পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 04

___________________
ক্লাস শেষ।ওয়াসেনাত গেট থেকে বেড়িয়ে পরেছে।সে লাইব্রেরীতে যাবে।রিমি হলে চলে গেছে।গেট থেকে বেড়িয়ে ওয়াসেনাত মুখের উপড় হাত রাখে।চোখমুখ কুঁচকে আসে মুহূর্তেই।অস্পষ্ট স্বরে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে,
—” ওহ্ এত রোদ!!”
ওয়াসেনাতের মতে রোদ পৃথিবীর সবচাইতে অদ্ভুত জিনিস।কখনো মনে হবে রোদ ছাড়া মানুষ অচল আবার মনে হয় রোদের প্রয়োজনই নেই।তবে ওয়াসেনাতের জীবনে রোদের প্রয়োজন নেই বললেই চলে।রোদের তাপ গভীর হলেই হাত পা মুখ পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা।কিন্তু বিকেলের মিষ্টি রোদ আবার সুন্দর। ওয়াসেনাতের কাছে রোদ মানেই ঘাম,এই বুঝি রোদে মুখটা জ্বলে উঠলো,এই বুঝি জামা ঘামে ভিঁজে উঠলো,আবার মনে হয় পানির তৃষ্ণায় মর মর অবস্থা।সবই ওয়াসেনাতের কাছে বিরক্তির একটা বড় কারন।মনে হয় একরাশ বিরক্তিতে ঢেকে গেছে তার মেঘাচ্ছন্ন দুনিয়া।ওয়াসেনাত নিজের চোখেমুখে বিরক্তি বজায় রেখেই মুখের উপড় হাত দিয়ে এক পা এক পা করে রাস্তার পাশ ঘেষে হাটছে।মনে মনে বিড়বিড়ও করছে।কিছু দূর যেতেই ওয়াসেনাত পা চালানো থামিয়ে দিলো।তার সামনে একজন বয়স্ক লোক দাড়িয়ে আছে।চোখেমুখে তার চিন্তার ছাপ।চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা দুই এক সেকেন্ড অন্তর অন্তর তিনি উঠাচ্ছে আবার হালকা নামাচ্ছে। কালো লম্বা ব্লেজার গায়ে।এত রোদে তিনি ঘেমে একাকার অবস্থা।ওয়াসেনাত আগ্রহের সাথে এগিয়ে গেলো।হাত নামিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
—” দাদু আপনার কি কোনো সমস্যা??”

লোকটা চমকে তাকালো।মোটা ফ্রেমের পিছনের ঘোলাটে ছাই রংঙ্গা চোখ দিয়ে ওয়াসেনাতের দিকে একবার তাকালো।চোখ ঘুড়িয়ে আবার তাকালো।তার তাকানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছে ওয়াসেনাত তার বহু দিনের চেনা।কিন্তু বয়সের তালে পড়ে ভুলে গেছে বা চিনতে পারছে না।বয়সটা মাঝে না আসলেই তিনি চট করে চিনে নিতে পারতো।কিন্তু এখন পারছে না বলে তার চোখে মুখে একঝাঁক চিন্তা আরো বাসা বাধছে।ওয়াসেনাত একটু অবাক হয়ে ভ্রু জোড়া বাঁকিয়ে আবার বললো,
—” দাদু আপনার কি কিছু হয়েছে??মানে সমস্যায় আছেন??? ”
লোকটার চিন্তা শক্তিতে ওয়াসেনাতের কথা ব্যাঘাত এনেছে তাই সে কিঞ্চিত বিরক্ত। নাকটা একটু উঁচিয়ে চমশা ঠেলে বললো,
—” তেমন কিছু না।”
ওয়াসেনাত আবার একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
—” আরে বলেন না দাদু??সমস্যার কথা বললেই সমাধান আসে।আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্যা নিজের মাঝে চেপে রাখবেন ততক্ষণ কোনো লাভ হবে না।বললেই সমস্যার সমাধান হয়।তাই ঝটপট বলে ফেলুন তো??”
লোকটা ওয়াসেনাতের অন্তরিকতা দেখে ভারী অবাক চোখে তাকালো।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে এই গম্ভীর মুখ কারো সাথে মিলতে মিলতে মিলাতে পারছে না সে।একটুই কারচুপি আছে।কিন্তু কোথায় তা ধরতে পারছে না সে।লোকটা এবার হালকা হাসলো।অনেক্ষন পরে তার মুখে হাসি ফুটেছে।হেসে তিনি বললো,
—” আসলে আমার গাড়ির একটা চাকা গর্তে পড়ে গেছে।বৃদ্ধ মানুষ গাড়ি ঠেলতে পারছিনা।তাই দাড়িয়ে আছি।”
ওয়াসেনাত যেনো চট করেই তার সমস্যার সমাধান বের করে ফেলেছে এমন একটা ভঙ্গি করে বললো,
—” আরে ব্যস এই টুকনি সমস্যা নিয়ে আপনি এত চিন্তিত মুখে তাকিয়ে ছিলেন আমি তো ভেবেছি এই বুঝি আপনি আইনিস্টাইনের দায়িত্বে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি।তাই আপনি মহান চিন্তায় ব্যস্ত। যদিও আপনাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হত আমি কিন্তু আপনাকে সাহাস্য করতে পারতাম না।”
ওয়াসেনাতের কথা শুনে লোকটি কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।ওয়াসেনাত মিটমিটিয়ে হেঁসে উঠে বললো,
—” আসলে আমি তো কমার্সের স্টুডেন্ট। সাইন্স কিভাবে পাড়বো বলেন!!”
ওয়াসেনাত আবার হাসে। সাথে সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটিও।মাথা কাত করে ওয়াসেনাত গাড়ির চাকাটা দেখে।রাস্তার এক পাশের একটা ছোট গর্ত।তাতে বৃষ্টির জমে থাকা পানি আছে।আর সেই পানিতেই চাকা ডেবে গেছে।ওয়াসেনাত খুবই ভাবুক হয়ে ভাবলো।তারপর গম্ভীর সুরে বললো,
—” আমি পিছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছি আপনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।”
লোকটা সাথে সাথে উত্তেজিত গলায় বললো,
—” আরে না না।তুমি পারবে না।এটা অনেক কঠিন আর কষ্টের কাজ।আমি লোক ডেকে দিয়েছি।সবাই চলে আসবে কিছুক্ষণ পরেই।অপেক্ষা করি না হয়।”
ওয়াসেনাত নাছড় বান্দা।কাজটা না করলে তার ভাত হজম হবে না এমন অবস্থা তার।মুখ কাচুমাচু করে সে বললো,
—” না না আমি সাহাস্য করবো মানে করবো।যান বসেন।আরে যাননা।”
বলেই ঠেলে পাঠিয়ে দিলো।নিজে পিছনে গিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকালো।সূর্যকে অনুরোধ করলো একটু মেঘের আড়ালে যেতে কিন্তু সূর্য শুনলো না।ওয়াসেনাত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অনেক শক্তি সঞ্চয় করে পিছনে জোড় লাগিয়ে ধাক্কা দেওয়া শুরু করে।ধাক্কা লাগিয়েই চেলেছে।কিন্তু গাড়ি নড়ছে না।উল্টা তার জামা ভিঁজে যাচ্ছে।ওয়াসেনাতের কপাল চুয়ে চুয়ে ঘাম ঝঁড়ছে। তবুও সে পারছে না।মুখটা লাল হয়েগেছে। হাপিয়ে উঠেছে কিন্তু ফলাফলা শূন্য।

________________________
অরিত্রান নিজের গাড়ির পাশে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো।ভার্সিটির চক্করে সে অফিস যেতে পারছে না।তাই ফোনে কথা বলছে।হঠাৎ চোখটা একটু ঘুড়তেই ওয়াসেনাতকে গাড়ি ধাক্কাতে দেখে গেলো।অরিত্রান ফোন পকেটে নিয়ে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত নিজের সব শক্তি দিয়ে যখন ব্যর্থ তাখন হাঁপাতে হাঁপাতে কোমড়ে দু’হাত গুঁজে দাড়িয়ে পড়ে।বৃদ্ধ লোকটি বেড়িয়ে এসে আদরি স্বরে বললো,
