Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 34

মায়াঃ ভালোবাসেন আমাকে?
(মায়ার এমন স্ট্রেট একটা প্রশ্নে আসিফের চোখ কপালে উঠে গেল)
মায়াঃ কি হলো,কথা বলছেন না যে!ভালোবাসেন আমাকে?
আসিফঃ (আমতা আমতা করে)ইয়ে মানে..না মানে…
মায়াঃ এতো মানে মানে না করে ডিরেক্ট উত্তর দিন।হ্যাঁ নাকি না?
আসিফঃ ইয়ে মানে…হ্যাঁ…
মায়াঃ ঠিক আছে,তাহলে আজ বিকেল পাঁচটায় সামনের কফিশপে আমার জন্য ওয়েট করবেন
(কথাটা বলেই মায়া নিজের কেবিনের দিকে চলে গেল,আসিফ যেন এতোক্ষণে প্রাণ ফিরে পেলো,এক ছুটে সায়নের চেম্বারে ঢুকেই ধপ করে চেয়ারে পড়লো)
সায়নঃ কি রে তোর আবার কি হলো?এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?
আসিফঃ বলছি আগে এক গ্লাস পানি দে,গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে
সায়নঃ এই নে ধর
(গ্লাসের পানিটুকু এক নিঃশ্বাসে শেষ করে দিল আসিফ)
সায়নঃ এবারতো বল কাহিনী কি…
আসিফঃ মা..ম্ম..মায়া..ও..ওর কি জানি হয়েছে…She has gone completely insane…কিসব উল্টো পাল্টা বকছিলো…
সায়নঃ ওহ এই কথা?তাহলে বোধহয় ঔষধে কাজ হয়েছে
আসিফঃ (অবাক হয়ে)মানে!কিসের ঔষধ?তুই কি ওকে কিছু…
সায়নঃ কি করব,তুইতো নিজে থেকে কিছু বলতে পারবি না তাই আমিই তোর হয়ে…
আসিফঃ কি বলেছিস ওকে?
সায়নঃ তেমন কিছুই না,জাস্ট বলেছি যে তুই ওকে পছন্দ করেছিস
আসিফঃ (চমকে উঠে)কিহ!তুই ওকে এসব বলেছিস!আর কিছু বলেছিস?
সায়নঃ হুম বলেছি তুই একটা গাধা তাই যা করার ওকেই করতে হবে
আসিফঃ তু..ত..তুই…I am just speechless.শালা তুই বন্ধু না শত্রু?
সায়নঃ কি আশ্চর্য!তোরতো উচিত ছিল খুশিতে মাথায় তুলে লাফানো,তা না করে তুই…
আসিফঃ কেন?কি এমন করেছিস তুই যে তোকে মাথায় তুলে নাচতে হবে?
সায়নঃ বাহ রে,পুরো একটা বছর একটা মেয়ের পেছনে ঘুরে ঘুরেও তুই যে কথাটা বলতে পারলি না,আমি এক মিনিটে সেটা বলে দিলাম আর তুই বলছিস আমি কিছুই করিনি!আসলেই ভালো কাজের কোন দাম নেই…
আসিফঃ একেবারে উদ্ধার করে দিয়েছেন আমাকে,তোর পায়ে পড়ি আর আমার ভালো করতে যাস না প্লিজ…এখন যদি মায়া আমাকে রিজেক্ট করে দেয়…
সায়নঃ করার হলে এতক্ষণে ঠিক করে দিত,সেটা যখন করেনি তখন ধরে নে রেজাল্ট পজিটিভ
আসিফঃ এ্যাহ কি আমার সবজান্তা মহাজ্ঞানী বাবা সায়নদেব রে!রেজাল্ট পজিটিভ,তোকে বলেছে
সায়নঃ বলেনি তবে মায়াকে যতদূর জানি ও খুব স্ট্রেট ফরোয়ার্ড মেয়ে তাই তোকে রিজেক্ট করার হলে সঙ্গে সঙ্গেই বলে দিত,হেঁয়ালি করতো না so just chill yaar…
আসিফঃ বলছিস?
সায়নঃ হ্যাঁ বলছি,আচ্ছা একটা কথা বলতো মায়া এক্স্যাক্টলি কি বলেছে তোকে?
আসিফঃ ও বললো,”আমাকে ভালোবাসেন?ঠিক আছে,তাহলে আজ বিকেল পাঁচটায় সামনের কফিশপে আমার জন্য ওয়েট করবেন”
সায়নঃ (অবাক হয়ে)তুই শিওর ও এটাই বলেছে?
আসিফঃ অফকোর্স,আমার কান খুব শার্প
সায়নঃ আর বুদ্ধিটা তেমনই ব্লান্ট
আসিফঃ মানে?
সায়নঃ শালা তুই আসলেই একটা গাধা,মেয়েটা অলরেডি তোকে হ্যাঁ বলে দিয়েছে আর তুই বুঝতেই পারলি না!ছাগল একটা…
আসিফঃ ও আবার কখন আমাকে হ্যাঁ বললো?ওতো জাস্ট ওয়েট করতে…
সায়নঃ তা নয়তো কি,ও কি সরাসরি বলবে যে আমিও আপনাকে ভালোবাসি?রাজি যদি নাই থাকে তাহলে কি তোকে কফিশপে ফুটবল খেলার জন্য ডেকেছে?শালা গাধা কোথাকার…
আসিফঃ তাইতো..এভাবেতো ভেবে দেখিনি!থ্যাঙ্কস দোস্ত,লাভ ইউ সো..মাচ…
সায়নঃ এই ছাড়..ছাড় বলছি,শালা কেউ দেখে ফেললে নিশ্চিত উল্টো পাল্টা মিনিং বের করবে…
আসিফঃ করুক আই ডোন্ট কেয়ার,কাল..কাল রাতে তোর ট্রিট,যা খেতে চাইবি খাওয়াবো প্রমিজ…
সায়নঃ উহু কাল না,ভুলে গেছিস কাল ছোঁয়ার বার্থডে?
আসিফঃ সরি ভুলে গিয়েছিলাম,তাহলেতো তোকে…কখন যাচ্ছিস?
সায়নঃ এইতো আর ঘণ্টা দুয়েক পর

লাস্ট এক ঘণ্টা ধরে ননস্টপ ড্রয়িং রুমের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত পায়চারী করে যাচ্ছে ছোঁয়া।লোপা আর বৃষ্টিও আছে ওখানেই,একজন টেবিলে বসে পড়াশোনায় ব্যস্ত আর অন্যজন মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে ভূত আই মিন পেত্নী সেজে বসে আছে।ছোঁয়ার কিন্তু ওসবের কিছুতেই মন নেই,ননস্টপ হাঁটছে আর এক মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।
ছোঁয়াঃ খুবতো বড় মুখ করে বলেছিলেন আমাকে ভালোবাসেন,সবসময় আমার খেয়াল রাখবেন,কোনকিছুর অভাব রাখবেন না,চাওয়ার আগেই সব ইচ্ছে পূরণ করে দেবেন তাহলে এখন?আমার বার্থডেটাই ভুলে গেলেন!সকাল থেকে না কোন ফোন কল,না কোন মেসেজ আর না কোন বার্থডে উইশ ওয়ালা কুরিয়ার।উল্টো সারা দিনে এতোবার ফোন করলাম এইবার রিসিভ পর্যন্ত করলো না!এই আপনার ভালোবাসা!
লোপাঃ এ..এই বৃষ্টি,কি হচ্ছে বলতো?ও কি পাগল হয়ে গেল নাকি?
বৃষ্টিঃ বুঝতে পারছিস না,ফ্রাস্ট্রেশন রিলিভ করছে এভাবে
লোপাঃ বেচারি!ওতো আর জানে না যে…
বৃষ্টিঃ শসসস…আস্তে,শুনে ফেলবেতো…
ছোঁয়াঃ কয়টা বাজে রে?

লোপাঃ তোর হাতেতো ফোন আছেই,নিজেই দেখে নে না
ছোঁয়াঃ বলতে বলেছি বল না,এতো ঢং করার কি আছে?
লোপাঃ কিহ!আমি আবার কখন…
বৃষ্টিঃ লোপা…আমি দেখছি,তাসু…সাড়ে বারো,সাড়ে বারোটা বাজে
ছোঁয়াঃ এতো দেরি হয়ে গেছে!তাহলে এখনও কেন…ধ্যাত!তোরা সব..I hate you all…
লোপাঃ আরেহ,কি আশ্চর্য!অন্যের রাগ তুই আমাদের উপর কেন?
বৃষ্টিঃ ছেড়ে দে লোপা…আর কথা বাড়াস না(বিড়বিড় করে)
(রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমের দিকে চলে গেল ছোঁয়া)
ছোঁয়াঃ এরা বান্ধবী!ফিরে আসার পর এই ফার্স্ট বার্থডে আর সেটা কারো মনে নেই!ওই বদ লোকটার কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তা তোরা…
(আপন মনে বকবক করতে করতেই নিজের রুমে চলে গেল।লাইট অফ তাই পুরো রুমটায় ঘুটঘুটে অন্ধকার,লাইটটা অন না করেই ধপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল ছোঁয়া আর তারপরেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো)
ছোঁয়াঃ মনে হলো বিছানায় কেউ আছে,কিন্তু এটা কিভাবে…চো..চো..র..চো..র…চো…
(ছোঁয়া আর কিছু বলার আগেই কেউ ওর মুখটা চেপে ধরলো)
সায়নঃ শসসস…ছোঁয়া…আমি…
ছোঁয়াঃ আ..আ..আপনি…
সায়নঃ হ্যাঁ আমি,তোমার একমাত্র বর
ছোঁয়াঃ (রেগেমেগে)আপনি!আপনি এখানে কি করছেন?
সায়নঃ কি করছি?ওয়েট…
(হঠাৎ করেই পুরো রুমটা আলোতে ঝলমল করে উঠলো,নীল-সাদা পার্টি লাইট সঙ্গে বেলুন আর ফেস্টুন আর তারপরই মাথার উপরের সিলিংয়ে সাটানো কয়েকটা বেলুন ফেটে রঙ বেরঙের জরি আর কালারফুল পেপারের ছোট ছোট টুকরো ঝরে পড়তে লাগলো সাথে ফুলের পাপড়িতো আছেই!হঠাৎই ঘরের দরজাটা খুলে গেল,মোমবাতি দিয়ে সাজানো কেক হাতে ঘরে ঢুকলো বৃষ্টি আর লোপা)
“Happy birthday to you…Happy birthday to you…Happy birthday dear Tasniya…Happy birthday to you…”
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)এ..এসব…
লোপাঃ তুই কি ভেবেছিলি,আমরা সব ভুলে গেছি?উহু..নেহায়েত সায়ন ভাইয়া বলেছিল তাই…
ছোঁয়াঃ ও…তারমানে এসব আপনার আইডিয়া!
সায়নঃ (মুচকি হেসে)Happy birthday my dear wife…many many happy returns of the day…
ছোঁয়াঃ এ্যা..দোষ করে এখন আবার আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে!এই যে..এখন কটা বাজে?সবার আগে উইশ কেন করলেন না?
সায়নঃ আরে বাবা,তাহলেতো আর সারপ্রাইজ দেওয়া হতো না
ছোঁয়াঃ রাখুন আপনার সারপ্রাইজ,আর এই যে…এখানে আসলেন কি করে?আমিতো ড্রয়িংরুমেই ছিলাম,কই আপনাকেতো ওই দিক দিয়ে আসতে দেখলাম না…
সায়নঃ দেখবে কিভাবে?আমিতো আর ফ্রোণ্ট ডোর দিয়ে আসিনি
ছোঁয়াঃ তাহলে?
সায়নঃ এই যে এই জানালা দিয়ে
ছোঁয়াঃ হোয়াট!

সায়নঃ এমন রিয়্যাক্ট করছো যেন এই প্রথম এভাবে আসলাম,এর আগেওতো…
ছোঁয়াঃ কিহ!এর আগেও আপনি এদিক দিয়ে এভাবে এই ঘরে এসেছেন?
সায়নঃ হ্যাঁ..ঠিক এভাবে না তবে অনেকটা এমনই বলা যায়
লোপা+বৃষ্টিঃ দুলাভাই…এসব আবার কবে হলো?তলে তলে এতো দূর!আর আমরা কিছুই জানতে পারলাম না!
সায়নঃ ইয়ে মানে…আসলে…
ছোঁয়াঃ ওসব মানে টানে রাখুন,আগে বলুন এভাবে আর কয়জনের বেডরুমে ঢুকেছেন?
সায়নঃ আরে না না শুধু তোমার রুমেই…আমারতো আর দশটা বউ নেই যে তাদের রুমে…You are my one and only wife তাই…
লোপাঃ (কাশতে কাশতে)এই যে…ঘরে কিন্তু আমরাও আছি
সায়নঃ সরি ডিয়ার শ্যালিকা কাম হবু ভাবী,আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।থ্যাঙ্কস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য
বৃষ্টিঃ শেষ?ঠিক আছে,এবার তাহলে কেক কাটা যাক,রাততো আর কম হলো না…
সায়নঃ ওকে ওকে…ডিয়ার ওয়াইফি এবার তাহলে…
(সায়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই ছোঁয়া খানিকটা ক্রিম তুলে সায়নের মুখে লাগিয়ে দিল)
ছোঁয়াঃ তাহলে কি?(দুষ্টুমির হাসি হেসে)
সায়নঃ এটা কি হলো?
ছোঁয়াঃ কি হলো বলুনতো…
সায়নঃ ফাযলামি হচ্ছে!দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা
(সায়নও খানিকটা ক্রিম তুলে নিয়ে ছোঁয়াকে মাখাতে গেল কিন্তু ছোঁয়াতো রেডিই ছিল তাই তার আগেই ছুটে পালালো)
সায়নঃ দাঁড়াও বলছি…একবার যদি ধরতে পারিনা…
ছোঁয়াঃ আগে ধরেতো দেখান,তারপর নাহয় মজা দেখাবেন…
(ওদের দুজনের কাণ্ড দেখে লোপা আর বৃষ্টিতো হেসেই খুন,দূরে দাঁড়িয়ে তাই চুপচাপ ওদের কাণ্ড কারখানা দেখতে লাগলো)

কেক কাটা সরি ক্রিম মাখা পর্ব শেষ,লোপা আর বৃষ্টি যে যার রুমে চলে গেছে।ছোঁয়া আর সায়ন এখনও ওখানেই আছে,ছোঁয়া মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে ঘুরে বসে আছে।মুচকি হেসে সায়ন ওর দিকে এগিয়ে গেলো
সায়নঃ কি ম্যাডাম,খুব রেগে আছেন তাইনা?
ছোঁয়াঃ আপনি…আপনি খুব খারাপ,এভাবে কেউ কারো মুখে ক্রিম মাখায়?
সায়নঃ শুরুটা কে করেছিল শুনি…
ছোঁয়াঃ মানছি আমিই শুরু করেছিলাম কিন্তু তাই বলে আপনিও?
সায়নঃ আচ্ছা বাবা সরি,দেখি এদিকে ঘোর তোমার মুখ পরিষ্কার করে দিচ্ছি
ছোঁয়াঃ লাগবে না…
সায়নঃ ও বাবা,বউটা দেখছি একটু বেশিই রেগে গেছে!ঠিক আছে,এই কানে ধরছি আর কক্ষণো এমন হবে না।এবারতো আমার দিকে ঘোর…
ছোঁয়াঃ সত্যিতো?
সায়নঃ সত্যি সত্যি সত্যি…
ছোঁয়াঃ ঠিক আছে,এই ঘুরলাম এখন করুন আপনার কাজ…
(একটা টিস্যু নিয়ে সায়ন আলতো হাতে ছোঁয়ার মুখ মুছে দিতে লাগলো)
ছোঁয়াঃ শুনুন কথায় কথায় এমন বউ বউ করবেন নাতো,আমার একদম ভালো লাগে না…
(কিছুক্ষণ পর)
সায়নঃ রাততো অনেক হলো,এবার তাহলে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো
ছোঁয়াঃ আর আপনি?

সায়নঃ আমাকে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না,আমি নাহয় ড্রয়িংরুমেই ঘুমিয়ে পড়বো
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ গুড নাইট ছোঁয়া…
(সায়ন যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো)
ছোঁয়াঃ দাঁড়ান
সায়নঃ থমকে দাঁড়ালাম,কিছু বলবে?
ছোঁয়াঃ বলছি..আপনাকে কোথাও যেতে হবে না,আপনি বরং আজ রাতটা এখানেই থাকুন
সায়নঃ (অবাক হয়ে)এখানে!এই রুমে!Are you sure?
চলবে…