স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—১০

জান্নাতুল ফেরদৌস

কাজি যখন বিয়েতে আমার নাম নিলো
তখন মনে হল এই বুঝি সব গেল।কিন্তু না
তেমন কিছু হয়নি।তারমানে উনি সব
সামলে নিয়েছেন আগে থেকে।যাক বাঁচা
গেল।অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেল উনার
সাথে।অনেক খুশি লাগছে।যাকে চেয়েছি
তাকেই সারাজীবনের জন্য আপন করে
নিলাম।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৯
“এইযে এইবার বড় করে রাখা ঘোমটা
খুলতে পারেন।”
আরে এটাতো তাসপিয়ার গলা।
“তু….তু…..তুই……”
“হ্যা আমি।”
“আরে এখানে তো সবাইকে দেখছি।আমার
মা বাবা, আমার ডিপার্টমেন্টের
ক্লাসমেটরা সবাই এখানে।প্রিয়া
ম্যাডামও এসেছেন।উনাকে দেখেতো
আমার চোখ দুটি ছানাপোড়া হওয়ার মত
কারণ ওনি বউয়ের বেশে নয় মেহমান
হিসেবে এসেছেন।কিন্তু উনার চোখে
কোন রাগ নেই।বিয়ের কনেতো উনার
হওয়ার কথা ছিলো উনার জায়গা বদলে
আমি বিয়ে করেছি।কিন্ত উনি আমাকে
দেখে রাগলেন না উল্টো মুচকি মুচকি
হাসছেন।যেন কিছুই হয়নি মনে হল তন্ময়
স্যারের সাথেই আমার বিয়ে হওয়ার কথা
ছিলো।কি হচ্ছে এইসব।”
.
.
“কিরে কেমন দিলাম।”
“মানে…….”
“গাধী এখনো বুঝিস নি,,”
“সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না।কি হচ্ছে
এইসব।
মা,বাবাতো দেখি শাশুড়িমার সাথে
কথায় ব্যস্ত।ওরা এখানে কিভাবে?”
“তাসপিয়া তুমি যাও,মেঘের সাথে আমার
কিছু কথা আছে।”(প্রিয়া)
“কি হচ্ছে এগুলো।আমি কিছুই বুঝতে
পারছি না।”
“আমি বলছি।আমি তন্ময়ের ভার্সিটি
লাইফের ফ্রেন্ড সেটাতো এতক্ষণে ওর
কাছ থেকে শুনে নিয়েছে।আমি ওকে
আগে অনেক পছন্দ করতাম।পছন্দ থেকে
ভালবাসা।আর এরপরেই ওকে প্রপোজ করে
বসি।কিন্তু ও তা রিজেক্ট করে দেয়।এর
কারণ জানতে চাইলে ও প্রায়ি বলত ও
অন্য আরেকটা মেয়েকে ভালবাসে।তাই
অন্য কাউকে ভালবাসা ওর পক্ষে সম্ভব
না।আমি অনেকবার ওর কাছ থেকে সেই
মেয়েটার নাম জানতে চেয়েছিলাম
কিন্তু ওর কাছ থেকে কোনদিন সেই
মেয়েটার নাম জানতে পারেনি।এর
কিছুদিন পরেই জানতে পারি তন্ময়ের
ক্লোজ ফ্রেন্ড আমাকে ভালবাসে।
একবার একজনকে ভালবেসে ঢের শিক্ষা
হয়েছে তাই এই ভালবাসায় আর মন
দেয়নি।এরপরেই তন্ময় ঢাকা ভার্সিটিতে
শিক্ষকতা পদে ঢুকে আর এরপর আমি।একি
ডিপার্টমেন্টে আমরা জয়েন্ট করি।
পুরানো ফ্রেন্ডকে খুঁজে পেয়ে ভালোইই
কাটত দিন।এরপর ওর থেকে আমি শুনতে
পারি আমার সেই ফ্রেন্ড আমাকে এখনও
ভালবাসে।ও আচ্ছা ওর নামটাতো
তোমাকে বলিনি।ওর নাম রাফি।এরপর
প্রায়ি তন্ময় আমাকে বিভিন্ন বাহানায়
ঘুরতে নিয়ে যেত আর সেখানে রাফি
এসে উপস্থিত হত।বুঝতাম ওর আসল
উদ্দেশ্য রাফির সাথে আমাকে দেখা
করানো। এরপর বিভিন্নভাবে রাফির
সাথে আমার প্রায় দেখা হত তন্ময়ের
মাধ্যমে।রাফির সাথে মিশতে মিশতে
বুঝতাম ও আমাকে আসলেই ভালবাসে।এর
মধ্যে আমিও ওকে একটু একটু ভালবেসে
ফেলেছি।ভার্সিটিতে রাফিকে নিয়ে
আমরা কথা বলতাম।রাফির কি পছন্দ না
পছন্দ ওর সম্পর্কে সব খোঁজখবর আমি
তন্ময়ের থেকে নিতাম।আর এইজন্যই
তন্ময়ের সাথে আমার কথাবার্তাটা
বেশি হত।এর মাঝে যে তন্ময় তোমাকে
বিয়ে করেছে সেটা আমাকে জানায়নি।
এর কিছুদিন পর আমার একটা জরুরি কাজ
থাকে।কোন রিক্সাও খুঁজে পাচ্ছিলাম।
তাই সেদিন তন্ময়ের গাড়িতে লিফট নিই
আমি।এরপর রাফির সাথে আমার সামান্য
একটা বিষয় নিয়ে খুব ঝগড়া হয়।অবশ্য
এতে আমারও কিছু দোষ ছিল।রাফি আমার
উপর অনেক রাগ করার কারণে কয়েকদিন
ধরে আমার সাথে দেখা বা কথা বলে নি।
এ কয়েকটা দিন যে আমার কিভাবে
কেটেছে তা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে
পারবোনা।কিভাবে ওর রাগ ভাঙ্গাবো
তা বুঝতে পারছিলাম না।তাই তন্ময়ের
কাছে যাই। ও আমার মনটা ভালো করার
জন্য আমাকে পার্কে নিয়ে যায়।কিন্তু
মনটা ভালো ছিলো না তাই অনবরত
কান্না করেই যাচ্ছিলাম। তাই আমার হাত
ধরে ও আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল যে
কিছুই হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে।সেদিন
যে সাগর আমাদের পিছু নিয়েছিল তা
আমরা জানতাম না।এ সামান্য ঘটনার ছবি
তুলে সাগর তোমাকে সেই ছবি পাঠিয়ে
তোমাকে উল্টাপাল্টা কথা বুঝিয়ে
তোমার মনে আমাদের সম্পর্কে খারাপ
কথা ঢুকিয়েছে।আর সেই ছবি দেখে তুমি
তা বিশ্বাস করে নিলে তন্ময় আর আমার
মধ্যে কিছু চলছে।আর সেদিন
রেস্টুরেন্টের সেই ঘটনা দেখে বুঝলাম
তোমরা দুইজন স্বামী-স্ত্রী।আর তন্ময়ের
সেই পছন্দের মেয়েটাই তুমি।তুমি কোন
কিছু ভালোভাবে না জেনেশুনে যে
পদক্ষেপ নিয়েছ তার জন্য তন্ময়কে অনেক
কষ্ট পেতে হয়েছে।তন্ময় তোমার
সাজানো নাটকটা পরে বুঝতে পেরে
তোমাকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলো।
কিন্তু তোমার অতিরিক্ত জিদ আর ওকে
কষ্ট দেওয়ার কারণে সেও মনে মনে ঠিক
করে তোমাকেও এর থেকেও বেশি কষ্ট
দিবে।তাই ও আর আমি মিলে মিথ্যা
নাটক করে তোমাকে ইমোশনালভাবে কষ্ট
দেওয়ার প্ল্যান করি।আর এরপরের
কথাতো তুমিই জানো। ”
“I am extremely sorry না জানি আপনার
সম্পর্কে কি না কি ভেবেছি আমি।প্লিজ
ম্যাডাম পারলে আমাকে মাফ করে
দিবেন।”
“না না Its ok. তোমার জায়গায় আমি
থাকলে আমি নিজেও অনেক খারাপ কিছু
ভাবতাম।যাই হোক তোমার বিবাহিত
জীবন সুখের হোক সেই দুয়া করি আমি।God
bless u.”
