রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—১১ (শেষ)
জান্নাতুল ফেরদৌস
এর কিছুদিন পর মেয়েটাকে দেখার জন্য ওদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ দেখলাম ওই মেয়েটা ওর বান্ধবীদের নিয়ে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।রহস্যটা কি দেখার জন্য আমি লুকিয়ে ওদের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।ওর বান্ধবীরা জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলছে এই আসছে আসছে মার মার।বলতে দেরি নেই সেই মেয়েটা খুব জোরে ইট দিয়ে সেই গাছে ঢিল মারে।এরপর তাড়াতাড়ি করে সব বান্ধবীরা মিলে দিলো দৌড়।আমি এদের দৌড়ানোর রহস্যটা তখনো বুঝলাম না।হঠাৎ দেখি একঝাক মৌমাছি বিদ্যুৎগতিতে আমার দিকে তেড়ে আসছে।আর এদিকে আমি রহস্য উদঘাটন করলাম যে সেই গাছে মৌমাছির মৌচাক ছিলো যা আমার মতন গর্দভের চোখে তা পড়ে নি।আর তখন পড়লেও আমার করার কিছু ছিল না ততক্ষণে মৌমাছি আমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল।রাগে যে আমার কি করতে ইচ্ছা করছিলো,তখন তা বলে বুঝাতে পারবো না।
এর কিছুক্ষণ পর ওই মেয়েটাকে অনেক কষ্টে খুঁজে পেলাম।ও তো আমাকে দেখে রীতিমতন চিল্লিয়ে উঠলো।আসলে মৌমাছির কামড় খেয়ে আমার চেহেরা তখন সেরকম দেখার মতন হয়েছিলো যেই দেখবে সেই ভয়ে দৌড় দিবে।
আমি কোন কথা না বলে মেয়েটার দুই গাল আর হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম।মেয়েটাতো এবারও আগের মতন করে ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুড়িয়ে দিলো।
“ভাইয়া আপনি আমাকে কামড় দিলেন কেন?”
“ন্যাকা মনে হয় যেন জানো না।আমার মুখের এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী। তাই হিসাব বরাবর করলাম।আজকে এই কান্ডটা কেন করলে?”
“ওই ছেলেটাকে ওইদিন শায়েস্তা করতে পারেনি।ও আজকে ক্লাসে আমাকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করছে।আপনি আমাকে ধরে কালকে যে কথা শুনিয়েছেন ও সব শুনছে।এরপর ক্লাসের সবাইকে তা বলে বেড়িয়েছে।তাই আজকে ওর জন্য এত সুন্দর একটা প্ল্যান করলাম।আর আজকেও আপনি সেদিনের মতন আমার ফাঁদ দেওয়া গর্তে পা দিলেন।”
“কি!আজকেও ওই নির্দোষ ছেলের জন্য ফাঁদ পেতেছিলে?”
