাড়িতেই থকবে।তুমি বড় তাই ওর দিকে খেয়াল রাখার দায়িত্বও তোমার
সায়নঃ এই মুটকিটার খেয়াল রাখবো আমি!ইম্পসিবল আর ও এ বাড়িতে কেন থাকবে?ওর কি থাকার কোন জায়গা নেই?
মহসিনঃ (রাগী চোখে)সায়ন…
আসমাঃ আহ অতো রাগ করো নাতো,তুমি যাও আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি
(মহসিন সাহেব ভেতরে চলে গেলেন,আসমা বেগম ছেলের দিকে নজর দিলেন)
আসমাঃ ছি!খোকা,ওভাবে বলতে নেই।ছোঁয়াতো অনেক ছোট তাই ওর খেয়ালতো তোমাকেই রাখতে হবে,ওর সাথে বন্ধুত্ব করে নাও কেমন?আজ থেকে ও তোমার ছোট্ট বন্ধু
সায়নঃ হুহ পারব না,এই মুটকিটা হবে আমার বন্ধু!
আসমাঃ এসব কি হচ্ছে সায়ন?এসব কি ভাষা?তোমাকে কি আমি এসব শিখিয়েছি?
সায়নঃ বাহ রে মুটকিকে মুটকি বলব নাতো কি বলব শুটকি?তুমি এই মেয়েটার জন্য আমাকে বকছো!এই মুটকি এই,একদম আমার আশেপাশে ঘেঁষবে না,আমার সামনে আসলে কিন্তু তোমার খবর আছে…
আসমাঃ এতো আচ্ছা জ্বালা হলো,এই রকম করলে কি করে হবে?এই ছেলেটাকে নিয়ে যে কি করি…
(কিছুদিন পর)

নিজের রুমে গম্ভীর মুখে বসে আছেন মহসিন চৌধুরী,আসমা বেগম উনার পাশেই বসে আছেন।দুজনের মুখই গম্ভীর,মনে হয় সিরিয়াস কোন আলোচনা করছেন
আসমাঃ কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?আমার মন কিন্তু একদম সায় দিচ্ছে না
মহসিনঃ ভুলে যেও না আসমা,আশরাফকে আমি কথা দিয়েছিলাম তাই কথা আমাকে রাখতেই হবে সেটা আজ হোক বা কাল
আসমাঃ হ্যাঁ কিন্তু ওরা দুজনেইতো অনেক ছোট,এসবের কিছুইতো ওরা বোঝে না
মহসিনঃ সেই জন্যেইতো শুধু গোপনে শুধু রেজিস্ট্রি করে রাখছি।এখন ওদেরকে কিছুই বুঝতে হবে না,সময় হলে ওরা নিজেরাই সব বুঝতে পারবে তার আগে ওদেরকে কিছু জানানোরও দরকার নেই
আসমাঃ কিন্তু…
মহসিনঃ সেদিন সায়নের জন্মদিনে আমার অনুরোধেই ছোঁয়া আর আয়েশা ভাবীকে নিয়ে দেশে ফিরেছিল আশরাফ।আর সেজন্য আজও আমি পস্তাচ্ছি,কেন যে ওকে আসতে জোরাজুরি করেছিলাম…
আসমাঃ যা হয়েছে তা ভেবে শুধু শুধু নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো?সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর..
মহসিনঃ কি করে ভুলবো?শুধুমাত্র আমার অনুরোধ পাঁচ বছর পর দেশে ফিরেছিল আশরাফ।আমিই জেদ ধরেছিলাম ছোঁয়া মাকে দেখব বলে,আমার ইচ্ছে পূরণ করতেই সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে সোজা আমার বাড়িতে আসছিলো ওরা কিন্তু আসতে আর পারলো কই,ওই অ্যাক্সিডেন্টটা…।সেদিন আমি যদি ওকে জোর না করতাম…
আসমাঃ যা হয়েছে সবই আল্লাহর ইচ্ছা,এতে তোমার কোন দোষ নেই। তুমিতো শুধু একটা উছিলা মাত্র…
মহসিনঃ কাল রাতে স্বপ্নে আশরাফকে দেখলাম,বেচারা একদম ভালো নেই জানো বার বার শুধু ছোঁয়ার খেয়াল রাখতে বলছিল আর আমাদের করা ওয়াদাটার কথা মনে রাখতে বলছিল।
আসমাঃ বল কি?
মহসিনঃ সেই জন্যই আমি আর একদম দেরি করতে চাই না
আসমাঃ কিন্তু তাই বলে কালকেই… Childhood marriage 3
মহসিনঃ আর কোন কিন্তু না আসমা,আমি যা কিছুই করছি বুঝে শুনেই করছি আর এতেই সবার ভালো…

(কিছুদিন পর)
প্রায় মাঝরাত,বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি।মহসিন সাহেব কদিনের জন্য বাইরে গেছেন আর আসমা চৌধুরী গেছেন এক অসুস্থ আত্মীয়াকে দেখতে।সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসবেন ভেবেছিলেন কিন্তু ঝড় বৃষ্টির জন্য ওখানেই আটকা পড়ে গেছেন।
ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে অনেক্ষণ আগে,পুরো বাড়িটায় তাই ভুতুড়ে অন্ধকার।শুধু সায়নের রুমে হালকা আলো দেখা যাচ্ছে,বেচারার পরীক্ষা তাই মোমবাতি জ্বেলে পড়ছে।
ঘড়িতে ১২টার ঘণ্টা পড়তেই উঠে পড়লো সায়ন,এখন একটু ঘুমোনো দরকার কিন্তু বিছানার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।এক পাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে ছোঁয়া!
সায়নঃ এই মুটকি,এখানে কি?
ছোঁয়াঃ (ঘুম জড়ানো কণ্ঠে)একা একা আমার ভয় করছিলো তাই… Childhood marriage 3
সায়নঃ ভয়!কিসের ভয়?এই মেয়ে তোমাকে কি ভুতে ধরে নিয়ে যাবে?যত্তসব…
ছোঁয়াঃ আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে,একটু ঘুমাই প্লিজ…
সায়নঃ ঘুমাতে চাইলে ঘুমাও কিন্তু এখানে কেন?
ছোঁয়াঃ ওহ আচ্ছা
সায়নঃ আচ্ছা মানে?
(সায়নের প্রশ্নের উত্তর দিতেই বোধহয় বালিশ কাঁথা নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লো ছোঁয়া)
সায়নঃ হোয়াট দ্যা…এই স্টুপিড মেয়ে,আমি কি তোমাকে এখানে ঘুমাতে বলেছি?
ছোঁয়াঃ তাহলে?
সায়নঃ এতো আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়লাম দেখছি…বেরিয়ে যাও,বেরিয়ে যাও বলছি আমার ঘর থেকে,নিজের রুমে গিয়ে যত ইচ্ছে ঘুমাও
ছোঁয়াঃ উহু যাবো না,আমার ভয় করছে তো…
সায়নঃ নাহ এই মেয়ে দেখছি এভাবে শুনবে না,দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।জোর করে ধরে ওকে রুমের বাইরে বের করে দিলাম।আচ্ছা ইডিয়ট মেয়ে,স্টুপিড ইডিয়ট,মুটকি,পাগলী যেই বিশেষণই দেই না কেন তাই যেন ওর তুলনায় তুচ্ছ!জ্বালিয়ে একেবারে শেষ করে দিল,কোন দুঃখে যে বাবা এই আনসোসিয়াল,আনকালচার্ড মেয়েটাকে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছে…আমার সাধ্য থাকলে ওটাকে এক্ষুণি বাড়ি থেকে বের করে দিতাম যত্তসব…
চলবে…

এক পলকে দেখে নিন সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল