ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 25

মীরা– আমানননন! আমানননন! (চিৎকার করে) আমান আপনি কোথায়?? প্লিজ সাড়া দিন! আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কখনো এমন ভাবে বলবো না আপনাকে আমানননন!
মাঝরাতে রাস্তায় চিৎকার করে আমান কে ডেকে চলেছি কিন্তু কিছুতেই কোনো সাড়া পাচ্ছি না। আমার মন বলছে উনি এখানেই আছে। কিন্তু কোথায়??
মীরা– (মনে মনে– ইশশ কেনো যে খামোখা রাগাতে গেলাম এই তুফান খান কে আল্লাহ জানে। আজ যদি ওনাকে না রাগাতাম তাহলে তো আর এভাবে উনি মাঝরাতে বেরিয়ে যেতেন না বাসা থেকে। ওনার সাথে সাথে তো আমিও বের হলাম, তাহলে এখন দেখতে পাচ্ছি না কেনো?? নিমিষে কোথায় উধাও হয়ে গেলেন উনি??)
____ও সুন্দরী! এতো রাতে একা একা কোথায় যাও??
____আহাহা কাস্টমার খুঁজছো নাকি??
____তাহলে আর খুঁজতে হবে না, আমরা আছি তো!!
____আমরা চার জনে তোমাকে অনেক খুশি করবো টাকা দিয়েও আর … হা হা হা হা!!
হঠাৎই কিছু কটূ কথা কানে এলো, আমি পিছন ফিরে দেখলাম চারটে ছেলে মাতাল অবস্থায় আমাকে দেখে বিদঘুটে হাসি দিচ্ছে আর এসব নোংরা কথা বলছে। আমি এসব দেখে ওখান থেকে সঙ্গে সঙ্গে পা চালিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম, কিন্তু এ কি! ওরা যে আমার পিছনেই আসছে! আমার ভীষণ ভয় লাগছে, না জানি আমান কোথায়?? আল্লাহ! বাঁচাও। আমি আল্লাহর নাম শরণ করতে করতে এগচ্ছিলাম তখনই ওদের মধ্যে একজন আমার পথ আটকে দিলো, আমি পিছিয়ে গিয়ে পালাতে যেতেই দেখলাম ওরা গোল করে আমায় ঘিরে ফেলেছে।
মীরা– দ..দে..দেখুন আমাকে য..যেতে দিন।
____এতো সহজে??
____কোনো প্রশ্নই আসে না??
____তোমাকে ছাড়লে আজ রাতে মজা করবো কাকে নিয়ে?? (আমার হাতের কবজি ধরে)
____নিজে রাজি হয়ে যাও, এতে তোমারই ভালো। নাহলে….(আমার দিকে এগোতে এগোতে)
মীরা– আমানননননননন!! (জোরে চিৎকার করে)
ইসমি– অর্নিলললল!!(হাঁপাতে হাঁপাতে)
অর্নিল– ইসমি! তুমি এতো রাতে আমার ঘরে?? আর এভাবে হাঁপাচ্ছো কেনো??
ইসমি– জিজু আর মীরা ওদের ঘরে নেই।
অর্নিল– ওহ এই ব্যাপার! (হেসে) দেখো টাইম স্পেন্ড করছে নিজেদের মতো।
ইসমি– নাহ অর্নিল! আমি দেখেছি জিজু কে রেগে বেরিয়ে যেতে, আর তারপরে মীরাও আতঙ্কিত হয়ে জিজুর পিছু পিছু বেরিয়ে গেছে।
অর্নিল– হোয়াটটটটট!! কতক্ষণ হলো তাও??
ইসমি– বেশ অনেক্ষন। ওরা ফিরছে না দেখে তোমার কাছে এলাম। একবার চলো না এগিয়ে গিয়ে দেখি ওরা কোথায়??
