ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 26
মীরা– আমানননননন!!
ঐ পাশ থেকে আর কোনো শব্দ এলো না। হৈ হট্টগোলের শব্দ শোনা যাচ্ছে, আর আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। হাত থেকে ফোন টা বেডে পরে গেছে। কল টা মনে হয় কাটেনি।
অর্নিল– সুইটি?? কি হয়েছে?? হোয়াট হ্যাপেন্ড?? এভাবে ভাইয়ের নাম ধরে চিৎকার করলে??
ইসমি– মীরা! এই মীরা?? কি হয়েছে বল??
মীরা– আ..আ..আমান, আমান। (ফোনের দিকে ইশারা করে)
____হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো ম্যাডাম!
অর্নিল– কল এ কেউ একটা আছে।
____ম্যাডাম স্যারের গুলি লেগেছে।
অর্নিল– হোয়াটটটটট?? ভাই কোথায়??
____অর্নিল স্যার আমরা আমান স্যার কে নিয়ে ****** হসপিটালে যাচ্ছি আপনারাও আসুন। স্যার এর অনেক ব্লিডিং হচ্ছে।
অর্নিল– সুমন তুমি ভাই কে সাবধানে নিয়ে যাও আ..আমি আসছি।
ইসমি– কি হয়েছে অর্নিল??
অর্নিল– ভাই কেও শুট করেছে। ব্লিডিং হচ্ছে অনেক। আমাকে হসপিটালে যেতে হবে ইমিডিয়েটলি।
মীরা– আমিও যাবো। আমাকে প্লিজ নিয়ে চলো প্লিজ অর্নিল। (কেঁদে কেঁদে)
অর্নিল– রিল্যাক্স ভাবি কিচ্ছু হবে না ভাইয়ের। চলো আমার সাথে।
অর্নিল সুমি আর আমি বেরিয়ে পরলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে, আম্মু কে জানালে টেনশন করবে তাই কিছু জানালাম না। অদ্ভুত ভাবে যখন অর্নিল আর সুমি এলো তখন আমার মনে হলো কেউ একজন রূমের বাইরে থেকে সরে গেলো। জানি না কি হচ্ছে, কিন্তু বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে যে এসবের জন্য আমি দায়ী। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি নীলাদ্রি সব টা জেনে গেছে। আর তাই জন্যই আমানের এমন অবস্থা।
আমরা হসপিটালে পৌঁছেই রিসেপশন থেকে আমানের কেবিন টা জানতে পেরেই আমি সেদিকে ছুটলাম। ওখানে গিয়ে দেখলাম ওনার কেবিনের বাইরে সুমন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন, ওনার টি-শার্টে রক্তের দাগ। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি গিয়ে দাঁড়াতেই অর্নিল এসে সুমন ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করলো।
অর্নিল– ভাই কোথায় সুমন??
সুমন– কেবিনে। (সামনের দরজার দিকে ইশারা করে)
অর্নিল আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে কেবিনে ঢুকে পরলো কিন্তু আমার কেনো জানো সাহস হচ্ছে না কেবিনে ঢোকার মতো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ইসমি– কি রে মীরা চল। ভিতরে চল।
মীরা– আমার জন্য সব হলো সুমি। ফুপি নিশ্চয় নীতা কে জেলে দেখে সবটা বলে দিয়েছে নীলাদ্রি কে। তাই তো নীলাদ্রি আমান কে…
ইসমি– চুপপপপ!! বেশি কথা নয়। জিজুর কোনো ক্ষতি হয়নি। ঠিক হয়ে যাবে সব।
সুমি আমাকে জোর করে নিয়ে কেবিনে ঢুকতেই আমার চোখ টা স্থির হয়ে রইলো। অর্নিল আমানের পাশে বসে আছে আর আমান হেসে হেসে কথা বলছে অর্নিলের সাথে। আমানের মাথায় ব্যান্ডেজ করা গোল করে আর হাতে ব্যান্ডেজ করছে ডক্টর।
ডক্টর– অনেক বড়ো দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে বেঁচে গেছেন মি.খান। আরেকটু হলেই গুলি টা আপনার বুকে লাগতো। হাতে লেগেছে বলে বেঁচে গেলন, তাও তো ব্লিডিং কম হয়নি।
আমান– আই অ্যাম অ্যাবসোলিউটলি ওকে ডক্টর। আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
