Childhood marriage 2 !! Part- 42 (Last-Part)
#পর্ব-৪২ (অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
(পরদিন সন্ধ্যায়)
ক্লাব হাউজের হলরুমে সবাই রোমিং জুলিয়েট প্লের রিহার্সেল করছে,সেই বিকেল থেকেই ওরা ব্যস্ত সময় পার করছে কারণ মাঝখানে আর খুব বেশিদিন সময় নেই তাই যা করার তাড়াতাড়িই করতে হবে।সায়ন একটু পর পরই আড়চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত ডায়লগ ছাড়া ওর সাথে একটা কথাও বলেনি।হঠাৎই একটা ডান্সস্টেপ প্র্যাক্টিস করতে গিয়ে ছোঁয়ার পা পিছলে গেল,সায়ন ছুটে গিয়ে ধরে না ফেললে হয়তো মারাত্মক রকমের ব্যথা পেত কিন্তু আমাদের নায়ক থাকতে নায়িকার কি কিছু হতে পারে?তাইতো পড়ার আগেই সায়ন ওকে ধরে ফেললো
সায়নঃ Are you okey?
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ কোথাও ব্যথা পাওনিতো?
ছোঁয়াঃ উহু
সায়নঃ কি হল,এমন করছো কেন?
ছোঁয়াঃ না মানে এখনতো আমি ঠিক আছি তাই বলছিলাম যদি ছেড়ে দিতেন আসলে সবাই দেখছেতো তাই…
সায়নঃ ওর কথা শুনেই খেয়াল করলাম যে আমি এখনও ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি!উফস সরি…
ছোঁয়াঃ ইট’স ওকে
(ছোঁয়া চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো,তখনই সায়ন দেখলো ওর হাঁটতে প্রবলেম হচ্ছে)
সায়নঃ Everybody gather up please.Let’s take a break but only for 30 minutes mind it
সবাইঃ Yes boss
সায়নঃ আহ ছোঁয়া?
ছোঁয়াঃ জ্বি?
সায়নঃ Wait here,বাঁকিরা যেতে পারো
(সবাই যে যার মত চলে গেল,ছোঁয়া সায়নের দিকে তাকালো)
ছোঁয়াঃ কিছু বলবেন?
সায়নঃ কিছু না বলেই ওকে কোলে তুলে নিলাম
ছোঁয়াঃ আরে,কি করছেন আপনি!নামিয়ে দিন বলছি,কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে বলুনতো
সায়নঃ কি আবার ভাববে,আমিতো আমার বউকেই…
ছোঁয়াঃ এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না,আমি কিন্তু এবারে…
সায়নঃ শাট আপ ইউ স্টুপিড গার্ল,চুপচাপ বসে থাকো আর একটাও কথা বলবে না
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ পায়ে এতটা আঘাত পেয়েছো অথচ কিছুই বললে না!কেন?
ছোঁয়াঃ সত্যি বলছি,আমার কোন আঘাত লাগেনি
সায়নঃ তাহলে তখন হাঁটতে প্রবলেম হচ্ছিল কেন?
ছোঁয়াঃ ওহ ওটাতো পায়ে তখন একটু মোচড় লেগেছিল তাই…ও কিছু না,দুই এক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে
সায়নঃ শাট আপ,আমরা এখন আমার অফিসে চলে এসেছি সো ডোন্ট ওয়ারি,চুপচাপ এখানে বসে থাকো আমি এক্ষুনি আসছি
(ছোঁয়া আর কি করবে,সায়নের জন্য ওয়েট করতে লাগলো।সায়ন অবশ্য একটু পরেই ফিরে আসলো,এসেই ছোঁয়ার সামনে বসে পড়লো তারপর ওর পায়ে অয়েন্টমেন্ট লাগাতে লাগলো)
ছোঁয়াঃ আরে আরে,আ..আপনি এসব…
সায়নঃ দেখতেইতো পারছো কি করছি,এটা লাগানোর পর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ শসসসস…
ছোঁয়াঃ কিন্তু মোচড়তো এই পায়ে লেগেছে,ওটাতেতো না
সায়নঃ বললাম না চুপ করে থাকো,আচ্ছা এক মিনিটও কি তুমি চুপ করে…এক মিনিট কি বললে তুমি?মোচড় কোন পায়ে লেগেছে,ওটাতে?
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ সরি…
(কিছুক্ষণ পর)
ছোঁয়াঃ আই থিঙ্ক ব্রেকের এখনও কিছুটা সময় বাঁকি আছে,So..can I go?
সায়নঃ হুম
ছোঁয়াঃ ওকে বাই
(ছোঁয়া চলে যাচ্ছিল,সায়ন এক ঝটকায় ওকে একেবারে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলো)
ছোঁয়াঃ আ..আপনি…
সায়নঃ শসসস…জুলিয়েটের সাথে রোমিও রোমান্স করছে,সো প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব
ছোঁয়াঃ আ..আমি..আ..আসলে…
(ছোঁয়া আর কিছুই বলতে পারলো না কারণ সায়ন ততক্ষণে দুহাতে ওর কোমড় পেঁচিয়ে ওকে নিজের আরও কাছে টেনে নিয়ে এসেছে।দুজন দুজনের হার্টবিটের শব্দও শুনতে পাচ্ছে,সায়ন আস্তে আস্তে ছোঁয়ার আরও কাছে চলে যাচ্ছে।সায়ন আর ছোঁয়ার ঠোঁটের মাঝে এখন মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান,ছোঁয়ার ঠোঁটজোড়া অসম্ভব রকমে কাঁপছে আর নিঃশ্বাসও কেমন যেন ভারী হয়ে আসছে।সায়ন আরও একটু কাছাকাছি যেতেই ছোঁয়া চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো)
সায়নঃ ওর অবস্থা দেখে প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে,আস্তে আস্তে ওর ঠোঁটের কাছ থেকে সরে এসে ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে গেলাম।ডোন্ট ওয়ারি,তোমার সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করব না
ছোঁয়াঃ উনার কথা শুনে চমকে উঠলাম,ইশ!So embarrassing!এখন কি করব?
সায়নঃ প্ল্যান চেঞ্জ,এখানে না রিহার্সেলের পরে ক্যাফেটেরিয়ার দুই নং কেবিনে ঠিক আছে?আর হ্যাঁ উত্তরটা কিন্তু আমার আজকেই চাই সো…Don’t make me wait for a long time okey?just make it first…
(সায়ন বেরিয়ে গেল)
ছোঁয়াঃ উত্তরটাতো আমি অনেক আগেই রেডি করে রেখেছি শুধু বুঝতে পারছিলাম না তাই…বাট এখন আর কোন কনফিউশান নেই,আমি জানি আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর তাই ভাবছি আপনাকে একটা সুযোগ দেওয়ায় যায়।আজ রাতেই আপনাকে সব বলে দিব…(মনে মনে)
সায়নঃ আমার উত্তরতো আমি পেয়েই গেছি,একটু আগে আমি তোমার কাছে যাওয়ার পর তোমার রিয়্যাকশন দেখেই বুঝেছি তোমার উত্তরটা ঠিক কি হবে তাইতো লোকেশন চেঞ্জ করলাম।আফটার অল আমার সুইট বউটার কনফেশনটাতো আর এমন সাদামাটা করে করে করলে চলবে না সো…হ্যালো মারুফ?
মারুফঃ হ্যাঁ বল
সায়নঃ একটা হেল্প করতে হবে
এখন রাত প্রায় বারোটা,ছোঁয়া গ্রীণরুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে।যেই মেয়েটা কখনও সাজুগুজু নামটা পর্যন্ত শুনতে পারে না সে আজকে নিজে সাজতে বসেছে!গাঢ় আকাশী রঙের শাড়ি তারসাথে হাতভর্তি ম্যাচিং চুড়ি,কানে মাঝারী সাইজের একটা ঝুমকো তারসাথে হালকা মেকাপ,চোখে গাঢ় কাজল,কপালে ছোট্ট একটা টিপ আর ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক ব্যাস সাজ কমপ্লিট।এবার বেরোনোর পালা,ক্যাফেটেরিয়াটা ক্লাব হাউজের একেবারে পেছনেই তাই একাই যেতে পারবে কিন্তু তবুও সায়ন মারুফকে পাঠিয়ে দিয়েছে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য,মারুফ নাকি এখন বাইরেই অপেক্ষা করছে।
নিজেকে আরেকবার আয়নায় দেখে নিল তারপর পাশেই চেয়ারে রাখা পার্সটা হাতে তুলে নিল ছোঁয়া।চেইন খুলে লাল রঙের একটা খাম আর ছোট্ট একটা র্যাপিং পেপারে মোড়া বক্স বের করে একটা শপিং ব্যাগে নিল তারপর মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়লো…
ক্লাব হাউজে নিজের অফিস রুমে বসে আছে সায়ন,এতক্ষণে ওর অবশ্য ক্যাফেটেরিয়ার দুই নং কেবিনে থাকার কথা কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্ল্যানটা চেঞ্জ করেছে।আসলে কথা ছিল মারুফ ছোঁয়াকে সাথে করে নিয়ে যাবে কিন্তু ছোঁয়ার হাতে হাত ধরে হাঁটার এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করছিল না সায়নের তাই মারুফকে না পাঠিয়ে নিজেই চলে এসেছে,ছোঁয়া অবশ্য এসবেই কিছুই জানে না।
সায়ন আজকে পুরো ফরমাল গেট আপে আছে,সাদা শার্ট কালো প্যান্ট তারসাথে ম্যাচিং টাই আর জুতো এক কথায় পুরো জেন্টলম্যান।আপাতত ছোঁয়ার বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সায়ন,ও বের হলেই দুজনে একসাথে রওনা দেবে।
ছোঁয়ার কথা ভাবতেই ছোট্ট একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো সায়নের চোখে মুখে,আপনা আপনিই বুক পকেটে হাত চলে গেল।খুব সুন্দর একটা র্যাপিং করা বক্স বের করলো সায়ন,বক্সটার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো সায়ন তারপর হঠাৎই কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল,বক্সটা ওখানে টেবিলের উপরেই রেখে গেল।
আওয়াজটা আরেকটু কাছে আসতেই সায়ন আচমকে দরজা খুলে ছোঁয়ার হাত ধরে টান দিয়ে ওকে ভেতরে নিয়ে আসলো কিন্তু একি এতো ছোঁয়া নয়,ওতো রিয়া!
সায়নঃ তুমি!
রিয়াঃ হ্যাঁ আমি,কেন অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করছিলে নাকি?
এদিকে গ্রীণরুম থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম এগোতেই রিয়াকে দেখতে পেল ছোঁয়া,বেশ কয়েকবার ডাকলেও কোন সাড়া পাওয়া গেল না।সায়ন যখন রিয়াকে ওর অফিস রুমের মধ্যে টেনে নিয়ে গেল,ছোঁয়া দূরে দাঁড়িয়ে সবই দেখলো।কাঁপা কাঁপা পায়ে সায়নের রুমের সামনে এসে কি হোলে চোখ রাখলো ছোঁয়া
এদিকে রিয়া আগেই ছোঁয়াকে এদিকে আসতে দেখেছে তাই সায়নের কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে জড়িয়ে ধরলো
রিয়াঃ Love you so much baby,আমি জানি তুমি আমার জন্যই ওয়েট করছিলে।এই জন্যেই তখন ছোঁয়াকে অন্য লোকেশন দিয়েছিলে তাইনা?
সায়নঃ (অবাক হয়ে)তুমি এসব..কিভাবে!
রিয়াঃ আচ্ছা এখন ওসব বাদ দাও,আমাদের মধ্যে অন্য একজন থার্ড পার্সনকে টেনে আনার কোন মানেই হয় না।হঠাৎই টেবিলের দিকে চোখ পড়ল,গিফটের প্যাকেটটা হাতে তুলে নিলাম
সায়নঃ রিয়া ওটা…
রিয়াঃ ওয়াও…এত্ত সুন্দর পেণ্ডেন্ট!I just love it.ওহ হো এতক্ষণে মনে পড়লো,আজকেতো আমাদের রিলেশনশিপের এক বছর পূর্ণ হল।Happy anniversary baby.I can’t believe it যে তোমার সব মনে আছে!Love you baby love you so…much
(রিয়া আবারও সায়নকে জড়িয়ে ধরলো,ছোঁয়ার আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকারমত কোন শক্তিই নেই।যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিল সেটুকু দিয়ে কোন রকমে ওখান থেকে ছুটে পালিয়ে আসলো)
সায়নঃ রিয়া..ছাড় আমাকে…ছাড় বলছি
রিয়াঃ না ছাড়লে কি করবে?
সায়নঃ রিয়া..এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি,আর হ্যাঁ আমি এখানে আমার বউয়ের জন্য ওয়েট করছি,তোমার জন্য না
রিয়াঃ আমি জানি এসব সত্যি না,তুমি তখন এসব ওই মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য করেছো তাইনা?ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য তুমি আমার সাথে…
সায়নঃ শাট আপ রিয়া,ছোঁয়ার ব্যপারে আর একটাও যদি বাজে কথা বলেছো তাহলে কিন্ত…
রিয়াঃ কোথাও যাচ্ছো?
সায়নঃ যেখানে যাওয়ার কথা সেখানেই যাচ্ছি,কান খুলে শুনে রাখো ভুলেও আমার আর ছোঁয়ার মাঝখানে আসার চেষ্টা করবে না নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে
রিয়াঃ তাই নাকি?তাহলে আমারও একটা কথা শুনে যাও তুমি যদি আমার না হও তাহলে অন্য কারোরও হতে দিব না
সায়নঃ তোমার যা ইচ্ছে হয় কর,I don’t care…
(সায়ন চলে যাচ্ছিল আবার ফিরে আসলো)
সায়নঃ পেণ্ডেন্টটা দাও,ওটা ছোঁয়ার গিফট
রিয়াঃ না দিব না
সায়নঃ দাও বলছি
রিয়াঃ বললামতো দিব না
সায়নঃ তুমি এভাবে শুনবে না তাইনা?ওকে ফাইন,হ্যাচকা টানে ওর গলা থেকে পেণ্ডেন্টটা খুলে নিলাম তারপর আর পেছনে না তাকিয়ে হাঁটতে লাগলাম
(সায়ন বেরিয়ে গেল কিন্তু খুব বেশিদূর যেতে পারলো না কারণ রুমের বাইরে আসতেই ছোঁয়ার ফেলে যাওয়া গিফটের প্যাকেটটা দেখতে পেল।প্যাকেটটা খুলে ভেতরের কার্ডটা বের করতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল।ছোঁয়ার গোটা গোটা হাতের লেখাটা চিনতে ওর এক মুহূর্তও দেরি হল না)
“আপনাকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করব জানিনা তাই সম্বোধনে কিছুই লিখলাম না।আপনি আমার জবাব জানতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা আপনাকে বলতে পারব কিনা জানিনা তাই এখানেই লিখে দিলাম।আমি না চাইলেও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি,আই থিঙ্ক আপনাকে একটা সুযোগ দেওয়ায় যায়।
চলুন না পুরনো সবকিছু ভুলে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করি…
ছোঁয়া”
(পড়ার পর সায়ন ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না,একদিকে প্রচণ্ড খুশি লাগছে অন্যদিকে ভয়ও করছে যে ছোঁয়া হয়তো রিয়ার সাথে ওকে দেখে ফেলেছে,মেয়েটা আবার ওকে ভুল বুঝবে নাতো…)
।
রাত প্রায় শেষের পথে,সায়ন এখনও ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছে,ছোঁয়ার জন্য ওয়েট করছে।পুরো রুমটা মারুফ খুব যত্ন করে সাজিয়েছে,রোমান্টিক কোন ডেটের জন্য ডেকোরেশনটা একেবারে পারফেক্ট কিন্তু ছোঁয়ায় যদি না আসে তাহলে এসিবের কি লাভ?আপাতত এই রোমান্টিক ওয়েদারে একা একা রাতটা কাটানো ছাড়া সায়নের সামনে আর কোন রাস্তায় খোলা নেই…
(দুপুরে)
সকাল থেকেই ছোঁয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,লোপার ভাষ্যমতে কাল রাতেও ও রুমে ফেরেনি,ওরা ভেবেছিল ও সায়নের সাথেই আছে তাই কোন চিন্তাও করেনি।সায়নের থেকে সবটা শোনার পরই ওরা ছোঁয়াকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,সায়নতো একেবারে পাগল হয়ে গেছে,কি করবে বুঝতেই পারছে না।ছোঁয়া নাকি বাড়িতেও যায়নি,রীতিমত উৎকণ্ঠার মধ্যে ওদের সারাদিনটা কেটে গেল
সন্ধ্যার ঠিক আগ দিয়ে সায়নের ফোনে একটা কল আসলো,রিয়ার নাম্বার দেখে কেটে দিল কিন্তু পরপর কয়েকবার ফোন আসার পর একরকম বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করলো
সায়নঃ প্রবলেমটা কি তোমার?বলেছি না আমার থেকে দূরে থাকবে তারপরও…
রিয়াঃ ছোঁয়াকে যদি জীবিত দেখতে চাও তাহলে যেখানে আসতে বলছি চুপচাপ চলে এসো
সায়নঃ মানে?ছোঁয়া কোথায় তুমি জানো!
রিয়াঃ ও এখন আমার কাছে,কাল রাতে তোমাকে ভুল বুঝে পালিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আমার লোকেরা ওকে পালাতে দেয়নি
সায়নঃ কেমন আছে ও?ভালো আছেতো?
রিয়াঃ এখনতো ভালোই আছে কিন্তু কতক্ষণ থাকবে তা নির্ভর করছে তোমার উপর
সায়নঃ রিয়া…
রিয়াঃ একদম চিৎকার করবে না,যা বলছি তাই কর নাহলে কিন্তু ওর সাথে যা হবে তার কোন দায়ভার আমি নিতে পারব না
সায়নঃ ঠিক আছে আমি আসছি বাট প্লিজ ওর কোন ক্ষতি কর না
রিয়াঃ দ্যাটস গুড,আর হ্যাঁ একাই আসবে আর কোন চালাকি করার চেষ্টা করলে কিন্তু…
সায়নঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি…
সায়ন এখন যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে এটাকে একটা ছোটখাট গোডাউন বলা চলে,রিয়া ওকে এখানেই আসতে বলেছে কিন্তু অনেক্ষণ হয়ে গেলেও কারো কোব দেখা পাওয়া যায়নি।হঠাৎ একসাথে অনেকগুলো পায়ের শব্দ পাওয়া গেল আর তারপর পরই সায়ন দেখলো রিয়া আর তারসাথে গুণ্ডামার্কা কয়েকজন লোক ওর দিকে এগিয়ে আসছে।সায়ন রিয়ার দিকে ছুটে গেল…
সায়নঃ ছোঁয়া কোথায়?কোথায় লুকিয়ে রেখেছো ওকে?
রিয়াঃ এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে?ছোঁয়া এখানেই আছে,সময় হলেই দেখতে পাবে
সায়নঃ মোটেও না আমার এক্ষুণি ওকে চাই,আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না
রিয়াঃ চিৎকার করে কোন লাভ হবে না,আমার কথামত কাজ কর তাহলেই ওকে দেখতে পাবে নাহলে…
সায়নঃ ওকে ফাইন,কি করতে হবে আমাকে?
(রিয়া একজনকে ইশারা করতেই লোকটা সায়নের হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল)
সায়নঃ এটা কি?
রিয়াঃ ভেতরে যা আছে চুপচাপ পরে রেডি হয়ে আসো
সায়নঃ কিন্তু এটাতো…
রিয়াঃ একটা শেরোয়ানী,আজ আমাদের বিয়ে
সায়নঃ হোয়াট!
