Childhood marriage 3 !! Part- 19
লোপাঃ এই কি হয়েছে বলবেতো…
মারুফঃ কি আবার হবে,তাসনিয়ার সাথেই সায়নের বিয়েটা হয়েছে
লোপাঃ কিহ!কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব!
মারুফঃ আমারওতো বিশ্বাসই হচ্ছে না কিন্তু এটাই সত্যি
লোপাঃ কিন্তু…তাসুকে আমরা চিনি সেই প্রাইমারী থেকে,এতদিনেও কিছু জানতে পারলাম না!তাসুতো আমাদের কখনও বলেনি যে ও বিবাহিতা…
মারুফঃ ও জানলেতো বলবে…
লোপাঃ মানে?
মারুফঃ মানে ওদের দুজনের কেউই ব্যাপারটা জানতো না।আর খালা খালুও তাসনিয়াকে নিজেদের মেয়ের মতোই মানুষ করেছে তাই কিছু কাছের মানুষ ছাড়া কেউই ব্যাপারটা জানতো না আর আমরাতো ওকে ছোঁয়া নামে জানতাম তাই…
লোপাঃ যাই হোক একদিক দিয়ে ভালোই হলো জানো,এসব ঝামেলায় ওদের চার হাত একতো হয়ে গেল…
মারুফঃ তাতো হলো কিন্তু ওরাতো এসবের কিছুই জানেনা,জানানোর ব্যবস্থাতো করতে হবে
লোপাঃ ঠিক বলেছো,তুমি নাহয় সায়ন ভাইয়াকে সামলাও আমি দেখি তাসনিয়ার সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করা যায় কিনা…
“সরি তাসনিয়া,
বলেছিলাম তোমার জন্য ওয়েট করব,যখনই তুমি পেছন ফিরে তাকাবে আমাকে ঠিক তোমার পেছনেই পাবে।কিন্তু তোমাকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারলাম না।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও,ভালো থেকো সবসময়…
সায়ন”
মোবাইলের সেণ্ড বাটনটা প্রেস করেই ট্রাভেল ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিল সায়ন।বিয়ে বাড়ি তাই যে যার মতো ব্যস্ত সময় পার করছে আর রাতও অনেক হয়েছে তাই এখন বেরিয়ে পড়লে কারো চোখে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম আর কেউ দেখলেই বা কি সায়ন এখন আর ওসবের তোয়াক্কা করে না।ঝটপট বেরিয়ে পড়লো সায়ন কিন্তু সদর দরজার দিকে এগোতেই মারুফের সাথে দেখা,বেচারা হন্তদন্ত হয়ে এদিকেই আসছিলো,সায়নকে দেখেই থমকে দাঁড়ালো
মারুফঃ কি রে,তুই এখন এখানে!
সায়নঃ ওহ মারুফ,ভালোই হলো তোর সাথে দেখা হয়ে,বাইকের চাবিটা দেতো
মারুফঃ কেন?চাবি দিয়ে কি করবি?
সায়নঃ চাবি দিয়ে মানুষ কি করে?খায় না মাথায় দেয়?
মারুফঃ কোথায় যাচ্ছিস?
সায়নঃ সেটা তোর না জানলেও চলবে,এখন চাবিটা দিবি কিনা বল
মারুফঃ কিন্তু আজতো তোর আর তাসনিয়ার আই মিন ছোঁয়ার বাসর…
সায়নঃ তো?
মারুফঃ মানে!তুই এই বাসর রাতে মেয়েটাকে একা রেখে চলে যাবি?
সায়নঃ দেখ মারুফ,তুই ভালো করেই জানিস আমি তাসনিয়াকে ভালোবাসি তাই হুট করে ছোঁয়াকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে অনেক টাফ
মারুফঃ হ্যাঁ কিন্তু তাসনিয়া আর ছোঁয়াতো…
সায়নঃ আমি তাসনিয়ার ব্যাপারে আর একটা কথাও শুনতে চাই না।সবকিছু মেনে নেওয়ার জন্য আমার কিছুটা সময় চাই তাই…
মারুফঃ আমার কথাটাতো শেষ করতে দে,আমি বলতে চাইছি তাসনিয়া আর ছোঁয়া এক…
সায়নঃ ব্যস অনেক হয়েছে,আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না।চাবিটা দিলে দে নাহলে আমি অন্য কোন ব্যবস্থা করে নিব
মারুফঃ আরে বাবা,আমি কি বলেছি দিব না?জাস্ট আমার একটা কথা…
সায়নঃ নে এটা ধর
মারুফঃ এটাতো তোর মোবাইল,আমাকে দিচ্ছিস কেন?
সায়নঃ কারণ আমি চাই না আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করুক,আমি একটু একা থাকতে চাই
মারুফঃ এটা নিয়ে আমি কি করব?
সায়নঃ ইচ্ছে হলে চালাবি নয়তো অফ করে রাখবি
মারুফঃ কিন্তু খালা-খালু কিছু জিজ্ঞেস করলে?
সায়নঃ তখন তুই কিভাবে সামলাবি সে তোর ব্যাপার,এখন চাবিটা দে
মারুফঃ কিন্তু…
সায়নঃ শসসস…চাবি…
মারুফঃ ওকে ফাইন,এই নে ধর কিন্তু…
সায়নঃ থ্যাঙ্কস…বলেই গ্যারেজের দিকে ছুটলাম
মারুফঃ যেদিকে ইচ্ছে হয় যা বাট আমার কথাটা এটলিস্ট শুনে যা,তাতে তোরই লাভ
সায়নঃ দরকার নেই
মারুফঃ না শুনলে কিন্তু সারা জীবন পস্তাতে হবে
সায়নঃ এমনিতেওতো পস্তাচ্ছিই,আরেকটুতে আমার কিছুই হবে না সো বাই…
মারুফঃ আরে আরে..এই সায়ন..কি আশ্চর্য এই ছেলেতো…
(ততক্ষণে বাইকে স্টার্ট দিয়ে ফেলেছে সায়ন,দেখতে না দেখতেই মেইন গেট পেরিয়ে মূল রাস্তায় চলে এসেছে।এখন আর মারুফ বা ও বাড়ির আর কোন শব্দই ওর কানে আসছে না)
মারুফঃ শালা আসলেই একটা ত্যাড়া,আমাকে কথাটা বলতেই দিল না!আরে গাধা তুই বুঝতেও পারলি না কত বড় ভুল করে ফেললি।যাকে না পাওয়ার বেদনায় ঘর ছাড়লি,তুই জানতেও পারলি না তাকেই একা ফেলে…
(মারুফের ফোনটা বাজছে,লোপার ফোন)
মারুফঃ হ্যাঁ বলো
লোপাঃ ওদিকের কি খবর?সায়ন ভাইকে খুঁজে পেলে?
মারুফঃ পেয়েছি আর ও চলেও গেছে
লোপাঃ চলে গেছে মানে!কোথায় গেছে?
মারুফঃ সে আমি কি করে বলবো?আমাকে কি বলে গেছে নাকি…
লোপাঃ তুমি উনাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলোনি
মারুফঃ বলতে আর দিলো কই,আমাকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই…
লোপাঃ আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না নাম শুনেও তুমি ওকে চিনতে পারলে না!
মারুফঃ আরে বাবা,আমি কি আর ওর পুরো নাম জানতাম নাকি?বিয়ের কার্ডতো আমি খুলেও দেখিনি আর ওই গাধাটাতো বিয়ের আসরে কাজীকে বিয়ে পড়াতেই দিলো না,কোনকিছু না শুনেই…
লোপাঃ থাক থাক আর কোন এক্সকিউজ দেখাতে হবে না,আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না…
মারুফঃ এমন ভাব দেখাচ্ছো যেন তুমিই সব করে উদ্ধার করে দিয়েছো
লোপাঃ কি করে করবো,তাসনিয়াতো ফোন রিসিভই করছে না…আচ্ছা শোন,তুমি একবার ওর কাছে যাবে?
মারুফঃ পাগল নাকি!এই মাঝরাতে ওদের বাসরঘরে আমি!প্রশ্নই আসে না…
লোপাঃ তাহলে আর কি,সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।তারপরই নাহয়…
(পরদিন)
সকাল হতেই সায়নের রুমের দিকে ছুটে এসেছে মারুফ,কিন্তু এসেই থমকে গেছে।যদিও ও জানে সায়ন নেই তবুও কেমন জানি লাগছে,হাজার হোক এটাতো ওদের বাসর ঘর আর এতো সকালে কারো বাসর ঘরে নক করাটাও কেমন দেখায়।তাই সেই কখন থেকে এই করিডোরেই পায়চারী করে যাচ্ছে।উদ্ধার করলো ফুলি,বাড়ির কাজের মেয়ে
ফুলিঃ আরে ভাইজান,আপনে এইহানে কি করেন?
মারুফঃ না মানে,দেখোতো ছোঁয়া আই মিন নতুন ভাবি উঠেছে নাকি
ফুলিঃ উঠছে মানে!আপায়তো সেই ফজরের আগেই উঠছে আমি নিজে দেখছি তয় ভাইজানরে দেখি নাইক্কা
মারুফঃ দেখবে কিভাবে,গাধাটা কি আর এ বাড়িতে আছে…ওতো কাল রাতেই…(বিড়বিড় করে)
ফুলিঃ কিছু কইলেন ভাইজান?
মারুফঃ কই নাতো,আচ্ছা তুমি একটু নতুন ভাবিকে ডেকে দেবে?আসলে উনার সাথে ঠিকমতো আলাপ হয়নিতো তাই…
ফুলিঃ কিন্তু আপায়তো ঘরে নাই,সেই কখন বাইর হইয়া গেছে…
মারুফঃ নেই মানে?কোথায় গেছে?
ফুলিঃ হেইডা আমি কেমনে কমু,আমারে এই কাগজডা দিয়া কইলো খালাম্মা উঠলে উনারে দিতে কিন্তু আম্মায়তো অহনও উডে নাই তাই…
মারুফঃ দেখি কাগজটা
ফুলিঃ কিন্তু…
মারুফঃ আরে বাবা,ছোট খালাকে আমিই দিয়ে দিব
ফুলিঃ ঠিক আছে,এই লন ধরেন…
মারুফঃ কাগজের ভাঁজ খুলতেই চোখ কপালে উঠে গেলো,এটা আসলে একটা চিঠি আর তাতে লেখা,
“মা,
এভাবে না বলে চলে যাচ্ছি তাই সরি,ভয় পেও না তোমার ছেলের মতো পালিয়ে যাচ্ছি না।সামনাসামনি কথাটা বলার সাহস নেই তাই এভাবেই বলছি।কোনদিন তোমাদের অবাধ্য হইনি তাই এবারও হতে পারলাম না কিন্তু সবকিছু এতো তাড়াহুড়োয় হয়ে গেলো যে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সময়টাও পেলাম না!আমার একটু সময় দরকার,একাকী কাটানোর জন্য তাই চলে যাচ্ছি।চিন্তা করো না সময় হলেই ঠিক ফিরে আসবো আর ফোন বন্ধ থাকবে তাই শুধু শুধু কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করো না।
বাবার আর তোমার নিজের খেয়াল রেখো আর আমার জন্য ভেবো না,আমার কিছু হবে না,এর আগেওতো এভাবে একা একা অজানায় পাড়ি জমিয়েছি…
ছোঁয়া”
মারুফঃ চিঠিটা ঝটপট ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিলাম,মাথায় কিছুই আসছে না।এরা স্বামী-স্ত্রী দুটোই একই রকম,দুদিনেই আমাকে আধপাগল বানিয়ে ফেলেছে!নাহ এভাবে হবে না,কোন একটা বুদ্ধি বের করতে হবে কিন্তু কিভাবে?
– এবারেও কি অ্যাক্সিডেন্টাল ভিজিট নাকি প্রি-প্ল্যাণ্ড?
(ঠিক আগের জায়গায়ই টেন্টটা বসানো হয়েছে,সায়ন এখন তারই সামনে একটা ঢিবির উপর বসে ওই নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো সায়ন,পেছন ফিরতেই আরেক ধাক্কা এ যে তাসনিয়া!
সায়নঃ তু..তুমি!এখানে?
তাসনিয়াঃ কেন?আসা কি নিষেধ নাকি?
সায়নঃ না মানে…
তাসনিয়াঃ আসলে এসেছিলাম বান্দরবান শহরে,দুটো দিন একা একা নিজের সাথে কাটালাম।ফিরে যাচ্ছিলাম হঠাৎ জায়গাটা দেখে মনে হলো স্মৃতির পাল্লাটা একটু বেশিই ভারি হয়ে গেছে,যেখানকার স্মৃতি সেখানে ফিরিয়ে দিলে কেমন হয়?ব্যাস নেমে পড়লাম বাস থেকে…
সায়নঃ হুম ভালোই করেছো…যে স্মৃতির কোন ভবিষ্যত নেই শুধু শুধু তাকে আঁকড়ে রেখে কি লাভ?
তাসনিয়াঃ বললেন নাতো এখানে আসাটা অ্যাক্সিডেন্টাল নাকি প্রি প্ল্যান্ড
সায়নঃ অনেকটা ইন্সট্যান্ট প্ল্যানিং বলতে পারো,আগে থেকে প্ল্যানিং ছিল না জাস্ট হুট করেই ডিসিশনটা নেয়া বলতে পারো
তাসনিয়াঃ ওহ
সায়নঃ একচুয়ালি এখানে আসবো বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম,ভেবেছিলাম সব ঋণ শোধ করে দিয়ে যাবো কিন্তু কে জানতো আরও বেশি ঋণী হয়ে যাবো…
তাসনিয়াঃ মানে!ঠিক বুঝলাম না
সায়নঃ ও কিছু না,আসলে এই জায়গাটা আমাকে অনেককিছু দিয়েছে।আমার লাইফের বেস্ট মোমেন্টগুলোর অনেকগুলো ঘিরেই রয়েছে এটা তাই ভাবলাম নতুনভাবে সবকিছু শুরু করার আগে সবকিছু মিটিয়ে নেওয়া উচিত তাই…
তাসনিয়াঃ ওহ তা সবকিছু মিটলো?কবে এসেছেন?এখানেই কি প্রথম নাকি এর আগে অন্য কোথাও…
সায়নঃ তিনদিন আগে,আর কোথাও যাইনি যাওয়ার ইচ্ছেও নেই।ইনফ্যাক্ট আমার আজকেই ফিরে যাওয়ার কথা,সবকিছু গোছগাছ করব ভাবছিলাম এর মধ্যেই তুমি…
তাসনিয়াঃ ওহ তাহলেতো ডিস্টার্ব করে ফেললাম।আমাকে নিয়ে ভাববেন না,আমিও একটু পরেই ফিরে যাবো So you can carry on…
চলবে…