স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৪

জান্নাতুল ফেরদৌস
 “মেঘ!!”
“আন্টি আপনি?”
“মেঘ তুই?”
সত্যিই অনেক অবাক হয়ে গেছি।কত বছর
হয়ে গেল উনাকে দেখি না।এভাবে
আবারও যে উনার সাথে দেখা হবে সেটা
আমি ভাবতেই পারি নি।উনাকে দেখে খুব
খুশি লাগছে।দৌড়ে গিয়ে উনাকে
জড়িয়ে ধরলাম।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৩
“আন্টি কেমন আছেন?আপনাকে আমি
আবার পেয়ে যাব তা ভাবতেই পারি নি।”
“এইরে দেখ মেয়েতো দেখি কান্না করে
দিচ্ছে।এতো কাদিস কেন তুই হ্যা?আমার
চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,মেঘ আমি
ভালো আছিরে মা।তুই কেমন আছিস,,”
“ভালো,,”
“কিন্তু মেঘ তুই এখানে কিভাবে?”
কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না কি
বলব,আন্টির পিছনে স্যার দাঁড়িয়ে ছিল
আমি সেটা এতক্ষণ খেয়াল করি নি।
তিনিই নিজ থেকে বললেন,মা ওই হচ্ছে
তোমার বৌমা যাকে দেখার জন্য তুমি
গ্রাম থেকে শহরে এসেছ।
আমি আর আন্টি স্যারের দিকে তাকিয়ে
আছি।
“কি বললি তুই,মেঘ আমার বৌমা?”
“হ্যা মা”
আর আমিও মনে মনে ভাবছি তন্ময় স্যার
আন্টির ছেলে। আন্টির দিকে তাকিয়ে
আছি এবার,আর ভাবছি ওনি কি আমাকে
মেনে নিবেন?
“তন্ময় তোকে আমি মেঘের কথা প্রায়
বলতাম না দেখ এই সে মেঘ।আর মেঘ
তোর
মনে আছে আমি তোকে প্রায়ই বলতাম
যদি আল্লাহ চাই আমি তোকে আমার
ছেলের বউ বানাবো।দেখেছিস
মা,আল্লাহ আমার কথা শুনেছে।শেষ
পর্যন্ত তুই আমার ছেলের বউ হয়েছিস।
আমি তন্ময়ের থেকে সব শুনেছি,ও
আমাকে সব বলেছে।আল্লাহ যা করে
মানুষের মঙ্গলের জন্য করে।ওই শয়তানটার
সাথে তোর বিয়ে হয়ে গেলে ও তোর
জীবনটা একেবারে শেষ করে দিতো।
ভালোই হয়েছে ওর সাথে তোর বিয়ে
হয়নি।মা,আমার ছেলেটা বাইরের দিকে
রাগি কিন্তু ভিতরের দিকে খুব নরম।
দেখবি ও তোকে খুব সুখে রাখবে।”
.
.
“আরে বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা বলবে
নাকি?এতদূর থেকে এসেছ একটু রেস্ট
নাও।”
“রেস্ট অনেক নেওয়া যাবে।অনেকদিন পর
আমার মেয়েটাকে পেয়েছি।কতদিন হল
ওর সাথে গল্প করি না এখন ওর সাথে গল্প
করব।”
“হ্যা কর ওর সাথে গল্প তাহলে আজকে না
খেয়ে থাকা লাগবে,”
“কেন?”
“কারণ আপনার এই মেয়ের হাতের রান্না
কাঁচা। আপনার মেয়েকে বলেছি আজকে
ওকে সারপ্রাইজ দিবো আর সেই
সারপ্রাইজটা দেওয়ার জন্য আপনাকে
নিয়ে এসেছি যাতে আপনার বৌমা মানে
আপনার মেয়েকে দেখতে পারেন আর
মেঘও আমার সারপ্রাইজটা দেখতে
পারে।আর ওকে একটু রান্নাবান্না
শিখিয়ে দিবেন যাতে ওর হাতের রান্না
খাওয়ার একটু উপযোগী হয়।বউ থাকতে
নিজে রান্না করে কেন খাব?ওকে ভালো
করে রান্না শিখাবে মা,যাতে ওর হাত
থেকে প্রতিদিন ভালো ভালো আইটেমের
রান্না খেতে পারি।”
(ইসসিরে,,দিলোতো আন্টির সামনে
আমার প্রেস্টিজ নষ্ট করে)…
“আচ্ছা আচ্ছা শিখিয়ে দিবোনে,মেঘ
চলতো মা রান্নাঘরে চল।কিছু রেঁধে নি
আজকে আমি রাঁধব আর তুই দেখবি।”
“আন্টি এখন!আপনি আগে রেস্ট নেন পরেও
শিখিয়ে দিতে পারবেন,”
“ওই আন্টি কি হুম আগে ডাকতি মানা যেত
এখন আর আন্টি ডাকবি না।তোর মাকে
কি বলে ডাকস তুই?”
“আম্মু।”
“তো তাহলে আমাকেও তুই আম্মু বলে
ডাকবি।তুই আমার বউ না আমার মেয়ে।
আমারতো মেয়ে নেই তোকে দিয়ে
আমার
মেয়ের আশা পূরণ করব।আমার রেস্ট
নেওয়া লাগবেনা তোকে দেখে আমার মন
এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে।চল চল
তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার
কাজটা শেষ করে আসি,”
.
.
রান্না শেষ করে আমার রুমে গিয়ে দেখি
স্যারের হাতে সাগরের ছবি,ও শিট এই
ছবিটা এখানে রেখে চলে গেছি।জানিনা
এখন উনি কি রিয়েক্ট করবেন?
“মেঘ,,এই ছবিটা এখানে কেন?”
…..
“মেঘ কিছু জিজ্ঞাস করছি,”
“এইটটা আম্মার লাক্কেজ থেক্কে,,”
“একদম তোতলাবে না যা বলার ক্লিয়ার
করে বল,তুমি লাকেজ থেকে ছবিটা বের
করেছ,”
“হ্যা,”
“মেঘ এতকিছুর পরও তুমি কি এখনো
সাগরকে ভালবাস,”
(তার উত্তর আমি নিজেও জানি না।
জানি ওকে আমার ঘৃণা করা উচিত কিন্তু
প্রথম ভালবাসা বলে কথা,কিছুটা মায়া
এখনো ওর জন্য আছে।এর উত্তর আমি কি
দিব জানি না)…
তোমার চুপচাপ থাকাটা আমি কি ধরে
নিবো,
তার মানে এতকিছুর পরেও তুমি..এই বলে
আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন,মেঘ
কেমন করে ওকে তুমি এখনো ভালবাসতে
পার? ও একটা প্রতারক,ও তোমাকে আর
তোমার পরিবারের সাথে প্রতারণা করে
সবাইকে কষ্ট দিয়েছে তারপরও তুমি।তুমি
যেই বোকা সেই বোকাই রয়ে গেল,যে
তোমাকে ভালবাসে তাকে তুমি বুঝনা
আর যে তোমাকে ভালবাসার মিথ্যা
স্বপ্ন দেখিয়ে তোমার সাথে প্রতারণা
করেছে তাকে তুমি..এই বলে তিনি
আমাকে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে
চলে
গেলেন।আমার হাতটা টেবিলে রাখা
কাঁচের জগের সাথে লাগায় কাঁচের জগটা
ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে যায় আর সেই
কাচের টুকরো আমার হাতে লেগে হাত
কেটে যায়,
রাতে তিনি খুব সামান্য খেলেন।মায়ের
সাথে হাসিমুখে কথা বললেন কিন্তু
আমার সাথে একটাও কথা বললেন না।
জানি উনার সেই প্রশ্নের জবাবে আমার
চুপ থাকাটা তাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু
আমারি বা কি করার সাগরকে ভুলতে
আমার সময় লাগবে।ওর মায়া কাটাতে
হলে একটু সময় আমার দরকার।
.
.
“আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন,”
….
“দেখুন আমি চাইনি,”
“মেঘ আমি কোন কিছু শুনতে চাচ্ছি না,যা
বুঝার আমি বুঝে গেছি আমাকে আর বুঝ
দিতে এসো না,,”
খুব রেগে আছেন উনি জানি না কি কথা
বলে উনাকে মানাতে হবে।এখন যতই
বুঝানোর চেষ্টা করি সব বৃথা যাবে,,
“কিছুক্ষণ পর,,মেঘ,,”
“জ্বী,,”
“এদিকে তাকাও”
“এরকম কেন তুমি?এত কেয়ারলেস কেন
নিজের প্রতি।হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে
তারপরও তুমি হাতে বেন্ডেজ করে নিতে
পারোনি,”(চিল্লিয়ে কথাটা বললেন)
তোমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে যখন
রুম
থেকে বের হলাম তখন কিছু একটা পড়ে
যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।একটু আগে
এখানে হাটতে গিয়ে আমার পায়ে
কাচের টুকরা ফুটল।আর তাতে মনে হল
তোমাকে যেভাবে ধাক্কা দিয়েছি
তাতে নিশ্চয় তোমার হাত পায়ে কাচের
টুকরা লেগে তোমার হাত পা নিশ্চয়
কেটে গেছে।দেখ এখন হাত দিয়ে ফিনকি
রক্ত পড়ছে আর তুমি এখনো হাত চেপে
ধরে আছো?
(কেঁদে)”আসলে”
“আসলে নকলে আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না।
তুমি কি চাও বলত?তোমার কারণে আমি
কষ্ট পায় সেটাই চাও?খুব ভালো লাগে
আমাকে কষ্ট দিতে,চুপ একদম চুপ তোমার
কাঁন্নার একটা শব্দও যাতে আমি কানে
না আসে,”
স্যারের বকা খেয়ে আমি আগের থেকেও
আরও বেশি করে কান্না করে দিলাম।
কত্তগুলো বকা দিল।এত বকা খেয়ে কেমন
করে চুপ থাকা যায়? খুব খারাপ
উনি,আমার পুরো কথা না শুনে কত্তগুলো
বকা দিলো,(কেঁদে)
উনি ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে
আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দিলেন।
আরেকদিকে আমার কান্না চলছেই।তিনি
বিরক্ত হয়ে আবার বললেন মেঘ কান্না
বন্ধ কর।
.
.
কান্না কিছুতেই থামতেই চাইছে না।খুব
চেষ্টা করছি থামাবার কিন্তু তারপরও
অনবরত চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছে আর
কান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে।
“লক্ষ্মীটি প্লিজ কান্না বন্ধ কর এই বলে
আমাকে তার বুকে টেনে নিলেন। মেঘ
যেই কাজ আমার পছন্দের না তারপরও
তুমি সেই কাজ কেন কর বলত?হাত দিয়ে
কত্তগুলো রক্ত বের হল অথচ তুমি হাতে
ব্যান্ডেজটাও পর্যন্ত বাধো নি।তোমার
এইরকম কাজে কার না রাগ উঠবে বল?”
“আ..মি আ..মি ফুঁপিয়ে,আমি হাতে
ব্যান্ডেজ করতে চেয়েছি..লাম।কিন্তু
আমি এই বাসায় মাত্র ১দিন হল এসেছি
কোথায় কি আছে তা কেমন করে জানব।
ফাস্ট এইড বক্স কত খুঁজেছি কিন্তু
কোথাও পায়নি।আপনি আম..মার কোন
কথা না শুনে কিছু না জেনে আম..মাকে
কত্তগুলো বকা দিয়েছেন।”(কান্নার
কারণে কথাগুলো এইরকম শুনাচ্ছিল,কত
বকা দিলেন এই পর্যন্ত উনি আমাকে। এত
বকা আমার বাবার বাড়িতে থাকতেও
আমি কখনো খায়নি যতগুলো এখানে
আসার পর ওনার কাছ থেকে খেয়েছি)
“ও,,এই কথা আমাকে আগে বলোনি কেন?
যাই হোক তারপরও দোষ তোমারি।
আমাকে আগে এই কথাগুলো বললে আমার
থেকে এত কথা তোমাকে শুনতেও হত না
আর তোমাকে কাঁদতেও হত না।”
“কি!!??কতটা খারাপ উনি।নিজে এত দোষ
করেও ভুলটা স্বীকার করছেন না আর
আমাকে সরিটাও পর্যন্ত বললেন না।
আবার বলছেন আমার দোষে এইসব
হয়েছে।
এখনো আমার দোষ দেখছেন।”
.
.
“চল,ঘুমাবে,”
“না,আমি আপনার সাথে ঘুমাবোনা,”
“আজকে এত দোষ করেও না বলছ।তোমার
কোন কথা আমি শুনতে চাইনি,,শুধু বলেছি
ঘুমাতে আসো।না আসলেই তো জানো কি
করব আমি,,”
“কি করবেন আবার আমাকে কোলে তুলে
নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিবেন।কি!কোলে!
উনার কোলে উঠব কাভি নেহি।আজকে
উনার উপরে খুব রাগ করেছি। স্যার
হয়েছেন বলে কি আমার মাথা কিনে
নিয়েছেন নাকি।যখন তখন শুধু বকা আর
ধমক দিবেন।আজকে উনার কোলে
কিছুতেই উঠব না।এত বোকা আমি না(মুখ
বেকিয়ে)।মনে হয় যেন কিছুই বুঝিনা
আমি,তাই না?এই মেঘ সব না বুঝলেও একটু
হলেও বুঝে আমাকে কোলে নেওয়ার
ধান্দা সেই সুযোগ আজ দিচ্ছি
না,হিহিহি।দৌড়ে বিছানায় গিয়ে চোখ
বন্ধ করে শুয়ে গেলাম,এইবার বুঝো ঠেলা
স্যার, হিহিহি।”
“ওমা এটা কি আমার লক্ষ্মীমন্ত্র বউ
নাকি?একেবারে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে
গেছে।যাক ভালোই হয়েছে আজকে আর
আমাকে এত কষ্ট পোহাতে হল না।
তোমাকে কোলে নিতে আমার যে কষ্ট
হয়,আমি তোমাকে কোলে তুলে নিয়েছি
তাই একমাত্র আমিই ভালো জানি এত
ভারি ওজনের একটা হাতিকে কোলে
তুলে নেওয়ার কি কষ্ট।”
“কি আমি হাতি!আমার ওজন
বেশি?” (কাঁদুনে মুখে)
“এমা তুমি না ঘুমিয়ে গেছ,জেগে উঠলে
কেমন করে?”
“আমি ঘুমায় নি,সবেমাত্র চোখ বন্ধ
করেছি।এখন চোখ বন্ধ করলেই কি
সাথেসাথে ঘুম এসে যাবে।”
“ও তাই বল?আর আমিতো ভাবলাম আমার
বউটা ঘুমিয়ে গেছে তাই মনের কথাগুলো
খুলে বললাম।”
“তাই না?তার মানে আমি ঘুমিয়ে গেলে
আমার গোপনে এইসব কথা বলে বেড়াবেন।
আমি হাতি, আমার ওজন বেশি।আপনি
জানেন আমার ওজন কত?”
“ওমা জানবো না কেন?কমপক্ষে ৫৫ তো
হবে।”
“কি!!”
“আমার ওজন ৫৫ কেজি না,মাত্র ৪৮
কেজি।আর তাতেই আপনি আমাকে হাতি
বলে ফেললেন।”
“এরে এই মেয়ে তো দেখি কান্না করে
দিচ্ছে। কান্না ছাড়া কি কিছুই পারো
না।আমি জাস্ট মজা করলাম।এই মেয়েতো
মজাও বুঝে না।এ কেমন বউ জুটল আমার
কপালে।আচ্ছা আচ্ছা কাঁদে না লক্ষ্মীটি
এখানে আস।”
“না,”
“উফ সারাক্ষণ শুধু না,না,তোমার আসা
লাগবে না আমিই আসছি।এই বলে আমাকে
নিজের বুকে টেনে নিলেন।
“পাখির মতন একদম নড়াচড়া করবে না।
লক্ষ্মী মেয়ের মতন আমার বুকে শুয়ে
থাক।
মেঘ হাত ব্যথা করছে এখনো?”
“না,”
“তাড়াতাড়ি সেরে যাবে,ঠিকাছে।চিন
্তা করিও না।মেঘ তোমাকে কিছু বলতে
চাই,দেখ আমি তোমার থেকে বয়সে বড়
তাই তোমার থেকে আমার বুঝ আর
অভিজ্ঞতাটাও বেশি।সেই সময় তোমার
হাতে সাগরের ছবিটা দেখে খুব রাগ উঠে
গিয়েছিল আমার,তাই রেগে তোমাকে
আঘাত করেছি। দেখ মেঘ এখন থেকে তুমি
আমার স্ত্রী। তাই আমার স্ত্রীর মনে
অন্যপুরুষ থাকুক তা আমি চাইনা।সাগরকে
মন থেকে যত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতে
পারবে ততই তোমার আমার আমাদের
সবার জন্য মঙ্গল হবে।সেজন্য আমি
তোমাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে
চায় ওকে মন থেকে তাড়াতাড়ি মুছে
ফেল।আর আরেকটা কথা এই বিষয় নিয়ে
আমি প্রথমে তোমার সাথে রাগ করে
থাকতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পরক্ষণেই
নিজের মনকে বুঝালাম আমি যদি ছোট
বাচ্চার মতন আচরণ করি তাহলে কেমন
করে হবে।তাই নিজের রাগকে একপাশে
ফেলে দিয়ে তোমার সাথে আগের মতন
করে সবকিছু ঠিক করে নিয়েছি।আজকে
আমাদের মধ্যে যা কিছু হয়েছে তা এখন
তুমি মন থেকে মুছে ফেলবে সাথে আমিও।
যতই ঝগড়া, মান অভিমান আমাদের মধ্যে
হোক না কেন রাতের বেলায় ঘুমানোর
সময় আমাদের সব রাগ ঝগড়া ঝেড়ে ফেলে
দিব একপাশে।ভোরের আলোতে যেমন
সব
অন্ধকার মুছে যায় ঠিকতেমন করে আমরাও
কালকের ভোরের আলোতে আমাদের সব
রাগ,অভিমান আক্রোশ ভুলে গিয়ে
নতুনভাবে বাঁচব।তুমি,আমি যদি রাগ,মান
অভিমান করে সারাক্ষণ বসে থাকি আর
এই আশায় থাকি ও আমার রাগ ভাঙ্গাবে
তাহলে দেখবে সে সম্পর্কে ফাটল
তাড়াতাড়ি ধরবে।কারণ তখন একটাই কথা
সামনে দাঁড়াবে তখন তোমার উচিত ছিল
আমার রাগ ভাঙ্গানোর। কেন আমার রাগ
ভাঙ্গাও নি?এই বিষয় নিয়ে কথা
কাটাকাটি,আর সন্দেহের সৃষ্টি হবে।আর
এজন্যই খুব ভালো সম্পর্কগুলোও
তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যায়। আর আমাদের
সম্পর্কে তা হোক আমি কিছুতেই সেটা
চাইনা।মানুষ যেহেতু তাই এরকম
ঝগড়াঝাটি,রাগ অভিমান থাকবেই
স্বাভাবিক তবে সেসব যাতে আমাদের
সম্পর্কে প্রভাব না ফেলে সেদিকেও
আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।তাই কোন
অঘটন ঘটার আগে নিজেদের মধ্যে সবকিছু
স্বাভাবিক করে ফেলা উচিত।আমি কি
বুঝাতে চেয়েছি তা বুঝেছ মেঘ?”
“হুম, বুঝেছি,”
“এইতো আমার লক্ষ্মী বউ এই বলে আমার
কপালে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিলেন।
তোমার থেকে আমি ঠিক এই আশায় করি।
আমাদের সম্পর্কটা যাতে সুস্থ আর
স্বাভাবিক থাকে সে খেয়াল রাখবে আর
এত অভিমান নিয়ে বসে থাকবে না
ঠিকাছে।এখন লক্ষ্মী মেয়ের মত ঘুমিয়ে
যাও। সকালে তাড়াতাড়ি উঠা লাগবে।”
আসলেই উনি ঠিক বলেছেন এত রাগ
অভিমান আর আক্রোশ মনের ভিতর পুষে
রাখলে সবকিছু অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হলে এতটুকু
সেক্রিফাইস করা উচিত।আর ভেবে কাজ
নেই ঘুমিয়ে যাই।হে আল্লাহ উনি সকালে
উঠে আমাকে ম্যাথ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাস
না করলেই হয়।
.
.
“এই মেঘ,”
“হুম,”
“লক্ষ্মী বউ আমার উঠ,সকাল হয়ে গেছে”
“এত তাড়াতাড়ি কেন আরেকটু ঘুমায়”
“রাতে কি করেছ হুম কোন কথা শুনতে চায়
নি উঠ বলছি এই কথা বলে আমাকে টেনে
উঠালেন।”
“আহহারে,আমার এত সুন্দর ঘুমটাও কি
উনার সহ্য হয় না।শেষ পর্যন্ত জোর করে
আমাকে উঠিয়েই ছাড়ল”
“যাও,ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে
আস,hurry up.”
“আচ্ছা”
.
.
নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার
শাশুড়িমাও ঘুম থেকে উঠে নাস্তা
বানিয়ে টেবিলে সাজাচ্ছেন।
“আরে মেঘ আয় আয় বস।বল কি খাবি আমি
নিজ হাতে তোর পছন্দের সব খাবার
বানিয়েছি”
“মা,ওর জন্য পছন্দের খাবার বানিয়েছ
ভালো কথা। কিন্তু ওকে বল তাড়াতাড়ি
নাস্তা শেষ করতে”
“কেন রে,আস্তে ধীরে খাক না মেয়েটা
এইরকম কেন করছিস?”
“করছি কারণ তোমার মেয়েটা
পড়ালেখায় একনম্বর ফাঁকিবাজ।কালকে
ম্যাথ দেখতে বলে গিয়েছিলাম। আমি
জানি আপনার এই গুণধর মেয়ে বই একটু
খুলেও দেখিনি।মেঘ আমাদের কথা না
শুনে তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ কর”
“শয়তানটার ম্যাথের কথা এখনো মনে
আছে।মেঘ তুই শেষ”
“হয়েছে টাইম ওভার।আর নাস্তা করা
লাগবে না।যা খেয়েছ তাই যথেষ্ট। চল
রুমে চল,তোমাকে আজকে ম্যাথ করাব”
.
.
“আপনার না আজকে ভার্সিটি যেতে
হবে।”
অনেক দেরি আছে আমার সেখানে
যেতে।তোমাকে পড়িয়ে তারপর
ভার্সিটিতে যাব।চল বলছি,এই বলে আমার
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রুমে আর
এইদিকে আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
ম্যাথে আমি একদম কাঁচা কি করে যে এই
শয়তান আর রাক্ষসটাকে ম্যাথ করে দিব
তা বুঝতে পারছি না। আমাকে সারাদিন
ম্যাথ বুঝালোও স্যারের সব কথা আমার
মাথার উপর দিয়ে চলে যায়।এখনকার
মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া পড়া আর লেকচার
আমি এখনি ভুলে যায়। ভয় লাগছে শেষে
স্যার রেগে গিয়ে আমাকে আবার লাঠি
দিয়ে না মারা শুরু করে দেয়।এইসব
ভাবতেই অটোমেটিক আমার চোখ দিয়ে
পানি পড়ছে। যার ভয় আমি শুধু ক্লাসে
পেতাম এখন সে ক্লাস +বাসা!!
দুইজায়গায় আমাকে ম্যাথ করে শেষ করে
দিবে”
“মেঘ এমা কাঁদছ কেন?কি হয়েছে দেখি
আমার লক্ষ্মী বউটা কাঁদছে কেন?
আমাকে বল কি হয়েছে”
…..
“ও বুঝেছি এইজন্য কাঁদতে হয়।কাছে এসে
আমার চোখের পানি মুছে দিলেন।
আমাকে তার বুকে টেনে নিয়ে চুলে বিলি
কেটে দিচ্ছেন আর বলছেন মেঘ ম্যাথকে
এত ভয় পাও কেন বলত?কিচ্ছু হবে না, দেখ
আমি জানি তুমি ম্যাথে দুর্বল তার মানে
এই নয় যে তোমাকে দিয়ে ম্যাথ হবে না।
তুমি একটু চেষ্টা করবে দেখবে ম্যাথ
করতে কত সোজা লাগে।তখন দেখবে তুমি
ম্যাথকে ভয় পাচ্ছো না,ম্যাথ তোমাকে
উল্টো ভয় পাচ্ছে।আর আমিতো আছি।
আমি থাকতে ম্যাথকে ভয় একদম পাবে
না।তুমি যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার পড়া
বুঝতে পারছ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত
তোমাকে ম্যাথ বুঝাতে থাকব।ম্যাথ না
পারার জন্য তোমাকে কখনো বকব না
কিন্তু ফাঁকিবাজি করলে বকাতো খেতে
হবেই।তোমাকে সারাদিনও ম্যাথ বুঝাতে
আমার একটু ক্লান্তি লাগবে না।নিজের
আপনজনের জন্য করছি এইসব তাই একটু কষ্ট
করার দরকার হলে করে নিব।আমি আমার
দিক দিয়ে চেষ্টা করব আর তুমি তোমার
দিক দিয়ে।দেখবে ম্যাথ করার কৌশল
তোমার মাথায় একটু একটু করে ঢুকছে।আর
কাঁদে না লক্ষ্মীটি।আস ম্যাথ করতে বসি”
.
.
স্যারের কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল।
তার কথামতো পড়তে বসলাম।অনেকগুলো
সূত্র দিয়ে আমাকে ম্যাথ বুঝালেন আর
খাতায় করিয়ে দিলেন কিন্তু
ফাটাপোড়া কপাল সব আমার মাথার উপর
দিয়ে চলে গেল।
“মেঘ তোমার হাতটা দেখি।ব্যান্ডেজ
খুলে আমার বাম হাতের ক্ষতটা দেখলেন।
এইতো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে।
ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এড বক্স এনে নতুন
করে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।
মেঘ তোমার হাতের ব্যান্ডেজ তো
মায়ের চোখে পড়ার কথা!”
“আমি কাপড় দিয়ে হাত ঢেকে
রেখেছিলাম তাই খেয়াল করেননি”
“ও,আচ্ছা”
“মেঘ তুমি আমার করিয়ে দেওয়া
ম্যাথগুলো দেখতে থাক আমি এখনি
আসছি”
“আচ্ছা”
.
.
কিছুক্ষণ পরে তিনি নাস্তা নিয়ে এলেন।
কি ব্যাপার ম্যাথগুলো দেখছ,
“হুম দেখছি”(আর বুঝার চেষ্টা করছি মাথা
ফেটে যাচ্ছে তারপরেও কিছু মাথায়
ঢুকছে না)
“এইতো লক্ষ্মী বউটা আমার।একটু চেষ্টা
কর দেখবে আস্তে আস্তে মাথায় ঢুকবে।
না বুঝলে আমাকে বারবার জিজ্ঞাস
করবে ঠিকাছে।”
“আচ্ছা”
“আচ্ছা হা কর সকালে তেমন কিছু
খাওনি,এখন খেয়ে নাও”
“আপনি আমাকে দেন আমি হাত দিয়ে
খেয়ে নিব
“দেখ আমি যখন তোমাকে নিজ হাতে
খাইয়ে দিতে চাইব তখন এই কথা আর
বলবে না যে তুমি নিজ হাতে খেতে
পারবে বা খেয়ে নিবে।আমি খাইয়ে
দিতে চাইলে চুপচাপ কোন উল্টাপাল্টা
কথা না বলে খেয়ে নিবে এটা আমার
শেষ কথা। আমাকে বারবার যাতে এই
কথাটা তোমার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে না
হয়, বুঝতে পেরেছে”
“হুম”
“এই তো লক্ষ্মী মেয়ে।নাও হা কর”
চুপচাপ উনার কথা বাধ্য হয়ে পূরণ করলাম।
এরপর উনি মেডিসিন খাইয়ে দিলেন।
.
.
“মেঘ আমার আসতে আসতে বিকেল হয়ে
যাবে।এখন তুমি এই ঘরের বউ তোমার
হাতে অনেক দায়িত্ব।তাই বাসায় মাকে
টাইম দিবে,মাকে তো তুমি আগে থেকে
চিন ওনি তোমাকে নিজের মেয়ের মতন
দেখেন। তাই তোমাকে দিয়ে উনি কোন
কাজ করাবেন না কিন্তু তারপরেও মা যে
কয়দিন এখানে আছে একটু একটু করে
রান্নার কাজটা ওনার কাছ থেকে শিখে
নিও।আর হ্যা পড়ার কথা খবরদার
ভুলবেনা,আজকে যা পড়িয়েছি আর
দেখিয়েছি তা বাসায় আবারও দেখবে
আর করবে।মা এখান থেকে চলে গেলে
আবার তোমাকে ভার্সিটি গিয়ে ক্লাস
শুরু করতে হবে।আমার কথা মাথায় ঢুকেছে”
“জ্বী,স্যার ঢুকেছে”
“কি!What স্যার”(রেগে গিয়ে)
“সরি সরি আমার মনে ছিলনা যে আমি
এখন বাসায় আছি।কিছুক্ষণের জন্য মনে
হল আমি ক্লাসরুমে আছি আর আপনি
আমার ক্লাস নিচ্ছেন তাই মুখ ফুসকে এই
কথা…”
“প্লিজ মেঘ একটু চেষ্টা কর এই স্যার বলে
ডাকাটা বন্ধ কর।তুমি বারবার কেন এই
কথাটা ভুলে যাও যে আমি তোমার
হাজবেন্ড”
…..
“আশা করি তোমার এই ধরণের ভুল
তাড়াতাড়ি সংশোধন হয়ে যাবে।
আমাকে মন থেকে তোমার স্বামী
হিসেবে মানলে আর আমাকে স্বামীর
চোখে দেখার চেষ্টা করলে দেখবে
তখন
তোমার মুখ দিয়ে স্যার শব্দটা আর আসবে
না।”
…….(এত সহজ এমনভাবে কাউকে বিয়ে
করে তাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে
মেনে নেওয়া।এই বিষয়টা স্যার যতটা
সহজ করে দেখছেন ততটা সহজ না।উনাকে
স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া আমার
কাছে ম্যাথের মতনি অনেক কঠিন।
উনাকে তো ভালবাসিই না তাহলে কেমন
করে!?উনি ম্যাথের মতন কঠিন বিষয় সহজে
বুঝে গেলেও কিন্তু একটা নারীর মন কি
চাই এত সহজে তা বুঝতে পারবেন না।
আমার মন কি চায়,এই মনের অবস্থা এখন
কেমন সেটা বুঝলে হয়ত এই কথাটা তিনি
কখনো….)
“যা ভাবছ ভাব।তোমার ভাবনা নিয়ে
আজকে কিছু বলব না।কিন্তু এই বিষয়
নিয়ে তোমার ভাবনার উত্তর যাতে
পজিটিভ হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে।
হুম,আচ্ছা আমার লক্ষ্মী বউ আসি তাহলে।
মার আর নিজের খেয়াল রেখো ঠিকাছে
এই বলে আমার কপালে কালকের মতন করে
ভালবাসার পরশ দিয়ে দিলেন”
“আচ্ছা,”
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৫