রিয়াঃ ঠিকই শুনেছো,সবকিছুই রেডি।কাজী সাহেবকেও নিয়ে আসা হয়েছে এখন তুমি রেডি হলেই…
সায়নঃ You have gone completely mad
রিয়াঃ হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি,তোনার জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি।তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি তুমি হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না,তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি
সায়নঃ আমি ভাবতেও পারছি না তুমি এতটা নিচে নামতে পারো
রিয়াঃ নিচে নামার দেখেছোটা কি?আমার কথামত কাজ না করলে দেখবে আমি আরও কত নিচে নামতে পারি
সায়নঃ আমি কিছুতেই এগুলো পরব না আর তোমাকে বিয়ে করারতো প্রশ্নই আসে না
রিয়াঃ কেন কি সমস্যা আমার?কি নেই আমার মাঝে যা তুমি ওই থার্ডক্লাস মেয়েটার মাঝে খুঁজে পাও?
সায়নঃ শাট আপ রিয়া,নিজেকে ছোঁয়ার সাথে তুলনা করে নিজেকে আর ছোট কর না,আরে তুমিতো ওর নখেরও সমান না…
রিয়াঃ ঠিক আছে,আমিও দেখব আমাকে বিয়ে না করে তুমি কিভাবে এখান থেকে যেতে পারো।এতক্ষণ ভালোভাবে বলছিলাম শুনলে নাতো এবার দেখবে আমি কি করতে পারি।এটা ধরো
সায়নঃ কি এটা?
রিয়াঃ এখানে একটা ভিডিও আছে দেখো
সায়নঃ সায়ন কাঁপা কাঁপা হাতে ভিডিওটা অন করলো
রিয়াঃ আমার একটা ইশারায় আমার লোকেরা ছোঁয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে,একেবারে ছিড়ে ছিড়ে খাবে ওকে আর বাইরের যেই লাল স্যুইচটা দেখছো ওটা অন করলে কি হবে জানো?বিষাক্ত গ্যাসে রুমটা ভর্তি হয়ে যাবে আর ওই অবস্থায় সর্বোচ্চ কত মিনিট ও সার্ভাইভ করতে পারবে তার শিওরিটি কিন্তু আমি দিতে পারব না…
সায়নঃ (অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে)You can’t do this…
রিয়াঃ আমার রাস্তা থেকে ওই মেয়েকে সরানোর জন্য আমি সব করতে পারি,আগেও করেছি ব্যাডলাক সেবার বেঁচে ফিরে এসেছে কিন্তু আর না
সায়নঃ What do you mean by that?
রিয়াঃ তোমার কি মনে হয় জঙ্গলে তোমরা ওই টিলাটা থেকে এমনি এমনি পড়ে গিয়েছিলে?
সায়নঃ মানে?এসব তুমি…
রিয়াঃ হ্যাঁ আমি, তোমাদের ফলো করতে করতে ওখানে গিয়েছিলাম তারপর রাতে যখন তোমাদের অমন অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখলাম আমি আর নিতে পারিনি।ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম আর পরদিনই ওকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছিলাম কিন্তু…
সায়নঃ হোয়াট!
রিয়াঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই,সেদিন ইচ্ছে ছিল সুযোগ বুঝে ওকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিব কিন্তু তার আগেই তুমি ওকে নিয়ে…
সায়নঃ তোমাকেতো আমি…
রিয়াঃ একদম আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করবে না,মনে রাখবে তুমি এখানে এ্যাকশন করলে রিয়্যাকশনটা কিন্তু ওখানে দেখা যাবে
সায়নঃ সে সুযোগ আর তুমি পাবে না
রিয়াঃ মানে?