—” দেখলে তো হাপিয়ে গেলে তুমি??তবুও কিছু হলো না??শুধু শুধু তোমার কষ্ট হয়েছে।বাদ দেওয়া।”
নাছোড়বন্ধা ওয়াসেনাত তার কথা মানতে নারাজ।সে যে করেই হোক করবে।এমন একটা ভাব নিয়ে বললো,
—” আরে দাদু দাড়ান তো। ভাবতে দেন কি করা যায়।”
ভদ্র লোকের দারুন লাগছে মেয়েটার কথা শুনতে।কেমন মিষ্টি মিষ্টি কথার ভঙ্গি।তাই তিনিও আগ্রহের সাথে দাড়িয়ে আছে।বৃদ্ধ বয়সে গল্প করার ইচ্ছা থাকে প্রবল।তাই ভালোই লাগছে।একা একা দাড়িয়ে থাকার চেয়ে বাচ্চা মেয়েটার কথা শুনাই ভালো।লোকটা গাড়ির পাশে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে হাতের লাঠিটা পাশে চেপে রাখে।ওয়াসেনাত গভীর মনোযোগীর মত ভাবতে ভাবতেই তার চোখ পরে দূরে দাড়িয়ে থাকা মানবীর উপড়ে।চট করেই তার চিন্তিত মুখে এক চিলতি হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে।অরিত্রান ঠায় দাড়িয়ে আছে।ওয়াসেনাতকে তার দিকে আসতে দেখেই সে পিছনের দিকে যাওয়ার পথ খুঁজে।কিন্তু তার খোঁজা হলো না। তার আগেই ওয়াসেনাত তার সামনে এসে হেলে দুলে দাড়িয়ে পড়ে।ওয়াসেনাত পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার অরিত্রানকে দেখে নিলো।হাসি বিলিন করে চোখেমুখে একরাশ অভিযোগ ফুটিয়ে সে ভাবতে লাগলো।লোকটা কেমন যেনো??সকাল থেকেই মুখের ভাব আগের মতই।কোনো পরিবর্তন নেই।গম্ভীর গম্ভীর ভাবে।যেনো সে অতিব নিশ্চুপ প্রানি।কথা বলতে পারে না তো কি হয়েছে??একটু হাসতে তো পারে।কিন্তু না সব সময় কেমন গৌড়গম্ভীর ভাব তার।আশ্চর্য।ওয়াসেনাত ভাবনার জগৎ টপকে কপালটা একটু কুঁচকে বললো,
—” আপনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন!! একটু এগিয়ে গিয়ে হেল্প করলে কি হয়??মানুষ মানুষের জন্যইত।প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। ভাবসম্প্রসারন পড়েন নি বুঝি??”
অরিত্রান কিছুই বললো না।আগের নেয় তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাতের কুঁচকানো মুখের দিকে।ওয়াসেনাত আরো বিরক্ত হলো।লোকটা বোবা ঠিক আছে।তাই বলে কি একটু মাথা দুলাবে না।ওয়াসেনাত খেঁপে গেলো।রাগি রাগি গলায় বললো,

—” এমন স্টেচু অপ লিভার্টির মত থাকেন কেনো বলেন তো??মনে হচ্ছে মুখের সাথে সাথে আপনার কানপুলেও হরতাল। শুধু কান না সর্বোচ্চ জুড়েই হরতাল।”
অরিত্রানের বেশি কথা পছন্দ না বলেই তার মনে হতো।কিন্তু এখন রিমন আর এই মেয়ের চক্করে পড়ে মনে হচ্ছে সে বেশ ধৈর্যের সাথে মানুষের ননস্টপ বকবক শুনতে পারে।সত্যি কি তাই??ওয়াসেনাত ধুৎ করে শব্দ করে।চোখমুখ কুঁচকে চারদিকে একবার তাকিয়ে খপ করে অরিত্রানের হাত ধরে টেনে হাটা শুরু করে।অরিত্রান স্তব্ধ। তার সারা শরীরে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ চলছে।হৃৎপিন্ডেরে শব্দ গুলো তালে তালে বাড়ছে। মনে হচ্ছে প্রতিটা পদক্ষেপে হৃৎপিন্ড তুমুল হারে বাদ্যধ্বনি করছে।অরিত্রান দ্রুত হাত টেনে সরিয়ে নেয়।ওয়াসেনাত একবার ভ্রুকুঁচকে তাকায়।অরিত্রান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। ওয়াসেনাত দায়সারা ভাব নিয়ে হাত উঁচিয়ে বললো,
—” আরে একটু হেল্পের জন্য ডাকছি।এমন ভাব দেখাচ্ছেন কেনো??”
অরিত্রান সামনে হেটে যায়।ওয়াসেনাতও পিছনে পিছনে যায়।লোকটা অরিত্রানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।যেনো এবার তার বার্ধক্যও তাকে হার মানাতে পারেনি। সে চট করেই অরিত্রান নামক বান্দাকে চিনতে পারেছে।এটা যে অরিত্রান সে অতল ঝাপসা চোখের হলেও চিনতে পারবে।অরিত্রান নিজেও খানিকটা চমকালো।কিন্তু স্বাভাবিক ভঙিতে পকেটে হাত ডুকিয়ে সে দাড়িয়ে আছে।নিজের ভিতরে আসলে কি চলছে তা সে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না।দু’জনের দিকে ওয়াসেনাত মাথা কাত করে কিছুসময় তাকিয়ে থেকে বললো,
—” উনি গাড়ি ঠেলতে হেল্প করবে দাদু।আপনি বসে পরেন।”
অরিত্রান চমকে তাকালো।অদ্ভুত ভাবে চোখ বড় করলো।চশমার আড়ালে তার চোখের আসল অবাকতা দেখা গেলো না।অরিত্রান চারপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে ভাবছে অরিত্রান খান গাড়ি ঠেলব!!হোয়াট!! হাউ ক্যান দিস পসিবল!!!সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটাও ভারী অবাক হলো মনে হয়।তিনি অবাক হয়েই বললো,
—” বলো কি দাদুমনি!! উনি ঠেলবে গাড়ি??তাও এই মাঝ রাস্তায়?? অসম্ভব!!”
ওয়াসেনাত একচিলতি হাসি হেসে বললো,
—” আরে দাদু উনি আমার নতুন বন্ধু হয়েছে।ভালো ছেলে।হেল্প করবে।আপনি চিন্তা করবেন না।তবে এভাবে চমকাচ্ছেন কেনো??মনে হচ্ছে উনার দ্বারা এটা ইম্পসিবল??”
লোকটি নিজের চমশা ঠিক করে বললো,
—” অনেকটা তেমনই দাদুমনি।”
ওয়াসেনাত ভাব নিয়ে বললো,
—” আরে না দাদু।দেখেন কত ফিট বডি।
অরিত্রানের বাহু দুই আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো।অরিত্রান ছিটকে দু’পা পিছিয়ে গেলো।মেয়েটা ছুঁয়ে দেখলেই তার মনে হয় এই বুঝি হৃৎপিন্ড লাফানো শুরু করেছে।অরিত্রান খানের এমন ফিলিংস জীবনে প্রথম হচ্ছে। ভয়ংকর মেয়েমানুষ। ওয়াসেনাত দাঁত বের করে হেসে বললো,
—” সেই বডি দাদু।একদম শক্ত।আর শক্তিশালী। উনি তো একাই দশবারো গাড়ি অনায়াসে ঠেলে দিতে পারবে।কি বলিষ্ঠ দেহ।মাশআল্লাহ্।এত সুন্দর ফিটনেস যদি কাজেই না আসে তাহলে এগুলোর কি দরকার বলেন তো।সকলে মোরা সকলের তরে প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।ঠিক বলেছিনা।
অরিত্রান হা হয়ে আছে।এই মেয়ে তাকে অরিত্রান খানকে দিয়ে গাড়ি ঠেলাবেই!! তাও তার নিজের দাদার গাড়ি।হুম এই ভদ্র লোক অরিত্রান খানের দাদা অরহাম খান।তিনি এখনো অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে।অরিত্রানের সে দিকে হেল দুল নেই।সে ভাবছে এই মাঝরাস্তায় সে গাড়ি ঠেলবে!!যেখানে তার গাড়ির দরজা খোলার জন্যও চার পাঁচ জন লোক অনায়াসে কাজে থাকে।ওয়াসেনাত তাড়াহুড়া দেখিয়ে বললো,
—” এত কি ভাবছেন??কিছনে চলুন তো।আমার সাথে এদিকে আসুন।আর দাদু আপনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চেষ্টা করুন।চলেন..!”
অরিত্রানের চোখেমুখে একটা অদেখা রাগ ফুটে উঠেছে।সব হয়েছে ওই রহিত শেখের জন্য।হাতে পেলে কুচি কুচি করবে তাকে।অরিত্রান খান কি জিনিস বুঝিয়ে দিবে।ভার্সিটির প্রফেসর হওয়া দেখিয়ে দিবো।অরিত্রান রেগে আছে।তুমুল তার রাগ এখন। তবুও সে ওয়াসেনাতের পিছন পিছন গেলো।ওয়াসেনাত প্রাণপণ ঠেলেই চলেছে।অরিত্রান একবার গাড়ির দিকে তো একবার ওয়াসেনাতের দিকে তাকাচ্ছে।ওয়াসেনাত ঠোঁট চেপে চোখ বাঁকিয়ে বললো,
—” আরে ঠেলেন না।”

অরিত্রান শার্টের হাতা ভাঁজ করে।সামনের কিছুসংখ্যক চুল চোখের সামনে থেকে পিছনে ঠেলে দেয়।চশমাটা খুলে প্যান্টের পিছনের পকেটে রাখে।উবো হয়ে গাড়িতে হাত রাখতেই ওয়াসেনাতের হাতের উপর হাত পরে।অরিত্রানের আবার কাঁপুনি ধরে। দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়।ভয়ংকর এই মেয়ে এবং এর ছোঁয়া।অরিত্রান হাত সরিয়ে আবার একটু জোড়ে ধাক্কা দিতেই গর্ত থেকে উঠে যায় গাড়ি।ওয়াসেনাত মুখ চেপে অবিশ্বাস ঘটনা ঘটিয়েছে এমন ভাব নিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
—” ওহ্ মাই আল্লাহ!! এটা আমি করেছি!!ইয়াহুহুহুহু।”
অরিত্রান কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে হাতা ঠিক করে চশমাটা দ্রুত পরে নিলো।সকলের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করার প্রচেষ্টা তার।বিশেষ করে এই মেয়েটার থেকে।যেহেতু একুই ভার্সিটি। অরহাম এগিয়ে এসে অপরিচিত ভঙ্গিতে বললো,
—” থ্যাংক্স মিস্টার…..!”
ওয়াসেনাত নিজেই লাফিয়ে বললো,
—” নুহাশশশশশ।”
অরহাম ভ্রুকুঁচকে তাকালো।ঠোঁট একপাশে নিয়ে বললো,
—” মিস্টার নুহাশশশশশ।”
অরিত্রান হাত মিলালো।তিনি অনেক অবাক।তবুও বিস্মিত কন্ঠে বললো,
—” এই বলিষ্ঠ দেহ কাজে এসেছে তাহলে!!গুড ভেড়ী গুড়।আসি তাহলে।আর পুচকি তোমাকেও ধন্যবাদ।”
ওয়াসেনাতের হেজাবের উপর হাত বুলিয়ে তিনি চলেগেছে। জানালা দিয়ে বার কয়েক অরিত্রানের দিকে তাকালো।চোখেমুখে একরাশ চিন্তা।সাথে ভয়ও।রাগ উঠলে না জানি বাচ্চা মেয়েটার ক্ষতি না করে দেয় অরিত্রান।তিনি জানে অরিত্রান নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে যানলেও ছেড়ে দেয় না।তাই তার চোখেমুখে শত শত দুশ্চিন্তা ফুটি উঠেছে।গাড়ি চালানো শুরু করে তিনি।
______________________
অরিত্রান উল্টা ঘুরে হাটা দিতেই ওয়াসেনাত এগিয়ে বললো,
—” আরে আরে যান কোই!!”
অরিত্রান থেমে যায়।ওয়াসেনাত অনুনয়বিনয় করে বললো,
—” সামনের লাইব্রেরীতে একটু যাবেন??কিছু বই কিনবো।প্লিজজজজজজ।”
অরিত্রান একবার বলতে চেয়েছে এভাবে টেনে কথা কেনো বলে এই মেয়ে।কিন্তু বললো না।কি মনে করে সে চুপচাপ ওয়াসেনাতের পাশ ঘেষে হাটা শুরু করে।ওয়াসেনাত মহা খুশি।খুশিতে ডাকুমডুকুম হয়ে সে হাটছে।মাথায় অন্য বুদ্ধি কাজ করছে।অরিত্রান তাকাচ্ছেনা তার দিকে।রাস্তায় সে কখনোই এভাবে খোলা মেলা হাটে নি।তার উপর বাংলাদেশ। একদম তার অপছন্দনীয় জায়গা।কেমন যেনো?? চারপাশে ময়লা আবর্জনা।সেঁতসেঁতে পরিবেশে।ভাবতেই দম বন্ধ লাগছে তার।কিছুদূর যেতেই ওয়াসেনাত বললো,
—” আচ্ছা আপনি না হয় কথা বলতে পারেন না।তাই বলে কি হাসতেও পারেন না??সব সময় এমন গোমুট ধরে থাকেন কেনো??যানি জবাব দিতে পারবেন না তাও বলছি।এমন মুখ করে ঘুড়বেন না।কেমন অদ্ভুত লাগে।মানুষই মনে হয় না।যদিও আমি দেখি নি তবুও বলছি মনে হয় ওই পরিত্রাণ মনস্টারের মত।হুহ।”
অরিত্রান বিস্ময়ে হতভম্ভ হয়ে তাকালো।মেয়েটা না হয় তাকে চিনে না।তবুও একটা মেয়ের কাছ থেকে এত ভয়ংকর কথা নিজের নামে শুনেই তার অদ্ভুত লাগছে।নামটা যে তার নামকেই বিক্রিত করে করা হয়েছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।অরিত্রান থেকে পরিত্রাণ। অরিত্রান আর ভাবলো না।ওয়াসেনাত সামনে হাত তাক করে বললো,
—” ওই তো দেখা যাচ্ছে লাইব্রেরী। চলেন।”

অরিত্রান ভাবলেশহীন ভাবেই হেটে চলে।ওয়াসেনাত লাইব্রেরীতে দাঁড়িয়ে একটা একটা করে বইয়ের নাম বলছে।এই ফাঁকেই অরিত্রানের চোখ গেলো ওয়াসেনাতের দিকে।হাইট ৫’৩”হবে হয় তো,ওয়েট ৪৪/৪৬ হবে,বয়স একদম পুচকি টাইপের ১৮/১৯ হবে।নীল আর আকাশীর মিশ্রণে অদ্ভুত একজোড়া চোখ।ফর্সা বললে ভুল হবে।মনে হয় সৃষ্টিকর্তা দুধদিয়ে বানিয়েছে তখন বেশি সাদা হয়েগেছে ভেবে এক বাটি আলতা ডেলে দুধেআলতা গায়ের রং করেছে।তবে গায়ের রং কেমন তা অরিত্রান বলতে পারলো না।শুধু মুখ আর হাতের অল্প অংশই দেখা যাচ্ছে। চকলেট রং এর গ্রাউন আর চকলেট রংয়ের হেজাবে নিজেকে ডেকে রেখেছে।সূর্যের প্রখর রোদে গালের দু’পাশ লাল হয়ে আছে।কপালে ঘামের ছড়াছড়ি।কথা বলার সময় ফুলা গালটা একটু পরপর নড়ে উঠছে।অরিত্রান আর স্ক্যান করতে পারলো না।চোখ সরিয়ে ঘড়ি দেখছে।যেতে হবে তার।এখনি।অরিত্রান পিছন ঘুরতে যাবে তার আগেই ওয়াসেনাত নিজের একগাদা বই অরিত্রানের দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো,
—” এই যে আপনি!!এই বডি সডি কেনো বানিয়েছেন!! একটু হেল্প করেন??আপনাদের এই বডি আল্লাহ দিয়েছে যাদের নেই তাদের হেল্পের জন্য।নেন!!”
অরিত্রান চোখ ছোট করে কিছুসময় স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো।হাত বাড়িয়ে দিলো না।ওয়াসেনাত চরম বিরক্তি নিয়ে গুমুট গলায় বললো,
—” তাকিয়ে কি দেখছেন??নেন না।গেট পর্যন্ত নিলেই হবে।এমন ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে আপনি আমার বস কিন্তু আমি আপনাকে পার্সোনাল এসিস্ট্রেন ভেবে এসব বলছি তাই আপনি মহা অবাক।এমন তো নয়।আপনি তো আমার অনেকটা বন্ধুর মত।এবার হেল্প করলে কিন্তু আপনারই লাভ।একটা বই পড়তে দিবো।ফ্রিতে।আবার একদম দিয়ে দিবো না কিন্তু শুধু পরতে দিবো।ওকে।এবার হেল্প করেন।”
অরিত্রান হা করে থেকেই নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো।ওয়াসেনাত বইগুলো দিয়ে আরো কয়েকটার নাম বলতে বলতে বললো,
—” আপনার হাতগুলো এত ফর্সা কেনো??মুখটা তো তেলতেলে শ্যামলা।”
অরিত্রান কিছু বললো না।সাবলিল ভাবেই বইগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে লোকটার মাঝে অনেক গাফলা আছে।এত বেশি নিশ্চুপ আর মুখে বিন্দুমাত্র রিয়েকশন নেই।লোকটা অতিমাত্রায় রহস্যময় একটা লোক।লোকটার মাঝে ওয়াসেনাত প্রচন্ড মাত্রায় রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছে।
.
.
#চলবে___________________
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂
®হাফসা_________________