Childhood marriage

Childhood marriage 2 ! Part- 04

মেয়েদের কমনরুমের একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে ছোঁয়া,সকালে সায়ন বকা দেয়ার পর ও আর ক্লাসে যায়নি।আসলে ওর ক্লাস কোনদিকে সেটাও জানতো না তাই চোখের সামনে যেই রুম পড়েছে সেটাতেই ঢুকে পড়েছে,এটা যে কমনরুম সেটাও হয়তো খেয়াল করেনি।সেই যে ঢুকেছে আর বের হয়নি।মফস্বলের স্কুল তাই কমনরুম নিয়েও কারো তেমন কোন মাথাব্যথা নেই,শুধু ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করার জন্যেই সবকিছুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।বেশিরভাগ দিনেই সারাদিনে একজনেরও আনাগোনা দেখা যায় না এখানে,আজও তার বাযতিক্রম নয়।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেও পারেনি ছোঁয়া,ছুটির ঘণ্টা বাজার পর সবাই যখন বাড়ী ফিরে যাচ্ছে তখনও ও ঘুমাচ্ছে।তাইতো দারোয়ান চাচা যখন কমনরুমে তালা লাগিয়ে চলে গেল কেউ বুঝতেও পারেনি যে ভেতরে একটা জলজ্যান্ত মানুষ আটকা পড়ে আছে!ছোঁয়ার যখন ঘুম ভাঙল তখন চারপাশটা প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে,অনেক্ষণ দরজা জানালা ধাক্কাধাক্কি করে,চিল্লাচিল্লি করে শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে এক কোণে বসে পড়ল ,নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগল…
টগরঃ তুই শিওর,ভাবী এখনও স্কুলেই আছে?
সায়নঃ তাছাড়া আর কোথায় যাবে?ওতো এখানকার কিছুই চিনে না…
লিখনঃ সিরিয়াসলি!এই কথাটা তোর এতক্ষণে মনে পড়ল!
সায়নঃ মানে?

কনকঃ মানে আবার কি এই কথাটা মনে থাকলেতো আর ভাবীকে একা রেখে বাড়ি চলে যেতে পারতি না
সায়নঃ আমি কি ইচ্ছে করে গেছি নাকি?আমারতো ওর কথা মনেই ছিল না
টগরঃ ওই শালা,একটা জলজ্যন্ত মানুষের কথা কেমনে ভুলে গেলি!
সায়নঃ কি আশ্চর্য!মনে না থাকলে আমি কি করব?
কনকঃ আমারতো ইচ্ছে করছে তোকে ধরে দুই চারটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেই।নিজের বিয়ে করা বউকে মানুষ কেমনে ভুলে যায়?
সায়নঃ কি বউ বউ করছিস?কে বউ কিসের বউ?
টগরঃ কিসের বউ মানে!ঐ শালা তোর বউ,তোর নিজের বিয়ে করা বউ
সায়নঃ খবরদার ,আর একবারও যদি ওই মেয়েকে আমার বউ বলেছিস তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে
কনকঃ কেন বলব না?বিয়েটাতো তুই ই করেছিস,আমি করলে নাহয় আমার বউ বলতাম…
সায়নঃ (কলার ধরে)কনক…
লিখনঃ গাইজ গাইজ আমরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না করে মেয়েটাকে আগে খুঁজে বের করি?এমনিতেই সন্ধ্যে নেমে আসছে,বাসায় সবাই টেনশন করছে…
সায়নঃ ওকে মুখ সামলে কথা বলতে বল
লিখনঃ ওকে ওকে ও আর কিছু বলবে না,এখন চল তাড়াতাড়ি…

ছোঁয়াঃ কে আছো…দরজাটা খোল প্লিজ…আমার যে দম বন্ধ হয়ে আসছে…কেউ আছো…মা…ও মা…আমি…
টগরঃ কিরে,পুরো স্কুলতো খুঁজে ফেললাম কিন্তু কোথাওতো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না
সায়নঃ এখন কি করব বলতো
লিখনঃ এত তাড়াতাড়ি হল ছেড়ে দিস না,এখনও ঐ পাশের কয়েকটা রুম দেখা বাঁকি আছে
কনকঃ তাহলে আর দেরি করছিস কেন তারাতাড়ি চল
(কিছুক্ষণ পর)
লিখনঃ সায়ন…তাড়াতাড়ি এদিকে আয়
সায়নঃ কি হয়েছে রে?
লিখনঃ ভাবী
সায়নঃ ছোঁয়া!কোথায়?
লিখনঃ কমনরুমের মধ্যে দেখ
সায়নঃ ও ওখানে কি করছে?
লিখনঃ সেটা আমি কি করে বলব?
কনকঃ আমি বরং দারোয়ান চাচাকে ডেকে নিয়ে আসি
টগরঃ তাড়াতাড়ি যা
(কিছুক্ষণের মধ্যেই কনক দারোয়ানকে নিয়ে ফেরত আসলো)
দারোয়ানঃ কি হইছে বাবারা?
টগরঃ দেখেন না চাচা,আমার ছোটবোনটা এই রুমের মধ্যেই থেকে গেছে
দারোয়ানঃ কও কি!কিন্তু এই মাইয়া এইখানে আইলো কি কইরা?
কনকঃ আরে চাচা,আজই ভর্তি হলতো তাই হয়তো বুঝতে পারেনি যে এখানে কেউ আসে না
সায়নঃ কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি দরজাটা খোলেন
দারোয়ানঃ খাড়াও খুলতাছি…
(দারোয়ান দরজা খুলতেই সায়ন ছুটে রুমের মধ্যে চলে গেল।ছোঁয়া তখন মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে)
সায়নঃ ছোঁয়া…কি হয়েছে তোমার?কথা বলছো না কেন?
লিখনঃ দোস্ত আর দেরি করিস না,ওকে বাড়ি নিয়ে চল
সায়নঃ হ্যাঁ তাই চল…
(ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই সায়নের মা ছুটে আসলেন)
মাঃ ছোঁয়া!কি হয়েছে ওর?
টগরঃ এখন কথা বলার সময় নেই আন্টি,তাড়াতাড়ি ডক্টরকে খবর দেন
মাঃ সায়ন ওকে রুমে নিয়ে যা,আমি ডক্টর আনার ব্যবস্থা করছি…
সায়নঃ আচ্ছা মা…
(সায়ন ছোঁয়াকে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিল,কিছুক্ষণের মধ্যেই রহিম ডক্টরকে নিয়ে আসলো)
মাঃ ডাক্তার সাহেব,কি বুঝলেন?
ডক্টরঃ চিন্তা করবেন না,ভয়ের কোন কারণ নেই
মাঃ কিন্তু ওর এই অবস্থা হল কি করে?
ডক্টরঃ মনে হচ্ছে অতিরিক্ত ভয় আর স্ট্রেস নেওয়ার কারণেই এই অবস্থা হয়েছে
মাঃ বলেন কি?
ডক্টরঃ উনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি,আপাতত উনার রেস্টের দরকার আর উইকনেস কাটানোর জন্য আপাতত স্যালাইন দিয়ে দিলাম।ট্রান্সফিউশন শেষ হলে খুলে দেবেন,আশা করি এতেই ঠিক হয়ে যাবে।
মাঃ আচ্ছা ডাক্তার সাহেব
রহিমঃ চলেন ডাক্তার সাহেব,আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি

মাঃ সায়ন…ছোঁয়ার এই অবস্থা হল কি করে?
সায়নঃ সেটা আমি কি করে জানব?
মাঃ সত্যি করে বল কি করেছিস ওর সাথে
সায়নঃ বললামতো কিছুই করিনি
মাঃ তাহলে তখন ওভাবে ছুটে বেরিয়ে গেলি কেন?
সায়নঃ ও…না মানে…
মাঃ ভালই ভালই বলে দে কি করেছিস,আমি জানি এর পেছনে তোরই হাত আছে
সায়নঃ উফ মা…আমি অনেক টায়ার্ড,তুমি যাওতো এই ব্যাপারে পরেও কথা বলা যাবে
মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,কাল তর বাবা আসবে,উনি আসলেই এই ব্যাপারে আবার কথা বলব।যদি এসবের পেছনে তোর বিন্দুমাত্র হাত থেকে থাকে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে)
সায়নঃ একটু না,পুরো হাতটাই যে আমার(মনে মনে)
(মা চলে গেল।সায়ন ছোঁয়ার পাশেই বসে পড়ল,এই প্রথম ছোঁয়া ওর বিছানায় শুয়ে আছে।ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সায়ন)
সায়নঃ I am sorry Choya…
(পরদিন)
সায়নের বাবা বাড়ি ফিরেছেন বিকেলের দিকে,বাড়ি ফেরার পর সবকিছু শুনে তিনি প্রচণ্ড রেগে গেছেন।এখন সন্ধ্যা,সবাই সায়নের রুমে জড়ো হয়েছে,ছোঁয়া এখন অনেকটায় সুস্থ,অ বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে আর বাঁকিরা সবাই ওর চারপাশে ঘিরে বসে আছে
বাবাঃ আমি দুদিনের জন্যে বাইরে গেলাম আর এর মধ্যেই এতকিছু হয়ে গেল!আমি জানতে চাই এসবের জন্যে দায়ী কে?
সায়নঃ এই রে এখন কি হবে?(মনে মনে)
বাবাঃ ছোঁয়া মা,তুই বলতো এক্স্যাক্টলি কি হয়েছিল?
ছোঁয়াঃ তেমন কিছুই হয়নি বাবা,আসলে আমিতো এখানে নতুন তাই বুঝতে পারিনি যে…
বাবাঃ দেখ মা,শুধু শুধু মিথ্যে বলে কি লাভ?আমি কিন্তু ঠিকই জানি এসবের পেছেনে ঠিক কার হাত আছে
ছোঁয়াঃ কি বলব বুঝতে পারছি না তাই চুপ করে থাকলাম
বাবাঃ সায়ন…

সায়নঃ জ্বি বাবা?
বাবাঃ তোমার দ্বায়িত্ব ছিল ছোঁয়াকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আবার সাথে করেই নিয়ে আসা তাইতো?
সায়নঃ হ্যাঁ বাবা
বাবাঃ তাহলে তুমি ওকে না নিয়েই ফিরে আসলে কেন?
সায়নঃ আমি ভুলে গিয়েছিলাম
বাবাঃ কিহ ভুলে গিয়েছিলে মানে?ও কি ভোলার মত কোন জিনিস?
সায়নঃ এতে আমার কি করার আছে?আমি নাহয় ভুলে রেখে এসেছিলাম কিন্তু ও বাসায় না এসে স্কুলে কি করছিল?
মাঃ ও বাসায় আসতে পারেনি কারণ ও এখানকার রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না
সায়নঃ চেনে না মানে কি মা?ও কি কচি খুকী যে রাস্তা হারিয়ে ফেলবে?
মাঃ সায়ন…
সায়নঃ ঠিকইতো বলছি মা,এটা কি ঢাকা শহর যে হারিয়ে গেলে আর খুঁজে পাবে না?ও ইচ্ছে করলেই চলে আসতে পারতো
বাবাঃ আজে বাজে বকে নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা কর না
সায়নঃ এখানে আমার কি দোষ?অবশ্য তোমেদের থেকে আর কিই বা আশা করা যায়?তোমরাতো সবসময় শুধু আমার দোষটাই দেখো,ওই গাধাটার কোন দোষইতো তোমাদের চোখে পড়ে না
বাবাঃ সায়ন…
সায়নঃ যেদিন থেকে এই মেয়ে আমার লাইফে এসেছে,লাইফটা একেবারে হেল করে দিয়েছে!
মাঃ সায়ন…চুপ কর বলছি…
সায়নঃ কেন চুপ কেন করব?অস্বীকার করতে পারো তোমরা আমার সাথে কোন অন্যায় করনি?
মাঃ সায়ন…
বাবাঃ আসমা…ওকে বলতে দাও,আমি শুনতে চাই আমরা ঠিক কি কি অন্যায় করেছি?
সায়নঃ করেছোই তো,একটা বাচ্চা ছেলে যে কিনা এখনও ঠিকমত ন্যায়-অন্যায়,ভাল-মন্দ বাছ-বিচার করতে পারে না ,সংসার কি জিনিস বুঝতে শিখেনি তার উপর তোমরা এত বর একটা দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দিলে!আরে যে নিজেরই খেয়াল রাখতে পারে না সে আরেকজনের দ্বায়িত্ব কি করে নেবে বলতে পারো?
মাঃ চুপ কর বাবা,আর কিছু বলিস না
বাবাঃ আসমা…তোমাকে চুপ থাকতে বলেছি না?
সায়নঃ এই যে আবার শুরু হয়ে গেল তোমার অন্যের উপর খবরদারি।সবসমময় তুমি এমনটাই কর,নিজের ইচ্ছা অন্যের উপর চাপিয়ে দাও।তুমি স্বীকার কর আর না কর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছোঁয়াকে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে তুমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছো।আমাদের দু দুটো জীবন নষ্ট হওয়ার জন্য শুধুমাত্র তুমিই দায়ী,শুধুমাত্র তুমি…
বাবাঃ সায়ন…জীবনে প্রথমবারের মত সায়নের গায়ে হাত তুলতে একরকম বাধ্য হলাম
সায়নঃ বাবা যে এমন একটা কিছু করবে ভাবতেও পারিনি,অবাক হয়ে তাই উনার দিকে তাকিয়ে আছি
বাবাঃ আমি তোমাদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছি!এত বড় কথা!সেই ছোটবেলা থেকে যখন যা চেয়েছো তাই এনে দিয়েছি,কখনও তোমার কোন ইচ্ছে অপূর্ণ রাখিনি,মুখ ফুটে বলার আগেই সবকিছু তোমার সামনে এনে রেখে দিয়েছি আর আজ আমাকে শুনতে হচ্ছে আমি তোমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছি!ঠিক আছে আমি যা করেছি তার জন্য পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও
সায়নঃ (বাবার জন্য অনেক খারাপ লাগছে,রাগের মাথায় কি বলতে যে কি বলে ফেললাম কিন্তু যা বলেছি একটা কথাওতো মিথ্যা না…)
মাঃ এ তুই কি করলি খোকা?ঐ মানুষটাকে এই রকম একটা কথা কিভাবে বলতে পারলি!
সায়নঃ মা আমি…
মাঃ খবরদার ঐ মুখে তুই আর একটা কথাও বলবি না
সায়নঃ মা প্লিজ তুমি অন্তত আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর
মাঃ কি বুঝব?বোঝার কি আর কিছু বাঁকি আছে?
দাদীঃ বউমা তুমি একটু শান্ত হও,সবাই যদি এমন মাথা গরম কর তাহলেতো পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাবে
মাঃ কি করে শান্ত হব মা?দেখলেনতো আপনার নাতি কি বললো,আজ আমার কি মনে হচ্ছে যানেন?মনে হচ্ছে ছেলেটা বড় হয়ে গেছে,এতটাই বড় হয়ে গেছে যে বাবা-মার ভুল ধরতে পর্যন্ত শিখে গেছে!
সায়নঃ মা তুমি কিন্তু এবার ওভার রিয়্যাক্ট করছো,কি এমন ভুল বলেছি আমি?আমি মানছি তোমরা আমার জন্যে অনেক কিছু করেছো,সব বাবা-মা ই করে কিন্তু তারমানে এই নয় যে তারা তাদের ছেলেমেয়ের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করবে,তাদের ভবিষ্যতটাকে ধূলোয় মিশিয়ে দেবে
মাঃ সায়ন!বেরিয়ে যা এখান থেকে
সায়নঃ মা!!!
মাঃ চুপ একদম চুপ,ওই মুখে আর আমাকে মা বলে ডাকবি না
সায়নঃ (ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে)সবকিছু হয়েছে এই মেয়েটার জন্য,এই মেয়ে এখনও চুপ করে বসে আছো!এতকিছু করেও তোমার শান্তি হয়নি?
ছোঁয়াঃ উনি কি বলছেন কিছুই বুঝছি না,শুধু অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
সায়নঃ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?এমন ভাব দেখাচ্ছো যেন কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছো না!
দাদীঃ দাদুভাই চুপ কর
সায়নঃ কেন চুপ করব দাদী?আজ এই মেয়েটার জন্য,শুধুমাত্র এই মেয়েটার জন্য আজ আমি বাবার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করলাম,ওর জন্যই মা আর আমার মুখে মা ডাক শুনতে চায় না!
মাঃ সায়ন…এসব কি হচ্ছে?
সায়নঃ এই মেয়ে,এত কিছু শোনার পরও এখনও বসে আছো!আচ্ছা নির্লজ্জ মেয়েতো তুমি!নাহ তুমি এভাবে শুনবে না দেখছি,উঠ…বেরিয়ে যাও এ বাড়ি থেকে
মাঃ সায়ন ওর হাতটা ছাড়
সায়নঃ না মা,ওকেতো আজকে যেতেই হবে।কি হল কথা কানে যাচ্ছে না?বেরিয়ে যাও বলছি…
ছোঁয়াঃ উনি আমার হাত ধরে দরজার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন।হঠাৎই হাতে হালকা টান অনুভব করলাম আর তারপরেই ঠাস করে একটা শব্দ…পেছন ফিরে দেখি উনি গালে হাত দিয়ে মার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন
মাঃ আজকে বাড়ি ছেড়ে যাবে কিন্তু সেটা ও না,তুই
সায়নঃ মা!!!

মাঃ খবরদার ঐ মুখে আর আমাকে মা বলে ডাকবি না,বেরিয়ে যা এ বাড়ি থেকে।আর কোনদিনও আমি তোর মুখ দর্শন করতে চাই না
সায়নঃ মা!এই মেয়েটার জন্যে তুমি তোমার নিজের ছেলেকে বাড়িছাড়া করবে!
মাঃ ছেলে যখন হাতের বাইরে চলে যায় তখন বাবা-মায়ের হাতে আর কোন রাস্তায় যে খোলা থাকে না
সায়নঃ এটাই কি তোমার ফাইনাল ডিসিশন?
মাঃ হ্যাঁ
সায়নঃ আচ্ছা ঠিক আছে,তাই হবে।আমি এক্ষুণি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি
দাদীঃ দাদুভাই যাস না,দাঁড়া বলছি দাদুভাই…দাদুভাই…
(কিছুক্ষণ পর)
সায়নঃ থাকবই না এ বাড়িতে,বাবা-মা ভেবেছেটা কি,আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ভয় দেখাবে আর আমি ভয় পেয়ে যাব!কক্ষণও না,আমিও উনাদেরই সন্তান,উনারা যদি জেদী হন তাহলে আমিও কম না।উনারা যদি আমাকে ছাড়া ভাল থাকতে পারেন তাহলে আমি কেন পারব না?ঠিক পারব,ওদের ছাড়াই ভাল থাকতে পারব।ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম…
দাদীঃ বৌমা,এটা তুমি কি করলে?দাদুভাইকে এত করা কড়া কথা শোনানোর কি দরকার ছিল?
মাঃ আপনি দেখলেন না মা,এই ছেলে কখনই নিজের দোষ স্বীকার করে না,নিজের দোষ অন্যজনের উপর চাপিয়ে দেয়,বাবা-মাকে সম্মান করাও ভুলে গেছে।এখনও যদি ওকে এর জন্যে শাস্তি না দেই তাহলেতো ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে
দাদীঃ কিন্তু দাদুভাই যদি সত্যি সত্যিই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়?
মাঃ যাবে আর কোথায়?এখন রাগের মাথায় চলে গেলেও দুদুন পরে যখন রাগটা পড়ে যাবে তখন ঠিকই আবার বাড়ি ফিরে আসবে…
দাদীঃ তাই যেন হয় আল্লাহ…
পরদিন সকালেই সবাই বুঝতে পারল যে সায়ন বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।প্রথমে সবাই ভেবেছিল রাগের মাথায় চলে গেছে,দুদিন পরেই ফিরে আসবে।কিন্তু না,তা আর হল না।দিন পেরিয়ে মাস,মাস পেরিয়ে বছর হয়ে গেল কিন্তু সায়ন আর এ বাড়িতে ফিরে আসলো না।ওর ফিরে আসার অপেক্ষা করতে করতে সবাই একসময় হাল ছেড়ে দিল…
চলবে…