“কি নির্দোষ না ছাই।হুহ।ও আমার এত সুন্দর চুলের দুই বেনী নিয়ে সারাদিন টানাটানি করে,ফাজলামি করে,আমাকে বোকা বানাই,গণিতের জন্য স্যারের হাতে মার খাওয়াই আর ওরে আমি ছাইড়া দিমু।Never ওরে তো আমি পরে দেকখা নিমু।তার আগে আপনি কন তো আপনার কি অন্যের সব ব্যাপারে মাঝখান দিয়ে ঢুকখা যাওয়ার অভ্যাস আছে নি।আপনি আজকেও কেন ওই ছেলেটার মাঝখান দিয়ে ঢুকখা গেলেন।আর দেখেন আমার গাল আর হাতের অবস্থা কি করছেন।কামড় দিয়ে লাল বানিয়ে দিছেন।আপনি খুব খারাপ।খুব খারাপ।আপনারে আমি দেখখা নিমু”
“তো দেখো না কে নিষেধ করছে তোমাকে।তোমার সামনেই আছি। ভালো করে দেখো নাও।আর ভাষার কি ছিরি।শুদ্ধ করে কথা বলতে পারো না।কালকে তো কি সুন্দর করে কথা বলছ।”
“এএএ….আমার প্ল্যানের ১২ টা বাজাইয়া,আমারে কামড় দিয়া আবার কন শুদ্ধ করে কথা কইতে।কইতাম না।আপ্নারে আমি দেখখাই নিমু।”
“তো দেখো না।প্লিজ দেখো দেখো।”
“হুহ।”(মুখ ভেংচিয়ে) দৌড় দিয়ে চলে গেল। পাগলি একটা।
ইতিমধ্যে আমি মেয়েটাকে নিজের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছি।আসলে মা যা বা যাকে পছন্দ করে আমিও তাকে পছন্দ করি।মায়ের মুখে মেয়েটার প্রশংসা শুনেই মেয়েটার প্রতি আমার প্রথমে ভাললাগা কাজ করে।এরপর ওকে দেখে,ওর এই ছেলেমানুষিগুলো দেখে আস্তে আস্তে এই পিচ্চিকে আমি ভালবেসে ফেলি।অবশ্য ওর এই ছেলেমানুষীর জন্য আমাকেও অনেক পস্তাতে হয়।তারপরও ওকে আমি ভালবাসি।ওর ভালো-মন্দ সবকিছুকে আমি ভালবাসি।(মুচকি হেসে)
.
এরপরের ঘটনায় আসি,
ভাবলাম ছিঁচকাঁদুনী মেয়েটাকে একটু দেখে আসি।বিকালে ও বান্ধবী আর বাচ্চাদের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেলছিল।দূর থেকে ওর ব্যাট করা দেখছিলাম।ভালোই ব্যাটিং করে।ভালো ব্যাটিং করে বলে এত জোরে ছক্কা মারার কি দরকার ছিল।ওর এই এত জোরে ছক্কা মারার কারণে বলটা একেবারে আমার মুখে এসে পড়ল।বল আর কাউকে দেখলো না, দেখেশুনে একেবারে আমার কাছে এসে আমার এই অতিসুন্দর মুখখানার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল।আমার সুন্দর চেহেরায় কারোর হয়ত বদনজর পড়ছে এই জন্য বারবার আমার মুখের উপরই শুধু অত্যাচার হচ্ছিল।এবার আর রাগ কন্ট্রোল হল না।মেয়েটার হাত ধরে জোর করে ওকে টেনে নিয়ে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসলাম।
.
“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?এত জোরে ছক্কা মেরে দেখো আমার মুখের অবস্থা কি করছ?ফাজিল মেয়ে।”
“ওমা এতে আমার দোষটা কোথায়?(অবাক হয়ে)বল ছুটে আপনার মুখে পড়লে আমি কি করতে পারি?”
“বেয়াদব মেয়ে।বড়দের মুখে মুখে তর্ক কর।এভাবে ছক্কা মারলে মানুুষের মুখে বল এসে পড়তে পারে সেই বুদ্ধিটুকুও নাই।চোখ কোথায় নিয়ে রাখ?সামনে যে মানুষ আছে তা কি দেখো না।বুঝেশুনে ব্যাট করা উচিত।আর এই মেয়ে সারাদিন টইটই করে যে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াও দেখো তো মুখের অবস্থা কি হয়েছে।এইরকম পেত্নী,পাগলির মতন সারাদিন না ঘুরে ভালোকরে সেজেগুজে চলতে তো পারো।এইরকম পাগলির মতন থাকলে এই বদঅভ্যাস কোনদিনও পরিবর্তন হবে না।পরে বড় হলে কেউ তোমাকে ভয়েও বিয়ে করবে না।”
“কিহ আমি পেত্নী,পাগলি।”