সায়নঃ একবার পেছনে তাকিয়ে দেখো তাহলেই বুঝতে পারবে
(রিয়া পেছনে তাকাতেই চমকে উঠলো,সায়নের বন্ধুরা ছোঁয়াকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সায়ন আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ছুটে গিয়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরলো।রিয়া রাগে চিৎকার করতে লাগলো)
রিয়াঃ আমি তোমাদের কাউকে ছাড়বো না আর এই মেয়েকেতো আমি…
(রিয়া ওর একজন লোকের হাত থেকে পিস্তল নিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাক করলো,সায়ন ছোঁয়াকে পেছনে রেখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো কিন্তু রিয়া গুলি করার আগেই ওখানে পুলিশ চলে আসলো আর ওকে এ্যারেস্ট করে নিয়ে চলে গেল)
(কিছুক্ষণ পর)
মাঠের ঠিক মাঝখানে ঘাসের উপর পাশাপাশি শুয়ে আছে সায়ন আর ছোঁয়া,দুজন দুজনের হাত ধরে রেখেছে।হঠাৎই ছোঁয়া উঠে বসলো
ছোঁয়াঃ I’m sorry
সায়নঃ কেন?
ছোঁয়াঃ আপনাকে শুধু শুধু ভুল বুঝেছিলাম তাই
সায়নঃ ইটস ওকে বাট নেক্সট টাইম যেন এমন না হয়
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ দেখি চোখ বন্ধ করতো
ছোঁয়াঃ কেন?
সায়নঃ আরে যা বলছি করতো,কোন প্রশ্ন করবে না
ছোঁয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে করছি
(ছোঁয়া চোখ বন্ধ করতেই সায়ন ওর গলায় পেণ্ডেণ্টটা পরিয়ে দিল)
ছোঁয়াঃ ওয়াও..তারমানে এটা আমার জন্য ছিল!
সায়নঃ তাছাড়া আর কার জন্য হবে?
ছোঁয়াঃ আপনার জন্যও একটা গিফট এনেছিলাম কিন্তু…
সায়নঃ দেখোতো এটা কিনা,হাতের ঘড়িটা ওর দিকে ধরলাম
ছোঁয়াঃ আরে এটা আপনি…
সায়নঃ শসসস…
(সায়ন আস্তে আস্তে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,দুজনের ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করবে তখনই ছোঁয়া সরে গেল)
সায়নঃ এটা কি হল?
ছোঁয়াঃ দেখুন আমি কিন্তু এখনই আপনার বউয়ের রোল প্লে করতে পারব না
সায়নঃ মানে?
ছোঁয়াঃ মানে আগে চার বছর প্রেম করব তারপর অন্যকিছু
সায়নঃ (মন খারাপ করে)তারমানে এখনও আমাকে চার বছর অপেক্ষা করতে হবে?
ছোঁয়াঃ ইয়েস স্যার
সায়নঃ আচ্ছা বউয়ের আবদার,রাখতেতো হবেই…
ছোঁয়াঃ একবার চোখ বন্ধ করবেন?
সায়নঃ কেন?
ছোঁয়াঃ আহ যা বলছি করেনতো
সায়নঃ হুম করলাম
ছোঁয়াঃ উনার ঠোঁটে খুব গাঢ় করে একটা কিস করে দিলাম
সায়নঃ (অবাক হয়ে)এটা কি হল!
ছোঁয়াঃ কিছু না,বলেই ছুটে পালালাম
সায়নঃ কিছু না বললেই হলো!এই ছোঁয়া…কোথায় পালাচ্ছো?দাঁড়াও বলছি…ধরতে পারলে কিন্তু আজ আর তোমাকে আস্ত রাখব না…
একটু পরেই সায়ন ছোঁয়াকে ধরে ফেললো,দুহাতে ওকে বুকে জড়িয়ে নিল তারপর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল,দুজনে হারিয়ে গেল ভালোবাসার গহীন অরণ্যে যেখানে ওরা দুজন ছাড়া আর অন্য কারও কোন অস্তিত্বই নেই….
#নোটঃ এতদিন সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।জানি অসুস্থতা আর ব্যস্ততার জন্য এবারে আপনাদের অনেক জ্বালিয়েছি,হয়তো গল্পটাকে যেভাবে সাজাতে চেয়েছিলাম সেভাবে সাজাতেও পারিনি।তবুও কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না আর ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আশা করি শীঘ্রই নতুন কোন গল্প নিয়ে ফিরব সেই পর্যন্ত টা টা,ভালো থাকবেন সবাই….
এক পলকে দেখে নিন সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল