আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 29
এরপর সবাই বর বউকে একে অপরের পাশে বসিয়ে দিতে নিয়ে আসে তখন বাধে আরেক ঝামেলা।
উকিল সাহেব বলে,”এখানে আয়াত চৌধুরীর সাথে রিমি আফরোজের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।আর রাজ চৌধুরীর সাথে রাহা ইসলাম রিদির বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। ”
রিমি উঠে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে,”শেষ পর্যন্ত এই খচ্চর ছিলো আমার কপালে।
কি করে এমন উল্টাপাল্টা বিয়ে হয়ে গেলো আমি এই বিয়ে মানি না! ”
রিদি তো মনে মনে খুব খুশি অবশেষে রাজ কে নিজের life partner হিসাবে পেয়েছে।
কিন্তু সবার সামনে তা প্রকাশ করা যাবে না।
তাই রিদি ড্রামা শুরু করে দেয়।
রিদি আয়াতের কাছে গিয়ে বলে,”দেখেন না কি ভাবে কোথায় থেকে কি হয়ে গেছে।
আমার বিয়ে না কি রাজের সাথে হয়ে গেছে।”
আয়াত রিমি কে দেখে বলে,”আমি যদি আগে জানতাম তোমার সাথে আমার এভাবে দেখা হবে আর তুমি আমার বউ হবে তাহলে কোনোদিন ও বিয়ের জন্য রাজি হইতাম না।”
রিমি বলে,”আমি এই বিয়ে মানি না মানবো না।”
রাজ বলে,”আমিও রিদিকে নিজের বউ বলে মানি না মানবো না।”
অনু এবার বলে,”সব গুলো কি বিয়েকে ফাইজলামি মনে করছো?
আমি বিয়ে মানি না,বর বউ মানি না।
যার সাথে যার বিয়ে হয়েছে তাকে নিয়ে নিজেদের বাড়ি চলে যাও তো সবাই।”
রাজ গিয়ে উকিল সাহেবের কলার ধরে বলে,”এই বিয়ের সব কিছু উল্টাপাল্টা হলো কি করে? ”
উকিল বাবু আরিয়ানের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে।
আরিয়ান হিরোদের মতো দাঁড়িয়ে চুপচাপ অনুর শাড়ির আঁচল নিয়ে খেলা করছিল।
সবার চিৎকার চেঁচামেচি করছে কিন্তু আরিয়ানের কানে ঢুকছিল না।
তার এমন ভাব যে সে আগে থেকে জানতো এমনটা হবার ছিলো।
রাজ আর আয়াত আরিয়ানের সামনে গিয়ে বলে,”পরের মেয়ের শাড়ির আঁচলা নিয়ে না খেলে নিজের বউয়ের শাড়ির আঁচলা নিয়ে খেলা করিস।এখন বল তুই আমাদের সাথে এমটা কেনো করেছিস? ”
আরিয়ান অনুর শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিয়ে পাশে একটা চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা দিয়ে সেভেনআপ খেতে খেতে বলে,”আহা তোরা নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি এমন চরণ করা তোদের শোভা পায়না।”
রাজ বলে,”তাই নাহ! ”
আরিয়ান বলে,”জ্বি তাই। ”
আয়াত বলে,”তাহলে কেমন আচরণ করা উচিৎ?”
আরিয়ান বলে,”সে কথা তো আমি তোমাদের জানাবো না।তোমরা নিজেরা খুব ভালো করে জানো।আর এই ভাবে এতো রিয়াক্ট করার কি আছে তা বুঝিনা।”
আবির এসে আরিয়ান কে বলে,”তুমি এইভাবে চারটা জীবন নষ্ট করে দিলে কেনো? ”
আরিয়ান একটা বিদ্রূপের হাসি দিয়ে বলে,”আমি এদের জীবন নষ্ট করি নাই।
বরং আমি এদের চার জনের জীবনে নতুন রং দিয়েছি যার নাম বিবাহ।
এরা কেউ অস্বীকার করতে পারবে যে এরা কেউ আগে থেকে পরিচিত নয়? ”
আরিয়ানের করা এই প্রশ্নের শুনে ওরা সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে!
আবির চারজনের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ওদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় তার মানে আরিয়ান যা বোঝাতে চাইছে তা কি ঠিক?
চারজনের দিক দিয়ে কোনো সারা না পেয়ে আবির আরিয়ানের কাছে গিয়ে বলে, “তুমি একটু আমাদের সবাইকে ক্লিয়ার করে বলবা সবটা। ”
আরিয়ান বলতে শুরু করে দেয়..
আয়াত ভাইয়া আর রিমি আপুর পাঁচ বছর আগে সম্পর্ক ছিল।
তারা দুজন দুজনকে বেশ ভালোবাসতো।
কিন্তু তাদের সেই ভালবাসার সম্পর্কে ফাটল ধরে রিমি আপুর স্বার্থের জন্য।
সে হঠাৎ করে বাহিরে পড়তে যাওয়ার জন্য চান্স পায়।
ভাইয়া ও চান্স পেয়েছিল কিন্তু সে বিদেশে থেকে সব টা কমপ্লিট করতে চাই না।
তাই সে বিদেশে যায় না আর এদিকে রিমির বাড়িতে রিমির জন্যে বিয়ের ঠিক করে আবিরের সাথে।
তবে সবটাই ঠিকঠাক চলছিল।
না রিমি কখনো তার বাড়ির মানুষকে ভাইয়ার কথা বলেছে না আবির কে বিয়ে করার জন্য অস্বীকার করেছেন।
সে শেষ মুহূর্তে কাউকে কোন কিছু না বলে বিদেশে চলে যায় স্বপ্ন পূরণ করার জন্য নিজের একটা সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার জন্য।
তবে এটা বলবো না যে সে আমার ভাইয়াকে ধোঁকা দিয়েছে।
সে বিদেশে যাবার আগে বারবার ভাইয়া কে বলেছে চলো আমরা একসাথে বিদেশে যাই।
নিজেদের ক্যারিয়ার ঠিকঠাকমতো সেটেল হলে দেশে এসে দুই পরিবারকে জানিয়ে দিবো আমাদের সম্পর্কের কথা।
তবে ভাইয়া এটা তে রাজি হয় কারণ সে দেশেই থাকবে এটাই ছিল তাঁর ইচ্ছা।
রিমি আপু বিদেশ চলে যাওয়াতে কিন্তু তাদের সম্পর্কে একটু ফাটল ধরে নাই।
তবে সমস্যা বাধে রিমি আপু দেশে আসার আগে।
রিমি আপু আমাদের পরিবার সম্পর্কে কিছু জানতো না আবার আয়াত ভাইয়া রিমির আপুর পরিবার সম্পর্কে কোন কিছু জানতো না।
এদিকে রিমি আপুর এক বান্ধবী আয়াত ভাইয়ার কাছে এসে কিছু সত্যি মিথ্যা এমন ভাবে বলে যাতে তাদের দু জনের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়।
তা তাদের রিলেশন নষ্ট করে দেয়।
এমনকি জেদ করে তারা অন্য মানুষ কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।
এবার সবার মনে প্রশ্ন আসবে আমি এত কিছু জানলাম কিভাবে?
আমি সবটা জানতে পেরেছি ভাইয়ার ডায়েরী থেকে।
সরি ভাইয়া তোর পারসোনাল ডায়েরি টা আমি পরেছি।কারণ যে ছেলে বিয়ে করতে চাইতো না সে হঠাৎ কি করে রাজি হয়ে গেলো বিয়ের জন্য।তাও মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে।
তুই তো সব সময় নিজের পছন্দের উপর বেশি গুরুত্ব দিতি।
সেই তুই যখন বদলে গেলি তখন সন্দেহ হয়।
আর সেই সন্দেহ থেকে ডায়েরি টা পরা।
ভাগ্যিস সেখানে রিমি আপুর ছবি ছিলো নয়তো আমার খুঁজতে খু্ব কষ্ট হয়ে যেতো।
না হলে তো আজ সবটা গণ্ডগোল হয়ে যেতো।
রিদির কথা আর কি বলবো!
রাজ রিদিকে খুব ভাল করে চেনে।
এই রাজ পাঁচ বছর আগে এতো ভদ্র ছিলো না।তার মতো প্লে বয় কোথাও হাতে হারিকেন নিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।
আমার চোখের সামনে সে অনেক মেয়ের হৃদয় ভেঙ্গেছে তা বলার বাহিরে।
তাদের মাঝে রিদিও একজন ছিলো।
তবে আমি তো পাগল না নে রাজের সব অন্যায় মেনে নিবো।রাজের জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে।
কেউ তার টাকার জন্য তো কেউ সময় কাটাতে।রাজ তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে অনেকটা খারাপ হয়ে যায়।
মেয়েদের মন ভাঙ্গা রাজের কাছে নেশার মতো হয়ে যায়।
রাজ এতো মিথ্যা ভালোবাসার আড়ালে সত্যিকার ভালোবাসা টা চিনতে ভুল করে।
সে যেগুলোকে হিরা মনে করতো আসলে সে সবটা ছিলো কাচের টুকরো।
কাচের টুকরো তে হাত দিলে তো হাত কাটবে।তেমন ভাবে রাজের একটা সময় ভালবাসার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায় তখন রিদি আসে রাজের জীবনে।
যে সত্যি রাজকে মন থেকে ভালোবাসতো এখনো বাসে।
তবে রাজ রিদির সেই সত্যিকার ভালোবাসা টা চিনতে পারে না কাচের টুকরো ভেবে ছুড়ে ফেলে দেয়।
তবে সেই হিরাটা কে আমি ওর জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দেয় নি।
পাঁচ বছর আগে ফুপা মারা যাবার পর রাজ বদলে যায়।সে বুঝতে পারে শুধু মেয়েদের সাথে টাইমপাস করে জীবন নষ্ট করার মানে হয় না।
সে তার মা বোনের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেয়।তারপর থেকে সেই রাজ আর আজকের রাজের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ।
আর রিদি যেহেতু রাজ কে এখনো ভালোবাসে। আয়াত ভাইয়া ও রিমি আপুকে তাই সবাই কে মিলিয়ে দিলাম।
এবার নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি করে নিজেদের সমস্যা সমাধান করবে।
আমি সবটা প্লানিং করে ঠিক করেছি।
রাজ রিদি, রিমি আয়াত সবাইকে এক সাথে করতে আমি সবটা প্লানিং করে করছি।
বাড়িতে ঘটকের মাধ্যমে ওদের বিয়ের প্রস্তাবের ব্যবস্থা আমি করেছি।
সবাই আরিয়ানের কথা শুনে আর কিছু বলে না।তারা চারজনের বিদায়ের ব্যবস্থা করে। বলে,”তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে নিজেদের পারসোনাল সমস্যা নিজেরা বাড়িতে গিয়ে সমাধান করো।”
কিন্তু কন্যা বিদায়ের সময়…
(দেখা যাক নতুন টুইস্ট কি আসে এদের!
না কি এখানে আলাদা হয়ে যাবে সবাই?)
‘
‘
‘
‘
চলবে….