“হুম তাইতো বললাম। কেন কানে কম শুনো নাকি।”
“হুম আমি কানে কম শুনি।আমি কম শুনলে কি হয়ছে কিন্তু আশেপাশের মানুষতো বেশি শুনবে।”
“মানে।”
“বুঝাচ্ছি।এই পাগল,পাগল।আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।আমাকে এই পাগল হাত ধরে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।সবাই দেখে যাও। কে কোথায় আছো তাড়াতাড়ি লাঠি নিয়ে আসো।”
ওর এই কথা শুনে আমি তো পুরা তাজ্জব। এত তাড়াতাড়ি এই ঘটনা ঘটেছে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।মেয়েটা আমাকে পাগল বলে ডাকল।তাও আবার জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলছে আমি নাকি ওকে ধরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছি। দেখলাম এলাকার ছেলেমেয়ে বড়রা সবাই এই মেয়ের চিৎকার শুনে লাঠি নিয়ে হাজির।মেয়েটাকে আর শায়েস্তা করতে পারলাম না।একে শায়েস্তা করতে গিয়ে এখন নিজের জান যায় যায় অবস্থা।তাড়াতাড়ি করে ওকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এলাম।আল্লাহ সেবারের যাত্রায় বাঁচিয়েছিলো নাহলে গ্রামবাসীর লাঠির বাড়ি সেদিন আমার গায়ে পড়লে আমি নিশ্চিত এক্কেবারে পটল তুলতাম।
এতকিছুর পরও কেন জানি ওকে ভাল লাগত।ভালবাসতে ইচ্ছে করত।কিন্তু এই মেয়ে তো অনেক পিচ্চি।এই ভালবাসা অনুভব করার অনুভূতি এখনো ওকে স্পর্শ করে নি।তাই ওকে আমার ভালবাসার কথা না জানানোই ভালো। মেয়েটা আরেকটু বড় আর বোঝদার হোক আর আমিও ততদিনে ভালো একটা চাকরি যোগার করি।দেখতে দেখতে সময় পাড় হয়ে যাবে।আর এরপরেই ওকে আমি আমার মনের কথাটা জানিয়ে দিবো। ও আমার মায়ের জন্য যা করেছে, যেভাবে আমার মনকে ছুঁয়েছে সেভাবে আমার এই মনটাকে কেউ ভালবাসার রং এ কেউ রাঙ্গাতে পারবে না।তাই এই পিচ্চির জন্য নিজের অনুভূতিটুকু লুকিয়ে রাখতে হবে।আর ওকে একটু মানুষ করতে হবে তাহলেই হবে।ইশ এই মেয়েটাকে যদি নিজে পড়াতে পাড়তাম তাহলে পড়াশুনায় ও আর অমনোযোগী হতে পারতো না,যদি ওকে নিজের কাছে রেখে দিতাম তাহলে আমার মার আর ধমকে একদম মানুষ হয়ে যেত।আমার এই স্বপ্ন কি পূরণ হতে পারেনা?যদি পূরণ হত ওকে আমি আমার নিজের মতন করে গড়ে নিতাম।
মেয়েটাকে শুধু সকালে দেখে মনটা ভরে না,তাই তার বাড়ির দিকে আবার রওনা দিলাম।আর সেদিনি কলার খোসার সাথে পা পিছলিয়ে আমি পড়ে গেলাম।
আরে মেঘ কয় যাও এই বলে ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে আনলাম।”
“আমি তোমার গল্প শুনবো না।”
“তাই বলে চুপি চুপি আমাকে একা ফেলে চলে যাবে।আমি এখন গল্প করার মুডে আছি। চলে গেলে কেমনে হবে।এই বলে ওকে আমার কাছে টেনে এনে বসালাম।”
“হ্যা কি জানি বলছিলাম, ও মনে পড়েছে এরপর শুনো,”
এরপরে ওকে আমি এই কান্ডের জন্য কান ধরে উঠ বস করিয়েছি।বেচারির মুখের অবস্থা দেখার মতন ছিলো।
এরপরের দিন বিকালে মেয়েটা যে আমাদের বাসায় এসেছিলো সেটা আমি জানতাম না।বিকালে পুকুরে গোসল করছিলাম।মেয়েটা হঠাৎ করে আমার সামনে হাজির হয়ে ফিক করে হেসে দিল।সে হাসি দেখেই আমি ফিদা।আর এই সুযোগে ফাজিল মেয়েটা আমার কাপড় চোপড় নিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে চলে আসছে।ভাবলাম আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।
.
কিন্তু সেই প্রতিশোধ আর নেওয়া হল না।পর দিন সকালে ও আমাদের বাসায় আসলো না।ব্যাপারটা কেমন জানি লাগলো।মার কাছে জিজ্ঞাস করতেও লজ্জা লাগছিলো।তাই মাকে কিছু বললাম না।কিন্তু দুপুর পর্যন্ত আর থাকতে পারলাম না।ওর কথা বলা,দুষ্টুমি খুব মিস করছিলাম।আর থাকতে না পেরে ওর বাড়ির দিকে রওনা দেয়।ওকে দেখলাম না।ওর বাসায় গিয়ে দেখি ওদের ঘর তালামারা।এটা দেখে মনে হচ্ছিল আমি আর নেই।আমার মূল্যবান জিনিস আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওরা ঢাকায় চলে গেছে।এত কষ্ট হচ্ছিল আমার বলে বুঝাতে পারবো না।একটাবারও কি আমাকে বলে যেতে পারতো না।কিন্তু পরে মনে হল ও তো আমাকে চিনেই না।শুধু আমার মাকে চিনে।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।বাসায় এসে দেখি আমার মা টা আর আগের মতন তেমন প্রাণবন্ত নেই।আগে যে হাসিটা মুখে লেগে থাকত সেই হাসিটা আর নেই।হয়ত উনার গল্প করার সখী এখন উনার কাছে নেই তাই।আমার পক্ষেও আর বাসায় থাকা সম্ভব হলো না।এখানে থাকলে ওর দুষ্টুমির স্মৃতিগুলো ভেবে আরও কষ্ট পাবো।তাই ঢাকায় চলে আসলাম।আর আমার সেই ভালবাসার মানুষটাকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
.
.
এরপর প্রায় ৫টা বছর কেটে গেল।এই ৫ বছরে আমি অনেকের সাথে মিশিছি। পড়ালেখার জন্য ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও আমার ফ্রেন্ড ছিল।এদের মধ্যে অনেকের কাছে প্রপোজালও পেয়েছিলাম।ভেবেছ
িলাম এদের মধ্যে যে কারোর প্রপোজাল একসেপ্ট করে আমি নতুন করে লাইফটাকে সাজাবো।ওর চিন্তা করে আর নিজেকে কষ্ট দিবো না।ওর সাথে আমার একদিন দেখা হবে সে আত্মবিশ্বাস আমার মনে ছিল কিন্ত সেই ৫ বছরে ওকে না পেয়ে আমার ভিতরে যে একাকীত্ব ঘিরে ধরল তা খুব কষ্টকর ছিল।কিন্ত ফ্রেন্ডলি অবস্থায় এদের কারো মাঝে আমি ওকে অনুভব করে নি।কিছু একটা ওদের মাঝে ছিল না যার জন্য আমার মন ব্যাকুল ছিল।পড়ে বুঝলাম এই ভাবে হবে না মন থেকে একবার যাকে ভালবাসা হয় তাকে ছাড়া অন্য কারোর কাছে ভালবাসার মানুষের সেই তীব্র অনুভূতি খুঁজে নেওয়া চরম বোকামি।৫বছর ধরে যেহেতু ওর জন্য অপেক্ষা করেছি আল্লাহ চাইলে সারাজীবনও ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারবো।শুধু নিজের ইমোশন,আবেগটা কন্ট্রোলে রাখতে হবে।নাহলে এই অপেক্ষা করার বাধ ভেঙ্গে যাবে।
এরমধ্যে আমি ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকতা পদে ঢুকলাম।মেয়েটাকে আমি তখনো ভুলতে পারেনি।আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা বলে কথা।এত সহজে কি করে ভুলে যাব।ওর কথা সবসময় মনে পড়ত।ওইদিনের সেই শেষ দুষ্টুমির জন্য ওকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ৫টা বছর ধরে শাস্তি নিজেই পেলাম।
আমি অনার্স ১ম বর্ষে নিউ ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ করে সেই মেয়েটাকে আমার ক্লাসে দেখি।৫টা বছর পর ওকে আমি আবার দেখি।ওকে দেখে মনে হল আকাশে চাঁদ পেয়ে গিয়েছি।এত খুশি লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না।অবশ্য এভাবে ওকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে পাওয়া অনেকটা মিরাক্কালের মতনই ছিল তা নাহলে কিভাবে এই গাধী স্টুডেন্ট এখানে গণিতও করছে যে কিনা গণিতে একেবারে কাঁচা।
এই বলে মেঘের দিকে তাকালাম।এবার ওর সেই ভয় পাওয়া ফেইসটায় রাগ আর লজ্জার মিশ্রণ দেখতে পাচ্ছি।
.
.
এরপর ভাবলাম ৫টা বছর ওর জন্য অনেক ওয়েট করেছি,নিজেও অনেক শাস্তি পেয়েছি আর না।ও তো আগের সেই পিচ্চি নেই ছেলেমানুষিটাও আগের মতন নেই যদিউ পিচ্চি পিচ্চি ভাবটা এখনো ঠিক আগের মতন আছে।এখনতো আর প্রেম করার বয়স নেই ভাবলাম ওর বাবা মায়ের কাছে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিব।ওকে একেবারে সারাজীবনের মতন আপন করে তারপর বউয়ের সাথে প্রেম করব।কারণ ওকে আমি এক ভুলে ১ম বার হারিয়েছি ২য় বার একি ভুল করে ওকে হারাতে চায় না।
কিন্তু এইসবের আগে ওর কি পছন্দ না পছন্দ ওর সম্পর্কে সব ইনফরমেশন নিতে হবে।এজন্য ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি হাত করলাম।ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বন্ধুত্ব করলাম।জানতে পারলাম আমার ভালবাসার মানুষটার নাকি আরেকজনের সাথে রিলেশন আছে।মনে হচ্ছিল আমার পুরো দুনিয়াটা উল্টে গেছে।কয়েকদিন আগে ওকে আমি মাত্র পেলাম ভাবলাম আমার কষ্টের দিন শেষ।কিন্তু না এতো দেখি আমার কষ্টের মাত্রা আরো বেড়ে গেল।তখন ওর উপর এত্ত রাগ হচ্ছিল ইচ্ছা করছিল ওর গলাটা টিপে মেরে ফেলি।আবার আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সে এখানে এসেছে।৫টা বছর আমাকে শাস্তি দিয়ে কি ওর শান্তি হল না যে নতুন করে আবার আমার জীবনে দেখা দিয়ে আমাকে আগের থেকেও বড় শাস্তি দিয়ে তিল তিল করে শেষ করে দিতে চাচ্ছে।অনেক কষ্ট হচ্ছিল তখন।কি করব না করব বুঝতে পারছিলাম না।পরে অনেক কষ্টে নিজের মনকে বুঝালাম ভালবাসা মানে যে ভালবাসার মানুষটাকে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই।ভালাবাসার মানুষের মুখে হাসি ফুটানো একজনের সত্যিকার প্রেমিকের রুপ।তাই ভাবলাম ও যাকে নিয়ে খুশি আছে তাকে নিয়েই ও খুশি থাকুক।আমার আর কিছু চাই না।কিন্তু মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ছিল আমি ওকে যতটা ভালবাসি ঠিক ততটাই কি ওর ভালবাসার মানুষ ওকে ভালবাসে!?তা আমার জানা ছিল না।তাই সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওর প্রেমিকের সম্পর্কে সব খোঁজখবর নিলাম।খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার ভালবাসার মানুষটার প্রেমিক একটা প্রতারক।শেষ পর্যন্ত একটা প্রতারকের সাথে ওর প্রেম হল।একবার ভাবলাম ওকে সব সত্যি কথা বলে দিবো আবার ভাবলাম ওতো এখন ভালবাসায় অন্ধ বুঝাতে গেলে উল্টো আমাকে ভুল বুঝবে।তাই ওকে আর কিছু বলতে পারলাম না।ভাবলাম আগে প্রমাণ যোগার করব আর তারপরিই সব সত্যি কথা বলে দিবো।প্রমাণ যোগার করার পর আমার ভালবাসার মানুষটাকে সব সত্যি কথা বলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম এই সত্যি কথা ওর কাছে ফাঁস হলে ও উল্টো কি করে বসে,ওর মনের অবস্থা কি হবে এইসব ভেবে আর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলাম না।
.
.
এরপরে শুনি ও নাকি বিয়ে করবে।কিন্তু ফাজিল মেয়েটা চুপচাপ বিয়ে করে ফেলার প্ল্যান করল আমাকে দাওয়াতও দিলো না।ওর বান্ধবীকে বিয়ের কার্ড দেওয়ার আগের দিনেই ওকে মোবাইলে ওর বিয়ের কথা বলে।আর ওর বান্ধবী এই খুশিতে আমাকে মোবাইল করে বলে দিল ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নাকি বিয়ে করছে।এই কথা শুনার পর সারাটারাত ঘুমাতে পারলাম না।পরেরদিন ওকে দেখা মাত্র ওর মুখ থেকে শুনে নিলাম সত্যিই সে ওই ফ্রড,প্রতারক ছেলেটাকে বিয়ে করছে।
.
.
ওকে বিয়ের বউ সাজে দেখার খুব শখ ছিলো।আমি জানতাম ও আমাকে বিয়ের দাওয়াত ভুলেও দিবে না তাই নির্লজ্জের মতন আমিই ওর কাছ থেকে বিয়ের দাওয়াত চেয়ে নিলাম।
ওর বিয়ের দিন ওদের বাড়িতে গেলাম।যেখানে ওর সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে।সেগুলো না চাইতেইও মনে পড়ে গেল।ওকে বউয়ের সাজে দেখে মনটা ভরে গেল।ইশ যদি এই বিয়ের সাজ ও আমার জন্য সাজত।ও আমার বউ হত তাহলে কতই না ভালো হত।
বিয়ের দিনে বর নাকি পালিয়ে গেছে।আরো অনেক এমন কান্ড হল যে বিয়ে বন্ধ হওয়ার মতন অবস্থায় পরিণত হল।অবশেষে অনেক কিছুর পর আমার ভালবাসার মানুষটাকে আমি নিজেই বিয়ে করে নিলাম।একদিকে ওর জন্য দুঃখ লাগলেও আরেকদিকে নিজের জন্য খুশি লাগছে।ওকে আমি বউ করে নিলাম সারাজীবনের জন্য।
.
.
“মেঘ, কাঁদছ কেন?আমার গল্পটা সুন্দর হয় নি?”
“আমি জানি তোমার সেই ভালবাসার মানুষটা কে?”
