ও আমায় ভালোবাসেনি

ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 07

মেহেদী রাঙা হাত দু’টো কে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মিথি । হাতের তালুতে খুব সুন্দর ডিজাইন করে লেখা আছে “mr.husband i love you”
শব্দ হলুদ রাতে নিজে এসে লিখে দিয়ে গেছিলো লেখাটা , কত খুশির মুহুর্ত ছিলো সেটা ।
অদ্ভুদ এই আধ ঘন্টা থেকে ও অতীত হয়ে গেছে । মিথিকে মিসেস এহসান বলে কেউ ডাকবে না এখন থেকে , সবাই ডাকবে মিসেস খান । তারকা রাইদ ইজমাম খানের ওয়াইফ বলে ডাকবে সবাই ।
চোখের পলক পড়ার সাথে সাথে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো মিথির কপল বেয়ে ।
হাতের ঐ লেখাটা ঝাপসা হয়ে গেলো ।
দরজায় নক হচ্ছে অনেক্ষণ থেকে । মিথি’র ইচ্ছে করছে না দরজা খুলতে । মা আর তানভীর অযথাই চেঁচামেচি করে ডাকছে ওকে কিন্তু ও এখন কারো সামনে যাবে না একা থাকবে । এই সময়টা একা থাকা প্রয়োজন ।
ঘরের লাইট নিভিয়ে বারান্দায় ডিভানে বসলো মিথি ।
আজ আকাশে চাঁদ ওঠেনি , ঘন কালো মেঘ । অন্ধাকারাচ্ছন্ন আকাশ দেখে এক মুহুর্তের জন্য মিথির মনে হলো আজ থেকে তার জীবনও ঘোর অমানিশার মায়া জালে আটকে যাবে ।
রাইদ একটা মায়া । যাকে বাইরে থেকে সুন্দর লাগে কিন্তু যাকে আটকে ফেলে তাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে ছাড়ে ।
ভয় পায় মিথি । আল্লাহ পাক এতবছর পর কেনো তাকে এনে দিলো মিথির জীবনে তাও আবার এভাবে?
তার ভাগ্যটাই কেনো এমন হয়?
ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে মনে মনে বলে,”বাবা দেখলে তো পাপ করলে তার শাস্তি একসময় ঠিকই পাওয়া যায় । তোমার একটা ভুলের জন্যে সারাজীবন আমাদের সাফার করতে হবে । আফসোস তুমি একজন ভালো বাবা , ভালো স্বামী হতে পারলে না । তোমার পুরো জীবনটাই যে মিথ্যের চাদরে মোড়ানো ছিলো”

ছাদে এক কোণে দাঁড়িয়ে আপন মনে সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছে রাইদ ।
রফিক চুপচাপ ওর কাজকারবার দেখছে ।
নীরবতা ভেঙে রাইদ ই আগে বললো_
— কি ব্যাপার রফিক আজও চুপ করে আছো?
— স্যার আজ থেকে আপনি আমাকে বোধহয় সারাজীবনের জন্য চুপ করিয়ে দিলেন ।
— তুমি বড্ড সাদাসিধা মানুষ রফিক । জীবনের এই জটিল চক্রে তোমাকে জড়াতে মাঝেমধ্যে কষ্ট হয় আমার কিন্তু না চাইতেও কীভাবে যেন জড়িয়ে যাও তুমি ।
— স্যার আপনার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আপনাকে চিনি । আপনার ব্যাবহার , লাইফস্টাইল আর আপনার পরিশ্রম করার ক্ষমতা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করেছে । আপনি যেভাবে আমার খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন এগুলো আমার মনে মায়ার জন্ম দিয়েছে । আমি ছায়ার মত আপনার পাশে থেকেছি ভেবেছি আপনি আমাকে আপন ভাবেন কিন্তু আজ মনে হচ্ছে নাহ্ আপনি আমাকে আপন ভাবেন না । আপনার জীবনের বর্তমান টাও আমি ঠিক মত জানিনা। তবে কি আমি আপনার বিশ্বাসই অর্জন করতে পারিনি স্যার?
— তোমার এটা ভুল ধারণা রফিক৷ আমি তোমাকে আপন ভাবি জন্যই তোমাকে সব জটিলতা থেকে দূরে রেখেছি ।
— স্যার আমি একটা কথা বলি । আপনি কারো সাথে কিছু শেয়ার করেন না জন্য আপনার জীবনে কোনো মেন্টর নেই । সদুপদেশ দেয়ার মত মানুষ নেই । স্যার আমার মনে হচ্ছে আপনি প্রতিনিয়ত আপনার জীবন টাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ।
— রফিক আমার জীবনকে তো দশ বছর আগেই অন্ধকার গ্রাস করে নিয়েছে এখন আর নতুন করে কি অন্ধকার হবে?
— স্যার প্লিজ আমাকে সব খুলে বলুন । আমি আপনাকে এভাবে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে দিবো না । প্লিজ স্যার?
— শুনে আর কি করবে রফিক? এই রাস্তায় আমি অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছি । সবটা শুনে ঘৃণা জন্ম নিবে তোমার মনে ।
— স্যার আমি তবুও শুনতে চাই প্লিজ স্যার ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রাইদ । অন্যদিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলো_
— আমার বাবা একজন কমিশনার ছিলেন । তার সততা , সাহসিকতার জন্য তাকে সবাই চিনতো । বিভিন্ন বোর্ড মিটিং আর কাজের সূত্র ধরে তার পরিচয় হয় মেজর নাদিম মাহমুদ আর শিহান এহসানের সাথে । আমাদের প্রায়ই ফ্যামিলি গেট টুগেদার হতো । মিথি কে চিনতাম সেই ছোট বেলা থেকেই ।আমার বড় আপু রিজা মিথিকে প্রচন্ড ভালোবাসতো । মজা করে বলতো এই গাল্পুস মেয়েটাকে আমার ভাইয়ের বউ বানাবো ।
আমি আর মিথি দু’জনেই শুনে খুব লজ্জা পেতাম ।

মিথি অবশ্য আমার থেকে সাড়ে তিন বছরের ছোট । আমাদের কারো মনেই তখন এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা ছিলো না । আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড ই ছিলাম ।
মিথির বয়স যখন তেরো বছর তখন ওদের বাসায় বিরাট এক পার্টির আয়োজন করা হলো । দাওয়াত দেয়া হয়েছিল আমাদের একমাস আগে থেকেই । আপু আর আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম কিন্তু বাবা এ ব্যাপারে কিছু বলতেন না । আমরা অবাক হতাম । ওদের বন্ধুত্ব এত গাঢ় ছিলো যে বাবা ওদের বাসায় যাওয়ার সময় বাচ্চাদের মত এক্সাইটেড হয়ে যেতেন কিন্তু এবার কেনো যেন নিশ্চুপ ।
আপু আর আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ ভাবছিলাম ।
ওদিকে যাওয়ার ডেট যত এগুচ্ছিল বাবা’র টেনশন , গম্ভীরতা বাড়ছিলো । যাওয়ার আগের রাতে বাবা আমাদের নিষেধ করে দিলেন । আমরা খুব বায়না করলাম কিন্তু বাবা না ছাড়া হ্যাঁ বলেন না ।
আমার আর আপুর খুব মন খারাপ হলো ।
পরদিন আমরা বাবা’র সাথে ঠিকমত কথা বললাম না । বাবা কাজে বেরুবার আগে আমাদের ডেকে বললেন_
— হারামের পয়সায় যারা সংসার চালায় তাদের সাথে আত্মীয়তা রাখতে নেই । এখন তো সময় নেই আমি রাতে এসে তোমাদের সবটা বুঝিয়ে বলবো ।
আমরা সম্মতি দিলাম । অপেক্ষায় থাকলাম বাবা আসার ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা তারপর রাত , নাহ্ বাবা তো আসেন না ।
জুনিয়র অফিসার দের ফোন দেই কেউ খোঁজ দিতে পারে না । পরে মধ্যরাত ঠিক দেড়টা নাকি দু’টোর দিকে ল্যান্ডলাইনে কল আসে । হন্তদন্ত হয়ে রিসিভ করার পর মিথির অস্থির গলা পাওয়া যায় ।
সে প্রচন্ড হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলছিলো_
— রিজি আপু আঙ্কেল কে ওরা মেরে দিলো । আমাদের বাসার পেছনে শুট করে দিলো আঙ্কেল কে তোমরা প্লিজ পুলিশে ফোন দাও ।
আমরা কিছু জিজ্ঞেস করবার আগে কল কেটে গেলো ।
আমরা ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম । মামা কে কল করে জানালে উনি ফোর্স নিয়ে ঐ বাড়িতে গেলেন কিন্তু নাহ্ কিছুই নেই । তল্লাশি করতে চাইলে মিথির বাবা চিল্লাচিল্লি করে বের করে দিলেন সবাইকে ।
রাতটা ওভাবেই কাটলো । পরদিন সকালে সার্চ ওয়ারেন্ট বানাতে হবে তার জন্য মিথির বয়ান চাই । তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে সম্পূর্ণ ব্যাপার অস্বীকার করে দিলো । তার মায়ের পেছনে লুকিয়ে বললো সে তো রাতে ঘুমুচ্ছিলো ছোট ভাইয়ের সাথে ।
আর ও তো ফোন চালাতেই পারেনা , ল্যান্ডলাইন ছুঁয়েও দেখে না ।
ওর দাঁড়িয়ে থেকে অস্বীকার করা আমাদের ভীষণ অবাক করেছিল ।
আমরা বুঝতে পারছিলাম না কি করবো ।
মামা বললেন কেস করো । আমরা বাবার বলে যাওয়া একটা কথার ওপর ভিত্তি করে কেস করলাম । ওদের বাড়ি সার্চ করে কিছু পাওয়া গেলো না ।
মিথির বাবা হুমকি দিলেন এভাবে ডিস্টার্ব করলে মানহানীর মামলা করে দিবেন ।
দমে গেলাম আমরা ।

বাবার মিসিং ডায়েরি লেখানো হলো । পুলিশরা প্রথম প্রথম সিরিয়াসলি নিলো ব্যাপারটা কিন্তু কোনোই ক্লু পাচ্ছিলো না ।
আমাদের সন্দেহ ছিল তারা সিরিয়াসলি নেয়ার নাটক করছে ।
একমাস চললো নাটক । বারবার আমাদের ডেকে জিজ্ঞাসা বাদ করা হতো , মিথিদের পরিবার কে জিজ্ঞাসা বাদ করা হতো ।
মিথির বাবা বললেন আমার বাবার সাথে নাকি তার মনমালিন্য হয় দু’মাস আগে তাই তার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ নেই ।
তার কথার ধরণ এমন ছিলো যে পুলিশরা ওটাই বিশ্বাস করে নিলো ।
সময় গড়াতে গড়াতে আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম ।
আমাদের দেশ তো অদ্ভুত । প্রতিনিয়ত এরা নতুন নতুন খারাপ সংবাদ চায় । আজকের ক্রাইম আগামীকালের ক্রাইমের চাদরে ঢাকা পড়ে । জনতা ভুলে যায় , কেস বন্ধ হয়ে যায় । ভোগান্তি স্রেফ পরিবারের ।
বাবা’র ক্ষেত্রেও এমন হলো । ড্রাগসের একটা কেইসের নিচে বাবা’র কেইস ঢাকা পড়ে গেলো ।
বাবা হীন জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে থাকছিলাম আমরা , কিচ্ছু করার ছিলো না ।
মামা আমাদের দু ভাই বোন কে দেখভাল করছিলেন ।
আমি বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে বাসাতেই বসে সময় পার করছিলাম ।
এর মাঝে মামা একদিন আপুর জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসে ।
আপু তো কিছুতেই বিয়ে করবে না কারণ আমি ছোট , বাবাও নেই । কিন্তু মামা ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নিলো ।
ছেলে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দেখতে শুনতে ভালো । মামার জোরাজুরি তে আপু রাজি হলো বিয়ের জন্য ।
আজ যেমন মিথি দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে তার হবু বরের জন্য অপেক্ষা করছিলো ঠিক সেদিন আমার বোনও নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন বুনছিলো মনে মনে ।
যেই রাস্তা দিয়ে শব্দ আসছিলো ঠিক সেই রাস্তা দিয়ে আমার আপুর হবু বর আসছিলো ।
এবং ঠিক যেই স্থানে আজ শব্দ মরে পড়ে ছিলো ঠিক সেই স্থানে আপুর হবু বর মরে পড়ে ছিলো , তাকে কে মেরেছিলো জানো?
মিথির বাবা নাদিম শেখ আর শব্দের বাবা শিহান এহসান । কেনো মেরেছিলো জানো? কারণ আপুর হবু বর ওদের আন্ডারওয়ার্ল্ড এর পার্টনার ছিলো । ড্রাগসের ব্যবসা করতো ওরা সবাই । ছেলেটা আমার আপুকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো সম্পত্তির জন্য । আমার বাবার অনেক সম্পত্তি ছিলো । আপুর সাথে মেশার পর ওর মনে হয় ও সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করবে আর ঠিক এজন্য ও ওই ডার্ক ওয়ার্ল্ড থেকে বেরিয়ে আসতে চায় ।
কিন্তু রফিক এই ওয়ার্ল্ড এমন একটা ওয়ার্ল্ড যেখানে ঢুকলে বেরুনোর পথ নেই । নাদিম আর শিহানের মনে হয় ও বেরুলে সব নিউজ লিক করে দিবে এজন্য ওরা তাকে বাঁচতে দেয় না ।

হবু বরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমার আপু স্ট্রোক করে । পুরো সাতদিন জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে সে এই পৃথিবী ত্যাগ করে আমাকে একা করে চলে যায় ।
আমার লাইফে যে কি হচ্ছিল রফিক আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি শকড ছিলাম । ট্রমার কারণে আমি ঘরবন্দী করে নিয়েছিলাম নিজেকে , পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম ।
মামা আমার অবস্থা দেখে আমায় নিয়ে ঢাকায় চলে আসে ।
এখানে শুরু হয় আমার নতুন জীবন । আমি নতুন এক কলেজে ভর্তি হই সেখানে আমার বন্ধু বলতে হাতে গোণা দু চারজন ছিলো । আমি কিন্তু বন্ধুসঙ্গ ভালো পাইনি । তারা ড্রাগস নিতো নিয়মিত । আমার চোখের সামনে ওদের গাঁজা , ইয়াবা খেতে দেখেছি । প্রথম প্রথম ঘেন্না লাগতো , দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছিলাম কিন্তু ওরা কীভাবে যেন টেনে নিলো । বললো এসব খেলে কষ্ট ভুলে থাকা যায় ।
রফিক একটা ঝুড়িতে পাঁচটা পঁচা আম আর একটা ভালো আম থাকলে দিন শেষে ভালো আম টাও পঁচে যায় ।
আমাকে ওরা কখন ওদের মাঝে টেনে নিলো বুঝতে পারিনি । ওদের সাথে থাকতে থাকতে আমার প্রবেশ হলো অন্ধকার জগতে । আমার সাহস বরাবরই ছিলো বেশি ।
আমি খুব দ্রুত ওখানকার সম্রাজ্ঞীদের নজরে চলে এসেছিলাম ।
ওদেরই পার্টনার ছিলো মেজর নাদিম আর শিহান ।
আমি প্রথম ওদের দেখে শকড হয়ে গেছিলাম । ওরা আমায় চিনতো না কারণ ওদের দেখার পর আমি ওদের সামনে আর যাই নি ।
মূলত ওই ওয়ার্ল্ডে গিয়েই আমি জানতে পেরেছিলাম এই দু’জন মানুষ আমার বাবা আর হবু দুলাভাই কে খুন করে । বাবা কে খুন করার কারণ হলো বাবা জেনে গেছিলেন ওদের ব্যাপারটা , উনি সেদিন রাতে সতর্ক করতে গেছিলেন মিথির বাবা কে । আত্মসমর্পণ নয়তো এই রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন কিন্তু ওরা দেয়নি বরং আমার বাবাকে টানার চেষ্টা করেছে আর তক্ষুনি ঝামেলা বেঁধে গেছে । ঝামেলা মিটিয়েছে আমার বাবা কে খুন করে ।
খুন করে লাশ গুম করেও দিয়েছে তারা যাতে আমরা কেউ জানতে না পারি ।
কি অদ্ভুত দেখেছো অমন সৎ মানুষটার দাফন কাফন নসীব হয়নি , রায় বিচার পায়নি সে নতুন খবরের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে সব৷
বাবা’র খুন করা করেছে এটা জানার পর আমার ভেতরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে । আমি তো জানতাম আইন কিছু করতে পারবে না ।
আমি ওখানে মামুলি চ্যালা হয়ে থেকেছি কয়েকবছর ।
ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার পর বুঝতে পারি ওই ওয়ার্ল্ডে ফেমাস হতে হলে তোমার টাকা আর চতুরতা থাকা প্রয়োজন ।
আমার ছোটবেলা থেকে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড এরও খুব শখ ছিলো । ইউনিভার্সিটি তে গিয়ে এই শখটাও পূরণ হয় ।
থিয়েটার করতে করতে নাটকে চান্স পাই তারপর মুভিতে ।

ভাগ্য সহায় ছিলো হুট করেই সুপারস্টার হয়ে যাই ।
তুমি আজও জানো না আমি সুপারস্টার শুধু এখানে নয় ডার্ক ওয়ার্ল্ডেও । যার আন্ডারে কাজ করতাম তাকে নিজ হাতে খুন করে আধিপত্য জমিয়েছি ওখানে । এই দু’হাত দিয়ে অজস্র ড্রাগস , টাকা ছুঁয়েছি ।
এই বছর তিনেক আগে মিথির বাবার সাথে ডিল হয় । সেবার প্রথম তাকে চেহারা দেখাই আমার । সে হকচকিয়ে যায় আমাকে দেখে । প্রথম মিটে মারিনা অবশ্যই । ডিল ফাইনাল হওয়ার পর টাকা হাতে পেয়ে তাকে শুট করে দেই ।
আই রিমেম্বার আমি তার ঠিক কপাল বরাবর গুলি ছুঁড়েছিলাম ।
তার এই মার্ডার টা প্রেজেন্ট করে দস্যুদের হাতে মৃত্যু ।
হাউ ফানি । শিহান এহসান কে অবশ্য নিজের হাতে মারিনি । তারা ঢাকায় আসার পথে কার আ্যাক্সিডেন্টে মারা যায় ওদের ওই আ্যাক্সিডেন্ট টা আমি করিয়েছিলাম ।
ওদেরকে মেরে যে আমার প্রতিশোধ স্পৃহা কমে যায় তা নয় । আমার লাইফ টা অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়ার পেছনে শুধু কি ওদের হাত? ওরা ছাড়াও নাদিমের মেয়ে মিথি , এই দেশের আইন সব দায়ী ।
প্রশাসন চাইলেই স্ট্রং হতে পারতো , আমার বাবাকে খুঁজে বের করতে পারতো কিন্তু করেনি ।
এই দেশের ওপর আমার ভীষণ ক্ষোভ । এই দেশে মানুষ নামক একগুলো পশু বাস করে । এদের কোনো ফিউচার নেই । এরা শুধু পারে মানুষের ক্ষতি করতে ।
এই দেশের কোনো ফিউচার নেই এটা এমনিতেই ধ্বংস হবে অমানবিকতায় আর রইলো বাকি মিথি?
সে তো আজ থেকে আমার । তার ওপর ক্ষোভটা নিজে থেকেই না’হয় মেটালাম..
এখন বলো রফিক আমাকে দেখে ঘৃণা লাগছে না?
এবার রফিকের দিকে তাকালো রাইদ ।
সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ।
— স্যার আমি জানিনা আপনাকে কি বলা উচিৎ এই মুহুর্তে তবে এটা বলবো এখন আপনার বিয়ে হয়েছে । অতীত ভুলে সবটা নতুন করে সাজিয়ে নিন । অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসুন ।
— উঁহু তা তো পসিবল নয় । এই জগতে ঢুকলে বেরুবার পথ নেই । আমি অনেক দূর এগিয়ে গেছি পিছু ফেরার পথ নেই ।
— স্যার আপনি চাইলেই পথ বেরিয়ে যাবে ট্রাই করুন ।
— উঁহু ইচ্ছে নেই । তুমি অদ্ভুত রফিক আমি এত খারাপ তবুও ঘেন্না করছে না তোমার ।
— স্যার পরিস্থিতি আপনাকে খারাপ বানিয়েছে এখানে আপনার দোষ দিই কি করে?
— তুমি আসলেই ইনোসেন্ট রফিক ।
— স্যার এখানে এসেছেন অনেকক্ষণ হলো । এসব কথা এখন থাক । ম্যামের খোঁজ নিবেন না?
— ওহ্ হ্যাঁ আমার ব্রাইড কে ছেড়েই চলে আসলাম যে..
আচ্ছা কাল নিয়ে আসবো তৈরি থেকো ।
— ওকে স্যার ।
— রফিক?
— জ্বী স্যার?
— এখন একটু নিচে যাও তো? আমি একা থাকি ।
— আচ্ছা স্যার ।
রফিক নিচে নেমে সোজা ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো । আজ প্রথম রাইদ কে মিথ্যে বলেছে । ওর আসলেই ঘৃণা হচ্ছে রাইদ কে । এই ড্রাগস যুব সমাজ কে নষ্ট করে দিচ্ছে । রাইদ এর পেছনে আছে শুনে একদম ভালো লাগছে না । আবার ওর জন্য মনে একটা কষ্টের স্রোত বয়ে যাচ্ছে । অনেক খারাপ হয়েছে ওর সাথে ।
মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে রফিকের ।

মধ্যরাতে মিথি কে দেখার খুব ইচ্ছে জাগলো রাইদের মনে । কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো ওদের বাসায় । মিথিদের দোতলার বেলকোণীতে গ্রীল নেই । পাইপ বেয়ে ওই দোতলার বেলকোণীতে উঠলো সে । তারপর লুকিয়ে চুরিয়ে মিথির ঘরে পৌঁছুলো । বলে রাখা ভালো মিথির ঘরে দরজা লক ছিলো না তাই রাইদ সহজে ঢুকতে পারলো ।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে আন্দাজে খাটের কিনারে পৌঁছুলো । হাঁটু মুড়ে বসে লাইটার জ্বালিয়ে ধরলো সামনে । মিথি বিছানায় পাশফিরে ঘুমুচ্ছিলো । ধিমি আলোয় ওর মুখখানা মনযোগ দিয়ে দেখতে থাকলো রাইদ ।
দেখতে দেখতে হঠাৎ হেসে উঠলো তারপর লাইটার নিভিয়ে পকেটে রেখে বিছানায় উঠে মিথির পাশে শুয়ে পড়লো । ওকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরতেই ঘুমটা ভেঙে গেলো ।
ভয় পেয়ে চিৎকার করতে নিলে রাইদ ওর মুখ নামিয়ে মিথির অধরজোড়া চেপে ধরলো । ছটফট করতে থাকলে একটু আলাদা হয়ে হালকা একটা ধমক দিলো রাইদ ।
ব্যক্তিটি তার বিবাহিত স্বামী বুঝতে পেরে শান্ত হয়ে গেলো মিথি ।
রাইদ আবার ওকে টেনে নিলো নিবিড়ভাবে ।
চলবে?