সে কি জানে Season 2 ! Part- 23
– “সামান্য মাথা ঘুড়ানোর জন্য হাসপাতালে আনতে হয়? আবার বলছেন কয়েকদিন থাকতে হবে। কেন?”
দীঘির প্রশ্নের প্রতিউত্তরে কি বলবে আবদ্ধ? দীঘি অসুস্থ, তার ব্রেনে টিউমার হয়েছে এটা বলবে? কিভাবে বলবে সে? তার বুকটা কেঁপে উঠছে বারংবার। দীঘিকে ওর অসুস্থতার কথা বললে ও কেমন রিয়েক্ট করবে? কাঁদবে খুব তাই না? এ কান্না যে আবদ্ধের সহ্যের বাইরে। সেও যে দীঘির সাথে সাথে কেঁদে দিবে। তার যে এখনই কান্না পাচ্ছে। এ পিচ্চি মেয়েটারই কি এমন হওয়ার ছিল? তার এমন হতে পারলো না? আর ভাবতে পারলো না আবদ্ধ৷ দীঘির দিকে একবার তাকিয়ে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে।
কেবিনের সামনের বেঞ্চে বসে আছি আমি। আবদ্ধ এসেই আমার পাশে “ধপ” করে বসে পরলো। হাঁটুতে হাত রেখে হাতের মাঝ বরাবর নিজের মুখ লুকিয়ে রাখলো সে। বোধ হয় কাঁদছে! আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবদ্ধের মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে লাগলাম। সাথে সাথে আবদ্ধ কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠল….
— “দীঘি আমকে জিজ্ঞেস করছে সামান্য মাথা ঘুড়ানোর জন্য কেন ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কেনই বা হাসপাতালে এতদিন থাকতে হবে তার। এখন কি জবাব দেবো ওকে মিরাপু? ওর অসুস্থতার কথা জানলে তো ও ভেঙ্গে পড়বে। আর ওর কষ্টতে আমি। কোন মুখে ওকে বলব ওর অসুস্থতার কথা? আমার এখনই বুক কাঁপছে আপু। ভয় লাগছে খুব!”
— “আগে নিজে শক্ত হো আবদ্ধ। পরে নাহয় ওকে বলবি। তাছাড়া এমনি হোক কিংবা অন্যভাবে হোক, ওর অসুস্থতার কথা ও তো জানবেই। তাই তুই-ই আগে বলেদিস ওকে। কিন্তু কয়েকদিন পর। তুই যদি নিজেই শক্ত না থাকিস তাহলে ওকে যখন ওর অসুস্থতার কথা বলবি তখন ওর পাশাপাশি তুইও ভেঙ্গে পরবি। এ কয়েকদিন নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত কর যেন পরবর্তিতে ও ভেঙ্গে পরলে তুই ওকে সামলাতে পারিস।”
— “এখন যে ও বারবার জিজ্ঞেস করছে। কি উত্তর দিবো ওকে?”
— “দীঘি তো খাবার-দাবার খুব কম খায়। ওকে বল যে ও না খাওয়ার জন্য ওর শরীর দূর্বল হয়ে গেছে৷ তাই বারবার মাথা ঘুরানোর আসঙ্কা আছে। এজন্য ডাক্তার ওকে হাসপাতালে থাকতে বলেছে। আর শুন, ওর সামনে নরমাল বিহেভ করবি৷ কাঁদবি না একদম।”
হাতে মাথা রাখা অবস্থায়ই মাথা ঝাঁকালো আবদ্ধ৷ তবে কান্না থামালো না। আমি আগের মতোই হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আবদ্ধের মাথায়! দূর থেকে এসব দেখছেন রেয়ান। কেন যেন নিজের পরিবারের কথা খুব মনে পড়ছে তার। ছোট বোন আর মায়ের কোলে এভাবে শুয়ে শুয়েই তো সে কত গল্প করেছে। ভাইয়ের সাথে কতই না ফাজলামি করেছে, এখন সব কিছু হারিয়ে গেছে! সেদিনগুলো এখন নেই। আছে শুধু ব্যস্ততা!
এসময় রেয়ানের ফোন বেজে ওঠে। নিজের হাসপাতালে যেতে হবে তার। ইমার্জেন্সি পেসেন্ট এসেছে৷ যেতে ইচ্ছে না করলেও যেতে হবে তার। ভাবতেই চোখ বন্ধ করে একটা বড় দম ফেললেন রেয়ান। ইশারায় আমাকে ডাকতেই একবার তার দিকে তাকালাম। আবদ্ধের কাছে কিছুক্ষন বসে থেকে রেয়ানের কাছে গেলাম। আমি যেতেই উনি বলে উঠলেন….
— “হাসপাতালে যেতে হবে আমার মরুভূমি। ইমার্জেন্সি!”
— “তো যান।”
— “যদি কিছু লাগে আমাকে ফোন করো কেমন?”
— “আচ্ছা।”
বলেই আবার চলে আসলাম আবদ্ধের কাছে। রেয়ানের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। হয়তো আশা করনি আমি এভাবে চলে যাবো। হয়তো আরও কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমিও যে নিরুপায়। সকালের ঘটনাটা ভুলি নি আমি। রাগ, ক্ষোপ, অভিমান জেঁকে বসেছে মাথায়। তবে কেন যেন মন বলছে, এসব করা ঠিক নয়। মানুষটার তো দোষ ছিল না। আবার কিছুসময় পর শরীরের এক ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলে উঠে- “দোষ রেয়ানেরই। ওর জন্যই তো জেনি আমাকে এসব বলেছে।” দুই পক্ষের দুই মতামতে খুব বাজেভাবে আটকে গেছি আমি। কি করা উচিত কিংবা উচিত নয় সেটার বোধগম্য হারিয়ে ফেলেছি!
.
নিজেকে অনেখানি শক্ত করে আবার কেবিনে ঢুকতেই দেখে মামী আর শারমিন খুব করে কান্না করছেন। যা দেখে বিরক্ত আবদ্ধ। যেটা থেকে দীঘিকে অজানা রাখতে চাইছে সে তা-ই বেশি বেশি করছেন উনারা। ততক্ষনাত আবদ্ধ রাগী কণ্ঠে বলে উঠে….
— “কি হয়েছে কি? এভাবে কাঁদছেন কেন আপনারা? কেউ কি মরে গেছে নাকি?”
আবদ্ধের এহেন কথায় চমকে উঠল তারা। আমি কেবিনের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাড়াতাড়ি করে মামী আর শারমিনকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম কেবিন থেকে। আবদ্ধ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। দীঘির পাশে চেয়ার টেনে বসে দীঘির হাত শক্ত করে ধরল সে। বলল….
— “কি যেন জিজ্ঞেস কররেছিলি তুই? কেন তোকে হাসপাতালে এতদিন রাখবো, তাই তো?”
মাথা ঝাঁকালো দীঘি। আবদ্ধ মেকি হাসলো। পরক্ষনেই মুখে কঠিন ভাব এনে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল….
— “ডাক্তার বলেছে তুই খাবার ঠিক করে খাস না দেখে তোর শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। তাই হাসপাতালে রেখেই তোকে মোটা-তাজা করবে।”
— “তার জন্য হাসপাতালে থাকতে হবে?”
— “হুম! আমিই বলেছি হাসপাতালে রাখতে। বাসায় তো তুই আমার একটা কথাও শুনিস। তাই এ ব্যবস্থা! বেশি তিড়িংবিড়িং করবি তো একদম হাতে সুই ঢুকিয়ে দেবো।”
আবদ্ধের কথায় দীঘির মুখ একটুখানি হয়ে গেল। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে উঠল…
— “আপনি খুব বাজে আবদ্ধ। খুব পঁচা!”
— “জানি আমি। তোর বলতে হবে না।”
থামলো আবদ্ধ। গলা দিয়ে কথা বের হতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। তার চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা। বার কয়েকবার লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিলো সে। দীঘির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল….
— “আচ্ছা দীঘি এ কয়েক মাসে তোর কি এভাবে মাথা ঘুরিয়েছে কখনও?”
চুপসে গেল দীঘি। এখন কি বলবে সে? যদি সত্যিটা বলে তাহলে তো আবদ্ধ তাকে আস্ত রাখবে না। কাঁচা খেয়ে ফেলবে একদম। দীঘি কিছু না বলায় ফের একই প্রশ্ন করল আবদ্ধ৷ তবে কিছুটা উঁচু গলায়। দীঘি কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল….
— “হুম!”
ব্যস! এ একটা শব্দই আবদ্ধকে রাগানোর জন্য যথেষ্ট। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার। দীঘির যে এভাবে মাথা ঘুরায় এটা আবদ্ধকে বলবে কি হতো? আবদ্ধ কি ওকে মেরে ফেলতো নাকি? ঠিক এ-ই কারণেই আবদ্ধ দীঘিকে মাথামোটা ডাকে। “গাঁধার গোডাউন একটা!” দীঘিকে কিছু বলতে নিয়েও বলল না আবদ্ধ। নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছে সে। এসময় নার্স খাবার নিয়ে আসে কেবিনে। খাবার গুলো দেখেই যেন দীঘির গা গুলাচ্ছে। কিভাবে এগুলো খাবে সে? এখনই যে বমি বমি পাচ্ছে তার। দীঘি এক বাক্যে জানায় সে এগুলো খাবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আবদ্ধ জোড় করে একেরপর এক খাবার মুখে পুরে দিচ্ছে তার। আর বলছে….
— “আজকে তুই খাবি তোর ঘাড় শুদ্ধ খাবে। নাইলে ভুতের সাথে বিয়া দিমু তোর।”
১৭.
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফোন করেছেন রেয়ান মামীর ফোনে। মামীর ফোন আমার কাছে আছে বিধায় ফোন ধরছি না আমি। একসময় বিরক্ত হয়ে মামীর কাছে ফোন দিয়ে বললাম- “রেয়ান ফোন দিয়েছেন, ধরো!” ফোন ধরে মামী মিনিট কয়েক কথা বললেন রেয়ানের সাথে। শেষে আমাকে ফোন ধরিয়ে মামী বললেন….
— “তোর সাথে কথা বলবে রেয়ান। নে ধর, কথা বল।”
অগত্যা ফোন কানে দিয়ে “হ্যালো” বলতেই অপাশ থেকে রেয়ান শান্ত সরে বলে উঠেন….
— “জানো মরুভূমি বেশ ক্রিটিকাল অবস্থা পেসেন্টের। একটু পরই অপেরেশন। তারপর কুহুর হাসবেন্ডের কিছু টেস্ট করে আরও কিছু কাজ করতে হবে৷ রাতে হয়তো আসতে পারবো না মরুভূমি! তবে আসার চেষ্টা করব।”
— “আসতে হবে না আপনার৷ অনেক করছেন আমার পরিবারের জন্য। তার জন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন আবার রাতে আসতে হবে না।”
— “তুমি বললেই হলো? পরিবারটা তো আমারও। এখন যখন তুমি আমাকে আসতে মানা করছো, এখন আমি যে করেই হোক রাতে আসবো।”
কিছু বললাম না আমি। সেও নিরব৷ নিরবতা ভেঙ্গে আবার বলে উঠেন উনি….
— “চিন্তা করো না মরুভূমি আমি আমার বেস্ট দিয়ে দীঘিকে সুস্থ করার চেষ্টা করব৷ আর সকালে দীঘিকেও আমাদের হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি আমার বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও কথা বলব।”
থামলেন রেয়ান। একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন…
— “জানো মরুভূমি! তুমি যখন আবদ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলে মা আর ছোট বোনের কথা মনে পড়ছিল খুব। ওরাও এমনই ভাবে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো।”
— “এখন দেয় না?”
— “আমি বাসায় গেলে দেয়। আমি তো আলাদা ফ্লেটে থাকি। বছরে কয়েকবার নিজের বাসায় যাই মাত্র।”
— “কেন?”
— “রাতে এসে বলব। এখন রাখি। অপেরেশনের টাইম হয়ে গেছে।”
— “হুম।”
ফোন কেটে দিলেন উনি। মনে মনে আমিও কয়েকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। আজকের দিন-টা সত্যিই খুব বাজে৷ কেন যেন মনে হচ্ছে রেয়ানের থেকে যতই দূরে যেতে চাচ্ছি ততই তার মাঝে আটকে পরছি আমি। এমন কেন হচ্ছে? উত্তরটা যে আমার অজানা!
১৮.
রাত প্রায় ২টা বেজে ৩৩ মিনিট। মামী আর শারমিনকে জোড় করে আমি আর আবদ্ধ পাঠিয়ে দিয়েছি বাসায়। এখন কেবিনে শুধু আমি, আবদ্ধ আর দীঘি আছি।
ঘুমের ঔষুধের কারনে দীঘি ঘুমিয়ে গেছে অনেক্ষন হলো। এখন আবদ্ধও দীঘির এক হাত শক্ত করে ধরে চেয়ারে বসে, বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। সোফায় বসে আছি চোখ বন্ধ করে আছি। একমাত্র আমিই নির্ঘুম। হয়তো রেয়ানের অপেক্ষায়!
একটু দেড়ি হলেও রেয়ান তার কথা মতো চলে আসেন হাসপাতালে। কেবিনে ঢুকেই খুব সাবধানে আমার কাছে এসে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলেন উনি। চমকে উঠলাম আমি। চোখ খুলে রেয়ানকে কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে দেখে শান্ত হলাম একটু। তবে পুরোপুরি ভাবে না। রেয়ান আমার এক হাত নিজের চুলের ভাঁজে রেখে বললেন….
— “মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো মরুভূমি! ব্যথা করছে খুব।”
আমার কি হলো কে জানে, বাধ্য মেয়ের মতো উনার মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। উনি কিছুক্ষন এভাবেই চুপ করে রইলেন। তারপর বলে উঠলেন…
— “পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় বাবার ইচ্ছে ছিল আমি তার বিজনেস হেন্ডেল করব৷ কিন্তু আমার এমন ইচ্ছে মোটেও ছিল। আমি চেয়েছিলাম ডাক্তার হতে। হইও! তবে বাবা এটা মেনে নিতে পারেন নি। উনি জানতেন না আমি ডাক্তারি নিয়ে পড়াশুনা করছি। বিজনেসে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে ছেলেমেয়ের প্রতি তার ধ্যান কোথায়! যখন আমি উনাকে আমার ডাক্তার হওয়ার কথা বলি উনি রেগে যান। বলেন, আমি যেন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। আমিও তাই করি। আলাদা ফ্লেটে থাকা শুরু করি। এরপর থেকে বাবা যখনই বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে যান তখনই শুধু নিজের বাড়িতে যাই। তাও দুই-তিন দিনের জন্য। লাস্ট গিয়েছিলাম হয়তো তিন-চার মাস আগে।”
চোখ খুললেন রেয়ান। আমার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত সরে বলে উঠলেন….
— “আমার খুব একা একা লাগে মরুভূমি। ভীষণ একা একা লাগে। আমার একাকীত্বকে কি দূর করবে তুমি? আমার জীবনের সঙ্গি হবে প্লিজ! শুধু আমার সাথে একটু হেসে কথা বললেই হবে। আমার আর কিচ্ছু চাই না। তোমার অবহেলা যে বড্ড কষ্টদায়ক আমার জন্য।”
ততক্ষনাত চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। তার মুখে তাকাতে পারছি না আর। মায়ায় ফেসে যাচ্ছি! নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম খানিক্ষন। দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলাম….
— “জানেন রেয়ান আমি আপনাকে কেন মেনে নি না? ভয়ে! হাড়ানোর ভয় আমার মাঝে প্রবল ভাবে কাজ করে। তবুও কোথাও যেন মনে হয় আপনাকে আপন করে নেওয়া উচিত। কিন্তু এটা ভাবার কয়েক মিনিট পরেই এমন কিছু ঘটে যায়, যার জন্য আমি আবার কয়েক কদম পিছিয়ে যাই আমার সিদ্ধান্ত থেকে৷ এ-ই যে আপনি এখন আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন। এসবের অধিকার আপনার নেই। তবুও আমি কিছু বলছি না। কেন বলছি না সেটা আমারও অজানা। আপনার থেকে দূরে চলে যেতে চাইলে একদম কাছে চলে আসি। আবার মিশতে চাইলে একদম দূরে চলে যাই। আজকের সকালের ঘটনা এ-র প্রমাণ, আমার কি কোনো দোষ ছিল রেয়ান? আমি কি টাকার জন্য আপনার পিছুপিছু ঘুরি? না! তাহলে জেনি আমাকে কিভাবে বলল এসব? আমাকে কিভাবে বলল আমি একজন পতিতা?”
বিস্ময়ে চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেল রেয়ানের৷ বিস্ময় নিয়ে বললেন….
— “জেনি তোমাকে এগুলো বলেছে?”
আমি চুপ করে রইলাম। বলে না, “নিরবতা স্মতির লক্ষণ” হয়তো সেটাই বুঝানোর চেষ্টা করছি। আর রেয়ানও সেটা বুঝে যান। মুহুর্তেই তার মুখে রাগের আভা ভেসে উঠে। উঠে দাঁড়িয়ে শুধু এতটুকুই বললেন- “আসছি আমি।”
অবাক হয়ে রেয়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম আমি। এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন উনি? জেনির বাসায় নয়তো?
কলিংবেল থাকা সত্ত্বেও দরজায় জোড়ে জোড়ে আঘাত করছে রেয়ান। ফলে শব্দ হচ্ছে অনেক। সেই শব্দে ধড়ফুড়িয়ে ঘুম উঠে যায় জেনি। এভাবে দরজা ধাক্কানোতে বিরক্ত হলো সে। এত রাতে কে এমন ভাবে দরজা থাক্কাচ্ছে? কলিংবেল কি নেই তার বাসায়? কোনোমতে ঘুমু ঘুমু ভাবে চোখ কঁচলাতে কঁচলাতে নিচে গিয়ে দরজা খুললো জেনি। সে অবাক! এত রাতে রেয়ান কি করছে তার বাসায়। অবাক নিয়েই বলল…
— “এত রাতে তুমি এখানে যে।”
রাগ ধরে রাখতে পারলো না রেয়ান। চিল্লিয়ে বলে উঠল….
— “তুই মিরাকে পতিতা বলার সাহস কোথা থেকে পেলি? ও আমার টাকার পেছিনে ঘুরে নাকি তুই অশ্লীল জামা পরে আমার পিছন পিছন ঘুরিস? ওকে এত বাজে কথা বলার সাহস কোথা থেকে পেয়েছিস তুই? লজ্জা করে না একজন নারী হয়ে অন্য নারীকে এগুলো বলতে?”
অনেকটা ভয় পেয়ে যায় জেনি। তবে দমে না! আমতা আমতা করে বলে উঠে…
— “আমি তো ঠিকিই বলেছি রেয়ান বেবি। তাছাড়া পতিতাকে পতিতা বলল নাতো কি বলল?”
এবার সহ্যের সীমা পেরিয়ে যায় রেয়ানের। “ঠাসস” করে পরপর দু’বার জেনির গালে চড় মারলো সে। জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলেন….
— “তোর বাপ-মা কই? তাদের গুণধর মেয়ের কুকির্তি আজকে বলব তাদের। কোই তোর বাপ-মা?”
কেঁদে দেয় জেনি। রেয়ান ধমকে আবার একই প্রশ্ন করে। কাঁদতে কাঁদতে জেনি বলে উঠে….
— “মম-ড্যাড বাড়িতে গেছে।”
— “তো কল দে! ফোনে টাকা না থাকলে নাম্বার বল আমাকে। আমিই কল দিবো।”
জেনির কোনো প্রক্রিয়া ঘটলো না। সে আগের নেয়ই কাঁদতে লাগলো। রেয়ানের ইচ্ছে করছে মেরে পুতে ফেলতে জেনিকে। তবে এটা ঠিক হবে না। কোনো নারীকে এভাবে মারা উচিত না। যা বেশ ভালো করেই জানে রেয়ান। জেনিকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় রেয়ান। এক এক করে ড্রইংরুমের সব জিনিসপত্র ভাঙ্গতে লাগলো সে। একটু শান্ত হতেই রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি।
এদিকে রেয়ানের অপেক্ষা করতে করতে সোফায় হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। কারো আলতো স্পর্শ মাথায় পেতেই ঘুমটা যেন আরও তীব্র হয়ে গেল আমার। আবেশে রেয়ানের কাঁধে মাথা রেখে তার হাত জড়িয়ে ধরলাম। রেয়ানের রাগ যেন নিমিষেই উধাও! শান্তি শান্তি লাগছে এখন!
.
.
#চলবে🍁