5. বাস্তব জীবন থেকে নেয়া

পদ্মার পাড়ে স্থায়ী জেলেদের মুখে শোনা ঘটনা

পদ্মার পাড়ে স্থায়ী জেলেদের মুখে শোনা ঘটনা যায় অনেক গা ছমছমে অভিজ্ঞতার কথা। বিশেষ করে গভীর রাতে যারা মাছ মারতে যায় তাদের কথা শুনে পিলে চমকে যায়। কয়েকজনের সাথে মুখোমুখি সাক্ষাতে কথা বলে জানতে পারি যে, ভোর হবার খানিক আগে নাকি নদী মোহনায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এই লোভে স্থানীয় অনেক জেলেই ঐ সময়টা বেছে নেয় মাছ ধরার জন্য। যারা ঐ সময়ে মাছ ধরতে গিয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই জীবনে কখনো না কখনো একটা অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ঘটনা খুবই সাধারণ। সবার প্রথমে যার সাথে কথা হলো তার নাম তৈয়ব মাঝি। নিজের ভাইপো হাসানকে সাথে নিয়ে তিনি এক রাতে মাছ ধরতে বের হোন। রাত ৩ টার দিকে হটাত করে নদীতে বাতাস একেবারে থেমে পরে।
উল্লেখ্য,নদীতে বাতাস পরে যাওয়া মানে ঝড়ের পূর্বাভাস। তিনি হাসানকে বলেন হাল ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরতে। উনারা মাছ ধরতে ধরতে অনেকটা ভেতরে চলে গিয়েছিলেন। হটাত তারা উভয়ই লক্ষ্য করেন তাদের থেকে প্রায় মাইল খানেক সামনে দিয়ে একটি যাত্রী নৌকা যাচ্ছে। নৌকাটা হয়তো চোখে পড়তো না, কিন্তু অবাক লাগলো কারণ নৌকার উপরের ছাউনিতে একটা অদ্ভুত রঙের বাতি দেখা যায়। অনেকটা নীলচে আভা বের হচ্ছে সেই বাতি থেকে।মানুষগুলো হয়তো বিপদে পড়তে পারে ভেবে তৈয়ব দ্রুত বৈঠা বেয়ে হাসানের সাহায্যে ঐ নৌকার পাশে চলে যান। নৌকার ভেতর উঁকি দিয়ে চমকে উঠেন তৈয়ব। নৌকার কোনো মাঝি নেই।তার চেয়ে ভয়ঙ্কর হলো নৌকার পাটাতনে পরে আছে একগাদা লাশ। পুরনো লাশ। পচে গলে আছে।
ছাউনির ভিতর একটা মরচে পড়া হারিকেনে আগুন জ্বলছে। তৈয়ব আলীর মুখ দিয়ে চিৎকার বেরিয়ে যায়। চাচাকে চিৎকার করতে দেখেবৈঠা ফেলে দ্রুত চাচার পাশে চলে আসে হাসান। দেখে তার চাচা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে কোনোমতে চাচার পতন ঠেকায় সে। সাথে সাথে মাথা উঁচু করে সামনে তাকিয়ে দেখে সেখানে কোনো নৌকা দূরের কথা,আসে পাশে ঘন অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।অথচ সে নিজে ঐ যাত্রী নৌকায় নৌকা ঠেকিয়েছিল। নৌকায় নৌকায় ধাক্কা খাবার আওয়াজ পর্যন্ত শুনেছে। ঠিক খানি বাদেই প্রচণ্ড বাতাসে তাদের নৌকা ডুবু ডুবু হয়ে পড়ে। হাসান দক্ষ ছেলে। ছোটবেলা থেকে নৌকা বেয়ে ওস্তাদ। কোনো মতে চাচাকে পাটাতনে শুইয়ে দিয়ে নৌকা টেনে ঘাঁটে লাগায়। তৈয়ব আলী টানা ১ সপ্তাহ কথা বলতে পারে নি এরপরে।
এমনকি রাতে মাছ ধরাই ছেড়ে দিয়েছে। ঘটনা এখানে শেষ হলে ভালো হতো। কিন্তু শুধু তৈয়ব আলীই নয়,আরো অনেক জেলের সাথেই হুবুহু একই জিনিস ঘটেছে। পদ্মার চরে মাঝে মাঝেই জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রায়ই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *