Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 33

সন্ধ্যা ৭টা…
হাতমুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসতেইতো ছোঁয়ার চোখ ছানাবড়া,পুরো সেমিস্টারের নোটসের কালেকশন আর সবার উপরে আজকের ক্লাস লেকচার!সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সবগুলোই হ্যাণ্ডনোট তাও আবার ব্র‍্যাণ্ড নিউ!
ছোঁয়াঃ এ..এই লোপা,এসব তুই করেছিস?
লোপাঃ কি সব?
ছোঁয়াঃ আরে দেখনা,এই যে এগুলো
লোপাঃ কই দেখি,উহু আমি না,ওসব আমাকে দিয়ে হয় না
ছোঁয়াঃ তবে কি বৃষ্টি?
বৃষ্টিঃ তোরা কি আমার ব্যাপারে কিছু বলছিস?
ছোঁয়াঃ হ্যাঁ এই যে এই নোটগুলো,এগুলো কি তোর?
বৃষ্টিঃ পাগল নাকি!এত কিছু আর আমি!ইম্পসিবল…
ছোঁয়াঃ তুইও না!তাহলে কে?
বৃষ্টিঃ কে আবার?সায়ন ভাইয়া ছাড়া এতো বড় মাপের একটা পাগলামি আর কেইবা করতে পারে?
(সায়নের নাম শুনেই চমকে উঠলো ছোঁয়া,এই একটা মানুষ যার নাম এক বারের জন্যও মাথায় আসেনি ছোঁয়ার)
ছোঁয়াঃ উ..নি এসব করেছেন!আমি কি ভুল শুনলাম?
বৃষ্টিঃ জ্বি না ম্যাডাম,ঠিকই শুনেছেন।লাস্ট এক বছর ধরে আমাদের মাথা খারাপ করে ছেড়েছেন!প্রতিদিনের ক্লাস লেকচার রেকর্ড করে উনাকে পাঠাতে হতো আর তারপরও কোথাও কিছু না বুঝতে পারলে ভিডিও কলে উনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে হতো ভাবতে পারিস?
লোপাঃ শুধু কি তাই?এখানে আসলেই আমাদের সাথে দেখা করতেন,ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতে কলমে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য
ছোঁয়াঃ এতো কিছু!কিন্তু…
বৃষ্টিঃ আসলে উনার ধারণা ছিলো তোর যেকোন সময়ে জ্ঞান ফিরে আসতে পারে আর তোর যাতে কোন সেমিস্টার লস না হয় তার জন্যই এসব…
লোপাঃ মানুষটা তোকে অনেক ভালোবাসে রে তাসু,তুই অনেক লাকি যে উনার মতো একজনকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছিস
ছোঁয়াঃ আমিতো লাকি বাট উনি?আমার জন্য উনারতো পুরো লাইফটাই অনিশ্চয়তার আঁধারে ঢেকে গেছে (মনে মনে)

(কয়েকদিন পর)
আজকের ফার্স্ট পিরিয়ডটা নাকি হবে না,কথাটা কানে আসতেই মুড অফ হয়ে গেল ছোঁয়ার।টিচারদের এই এক সমস্যা,আগে থেকে কিছুই বলে না,স্টুডেন্টদেরও যে সময়ের একটা মূল্য আছে সেটা তারা কিছুতেই বুঝতে চায় না।অগত্যা টাইমপাস করতে ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।সবে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনের রাস্তায় পা দিয়েছে,অমনি কোথা থেকে আকাশটা এসে হাজির
আকাশঃ হ্যাল্লো বেবি ডল
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)আমাকে বললে?
আকাশঃ ইয়েস ম্যাম
ছোঁয়াঃ এটা আবার কেমন নাম?আমার কিন্তু এসব একদম পছন্দ না
আকাশঃ বললেই হলো?তুমিতো এই নামেই পরিচিত ছিলে
ছোঁয়াঃ মানে?
আকাশঃ মানে বেবি ডল,বার্বি ডল,ম্যানিকুইন সবাইতো তোমাকে এসব নামেই চিনতো তাইনা?আর ওই যে সেবার ক্যাম্পাস বিউটি কুইন এ্যাওয়ার্ড,ওটাতো তোমারই পাওয়ার কথা ছিল বাট লাস্ট মোমেন্টে তুমি অনুপস্থিত থাকায়…
ছোঁয়াঃ রিয়েলি!
আকাশঃ এখন অবশ্য জানি তোমার অনুপস্থিতির কারণ,নিশ্চয়ই ওই অ্যাক্সিডেন্টটা?বাই দ্য ওয়ে সায়ন ভাইয়ার কি খবর?
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)সায়ন!উনাকে চিনলে কি করে?
আকাশঃ বাহ রে চিনবো না!উনিতো স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আর এখনতো দেশের নামকরা বিজনেসম্যান উনাকে কে না চেনে?
ছোঁয়াঃ ওহ
আকাশঃ তুমিতো উনার গার্লফ্রেন্ড ছিলে তাইনা?কেউ কেউ অবশ্য বলে তোমাদের নাকি বিয়েও হয়েছিল!আমি অবশ্য,গুজবে কান দেই না
ছোঁয়াঃ আমার সম্পর্কেতো দেখছি তুমি আমার থেকেও বেশি জানো!(আসলেতো আমি আমার এই ক্যাম্পাস লাইফ সম্পর্কে কিছুই জানিনা)
আকাশঃ তাতো একটু জানতেই হবে,আফটার অল ফ্রেণ্ডশিপ যখন করেছি তখনতো…আর হ্যাঁ সেদিনের জন্য সরি
ছোঁয়াঃ সরি কেন?
আকাশঃ আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি,You were one of the toppers in your batch!আনফরচুনেটলি তুমি ড্রপ আউট হয়ে গেলে তাই…আচ্ছা তোমার কি হয়েছিল?
ছোঁয়াঃ জানিনা
আকাশঃ মানে!তোমার অ্যাক্সিডেন্ট আর তুমিই জানোনা!
ছোঁয়াঃ আমি আসলেই কিছু জানিনা,ইনফ্যাক্ট আমার এই ক্যাম্পাস লাইফরে কিছুই মনে নেই,এখানকার কিছুই আমি চিনতে পারছি না।ডক্টর বলেছে আমার লাস্ট তিন বছরের মেমোরি লস হয়েছে তাই…
আকাশঃ What!Are you serious?
ছোঁয়াঃ হুম এখানকার কিছুই আমি চিনতে পারছি না ইনফ্যাক্ট আমার মনে হচ্ছে এখানে আমি কখনও আসিইনি,এই ফার্স্ট আসলাম।অনেক চেষ্টা করছি সবকিছু মনে করার কিন্তু…

(ছোঁয়ার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আকাশ যেন বোঝার চেষ্টা করছে ও সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা।তারপরই এক গাল হেসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল)
আকাশঃ তো বেবি ডল,এবার যাওয়া যাক?
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)কোথায়?
আকাশঃ তুমিই না বললে এখানকার কিছুই চিনো না,তো চলো আজ তোমাকে পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখাবো
ছোঁয়াঃ হ্যাঁ কিন্তু ক্লাস?
আকাশঃ ডিয়ার মিস বেবি ডল,তোমার মতো ট্যালেণ্টেড পাবলিকের দুই একটা ক্লাস না করলে কিচ্ছু যায় আসবে না।সো…মে উই?
ছোঁয়াঃ ঠিক আছে যাবো তবে আমাকে আর বেবি ডল বলে ডাকবে না প্লিজ,নামটা একদমই পঁচা
আকাশঃ তাহলে কি বলে ডাকবো?Let me think,পেয়েছি কিউটি দ্য বিউটি পছন্দ হয়েছে?
ছোঁয়াঃ আকাশ…(দাঁতে দাঁত চেপে)

আকাশঃ সে তুমি রাগ করো আর যাই করো,আমিতো তোমাকে এই নামেই ডাকবো মিস কিউটি দ্য বিউটি
ছোঁয়াঃ আকাশের বাচ্চা…
(ছোঁয়া আকাশের দিকে তেড়ে যেতেই তিয়াশা আর জেরিনের সাথে ধাক্কা খেলো)
তিয়াশাঃ কি রে এসব কি?
আকাশঃ ওর একটা নতুন নাম দিয়েছি কিউটি দ্য বিউটি নামটা সুন্দর না বল?আর এই পাঁজি মেয়েটার সেটা কিছুতেই পছন্দ না!তাইতো আমার মতো মাসুম বাচ্চাকে…
জেরিনঃ মাসুম বাচ্চা!আর তুই!হাহাহা
আকাশঃ ওই পেত্নী হাসিস কেন?আমি হাসার মতো আবার কি বললাম?
জেরিনঃ ওই কি বললি?তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে পেত্নী বলিস!আজকেতো তোর ঘাড় আমি মটকাবোই…
আকাশঃ হ্যাঁ তাইতো করবি,পেত্নীর যা কাজ…
তিয়াশাঃ ওই তোরা থামবি?
ছোঁয়াঃ আকাশ,তুমিই না বললে আমাকে ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখাবে তাহলে এখন শুধু শুধু ঝগড়া কেন করছো?চলো আমরা সবাই মিলে আজকে পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরে আসি
তিয়াশাঃ কেন?কোন স্পেশাল অকেশন আছে নাকি?
আকাশঃ আছে একটা কারণ,তোদেরকে পরে বলবো,এখন চল যাওয়া যাক,ওই পেত্নী তুইও আয়…
(দুদিন পর)
ছোঁয়া নিজের সিটে এসে বসতেই জেরিন আর তিয়াশা এসে ওর দুপাশে বসে পড়লো।কারো মুখেই কোন কথা নেই,অবাক চোখে শুধু ওকে দেখায় ব্যস্ত।
ছোঁয়াঃ কিছু বলবে?
ওদের বিহেভ দেখে মনে হলো ছোঁয়ার কথা যেন ওদের কানেই ঢোকেনি,আগের কাজেই মগ্ন থাকলো ওরা।ছোঁয়াও আর ঘাটালো না ওদের,ব্যাগ থেকে কয়েকটা নোট বের করে পড়াশোনায় মন দিল।
জেরিনঃ এটা কি সত্যি?
ছোঁয়াঃ (চমকে উঠে)কোনটা?
তিয়াশাঃ ওই যে আকাশ বললো তোমার নাকি মেমোরি লস…
ছোঁয়াঃ হ্যাঁ ওই…
(ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কোথা থেকে আকাশ চলে আসলো।ছোঁয়ার হাত থেকে একটা নোট হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো আর তাতেইতো ওর চোখ ছানাবড়া!)
আকাশঃ আরে!এই লেকচারটারো স্যারের আজকে পড়ানোর কথা,এটা তোমার কাছে কিভাবে?ডোন্ট সে তুমি আগেই সব নোট করে রেখেছো…
ছোঁয়াঃ আরে আমি না,অন্য একজন
আকাশঃ কে?কোন সিনিয়র বড় ভাইয়া?যে তোমার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে নাকি…
ছোঁয়াঃ আরে ওসব কিছু না
জেরিনঃ তাহলে?
ছোঁয়াঃ আসলে আমি ম্যারিড আর এসবই আমার হাজবেণ্ড…
(কথাটা শুনেই ওরা তিনজনে একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো)
তিয়াশাঃ ম্যারিড মানে!you are joking right?
আকাশঃ কে সে আমরা কি তাকে চিনি?
জেরিনঃ কই আগেতো বলনি?
ছোঁয়াঃ আসলে আমি নিজেইতো জানতাম না তাই…
জেরিনঃ মানে!
ছোঁয়াঃ আসলে তোমরাতো জানোই আমার মেমোরি লস হয়েছে আর আমাদের বিয়েটাও ওই তিন বছরের মধ্যেই হয়েছে তাই ব্যাপারটা আমি নিজেও জানিনা।নেহায়েত সবাই বলছে তাই…
তিয়াশাঃ তারমানে তুমি ভাইয়াকেও চিনতে পারছো না?
ছোঁয়াঃ হুম,উনার সাথে পরিচয়,আমাদের বিয়ে কোনকিছুই না
আকাশঃ তাহলে এখন কি করবে?
ছোঁয়াঃ সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি,দেখি কতদিনে সবকিছু স্বাভাবিক হয়
(ওর কথা শুনে ওরা তিনজনই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো তারপরই ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল)
জেরিনঃ চিন্তা করো না,সব ঠিক হয়ে যাবে আর ততদিন পর্যন্ত আমরাতো আছিই তোমার পাশে।কি রে আছিস না?
তিয়াশা+আকাশঃ অবশ্যই

কেটে গেছে আরও কিছুদিন,ছোঁয়া নিজেকে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিয়েছে আর সায়নও ফিরে গেছে তার স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততায়।বরাবরের মতোই এক্স্যাক্ট টাইমে অফিসে ঢুকেছে আর ঢুকেই মায়াকে তলব,বেচারী মায়া ভয়ে ভয়েই দরজায় নক করলো
মায়াঃ আসবো স্যার?
সায়নঃ হ্যাঁ মিস মায়া,আমাকে আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায়।আমি যাওয়ার পর সবকিছু হ্যাণ্ডেল করার দ্বায়িত্ব কিন্তু আপনার
মায়াঃ ওকে স্যার
সায়নঃ আর শুনুন,কালকের আমার সব এ্যাপয়েন্টমেন্ট কিন্তু ক্যান্সেল করতে হবে
মায়াঃ তা আর লাগবে না,আমি আগেই সবকিছু ক্যান্সেল করে রেখেছি।আমি জানি কাল ছোঁয়া ম্যামের বার্থডে তাই…
সায়নঃ (মুচকি হেসে)Good job miss Maya
মায়াঃ একটা কথা বলবো স্যার?
সায়নঃ হুম বলো
মায়াঃ আপনি অনেক বদলে গেছেন
সায়নঃ রিয়েলি!তা এই বদলটা ভালো নাকি খারাপ?
মায়াঃ অন্নেক ভালো স্যার।আগেতো আপনি সবসময় রেগে থাকতেন,আপনার সাথে কথা বলতেই ভয় লাগতো আর এখন কত স্বাভাবিক,সবসময় হাসি মুখে থাকেন।এমনই থাকবেন প্লিজ,আপনার মুখে হাসিটায় বেশি মানায়,রাগটা না
সায়নঃ পরামর্শটা মাথায় থাকলো,মিস মায়া একটু ওদিকে দেখোতো মনে হচ্ছে দরজার বাইরে কেউ আছে,ভেতরে কি হচ্ছে দেখার চেষ্টা করছে(আমি জানি ওটা আসিফ তবুও…)

মায়াঃ ইশ রে…ইনি আবার!আ..আসলে স্যার,মনে হচ্ছে আসিফ ভাইয়া…
সায়নঃ আচ্ছা তোমার কি মনে হয়?আসিফ এতো ঘন ঘন এখানে কেন আসে?
মায়াঃ আসলে উনি আপনাকে নিয়ে অনেক টেনশনে থাকে তাই হয়তো…
সায়নঃ (মুচকি হেসে)আমার বন্ধু বলে বলছি না আসিফ ছেলে হিসেবে কিন্তু অনেক ভালো
মায়াঃ (চমকে উঠে)জ্বি স্যার!
সায়নঃ ও কিন্তু তোমাকে অনেক পছন্দ করে,আমার মনে হয় ব্যাপারটা তুমিও জানো
মায়াঃ না মানে স্যার..আসলে..আমি…
সায়নঃ ওটাতো একটা আস্ত গাধা,নিজে থেকে কখনোই কিছু বলতে পারবে না তাই তোমাকেই হালটা ধরতে হবে।আশা করি কথাটা মাথায় রাখবে…
মায়াঃ জ্বি স্যার…
(সায়নের রুম থেকে বেরিয়ে আসলো মায়া,ওকে আসতে দেখেই আসিফ সরে গেছে।খানিকটা দূরেই আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে,মায়ার ওকে খুঁজে পেতে এক সেকেণ্ডও সময় লাগলো না)
মায়াঃ এই যে,কি করছেন এখানে?
আসিফঃ (চমকে উঠে)আ..আরে তুমি!তুমি কখন এলে?
মায়াঃ ভালোবাসেন আমাকে?
চলবে…