অর্নিল– ইয়াহ! লেটস গো।
আমি ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আমান। ছেলেগুলো আমার কাছে আসতেই আমি চিৎকার দিয়ে চোখ বুজে ফেলি আর কিছুক্ষণ পর অনুভব করি আমার হাত ছাড়া পেয়েছে, সঙ্গে একটা ছেলের চিৎকার। চোখ খুলতেই দেখি আমার সামনে আমান দাঁড়িয়ে আছেন আর ছেলেটা হাত ধরে বসে আছে রাস্তায়।
আমান– কে আসতে বলেছিল আমার পিছু পিছু?? (দাঁতে দাঁত চেপে)
মীরা– আপনার জন্য চিন্তা হচ্ছিল তা…
____এই তুই কে রে??
____কোথা থেকে উদয় হলি তুই??
____এই মেয়েটা টা শুধু আমাদের, আজকে রাতের জন্য। তুই অন্যদিন আসিস।
____দাঁড়া! আমার গায়ে হাত তোলার মজাটা আগে দেখাই। (উঠে দাঁড়িয়ে)
মীরা– আমান চলুন এখান থেকে প্লিজ। আ..আমার খুব ভয় করছে। (আমানের কাঁধে হাত রেখে)
আমান আমার হাতের উপর হাত রেখে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন তারপর হাতটা সরিয়ে দিয়ে ওদের দিকে তাকালেন, আর বললেন।
আমান– মীরু তুমি পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়াও।
আমান নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললেন। আমি চুপচাপ ওনার কথামতো পিছিয়ে দাঁড়ালাম, ওনার কথা শোনা ছাড়া উপায়ও নেই, হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দুরে চলে এসেছি আমি। এই অন্ধকারে রাস্তা চিনে বাসায় ফিরতে পারবো বলে মনে হয় না। আমি পিছিয়ে দাঁড়াতেই ঐ ছেলেটা আমানের দিকে তেড়ে এলো মারার জন্য কিন্তু পারলো না কারণ তার আগেই আমান ছেলেটার পেটে ঘুসি মেরে দিয়েছেন। এক এক করে সব কটা ছেলেকে আমান বেধরম মারছেন, আমি চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে আছি। আমার এসব সহ্য হয় না। এসব দেখলেই বার বার অতীতের কথা মনে পরে, নীলাদ্রির কথা মনে পরে।
আমান– সাহস হলো কি করে তোদের আমার কলিজার দিকে বাজে নজর দেওয়ার?? আজ তোদের এমন হাল করবো যে কোনো মেয়ের দিকে কুনজর দিতে একশো বার ভাববি।
আমানের চিৎকার শুনে আমি তাকালাম, দেখলাম আমান একটা লোহার রড নিয়ে খুব বাজে ভাবে মারছেন ছেলেগুলোকে, ছেলেগুলো রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পরে কাতরাচ্ছে কিন্তু সেই আওয়াজ আমানের কানে যাচ্ছে না। আমান একটা হিংস্র প্রাণী হয়ে উঠেছেন, চোখে মুখে শুধু হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে, মনে হচ্ছে খুনই করে ফেলবেন ছেলেগুলো কে।
এসব দেখে, বিশেষ করে রক্ত দেখে আমার মাথাটা কেমন জানো ঝিমঝিম করতে লাগলো, পুরোনো কথা মনে পরতে লাগলো, যখন আমাকে কোনো ছেলে টিজ করতো তার দশাও এমন হতো পরেরদিন দেখতে পেতাম। আমি পাশে ঢলে পরতেই কেউ একজন ধরে নিলো, তাকিয়ে দেখলাম “সুমি!”।
অর্নিল– ভাই! ভাই প্লিজ ছেড়ে দাও ভাই। ভাইইইই!! (আমান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে)
আমান– নীল ছেড়ে দে আমায়। আজ শেষ করে ফেলবো এগুলো কে, পুতে দেবো আমি। আমার মীরার দিকে কুনজর দিয়েছে, চোখ তুলে নেবো আমি। আমার মীরার নামে বাজে কথা বলেছে জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো ওদের। ছাড় আমাকেএএএএ!!
অর্নিল– ভাই ভাবি দাঁড়িয়ে আছে, ভয় পাচ্ছে ভাবি তোকে। ভুলে গেলি তুই কি প্রমিস করেছিলি?? (আস্তে করে)
অর্নিল কিছু একটা বললো সেই কথা শুনে আমান থেমে গেলেন। হাত থেকে লোহার রড টা পরে গেলো, নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে পিছন ফিরে আমার দিকে তাকালেন। আমার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে দাঁড়াতেই আমি জ্ঞান হারালাম।
আমান সামনে এসে দাঁড়াতেই মীরা আমানের বুকে ঢলে পরলো, আর আমান ঘাবড়ে গিয়ে বললো।
আমান– মীরু!! কি হয়েছে তোমার?? এই দেখো আমাকে?? চোখ খোলো জান!!
ইসমি– জিজু মীরার ব্লাডে ফোবিয়া আছে। ও অনেক আগে থেকেই এসব মারামারি রক্তারক্তি কান্ড দেখতে পারে না, সেন্সলেস হয়ে যায়। ও কে বাসায় নিয়ে চলো।
আমান অসহায় দৃষ্টি নিয়ে একবার অর্নিলের দিকে তাকালো, অর্নিল রেগে মুখ ফিরিয়ে নিলো আমানের থেকে। আমানের জানো আরো বেশি অসহায় মনে হলো নিজেকে অর্নিলের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায়। আমান আর কিছু না বলে মীরাকে কোলে তুলে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
#ফ্লাশব্যাক 🌸🌸
আমান আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসে বেডে বসিয়ে দিলেন, আর নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেছে, আজ সকালে ওখান থেকে ফিরে এসে একটুও রেস্ট নেওয়া হয়নি। আমানের ও কাজে যাওয়া হলো না। ১ ঘন্টা পর আমান ওয়াশরুম থেকে বের হলেন ততক্ষণে আমি নীচে গিয়ে খাবার নিয়ে এসেছি। আমান দেখলাম বের হয়ে বেডে গা এলিয়ে দিলেন।
মীরা– খাবেন না আপনি??
আমান– ক্ষুদা নেই। তুমি খেয়ে নাও জান।
মীরা– আপনি না খেলে আমিও খাবো না, হুহ!
আমান– ইচ্ছে করছে না নিজের হাতে খেতে।
মীরা– হুহ! বললেই হয় খাইয়ে দিতে হবে। নিন আ করুন।
আমি খাইয়ে দিতে লাগলাম আর আমান খেতে লাগলেন, সেখানেও ওনার দুষ্টুমি করা চাই। খাওয়ার সময় কতবার যে আমার আঙুলে কামড় দিয়েছেন আর ধরে রেখেছিলেন বলার বাইরে। বদমাশ একটা! খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা দুজনেই শুয়ে পরলাম, আমি শুতেই উনি আমাকে টেনে নিজের বুকের উপর তুলে নিলেন। আমিও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরলাম।
আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রাত ১০ টা বাজে। হায় আল্লাহ! এতক্ষণ কি করে ঘুমালাম আমি?? বিকেল ৪টেই ঘুমিয়ে রাত ১০টায় উঠলাম?? এমনিতেই আমি ঘুমকাতুরে তার মধ্যে আজকের এতো ধকল। পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমান নেই, তখনই চোখ গেলো সোফার দিকে। আমান সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন। করবে নাই বা কেনো?? আজ তো অফিসে যাওয়া হয়নি। আমি কিছু না বলে একটা খাতা পেন নিয়ে ড্র করতে লাগলাম।
আমান– মীরু! খাবে না??
মীরা– কটা বাজে??
আমান– বারোটা! সেই কখন থেকে ড্র করছো।
মীরা– হমম। আসলে একটা কপল ড্রেস ড্র করছিলাম।
আমান– কম্পলীট??
মীরা– হ্যাঁ, একটু বাকি আছে।
আমান– চলো খাবে চলো। আমি খাবার নিয়ে এসেছি।
মীরা– উমম, খাইয়ে দেবেন??
আমান– ওহ আচ্ছা তো হিসেব বরাবর করছো তুমি??
মীরা– হিহিহি।
আমান আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো আর আমিও খেতে খেতে ড্র করতে লাগলাম। খাওয়ার পর আমান আমার পাশে এসে বসতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম।
মীরা– আকাশি আপুর সাথে আপনার কীভাবে পরিচয়??
আমান– কোম্পানি তে। ও আমার কোম্পানি তে এসেছিল জবের জন্য। আমিই ওর জব ফাইনাল করি, তখন আমি সদ্য কোম্পানি জয়েন করেছিলাম। ও আমার পি.এ. ছিল। সেখান থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ওর আর আমার এজ ডিফারেন্স খুব কম বলতে গেলে। অর্নিলের বয়সি।
মীরা– তার মানে এখন আকাশি আপুর বয়স ২৩?? কারণ আমার তো ২২।
আমান– হমম। ঘটনা টা যখন হয়েছিল তখন আমার ২৩ বছর ছিলো, বললামই তো সদ্য কোম্পানি জয়েন করেছি আর ওর ২০। সে সময় আমার একটা বন্ধুর ভীষণ প্রয়োজন ছিলো, আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড কে হারিয়ে আমি আকাশি কে পেয়েছিলাম। আর আকাশি তো অনাথ ছিলো, কলেজের সঙ্গে সঙ্গে জব করতো আর আমি ছাড় ও দিতাম। বাট কখন যে ওকে আমার ভালোলেগে গেছিলো আই ডোন্ট নো। ও সত্যি খুব ভালো একটা মেয়ে, ও আমার ক্ষতির ভয়ে ওখানে পরে ছিলো এটা ভেবেও খারাপ লাগছে আমার। আম্মু ঠিকই বলেছে ওর প্রতি আমার ভালোলাগাটা সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল ওর চলে যাওয়ার পরে। কষ্ট পেয়েছিলাম এই ভেবে যে আবার একটা বন্ধু কে হারালাম। আর এটাও বুঝেছিলাম যে আকাশি কে আমি ভালোবাসিনি, তাই তো ওকে ভুলে থাকতে পেরেছি।
মীরা– আমান! আপনার সাথে আকাশি আপুকেই মানায়। আকাশি আপু যেমন দেখতে ভালো তেমন আপনাকে বুঝতেও সক্ষম। আপনার কোনদিন কষ্ট হবে না আকাশি আপুকে বিয়ে করলে, কেউ কোনো কথা শোনাতে পারবে না আপনাকে। বরং আপনাদের দেখে বলবে মেইড ফর ঈচ আদার। তাই ন..ন..ন..
____তুমি তোমার ঐ আকাশি আপু কে নিয়ে থাকো এ বাসায়। আমি থাকবো নাআআআআ।
ধরাম! এতো জোরে দরজাটা বন্ধ করে আমান বেরিয়ে গেলেন।
মীরা– নিজে এতক্ষণ গুণগান করছিল আপুর সে বেলায় কোনো দোষ নেই যেই আমি একটু বললাম ওমনি দ্য গ্রেট তুফান খান থুরি আমান খানের তুফাগিরি স্টার্ট হয়ে গেলো। হুহ। কিন্তু উনি তো বারণ করেছিল এসব বলতে, আমিই বা কি একটু বেশি মজা করে ফেলেছি রাগাতে গিয়ে। হিহিহিহি রাগাতে বেশ ভালো লাগে আমার তুফান খান কে।
#ফ্লাশব্যাক_এন্ড 🌸🌸
আমান– মীরা কি আমাকে ঘৃণা করবে এরপর থেকে?? ওর আর আমার মাঝে কি আমার এই হিংস্রতাটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে?? আমি কি পাবো না ওকে কোনদিন নিজের করে??
____না পাবি না!!
আমান– নীল! তুইও এমন বলবি??
অর্নিল– কেনো বলবো না?? তোকে বারণ করেছিলাম নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে ভাবির সামনে?? বলিনি??
আমান– হমম কিন্তু সেই মুহুর্তে আমার মাথায় এতো কিছু ছিলো না। ওদের কথা শুনে আমার মাথায় আগুন জ্বলছিল।
অর্নিল– তাই তুই হিংস্র প্রাণী হয়ে উঠলি ভাবির সামনে। তুই বলেছিলি তোর এই হিংস্রতা তোর ভালোবাসার মাঝে কোনদিন আসবে না। তাহলে আজ কি হলো ভাই??
আমান– জানি না। আমার কপালে বোধহয় ভালোবাসা টা নেই। তাই জন্যই তো প্রিয় মানুষ গুলো কে বার বার হারিয়ে ফেলি।
ইসমি– জিজু!
আমান– হমম, জ্ঞান ফিরেছে মীরার??
ইসমি– নাহ! তবুও ঘরে চলো। আর কতক্ষণ এভাবে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে থাকবে??
অর্নিল– ভাই ঘরে চল।
আমান কিছু না বলে ঘরে গিয়ে মীরার মাথার পাশে বসে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো মাথায়। হয়তো জ্ঞান ফেরার পর দুরে সরিয়ে দেবে।
মীরা– আমানননন!! (ধড়ফড় করে উঠে বসে)
আমান চুপচাপ বেডে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলো আর ইসমি, অর্নিল সোফায়। তখনই মীরা ধড়ফড় করে উঠে বসে। আমান মীরার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে যায়।

আমান– মীরু! মীরু এই তো আমি।
আমি কিছু না বলে আমান কে নিজের পাশে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
অর্নিল আমান আর মীরা কে স্পেশ দেওয়ার জন্য ইসমি কে নিয়ে বেরিয়ে গেলে, আমান মীরার মুখ উঠিয়ে বলে।
আমান– কি হয়েছে মীরু?? আমি তো তোমার কাছেই আছি।
মীরা– আপনি আমার কাছেই থাকুন। কোথাও যাবেন না। (ওনার বুকে মুখ গুঁজে)
আমান– তোমার আমাকে ভয় লাগছে না?? (অবাক হয়ে)
মীরা– আপনাকে কেনো ভয় লাগবে?? আপনি তো আমাকে বাঁচালেন। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমান। কিন্তু আপনি ওভাবে কেনো ওদের মারলেন?? আমার এসবে খুব ভয় আমান। রক্ত দেখলে আমার মাথা ঘোরায়। গা গুলিয়ে ওঠে। (আমানের শার্ট খামচে ধরে)
আমান– আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি তোমার জন্য মেডিসিন নিয়ে আসি।
মীরা– হমম।
আমান উঠে মেডিসিন আনতে গেলেন, আমার কাছে এসে আমাকে মেডিসিন দিয়ে নিজে একটা ইনজেকশন বার করলেন।
মীরা– ইনজেকশন দিয়ে কি হবে আমান??
আমান– ভয় পেয়ো না এটা পেইন কমানোর। পেইন কিলার আমি ইউস করি না তাই এটা নেবো।
মীরা– আগে আমায় দিন তারপর আপনি নেবেন।
আমান– হোয়াট!! মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?? তোমাকে কেনো দেবো এটা??
মীরা– আমার আপনাকে বিশ্বাস নেই। আপনি যা খুশি করতে পারেন।
আমান– হায় আল্লাহ! আরেহ বাবা এটা সত্যি পেইন কমানোর। ইউ নো এটা যদি পুরোটা কেউ নেয় তাহলে তাকে বাঁচানো খুব কঠিন। একপ্রকার বিষ বলতে পারো। এটা অর্নিল করেছিল।
মীরা– মানে??
আমান– একবার অর্নিল একটা ভুল করেছিল আর আমি সেটাতে ওকে কিছু বলিনি জাস্ট কয়েকটা কথা বলে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। জাস্ট যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলতাম। ও কিছুতেই আমাকে মানাতে পারছিল না দেট’স হোয়াই এই ওষুধ টা পুরোপুরি ইনজেক্ট করে নিয়েছিল। অর্নিল এমনই। ও যদি কোনো ভুল করে তাহলে ক্ষমা চায়, তাকে মানানোর চেষ্টা করে কিন্তু সেটা শুধুমাত্র যাকে ও ভালোবাসে। ওর ভালোবাসার মানুষ নাহলে যতো বড়ো ভুলই করুক না কেনো ওকে দিয়ে কেউ স্যরি বলাতে পারবে না যদি না আমি বলি তো। অর্নিলের ভালোবাসার মানুষ যদি অর্নিল কে অনেক চেষ্টার পরেও ক্ষমা না করে দেন ও নিজেকে শেষ করে দেবার ডিসিশন নিতে দু-মিনিট ভাবে না। জানি না ওকে বাঁচাতে পারবো কি না, ইসমি তো ওকে এখনও আভয়ড করছে।
মীরা– এসব আপনি কি বলছেন??
আমান– সত্যি বলছি।
মীরা– দিন তো ইনজেকশন টা আমায়। হবে না এসব নিতে আপনাকে।
আমান– হমম নাও।
মীরা– দিয়ে দিলেন??
আমান– হ্যাঁ তুমিই তো চাইলে।
মীরা– এটা সত্যি পেইন কমানোর?? আর বেশি নিলে…

আমান– নাহ!
মীরা– কিইই?? এই তো বললেন কিছুক্ষণ আগে।
আমান– যা বলেছি সম্পূর্ণ সত্যি। কিন্তু এটা সেই ইনজেকশন টা নয় যেটা অর্নিল নিয়েছিল। তোমার মেডিসিন আনতে গিয়ে দেখি ইসমি দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে তাই এই ইনজেকশন টা নিয়ে ওকে কথা গুলো শোনালাম।
মীরা– ওহহ!! তাহলে এবার সুমি অর্নিল কে মেনে নেবে।
আমান– সিওর??
মীরা– ১০০%। সুমির মন এমনিতেই গলছে তার মধ্যে আপনি যেসব বললেন তাতে অর্নিল আর একবার ওর কাছে ক্ষমা চাইলেই ও ক্ষমা করে দেবে।
আমান– যাক আমার ভাইটার ও তাহলে একটা হিল্লে হবে।
মীরা– হিহিহিহি। হ্যাঁ মিস্টার তুফান খান।
আমান– হমম, এই এক মিনিট। কি বললে তুমি?? 🤨
মীরা– হিহিহি তুফান খান। হা হা হা।
আমান– আমার এত সুন্দর নামের বারোটা বাজায় দিসো 😠😡
মীরা– বেশ করসি। আমার বর, আমার বরের নাম। যা ইচ্ছে তাই করবো আপনার কি?? 😁😁
আমান– (মনে মনে– যাক বর মেনেছো তাহলে।) বর টা কে তোমার?? 😒😒
মীরা– কি জানি?? 🤔🤷🏻‍♀️
আমান– আচ্ছা তাই নাকি?? তোমার নামের ও বারোটা বাজাব আমি ওয়েট।
মীরা– হিহিহিহি আমান খান তুফান। ওয়াও সাউন্ড গুড 😂😂
আমান– 😒 আমার নাম 😣
সকালে ……………………..
আকাশি– হ্যাঁ আমান আমাকে থাকতে দিয়েছে, কিন্তু সেটা বেশি দিনের জন্য নয়। বলেছে নিজে আমার জন্য সেফ জব আর সেফ জায়গা খুঁজে দেবে কিছুদিনের মধ্যে।
——
আকাশি– ওকেই।
____তুমি এখানে কেনো এসেছ আকাশি?? কি উদ্দেশ্য তোমার??
আমানের কথা কানে আসতেই আকাশি ফোন কেটে পিছনে ঘুরলো।
আকাশি– কি বলছো এসব??
আমান– ভুল কিছু বলেছি বলে তো মনে হচ্ছে না। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো আকাশি। আমার মীরার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা মাথাতেও আনবে না তুমি। আমাদের মাঝেও আসার চেষ্টা করো না। পরিণাম খুব খারাপ হবে।
আমান কথা গুলো বলেই আকাশির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আকাশি– যাক! কিছু শোনেনি তাহলে। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) তুমি ঠিকই ধরেছো আমান। আমি এখানে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। আর এইবার আমি আমার উদ্দেশ্য পুরণ করেই যাবো। আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ এবার আমাকে করতেই হবে এট এনি কস্ট।
আমান কে দেখলাম দরজার দিকে যাচ্ছে তাই দৌঁড়ে গিয়ে ওনার সামনে দাঁড়ালাম।
মীরা– আমার আপনাকে কিছু বলার আছে আমান।
আমান– এসে শুনব মীরু। দু-দিন অফিস যাইনি। লেট হয়ে যাচ্ছে আমার বায়।
কথাগুলো বলেই উনি চলে গেলেন, একটাবারও আমার কথা শুনলেন না।
মীরা– খালি বলেন তোমার মনের কথা আমাকে কেনো বলো না। কিন্তু যখনই বলতে যাই তখনই কোনো না কোনো অজুহাত দিয়ে চুপ করিয়ে দেন। ধুর ভালো লাগে না ছাই।
আমি উপরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখলাম আকাশি আপু দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে দেখে হাসলো তাই আমিও সামান্য হেসে ঘরে চলে এলাম।
আকাশি– সব রেডি?? নাহ! ওয়েট করো। এখনো মোক্ষম চাল দেওয়া বাকি। তারপর কাজ শুরু করবে।

দুপুরে…………………………
মীরা– আমান আপনি কি ব্যস্ত??
আমান– কি ব্যাপার আজ নিজে থেকে ফোন করে আমার খবর নেওয়া হচ্ছে??
মীরা– উফ বলুন না??
আমান– হমম, একটা মিটিং এটেন্ড করবো তোমার কল রেখে। তোমার কল এলো তাই একটু ওয়েট করতে বলেছি।
মীরা– ওহহ! (মন খারাপ করে)
আমান– রাখি তাহলে??
মীরা– শুনুন!
আমান– হমম বলো।
মীরা– আজকে একটু তারাতাড়ি ফিরবেন?? আমার কথা আছে আপনার সাথে।
আমান– আচ্ছা তাই??
মীরা– হমম।
আমান– ঠিক আছে মিটিং বিকালেই শেষ হয়ে যাবে। শেষ হলেই আমি ছুটে আমার বউয়ের কাছে চলে আসবো ওকে??
মীরা– হিহিহি।
আমান– আচ্ছা আমি রাখছি। আই লাভ ইউ মীরু।
মীরা– আই লাভ ইউ টু আমান! (চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম তারাতাড়ি করে।)
কথাটা শোনার পর কোনো রেসপন্স না আসায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো। উনি ফোন টা কেটে দিলেন কথাটা না শুনেই?? আমি এতো কষ্টে বললাম কোনো লাভ হলো না??
আমান– ক..কি ব..বললে তুমি মীরু?? আ..আরে..আরেকবার বলবে??
মীরা– (উনি শুনেছেন এটা ভেবে স্বস্তি পেলাম) আই…লাভ…ইউ…টু…মিস্টার…আমান…খান। তুমি আজকে তারাতাড়ি ফিরবে তো??
আমান– তুমি আমাকে “তুমি” করে বলছো?? মীরু!! মীরু!! আই ক্যান্ট বিলিভ!! তুমি প্লিজ আরেকবার বলো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না জান। প্লিজ বলো।
মীরা– আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ সো মাচ আমান। আমি তোমাকে ভীষণ ভালো…
আমান– আহহহহহহহহহ!!
আমার কথা শেষ করার আগেই আমানের চিৎকার শুনতে পেলাম। অনেক জোরে একটা গুলির শব্দ কানে এলো।
মীরা– আমাননননননন!!!!