.
.
এরপর একে একে সবার থেকে জানতে
পারলাম আজকে তন্ময়ের সাথে যে আমার
বিয়ে সেটা আমি বাদে বাকি সবাই
জানে।মা বাবা,আমার শাশুড়ি মাও
জানে।এই কাজটা উনি মোটেও ঠিক
করেননি।আমি আমার এই ভুলের জন্য কতনা
কষ্ট পেয়েছি এরপর এই বিয়ে নিয়ে রাতে
ঘুমাতে পারিনি অসহ্য যন্ত্রণা আমাকে
কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।কিন্তু উনি……।
আমাকেই যদি বিয়ে করবেন তাহলে কেন
এই মিথ্যা অভিনয় করলেন।মানছি
আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য উনি এইসব
করেছেন তাই বলে এত্ত কষ্ট দিবেন তা
ভাবতে পারে নি।
উনার সাথে বিয়ে হওয়াতে মনে মনে খুশি
হলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে।আজ রাতে
উনাকে মজা দেখাবো।
.
.
“সাব্বির দাঁড়াও।”
“স্যার, আপনার বিবাহিত জীবন সুখের
হোক।”
“ধন্যবাদ।আর সেইদিনের সেই সাহায্যের
জন্যও তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।তুমি
যদি সেদিন পেনড্রাইভটা না পাঠাতে
তাহলে ওকে আমার লাইফ থেকে হারিয়ে
ফেলতাম।Many many thanks.”
“স্যার কিসের পেনড্রাইভ!আমি কোন….”
“Oh plz, সাব্বির মিথ্যা বলা লাগবে না।
আমি সব জানি।”
……
“ভাবছো কিভাবে জেনে গেলাম।তাহলে
শুনো পেনড্রাইভের সাথে একটা চিঠিও
দিয়েছিলে তুমি।তোমার লেখার সাইজ
দেখে বুঝে গেছি এই চিঠির মালিক কে?
এত সুন্দর লেখা তুমি ছাড়া আর কে
লিখবে?হ্যান্ডরাইটিং দেখেই বুঝি গেছি
এই কারবার কে করেছে?”
“বুঝে গেলেন তাহলে।অনেক চেষ্টা
করেছিলাম লিখা সুন্দর করার জন্য কিন্তু
কিছুতেই হয় না।কয়েকটা ফ্রেন্ডকেও
বলছিলাম সুন্দর করে চিঠিটা লিখে
দিতে।কিন্তু আমার সব ফ্রেন্ডেরই হাতের
লিখা একি রকম মানে বাজে…।ওদেরও
ইগো বলে একটা কথা আছে।তাই
নিজেদের এই সুন্দর হাতের লিখা দিয়ে
চিঠি লিখতে অপারগতা জানাই।তাছাড়া
আমার হাতে সময়ও বেশি ছিলো না তাই
নিজের হাতে লিখা চিঠি আর
পেনড্রাইভটা লোক দিয়ে সকালে
আপনার বাসায় পাঠিয়ে দিই।”
“হুম বুঝলাম।আচ্ছা একটা কথা বলোতো
তুমি এইসব কেন করতে গেলে?সত্য কথায়
বলবে এই আশাই রাখছি।”
“স্যার কথাটা শুনতে আপনার থেকে
খারাপ লাগলেও বলছি একসময় আমি
মেঘকে অনেক ভালবাসতাম।প্রায়
২মাসের মতন ও ক্লাসে আসে নি।এই
নিয়ে আমার মনে কি পরিমাণ অশান্তি
হচ্ছিল আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
বিশ্বাস করুন আমি তখন জানতাম না যে
এর মধ্যে ওর বিয়েও হয়ে গেছে।
এরকিছুদিন পর মেঘ আর তাসপিয়ার সাথে
আমার বন্ধুত্ব হয়।একদিন মেঘ আমাকে
পার্কে এনে জানায় তাসপিয়া নাকি
আমাকে ভালবাসে।এই কথা শুনে আমি
আর নিজের ভালবাসার কথা ওকে
জানাতে পারেনি। ধীরে ধীরে আমি
বুঝতে পারি আপনার সাথে মেঘের কোন
সম্পর্ক আছে।পরে খোঁজখবর নিয়ে
জানতে পারি আপনারা দুইজন স্বামী –
স্ত্রী। মেঘ সুখে থাকুক সেটাই সবসময়
চেয়ে এসেছি।তাই নিজের ভালবাসার
কথা নিজের মনে চেপে রেখেছি।
তাসপিয়ার কথাটাও ভেবে দেখলাম।ও
আসলেই একটা ভালো মেয়ে।ওর সাথে
মিশে বুঝলাম আমি লাইফ পার্টনার
হিসেবে যেমন মেয়ে চাই তাসপিয়াও
ঠিক তেমন মেয়ে।পরে ওকে আমি
ভালবাসতে শুরু করি।মেঘের কারণেই
আমি তাসপিয়াকে আমার লাইফে
পেয়েছি।এইজন্য আমি সারাজীবন ওর
কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। কিছুদিন পর আমি
মেঘের মাঝে একটা পরিবর্তন লক্ষ করি।
বুঝতে পারলাম কিছু একটা ঠিক নেই।মনের
মধ্যে সন্দেহ তৈরী হল।একদিন ওকে আর
তাসপিয়াকে আমি লুকিয়ে কথা বলতে
দেখি।মেঘ সেদিন খুব কান্না করছিলো।
আমার সন্দেহ তখন আরো গাঢ় হয়।তাই
তখনি ঠিক করলাম আমাকে কিছু একটা
করতে হবে।পরে আমি ওদের কথোপকথন
ভিডিও করি। এরপর মেঘের পিছু নেই।
সেখানে ওকে আমি একজনের সাথে কথা
বলতে দেখি।তারও ভিডিও করলাম।
এরপরের দিন সকালে আমি সেই ভিডিওর
পেনড্রাইভ আর চিঠি আপনার কাছে
পাঠিয়ে দিলাম।”
“মেঘের বন্ধু হিসেবে যা করলে তার জন্য
তোমাকে ধন্যবাদ।”
“বন্ধু হিসেবে এইটা আমার কর্তব্য
ছিল।”(মুচকি হেসে)
.
.
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। আর উনার
আসার নাম নাই।রাগ ক্রমশই বাড়ছে।
“উহুম উহুম”
“আপনি,,এত দেরি করে আসছেন কেন?
জানেন কতক্ষণ ধরে আপনার জন্য
অপেক্ষা করছিলাম।”
“আচ্ছা তাই নাকি?তা ম্যাডাম আপনার
বুঝি তশ সইছিলো না কখন আপনার কাছে
আসবো কখন আপনাকে আদর…..”
“ওয়েট ওয়েট,, আপনিতো দেখি অনেক
ফাস্ট।এইসব ফালতো চিন্তা মাথায়ও
আনবেন না।আর বলুনতো এইসব নাটকের
মানে কি?আমাকেই যদি বিয়ে করবেন
তাহলে এতদিন ধরে আমাকে এত কষ্ট
দিলেন কেন?জানেন কি পরিমাণ কষ্ট
হচ্ছিলো আমার।”
“জানিতো।আর জেনেশুনেই আমি
তোমাকে এত কষ্ট দিয়েছি।আমাকে যে
এত কষ্ট দিলে তার বেলায়।”
“আমি আমার ভুলের জন্য আপনাকে সরি
বলছি।কিন্তু আপনিও এইরকম কাজ করে
ঠিক করেননি। আমাকেও সরি বলুন।”
“তাই নাকি?আমি সরি বলবো।”
“হ্যা,”
“জীবনেও না।দোষটা তোমার ছিলো তাই
নিজ থেকে সরি বলেছ আমার যেহেতু
কোন দোষ নেই তাই সরি বলার প্রশ্নই উঠে
না।”
“কিহ!”
“বিশ্বাস করুন যা করেছিলাম আপনার
ভালোর জন্যি করেছিলাম।”
“ওয়েট বিয়ে করার আগে তুমি বলেছিলে
না তুমি আমাকে ভালবাসো। তাহলে
আমাকে আবারও আপনি করে কেন ডাকছ।
তুমি করে বলো নাহলে কিন্তু আমি
প্রিয়ার কাছে চলে যাব।”
“কিহ!”
“মেরে ফেলবো তোমাকে।বউকে ছেড়ে
অন্য আরেকটা মেয়ের দিকে নজর দাও।”
“তাই নাকি।যদি এখন থেকে আপনি করে
বলো তাহলে কিন্ত”
“আর বলবো না।তুমি করেই বলবো।”
“হুম। আর আগে জানি কি বলছিলে এই বলে
আমাকে জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে।”
“তোমার ভালোর জন্য…”
“মেঘ আমার ভালোর জন্য আর কখনো
নেগেটিভ ডিসিশন নিবে না।তোমার এই
ভুলের জন্য আমি যে কত কষ্ট পেয়েছি
সেটাতো দেখো নি।তুমি চলে গেলে
আমার কি কষ্ট হবে সেটাতো একবারের
জন্যও বোঝার চেষ্টা করোনি।স্বার্থপর
ের মতো নিজের এই ঢিলা মাথায় যা
আসছে তাই করে গেছ।এতদিন হল আমার
সাথে ছিলে একাবারের জন্য কি মনে হয়
নি তোমার স্বামী অন্যকোন মেয়ের
সাথে নিজেকে জড়াতে পারেনা।
ভালবাসার জন্য বিশ্বাস জিনিসটা
সবচেয়ে বড়।এত ভালবাসো আমাকে আর
আমার উপর এই বিশ্বাসটা রাখতে পারলে
না।”
“আসলে পরিস্থিতি তখন এমন ছিলো
আমার মধ্যে হিতাহিত জ্ঞানটুকুও
ছিলোনা।সাগরের সেই ভিডিও আর
তোমার ওইদিনের সেই কথা,তুমি
বলেছিলে তুমি আমাকে গোপন কিছু কথা
বলতে চাও তাই আমি ভেবে
নিয়েছিলাম….”
“এই বিষয় নিয়ে একটাবার আমার সাথে
কথা বলে দেখতে।ওইদিন এই কথাটা বলতে
চেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে আর
প্রিয়াকে দেখে সন্দেহ করিওনা।প্রিয়ার
সাথে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কারণটা
তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।আশা করি
প্রিয়া তোমার সব ভুল ধরিয়ে দিয়েছে।
আর একমাস পর ওদের বিয়ে হবে।প্রিয়ার
কথা ওর বিয়ের কথা সারপ্রাইজ হিসেবে
তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম আর এইটাও
চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী ওর নিজ চোখে
যা দেখছে সে বিষয় নিয়ে আমার সাথে
কথা বলুক।কারণ তোমার মনে কি
চলছিলো সেটা বুঝার জন্য,নিজের
অধিকারটা আমার সামনে তুলে ধরো
সেজন্য, আমাকে তুমি ভালবাসো সেটা
আমার সামনে প্রকাশ করো সেইজন্য আমি
কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারেনি।
এটাই ছিলো আমার গোপন কথা।”
“সরি বললামতো আর কখনো এরকম ভুল
করবোনা।”
“তাই তাহলে কান ধরে সরি বলো।”
“কিহ!”
“আমি কান ধরে তোমাকে সরি বলবো।”
“হুম” (মুচকি হেসে)
ওর বুকের মধ্যে কয়েকটা কিল ঘুষি
লাগিয়ে দিলাম।এই নাও কান ধরে সরি
বললাম
“এটা কিন্তু ভারী অন্যায় হল। যেটা করতে
বলছি সেটা না করে…..। মেঘ আজকে
কিন্তু আমাদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী।”
“হ্যা জানিতো।”
“তোমাকে যখন প্রথম বিয়ে করি তখন তুমি
বিয়েটা মেনে নাওনি।তাই আমাদের
বিয়ের কথা কাউকে জানাইনি।চেয়েছিল
াম আমাকে যেদিন মন থেকে ভালবাসবে
সেদিনি সবাইকে জানিয়ে তোমাকে
আবার বিয়ে করব।পরিবারের
সবাই,তোমার বন্ধুবান্ধব সবার
উপস্থিতিতে আমরা ২য় বার আমাদের
প্রথম বিয়ের তারিখে বিয়ে করে ১ম
বিবাহবার্ষিকী পালন করলাম। আর এইবার
তোমার সাথে আমার ২য় বার হওয়া
বিয়েটা মেনে নিয়েছ তো। ”
“হুম (লজ্জা মুখে)।”
“তাহলে তো আমি আমার স্বামীর
অধিকারটা ফলাতে পারি কি বলো।
আজকে তাহলে তোমাকে আদর….”
“ওই স্টপ স্টপ আজকে ওইসবের কিছু
হবেনা।আজকে সারারাত জেগে অনেক
গল্প করবো।এই দিনটা আমি স্মৃতির
পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে চায়।”
“ওকে।As u wish.(মুচকি হেসে)।By the way
এই যে আজকে এই সারপ্রাইজটা দিলাম
সেটা কেমন লাগলো।”
“একদিকে ভালো আরেকদিকে খারাপ।”
“কেন?”
“২য় বার আমাদের বিয়ে হয়েছে এইটা
ভেবে খুব খুশি লাগছে।কিন্তু তোমাকে
ছাড়া এই ৪টা মাস একা একা দিন
কাটিয়েছি।খুব দুর্বিষহ কেটেছে আমার
সেই দিনগুলো।মনে হচ্ছিল আমার সারা
গায়ে কাটা গেঁথে দেওয়া হয়েছে। এই
ব্যাথার তীব্র যন্ত্রণায় আমার পুরো শরীর
নীল হয়ে গেছে।তাহলে বুঝতেই পারছো
আমার দিনগুলো কেমন কেটেছিলো।”
“মেঘ আমিও তোমাকে ছাড়া যে খুব
ভালো ছিলাম তা কিন্তু নয়।তোমার মতন
আমিও এই ৪টা মাস তোমাকে না দেখে
ছিলাম।তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে
নিজেও অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি।কিন্তু
আমার ভিতরে কি যন্ত্রণা চলছিলো
সেটা শুধু আমিই জানি।আজকে এইসব কথা
বাদ দাও।আমাদের দুঃখের দিন শেষ।এখন
থেকে যা হবে ভালোই হবে। একটা কাজ
করো আগে ফ্রেস হয়ে আসো।এই ভারী
কাপড় চেঞ্জ করে এই থ্রিপীচটা পরে
নাও।”
“ওকে”
“এই চল এখন বারান্দায় যায়।”
“হুম”
.
.
“আজকে তোমাকে আমার জীবনের কিছু
গল্প শুনাবো।গল্প শেষ করার আগ পর্যন্ত
কোন কথা বলবে না।”
“ওকে। As u wish.”
“তাহলে শুনো।৭ বছর আগের কথা।আমি
ঢাকাতে তখন অনার্স পড়ছিলাম।বন্ধুরা
মিলে প্রতিবছর মেলাটা গ্রামের
বাড়িতে করি।সেইবারও আমি
বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে
যায়। মেলায় হাঁটছিলাম।তখন দেখি একটা
ছোট্ট মেয়ে বয়স কত হবে ১৩ কি ১৪।
মেয়েটা শাড়ির কুচি লুঙ্গির মতন উঁচু করে
ধরে হাঁটছিলো আর এদিক ওদিক আচাড়
খেয়ে পড়ে যাওয়ার মতন অবস্থা। শাড়ি
পড়া মেয়েটার হাঁটার নমুনা দেখে আমরা
বন্ধুরা হাসাহাসি করে শেষ। আর
এইদিকে মেয়েটা হেঁটে আমাদের দিকে
আসছিলো সেটা আমাদের কারোরই
খেয়াল ছিলো না।মেয়েটা শাড়ি পড়ে
হাঁটার সময় টাল সামলাতে না পেরে
আমার গায়ের উপর দিয়ে পড়ল।”
এতটুকু বলে মেঘের মুখের মুখের দিকে
তাকালাম।ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে
আমার হাসি আসছিলো।কিন্তু অনেক
কষ্টে সেটা সংযত রাখলাম।
“এই মেয়ে দেখেশুনে চলতে পারো না।”
“সরি আসলে এইভাবে পড়ে যাব বুঝতে
পারেনি ভাইয়া।” এই বলে ভ্যা ভ্যা করে
মেয়েটা কেঁদে দিলো।
“আরে এখানে কান্নার কি হলো।”
“আমার মাটির পুতুলটা।”
“চেয়ে দেখি বর বউয়ের মাটির পুতুলটা
ভেঙ্গে গেছে। আর সেইজন্য বেচারি
কাঁদছে।”
“সামান্য মাটির পুতুলিতো। এতে কাঁদার কি হলো।”
“অনেক খুঁজে এইরকম পুতুল পেয়েছি।আর
আপনি এইটা সামান্য বললেন এই বলে মেয়েটা
কেঁদে কোনরকমে শাড়িটা উঁচু করে ধরে
অনেক কষ্টে হেঁটে চলে গেল।”
এরপর কি জানি মনে করে মাটির পুতুলটা মাটি
থেকে নিয়ে নিলাম।বাসায় গিয়ে সেটা অনেক
কষ্টে জোড়া লাগিয়ে নিজের কাছে রেখে
দিলাম।
.
.
এর কিছুদিন পর ভার্সিটি থেকে বন্ধ পায়।১৫
দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি আসি। বাসায় আসা মাত্রই
মা একটা মেয়েকে নিয়ে আমার সাথে গল্প
জুড়িয়ে দিলো।এরপরে মা প্রায় সেই
মেয়ের নাম করে বলছে মেয়েটা খুব
ভালো।এরকম মেয়ে আজকাল দেখা যায় না।খুব
মিষ্টি মেয়ে।মায়ের কাছে মেয়েটার প্রশংসা
শুনে ওর সম্পর্কে জানার খুব খুব কৌতুহল সৃষ্টি
হল।
“মা মেয়েটার সাথে তোমার পরিচয় কি করে
হয়েছে?”
মা তো প্রায় হাসিমুখে জবাব দিলো জানিস তন্ময়
আমি একদিন বাজারে বাজার করা অবস্থায় মাথা
ঘুরিয়ে পড়ে যায়। পরে একটা মেয়ে এসে
অনেকক্ষণ যাবত আমার মাথায় পানি ঢালে।এরপর
কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে রিক্সা করে
আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।বাসায় এসে আমার
অনেক সেবাযত্ন করে।সেদিনের পর
মেয়েটা বাসায় এসে মাঝে মাঝে আমার
খোঁজখবর নিয়ে যায়।মেয়েটার স্কুল
আমাদের বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের।তাই
প্রতিদিন সকালে বাসায় এসে আমার সাথে গল্প
করে।অনেক ভালো মেয়েটা।
.
.
ও ঘটনা তাহলে এই।এইজন্য মা মেয়েটার এত
প্রশংসা করছে।তাহলে তো মেয়েটাকে
দেখতে হয়।এরপরের দিন সকালে মেয়েটা
বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়।
আমি বাইরে থেকে এসে দরজা খুলার সময়
দেখি আমার মা আর মেয়েটা হেসেহেসে
গল্প করছে।লুকিয়ে এই দৃশ্য দেখে আমার
খুব ভালো লাগলো। মেয়েটার জন্য মাকে
আবার অনেকদিন পর হাসতে দেখছি।ভালো
করে মেয়েটার চেহেরায় লক্ষ করে দেখি
এই মেয়ে আর কেউ নয় মেলার সেই
মেয়েটি যে শাড়ির কুচি লুঙ্গির মতন করে
ধরে হাঁটা ছিঁচকাঁদুনী মেয়েটি।প্রতিদিন সকালে
মেয়েটা বাসায় আসার আগে বেরিয়ে যেতাম
আর মেয়েটা বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প
জুড়িয়ে দিলে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের
গল্প শুনতাম।লুকিয়ে তাদের গল্প শুনতে বেশ
ভালোই লাগতো।
.
.
এরকিছুদিন পর মেয়েটার বাড়ির দিকে একটা
কাজে যাচ্ছিলাম ।সাদা শার্ট পড়ে সেদিন রওনা
দিয়েছিলাম।হঠাৎ করে আমার সাদা শার্টে সেদিন
বালতিভরা গোবর কে জানি ঢেলে দিলো।
রাগে আমার শরীর প্রায় কিড়মিড় করছিল।ভালো
করে লক্ষ করে দেখলাম কতগুলো বান্দর
ছেলেমেয়ে গাছ থেকে নেমে দৌড়।আমি
এরমধ্যে একজনের হাত ধরে ফেললাম।হাত
ধরে নিজের কাছে এনে ওর মুখ ঘুরিয়ে
দেখি আমার গায়ে বালতিভরা গোবরঢালার মাস্টার
আর কেউ নয় সেই মেয়েটি।যে এতদিনে
আমার মায়ের গল্প করার সখী হয়েছিলো।
.
.
“মেঘ এত ঘামছো কেন?পানি খাবে।”
“না না, আমি এই গল্প শুনবো না।ঘুমাবো।”(ভয়ে
ভয়ে)
“আরে কি জোশ একটা গল্প বলছি।আর তুমি
বলছ ঘুমাবে।সেটা কি করে হয়।কি কথা ছিলো
আজকে সারারাত আমরা গল্প করবো।গল্পই
তো করছি।এখনো আরও ইন্টারেস্টিং মজার কথা
বাকি আছে।সেগুলোও শুনতে হবে।”
এরপর মেয়েটাকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম
“এই মেয়ে আমার সাদা শার্টটার কি অবস্থা
করেছ?”
“মেয়েটা প্রায় কেঁদে কেঁদে জবাব দিলো
ভাইয়া সরি।আমি ইচ্ছা করেনি।”
“তাহলে এইসব কি করে হল?”
“ভ্যা ভ্যা,”
“চুপ কান্না বন্ধ কর।আমি তোমাকে কাঁদতে
বলছি।আমার প্রশ্নের জবাব চাইছি।শুধু উত্তর
দিবে।কান্নাকাটি করবা না।”
মেয়েটা চোখ নাকের পানি হাতের উল্টো
পাশ দিয়ে মুছে বলল, “ভাইয়া আমাদের ক্লাসের
একটা ছেলে আমাকে নিয়ে অনেক ফাজলামি
করছিলো। তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এই
ব্যবস্থা করছি।ছেলেটা এই রাস্তা দিয়ে
আসছিলো। আমিও গাছে উঠে গোবর ওর
গায়ে ফেলার জন্য তৈরী হলাম। হঠাৎ করেই ওই
ছেলের জায়গায় আপনি আসবেন আমি কি করে
তা জানতাম।আপনি কেন ঘোড়ার মতন লম্বা লম্বা
পা ফেলে ছেলেটার আগে চলে
আসছেন।দেখেন দেখেন ওই ফাজিল
ছেলেটা এখন জোরে জোরে হেসে
চলে যাচ্ছে।”
“এই মেয়ে পেটে পেটে এত শয়তানি।ওই
ছেলেকে শায়েস্তা করতে গিয়ে আমাকে
দিনের মধ্যে চাঁদ দেখায়া দিলা।ফাজিল মেয়ে
একটা।”
“ভ্যা ভ্যা,”
“চুপ একদম কাঁদবে না।”(ধমক দিয়ে)
এই বলে মেয়েটার হাত ছেড়ে নিজের
শার্টের দিকে তাকালাম।আর এই সুযোগে
মেয়েটা ভোদৌড়।আমার রাগ তখন আকাশের
সপ্তম চৌড়ায় উঠে গেল।মনে মনে তখন
প্রতিজ্ঞা করলাম এই মেয়েকে আমি কিছুতেই
ছাড়বো না।
এই বলে আমি মেঘের দিকে তাকালাম।
মেয়েটা কি রকম করুণ চাহনীতে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে।আর এদিকে ওর এই করুণ দৃষ্টি
দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।
এরপর প্রতিদিন সকালে আমার নিত্যদিনের কাজ
হয়ে দাঁড়ালো মেয়েটা কখন বাসায় আসবে,
কখন আমার মায়ের সাথে গল্প করবে। আর
কখন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের গল্প
শুনবো।ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রতি
আরো বেশি ভাললাগাটা কাজ করলো
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—১১ (শেষ)