অর্নিল– তা হবে কেনো?? নিজেজে কতোগুলো কে ঠুকেছে তার কি হিসেব আছে?? ওদের ঠুকতে গিয়ে নিজেই কতোবার গুলি খেয়েছে, এসব তো চুনো পুঁটি! (বিড়বিড় করে)
আমান– নীল! মুখটা বন্ধ রাখবি তুই (দাঁতে দাঁত চেপে)
অর্নিল– হে হে হে! (জোর করে হাসার চেষ্টা করে)
ডক্টর– আচ্ছা আমি তাহলে আসছি। ওহ মিসেস খান! (আমাকে দেখে)
ডক্টর আমাকে দেখে কথাগুলো বলায় আমান আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখতেই আমানের মুখে হাসি ফুটে উঠল হয়তো কিছুক্ষণ আগে ফোনের কথাগুলো শুনে কিন্তু আমি যে হাসতে পারলাম না, হ্যাঁ এটা ঠিক আমি ভীষণ খুশি আমানকে খুশি দেখে, আমানকে ঠিক দেখে। কিন্তু আমিতো জানি আমানের এই অবস্থা কার জন্য। নীলাদ্রির জন্য! নীলাদ্রি সব জেনে গেছে। আমি আর থাকতে পারব না আমানের কাছে এতে আমানের লাইফ রিস্ক আরো বাড়বে। আমাকে দূরে সরে যেতেই হবে আমানের কাছ থেকে। কেন? কেন আমি বলতে গেলাম যে আমি আমাকে ভালোবাসি? এখন আমি কি করব কি করে দূরে সরাবো আমানকে নিজের কাছ থেকে??
আমান– মীরু!
আমান আমাকে ডাকতেই আমার মাথা থেকে যেন সব কথা বেরিয়ে গেল, আমি সবকিছু ভুলে ছুটে আমনের কাছে চলে গেলাম, গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। পাশে যে অর্নিল সুমি এরা দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার তা খেয়ালই নেই। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। ডক্টর এর কথা মনে পড়ে আরো বেশি ভয় লাগছে আরেকটুখানি জন্য আমানের জীবন যেতে পারত যদি না গুলিটা হাতে লাগতো কিন্তু ওনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?
আমান– মীরু আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি। আই অ্যাম ফাইন। (আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে)
মীরু– আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন গুলি তো হাতে লেগেছে?? (ওনার বুক থেকে মাথা তুলে)
আমান– আপনি বলার তো কথা ছিল না?? (আমার কানের কাছে ফিসফিস করে)
মীরা– বলো না কি করে মাথায় চোট লাগল??
অর্নিল– আরে ওয়াও সুইটি! আপনি থেকে তুমি। কবে হলো?? হম?? হম??
আমান– তোর জেনে কাম নেই তুই চুপ থাক।
অর্নিল– হুহ!
আমান– অ্যাকচুয়লী মীরু! তোমার সাথে যখন আমি ফোনে কথা বলছিলাম তখন আমাকে পিছন থেকে কেউ একজন ডাকে আর আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে যাই তখনই আমার হাতে এসে লাগে গুলি টা। আমি যদি পিছন ফিরে কিছুটা এগিয়ে না আসতাম তাহলে গুলিটা বুক এই লাগতো যে এটা করেছে সে আমার সামনে ছিলো, আমি পিছন ফিরে কিছুটা সরে যাওয়ায় গুলিটা হাতে লেগেছে আর বুক এই যে লাগবে তেমন কোন কথা ছিলনা। গুলিটা আমার কাঁধেও লাগতে পারতো আর যে আমাকে গুলিটা করেছে সে আমাকে মারতে চাই নি। আমাকে মারতে চাইলে আমার হেড বরাবর শুট করতো আমায় যাতে আমার স্পট ডেড হতো। ও জাস্ট আমাকে আঘাত করতে চেয়েছিল, দেট সেট।
মীরা– আমার জন্য হয়েছে। সব কিছু আমার জন্য হয়েছে।
ইসমি– মীরা তুই এসব কি বলছিস??
মীরা– আমি ঠিকই বলছি সুমি। আমাকে যেতে হবে।
ইসমি– মীরা শোন আমার কথাটা।
আমি সুমির আর কোনো কথা না শুনে ওখান থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলাম।
আমান– মীরা এসব কি বলল ইসমি?? ওর জন্য হয়েছে মানে??
অর্নিল– ইসমি চুপ করে থেকো না। ভাবি এরকম কেন বললো যে ওর জন্যে সব হয়েছে?? আর কোথায় যেতে হবে??
ইসমি– আমি জানিনা।
ইসমি কথাটা বলে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে আর মীরা যেদিকে গেছে সেদিকে হাঁটতে লাগলো।
আমান– মীরুর জন্য কি হয়েছে?? কি বলছিলো ও??
অর্নিল– আমিও তো কিছু বুঝতে পারিনি ভাই।
আমান– আচ্ছা মীরু কোথায় গেল?? আমাকে খুঁজতে যেতে হবে। আমি এখনই বেরোচ্ছি।
অর্নিল– ভাই এসব কি বলছিস তুই?? তুই রেস্ট নে। আমি যাচ্ছি। আর ইসমি ও তো বেরিয়ে গেলো। আমি দুজনকে একসাথে খুঁজে নিয়ে আসবো।
আমান– তুই খুঁজে ওদের বাসায় নিয়ে আয়। আমি চাইনা মীরা এক মুহূর্ত বাসার বাইরে থাকুক। আমি বাসার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছি সুমন যাবে আমার সাথে। ডক্টর আমাকে আজকেই ডিসচার্জ দিয়ে দেবে তেমন কিছু হয়নি।
অর্নিল– আচ্ছা ভাই আমি যাচ্ছি, আর ভাবি তো বাসাতেও যেতে পারে??
আমান– হমম সেটা হলেই ভালো।
ইসমি– (মনে মনে– মীরা এসব কি বললো জিজু আর অর্নিল এর সামনে?? ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?? কোথায় যাওয়ার কথা বললো মীরা?? বাই এনি চান্স ও নীলাদ্রির কাছে যাবে বলল না তো?? সর্বনাশ! কিন্তু নীলাদ্রি কোথায় থাকে এটা তো মীরা জানে না। তাহলে কি ফুপির বাসায় যাবে?? কিন্তু ফুপি কি বাসায় আছে?? আমার মনে হয় ফুপিই নীলাদ্রি কে সবটা জানিয়েছে। নীতা জেলে এটা বোধহয় মেনে নিতে পারেনি তাই ফুপি নীলাদ্রি কে সবটা জানিয়েছে। নীলাদ্রি তো শুনেছি দেশে ছিল না। ফুপির কথায় ফিরে এসেছে হয়তো আর এসেই আমান জিজু কে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।)
____ইসমিইইইই!!
ইসমি– অর্নিল! অর্নিল এখানে কি করছে??
অর্নিল– কখন থেকে ডাকছি তোমাকে আর তুমি এখানে??
ইসমি– আমি যেখানেই যাই তাতে তোমার কি হ্যাঁ?? সব সময় কুকুরের মতো আমার পিছন পিছন একদম ঘুরবে না অর্নিল। আমার এগুলো জাস্ট সহ্য হয় না। প্লিজ লিভ মি অ্যালোন আমার ভালো লাগছে না। যাও এখান থেকে।
অর্নিল– তুমি আমার সাথে চলো।
ইসমি– কেনো?? কেনো যাবো আমি তোমার সাথে??
অর্নিল– জায়গা টা ভালো না তাই। আশেপাশে একবার তাকিয়ে দেখেছো?? কেউ আছে?? এভাবে একটা নির্জন রাস্তায় একা একটা মেয়ের থাকা সেফ নয়।
ইসমি– তোমার এই অভিনয় তুমি তোমার কাছেই রাখো অর্নিল। আমাকে প্লিজ দেখাতে এসো না। ওহ! তো আবার তোমার নাটক শুরু হয়ে গেছে?? এই ছেলেগুলো কে ভাড়া করে এনেছ আবার আমার মন জিততে?? গ্রেট!
ইসমির কথা শুনে অর্নিল পিছন ফিরে দেখলো কতোগুলো ছেলে হাতে হকি স্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কাওর কাওর হাতে ধারালো চাকু। অর্নিল কিছু একটা ভেবে ইসমি কে বললো।
অর্নিল– তুমি যাও এখান থেকে সুমি।
ইসমি– হ্যাঁ অবশ্যই। তোমার এই মিথ্যে নাটক দেখার সময় আমার নেই। আর যদি সত্যিও হয় তাতেও আমার যায় আসে না। তুমি বাঁচলে কি মরলে আই ডোন্ট কেয়ার। ড্রামাবাজ একটা।
ইসমি কথাগুলো বলে অর্নিলের কাছ থেকে পিছন ফিরে চলে যেতে লাগলো, অর্নিল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইসমির যাওয়ার পথে। ইসমির অনেকটা দূর যেতেই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন হকি স্টিক দিয়ে অর্নিলের পিঠে মারলো। তবুও অর্নিল কোনো সাড়া দিলো না জাস্ট একটু ঝুঁকে গেলো। এরপর এক এক করে ছেলেগুলো মারতে শুরু করলো কিন্তু অর্নিল কোনো প্রতিবাদ করলো না। জানো বাঁচার ইচ্ছেটাই মরে গেছে ইসমির কথাগুলো শুনে।
ইসমি– কি পেয়েছে টা কি নিজেকে?? যখন যেভাবে খুশি আমার মন নিয়ে খেলবে?? একবার তো এসে এটা বললো না যে আমাকে ভালোবাসে, নিয়ে এলো ঐ নিজের বন্ধুদের। আবার অভিন…এক মিনিট। ওরা তো অনেকজন ছিলো আজ! আর এদের কে তো কখনো দেখিনি অর্নিলের সাথে। এরা তো অর্নিলের বন্ধু না। একবার নিলয় কে ফোন করি।
নিলয়– হ্যালো ইসমি??
ইসমি– নিলয় আজকে তোমরা আবার কি ড্রামা শুরু করেছো বলবে??
নিলয়– মানে কি বলছো এসব??
ইসমি– না বোঝার মতো কি কিছু বলেছি?? আজকে তোমাদের বন্ধু অর্নিল আবারও মার খাওয়ার নাটক করছে আমাকে মানানোর জন্য। তা কতো টাকা দিয়েছো ঐ ছেলেগুলো কে অভিনয় করার জন্য??
নিলয়– এসব তুমি কি বলছো ইসমি?? তোমরা কোথায় আছো?? অর্নিল কোনো ড্রামা করছে না ইসমি ওকে বাঁচাতে হবে। আমি কিচ্ছু জানি না এ বিষয়ে।
ইসমি– ম..মা..মানে ও..ওরা সত্যি অর্নিল ক..কে।
নিলয়– শিট! ওর শত্রুর অভাব নেই ইসমি। ওকে জানে মেরে ফেলতে দু-বার ভাববে না।
নিলয়ের কথা শুনে ফোন রেখে ইসমি পিছন দিকে ছুটল। যেই জায়গায় অর্নিল আর ওকে ছেলেগুলো ধরে ছিলো সেই জায়গায় এসে ইসমি স্তব্ধ হয়ে গেলো। অর্নিল রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে আছে, কপালের এক পাশ দিয়ে রক্ত ঝরছে। তারপরেও ছেলেগুলো পিছন থেকে মারছে কিন্তু অর্নিল প্রতিবাদ করছে না। এসব দেখে ইসমির নিলয়ের শেষ কথাটা মনে পরে গেলো ” ওকে জানে মেরে ফেলতে দু-বার ভাববে না। ”
ইসমি– অর্নিলললললল!!
____আরে এই তো মেয়েটা ফিরে এসেছে নিজের থেকে।
____যাক! আমাদের কে আর এক্সট্রা করে খুঁজতে যেতে হবে না দেখছি।
____এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারলাম।
____বস যা খুশি হবে না। চল মেয়েটাকে ধর এবার।
ছেলেটার কথা শেষ হতে না হতেই ছেলেটার মাথায় কেউ পিছন থেকে স্টিক দিয়ে আঘাত করলো। ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে শুয়ে পরতেই বাকিরা দেখলো অর্নিল স্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই এক কদম পিছিয়ে গেলো ঢোঁক গিলে, ওরা সবাই জানে অর্নিলের ক্ষমতা। এতক্ষণ কেনো কিছু বলছিল না অর্নিল এটাই ওদের মাথায় আসছিল না। এখন অর্নিল কে এভাবে দেখে ওদের আত্মা কেঁপে উঠছে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে অর্নিল কে আবারও আঘাত করতে গেলে, অর্নিল বেধরম মারতে শুরু করলো। সবার শেষে অর্নিল চিৎকার করে বললো।
অর্নিল– আমাকে মারছিলিস কিছু বলছিলাম না তা বলে যে আমার কলিজার দিকে হাত বাড়ালেও কিছু বলবো না কি করে ভাবলি?? হাটটটট!! (ছেলেগুলোর গায়ের উপির স্টিক টা ফেলে)
ছেলেগুলো ব্যাথায় কাতরাচ্ছে, একটুকুও সুযোগ পায়নি অর্নিল কে মারার ওরা। ইসমির গতকাল রাতের কথা মনে পরে যাচ্ছে, যে ভাবে আমান ছেলেগুলো কে পিটিয়ে ছিলো ঠিক সেভাবেই অর্নিল মারলো। দুই ভাই যে এতো টা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে তা ভাবার বাইরে। আমানের টা মানা গেলেও অর্নিলের মতো ফাজিল ছেলে যে এতটা ভয়ংকর তা ইসমির ভাবার বাইরে। ইসমি তো জানো মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।
অর্নিল– কেনো এসেছো এখানে?? কি হলো কেন এসেছো এখানে?? চলে যেতে বলেছিলাম নাআআআআ?? (চিৎকার করে)
ইসমি একটু কেঁপে উঠলো অর্নিলের চিৎকার শুনে, অর্নিলের দিকে তাকাতেই দেখলো কপাল বেয়ে রক্ত পরছে, ইসমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
অর্নিল– চলেই তো গেছিলে আবার ব্যাক করলে কেনো?? দেখতে এসেছিলে আমি অভিনয় করছি কি না?? নাকি এটা দেখতে এসেছিলে যে আমি সত্যি মরে গেছ….
অর্নিলের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইসমি অর্নিল কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
ইসমি– আমি জানতাম না অর্নিল এটা অভিনয় না। আমি এখান থেকে সরে গিয়ে নিলয় কে ফোন করাতে সবটা জানালো আমায় ও। তুমি তো জানতে ছেলেগুলো সত্যি তোমাকে মারতে এসেছিল তাহলে তুমি কেনো প্রতিবাদ করলে না?? (অর্নিলের দিকে তাকিয়ে)
অর্নিল– তুমিই তো বলে গেলে আমি বাঁচলাম নাকি মরলাম তাতে তোমার যায় আসে না। তোমার এই কথাটা শুনে আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে গেছে এখন।
ইসমির গতরাতে আমানের কথা মনে পরে গেলো। সত্যি অর্নিল নিজেকে শেষ করে দিতে দু-বার ভাবলো না। আজ যদি ইসমি না আসত আর ছেলেগুলো ওকে নিয়ে কথা না বলতো তাহলে তো অর্নিল পরে পরে মার খেতে খেতে মরেই যেতো। এটা ভাবতেই ইসমির গায়ে কাঁটা দিতে লাগলো, অর্নিল পিছন ফিরে চলে যেতে নিলেই ইসমি পিছন থেকে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
ইসমি– আই অ্যাম স্যরি অর্নিল। আমি আর কোনদিন তোমায় কোনো খারাপ কথা বলবো না। আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি নিজের কোনো ক্ষতি করো না। তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না, তোমার যা ইচ্ছে শাস্তি আমায় দাও আমি মেনে নেবো বাট প্লিজ নিজের কোনো ক্ষতি করো না।
অর্নিল– যা শাস্তি দেবো মেনে নেবে?? (ইসমির সামনে ফিরে)
ইসমি– হ্যাঁ।
অর্নিল– সারা জীবন আমাকে সহ্য করতে হবে। সারা জীবন আমার ফাজলামি সহ্য করতে হবে। এটাই তোমার পানিশমেন্ট রাজি থাকলে ক্ষমা করতে পারি আর না হলে…
ইসমি– রাজি।
অর্নিল– আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ আ লট।
ইসমি– আই লাভ ইউ ট। অর্নিল তোমার কপাল থেকে তো রক্ত বেরোচ্ছে ওয়েট।
ইসমি অর্নিলের পকেট থেকে রুমাল বার করে আর নিজের রুমাল নিয়ে দুটো জোড়া করে অনিলের মাথায় বেঁধে দিল গোল করে আর অর্নিল বলল।
অর্নিল– বাহ! কি বুদ্ধি। সিনেমাতে নায়িকা নিজের রুমাল দিয়ে নায়কের মাথায় বেধে দেয় আর তুমি তো আমার রুমাল দিয়ে আমার মাথা বেঁধে দিলে গ্রেট!
ইসমি– হুহ! আমারও রুমাল আছে হ্যাঁ?? আর তোমার যদি মাথাটা এত বড় হয় তাতে আমার কি দোষ আমার রুমালটা অনেক ছোট তাই তোমার মাথায় এটা ধরত না হাফ হয়ে আটকে যেত তাই তোমার রুমালটা লেগেছে, গম্বুজ মাথা একটা।
অর্নিল– কি আমার মাথাটা গম্বুজ??
ইসমি– আজ্ঞে হ্যাঁ।
অর্নিল আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোনে ফোন এল ও ফোন বার করে দেখলো আমান ফোন করেছে সঙ্গে সঙ্গে ওর মনে পড়ল মীরার কথা ও ফোনটা রিসিভ করেই মীরার কথা জিজ্ঞেস করলো আমান কে।
অর্নিল– ভাই ভাবি বাসায় গেছে রাইট??
আমান– নাহ! মীরু বাসায় নেই।
অর্নিল– হোয়াট?? ও তো ইসমির সাথেও নেই।
আমান– ওকে খুঁজতে হবে নীল। এট এনি কস্ট ওকে খুঁজে বার করতে।
অর্নিল– ওকে ভাই।
অর্নিল ফোন রেখে ইসমির দিকে তাকিয়ে বললো।
অর্নিল– সুমি! ভাবি বাসায় নেই, আমাদের যেতে হবে।
ইসমি– আমি যাবো না তোমার সাথে। তুমি যাও জিজুর কাছে।
অর্নিল– মানে?? তোমাকে আমি কোথাও ছাড়বো না একা।
ইসমি– নীল! চিন্তা করো না। আমি যেখানে যাচ্ছি হয়তো সেখানে খোঁজ পাওয়াও যেতে পারে। মীরা ফুপির বাসায় যায়নি কারণ সেখানে ফুপি নেই।
অর্নিল– (মনে মনে– ফুপি থাকবে কি করে?? সে তো আমাদের কাছে বন্দী) তাহলে কোথায় যেতে পারে??
ইসমি– তুমি জিজুর কাছে যাও, জিজু কে নিয়ে আসো। আমি নিজের ফোনের লোকেশন অন রাখছি, সেখান থেকে ট্রাক করে আমায় খুঁজে নিতে পারবে।
অর্নিল– কিন্তু…
ইসমি– তুমি যেভাবে এদের পিটিয়েছ তাতে আর কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। যাও তাড়াতাড়ি।
অর্নিল– টেক কেয়ার ইউর সেল্ফ। (কপালে চুমু দিয়ে)
ইসমি– ইউ টু। (গালে হাত রেখে)
অর্নিল আর ইসমি ওখান থেকে আলাদা হয়ে বেরিয়ে গেলো।
মীরা– উফফ মাথাটা এতো ঝিমঝিম করছে কেনো আমার?? কোথায় আমি??
____তুমি আমার কাছে মীরা।
কথাটা শুনতেই আমি সামনের দিকে তাকালাম, আর ব্যক্তিটিকে দেখে অস্ফুট স্বরে বললাম।
মীরা– নীলাদ্রি!!??
নীলাদ্রি– ওয়াও! তোমার মেমরী তো দারুন স্ট্রং! একবার দেখেই মনে রেখেছো দেখছি??
মীরা– আপনি আমাকে এখানে আনার জন্য আমানের ক্ষতি কেনো করলেন নীলাদ্রি??
নীলাদ্রি– আমানের ক্ষতি! সেটা তো আমিও জানতে চাই কে করলো?? (বিড়বিড় করে)
মীরা– বলুন! কেন এমন করলেন আপনি?? গত এক বছর ধরে এতোগুলো ছেলে কে কেনো নৃশংস ভাবে মেরেছেন?? আর আজ আমান কেই…
নীলাদ্রি– ওয়েট মীরা ওয়েট! অনেক কিছু জানা এখনো বাকি তোমার। যা জানলে হয়তো তোমার পায়ের নীচ থেকে মাটিটাই সরে যাবে। তাই তো তোমাকে যাতে পরে না যাও চেয়ারে বসিয়ে রেখেছি।