“হ্যা জানবেই তো।আমাকে এত কষ্ট যে দিয়েছে সে না জানলে আর কে জানবে।”
“সে মেয়েটা…বলে ওর কথা আটকে গেল।”
“হ্যা সেই মেয়েটা তুমি মেঘ।যে এখন আমার সাথে বসে আমার লাইফের ভালবাসার গল্প শুনছে আর বর্তমানে সে আমার স্ত্রী।আমার ভালবাসার মানুষ। আর আমার বোকা বউটা যখন আমার বাসায় প্রথম এসে আমাদের বেডরুমের সাজ,আলমারি ভর্তি শাড়ি, থ্রিপীচ, বারান্দার ফুল, দোলনা বলতে গেলে ওর পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু সাজানো দেখে অবাক হয়েছিল।এর পরেই সে ভেবে নিয়েছিলো আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।বিয়ের দিন রাতে আমাকে জিজ্ঞাস করে বসল আমি নাকি অন্য কাউকে ভালবাসি।বোকা পিচ্চি মেয়েটার কাছে এই কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না।”
“সরিতো আমি তখন বুঝতে পারেনি।আমার এই ভুলের জন্য আমি নিজেসহ তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।সেজন্য extremely sorry.এইভুল আর ২য় বার কখনো করব না।তোমাকে আর কখনোই ভুল বুঝবো না।আর তুমি যদি আমার জীবনে আরো আগে আসতে তাহলে এত ঝামেলা হত না। তোমাকে এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হত না।অতীতে তুমি আমার জন্য যে কষ্ট পেয়েছ তা আমি আমার ভালবাসা দিয়ে পূরণ করে দিব তাহলে হবে তো মিস্টার।”
“ম্যাডামকে আর ভুল বুঝার সুযোগ দিলেই না।সেই ভুল আমি আর করছি না।আমি পুরোটা জীবনে তোমাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটাতে চাই।আর হ্যা আমাকে একটু বেশি ভালবাসা দিতে হবে তাহলে তোমার সব ভুল ক্ষেমা করে দিবো ম্যাডাম।”
.
.
“এই নেন পেপার”
“কিসের পেপার।”
“ডির্ভোস পেপার ভেবে আপনি যেটাতে সাইন করেছেন ম্যাডাম সেই পেপার।”
“এটা আমাকে দিচ্ছ কেন?”
“দেখোই না আগে।”
“কিহ!ফাজিল ছেলে।এটাতো ডির্ভোস পেপার না।এটা হচ্ছে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার।যেখানে আমার সাইন আছে।ইউ…. তুমি আমাকে আগে মিথ্যা বলছ যে এইটা ডির্ভোস পেপার।আর আমি সেটা ভেবে সাইন করছি।”
“যাকে এত ভালবাসি তাকে এত সহজে নিজের জীবন থেকে কিভাবে সরিয়ে দিবো বলত?তখন তোমার মাথায় পাগলামির ভূত ঢুকছিল তাই ভাবলাম এই সুযোগ।এই সুযোগ ২য় বার পাবো না।তাড়াতাড়ি করে একটা এগ্রিমেন্ট পেপার বানিয়ে ফেললাম যেখানে লিখা আছে আমার জন্য তোমাকে কি করতে হবে না হবে।কথার নড়চড় হলেই এবার তোমার খবর আছে।আমাকে ছেড়ে এবার কেমনে যাও সেটা আমিও দেখবো।ছেড়ে যেতে চাইলেই দেখছতো এই পেপার। এই পেপারের পাওয়ার কিন্তু এখন অনেক।”
ফাজিল ছেলে,বিচ্ছু ছেলে বলে লাগালাম কয়েকটা ধুমতাড়াকা মার।এই ছিল তোমার মনে মনে।
“এই এই স্বামীকে কেউ এভাবে মারে।গুনাহ হবে তো।”
“আচ্ছা আর এই ফাইজলামি যে করছ তার বেলায় কিছুই না।আমার সাথে ফাজলামি করতে আসলে এইরকম মার সহ্য করতে হবে।”
“এতো দেখি আগের মতন বান্দরনী হয়ে গেছে।সবসময় এরকমই থাকবে।তোমার এই বান্দরনী রুপ দেখেই তো আমি তোমার প্রেমে পড়ছি।”
“তাই না।আমি বান্দরনী।আরো কয়েকটা মার খাও।”সাথে সাথে ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
.
.
“আচ্ছা তন্ময় আমাকে বললে না যে তুমি পেনড্রাইভটা কোথা থেকে পেলে?”
“যে তোমার আমার মঙ্গল চায় সেই এই পেনড্রাইভ পাঠিয়েছে।মনে কর সে আমাদের well wisher.”
“সে well wisher এর নাম কি?”
“সে তোমাকে নাম জানাতে নিষেধ করেছে তাই নাম বলা যাবে না।কিন্তু বন্ধুর মতন সে সবসময় তোমার আমার পাশে থাকবে।”
“আল্লাহ তার ভালো করুক।”
“হুম ”
.
.
“এই আমাকে কোন গিফট দিবে না।”
“আইচ্ছা আমাকে এতদিন কষ্ট দিয়ে গিফট চাও।কোন গিফট নাই।”
“প্লিজ পুরানো কথা টেনে আনছো কেন?sorry তো বলেই দিলাম।”
“ওরে আমার পিচ্চি বউরে আমি just মজা করছিলাম।দেখি তোমার পা টা দাও ।”
“কেন?”
“এত প্রশ্ন কেন কর।যেটা করতে বলছি সেটা কর।”
“ওকে ওকে।”
এরপর ও আমার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিল।
“হুম এখন আমাকে গিফট দাও।”
“ও মা তোমাকে আবার কিসের গিফট দিবো।”
“এই this is cheating.নিজের বেলায় ভালো বুঝ আর আমার বেলায়।”
“আচ্ছা আমি না সিরিয়াসলি ভুলে গেছি।আমার কাছে আপাতত এখন কিছু নাই।”
“কিন্তু আমিতো এইসব কথা শুনবো না।আমার গিফট চাই মানে চাইইইই….”
“আচ্ছা কি চাই তোমার,”
“তোমার মতন একটা ছোট পরী চাই।”এই বলে আমার কপালে চুমো দিল।সেদিন লজ্জাই ওর বুকে মুখ লুকালাম।
“মেঘ এতদিনতো গণিত ক্লাস করলাম এখন চল কেমেস্ট্রি আর বায়োলজি ক্লাস করি।”
“মা..মা..মানে।এই তুমি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?ওর চোখে তখন একধরণের নেশা দেখছিলাম।ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি আস্তে আস্তে পিছাতে লাগলাম।”
“ওমা এখন ক্লাস নিবোনা।”
“কি ক্লাস? কিসের ক্লাস?”আমি এখন…কথাটা শেষ করার আগেই ও আমার মুখটা বন্ধ করে দিল।
ওকে নিয়ে আমার বিবাহিত জীবনের একটা বছর আল্লাহর রহমতে সুখের কাটল।আমি এখন আমার বিবাহিত জীবনে আমার স্বামীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছি।আর কয়েকবছর পরেই আমি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করব।ভাবছি চাকরী করলেই ওর ওইখানে শিক্ষকতা পদে চাকরী করব।যাতে ওকে সবসময় নিজের চোখের কাছে রাখতে পারি।সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
((সমাপ্ত))
গল্পের শেষে লেখিকা পাঠকদের উদ্দেশ্য করে বলতে চেয়েছেন:—–
## আর হ্যা সবাই আবার এটা ভাবিয়েন না এটা কোন বাস্তব গল্প।এই গল্প সম্পূর্ণ আমার কল্পনা থেকে।তন্ময়ের যে চরিত্র এখানে প্রকাশ পেয়েছে সেটা আমার কল্পনা থেকে।বাস্তবে আর এই আধুনিক যুগে তন্ময়ের মতন স্বামী পাওয়া অনেকটা কল্পনার মতন।সব মেয়েদের ভাগ্যে এইরকম স্বামী জুটে না।শতে বা হাজারে এইরকম চরিত্র কয়েকজনের ক্ষেত্রে মিললে মিলতে পারে।
সর্বোপরি ভালবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস রাখুন কারণ ভালবাসা বিশ্বাসের উপর গড়ে উঠে। ভালবাসার মানুষটাকে ভালবেসে সবসময় আগলিয়ে রাখুন।আর ভালবাসার মানুষকে মর্যাদা দিতে শিখুন।
নতুন লেখিকা হিসেবে এই গল্পে আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক অনেক ভালবাসা পেয়েছি।সেজন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।Thanks everyone.এই গল্পের সিজন ২ আমার অনার্স ২য় বর্ষের পরীক্ষার রেজাল্ট আর পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।যদি সব কিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে ইনশাল্লাহ সিজন_২ লিখতে পারব।সবাই আমার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন আর এইরকমভাবেই আমার গল্পের সার্পোট করবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—১০