সে কি জানে Season 2 ! Part- 24
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক রকম লজ্জায় পরে যেতে হলো আমার। রেয়ানকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম আমি৷ চোখ খুলতেই যখন নিজেকে এ অবস্থায় পেলাম তখন মনে হলো, মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর আমি সেখানে লুকিয়ে যাই! আমার এ-ই লজ্জা আরও তীব্র হয় আবদ্ধ আর দীঘির মিটিমিটি হাসি দেখে৷ তবে রেয়ান হাসছেন না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে৷ লজ্জায় লাল-বেগুনী হয়ে এক প্রকার পালিয়েই বের হলাম কেবিন থেকে। পিছু পিছু রেয়ানও আসলেন।
আমি কেবিন থেকে বের হতেই জোড়ে জোড়ে হেসে উঠল আবদ্ধ। হাসি যেন তার থামছেই না। দীঘির দিকে তাকিয়ে দুষ্টামির সরে বলে উঠল…
— “বুঝলি দীঘি, ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। শুন না, আমারও ভীষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে। তুই কি বলিস বিয়ে করবি এখন? কাজী নিয়ে আসি?”
চোখ বড় বড় করে আবদ্ধের দিকে তাকালো দীঘি। কথা কোত্থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আবদ্ধ। এখানে বিয়ের ব্যপার আসলো কোথা থেকে? তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আবদ্ধের দিকে তাকালো দীঘি। ইশারায় কাছে আসতে বলল। আবদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো একবার। পরক্ষনে দীঘির মুখের কাছে কান আনতেই সেখানে জোড়ে কামড় দিলো দীঘি। আবদ্ধ যন্ত্রণাদায়ক শব্দ বের করে সরে গেল ততক্ষনাত। কানে হাত বুলাতে বুলাতে বলল….
— “রাক্ষসী একটা! তোরে খাবার কম খাওয়াই নাকি? আমারে খাবার শখ কোত্থেকে আসলো তোর? মেরে একেবারে ভর্তা বানিয়ে দেবো আবার কামড় দিলে।”
ভেঙচি দিলো দীঘি। কিছু বলল না। দীঘির আড়ালে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আবদ্ধ। দীঘিকে হাসি-খুশি রাখতে গিয়ে চরম কষ্টের মাঝে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে সে।
এতক্ষন না হাসলেও এখন আমার সামনে ঠিকই হাসছেন রেয়ান। পেটে হাত দিয়ে হাসছেন উনি আর বলছেন…
— “লজ্জাবতীর লজ্জা মাখা মুখ!”
এতে রাগ লাগলো না আমার। বরং লজ্জার সাগরে ডুবে গেলাম আরও দৃঢ় ভাবে। হাসি থামালেন রেয়ান। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বললেন…
— “এভাবে লজ্জা পেয় না প্রেয়সী! মরুভূমির মতো বিশাল জায়গায় হারিয়ে যাবো আরও তীব্র ভাবে। তখন সামলাতে পারবে তো?”
তাকালাম রেয়ানের দিকে৷ উনিও চেয়ে আছেন আমার দিকে। হয়তো উত্তরের আশায়। কিন্তু এ উত্তর-টা কি আমি দিতে পারবো? কক্ষনও না! চুপ রইলাম। চারপাশ থেকে অস্বস্থি যেন ঘিরে ধরলো আমায়। সেটা হয়তো বুঝতে পারলেন রেয়ান। স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলেন…
— “তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি। হাসপাতালের সব ফর্মালিটি শেষ আর আমার বন্ধু-বান্ধবের সাথেও কথা বলেছি। ওরা আজ বাদে কাল চলে আসবে। এখন শুধু দীঘিকে এ হাসপাতাল থেকে আমাদের হাসপাতালে সিফট করার পালা।”
থামলেন রেয়ান। আমার হাত ধরে বললেন…
— “আবদ্ধকে বলতে হবে চলো!”
১৯.
রাতে কান্নার পর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে জেনির। চোখটা লাল হয়ে কেমন ফুলে গেছে। ভয়ংকর লাগছে দেখতে৷ ভেবেছিলো আজ ভার্সিটি যাবে না। তবে তা আর হওয়ার! একটা খুব জরুরি কাজ পরে গেছে ভার্সিটিতে। অগত্যা তাকে যেতে হবে ভার্সিটিতে।
নিজেকে শান্ত করে ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে গেল জেনি৷ কাজ শেষে মাঠের এক বেঞ্চে বসে পড়লো সে। ক্লাস করবে না আজ। মনটা অনেক বিষন্ন হয়ে আছে। রেয়ানকে ভালোবাসা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল! তবে সেটা ভালোবাসা নাকি শুধুই আবেগ, সেই দ্বিধায় বেশ কয়েকবার পড়েছে সে৷ আসলেই কি ওটা? প্রশ্নটা নিজেকে নিজে করলেও উত্তরের দেখা মেললো না কোনোভাবে।
মাঠ দিয়েই ভার্সিটির পুরাতন ভবনে এগিয়ে যাচ্ছিল দিহান। জেনিকে পার করে কয়েক কদম গিয়েই থামলো সে। পেছনে ফিরে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তাকালো বেঞ্চে বসে থাকা মেয়েটির দিকে৷ আজকে খুব বিষন্ন লাগছে মেয়েটাকে। চেহারায় কেমন ক্লান্তির ছাপ। পোশাক-পরিচ্ছেদও বেশ শালীন। তাছাড়া আজ তাকে দেখেও ন্যাকামি করছে না। খটকা লাগলো দিহানের। কি হয়েছে জানার অদম্য কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেল জেনির দিকে। বেঞ্চে বসতে বসতেই জেনির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলো সে…
— “কি ব্যপার আজকে ন্যাকামি করছ না যে? কিছু কি হয়েছে?”
বিরক্তি নিয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে পাশে তাকালো জেনি। দিহানকে দেখতেই মুখের আকৃতি স্বাভাবিক করল। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল…
— “কিছু হয় নি।”
এতটুকু বলেই সেখান থেকে চলে গেল জেনি। দিহান যেন অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। মেয়েটার হলো কি আজ?
২০.
দীঘিকে নিয়ে এক রকম তাড়াহুড়ো করেই অন্য হাসপাতালে সিফট হয় রেয়ান। এখন নানা কাজে ব্যস্ত সে। আর আবদ্ধ দীঘির সাথে কথা বলতে! আমি একা একা বসে আছি কেবিনের বাইরের এক বেঞ্চে। মামী আর শারমিনের সাথে কথা হয়েছে৷ ওরা আসবেন দুপুরে। তবে এখন কি করব আমি? খুব একা একা লাগছে। রেয়ানও যে কোথা গেলেন….।
হঠাৎ কুহু এসে আমার পাশে বসে পড়ল। হাসি মুখে বলল….
— “আপনু এখানে যে? কোনো বিশেষ কাজে?”
— “হুম!”
— ” তা কেমন আছেন?”
— “আলহামদুলিল্লা! আপনি? আপনার হাসবেন্ডের কি অবস্থা?”
— “আমি আর তন্মম দু’জনেই ভালো আছি। আপনার হাসবেন্ড বলেছেন তন্ময়ের ঠিক হওয়ার চান্স আছে। কয়েকদিন পরই হয়তো সুস্থ হবেন। এখন আপাতত জ্ঞান ফিরেছে।”
স্মিত হাসলাম শুধু। টুক-টাক কিছু কথা বলার পরই বিদায় নিয়ে চলে গেল কুহু। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। মনে এক নতুন আসার আলো জেগেছে। তবে সেটা কি?
এরমধ্যে রেয়ান এসে পরলেন। আমার পাশে বসে দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বলে উঠলেন….
— “বাসায় যাবে না? তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে অনেক। চল ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর ভার্সিটিতে গিয়ে কয়েকদিনের ছুটি নিতে হবে।”
মাথা ঝাঁকালাম আমি। রেয়ান মিষ্টি হেসে আমার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে লাগলেন হাসপাতালের বাইরে।
আমার সাথে সাথে রেয়ানও আবদ্ধের রুম থেকে ফ্রাশ হয়ে নিলেন। তারপর দু’জনে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। সেখানে ঘটনো আরেক কান্ড। কাজ শেষে যখন ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসছিলাম তখন হুট করে দিহান এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। হতবাক আমি! এমনটা তো দিহান কখনও করে না। তাহলে এখন কেন করল? রেয়ান আছে বলে?
আমাকে ছেঁড়ে দাঁড়ালো দিহান। তবে হাত ছাঁড়লো না। অস্থির হয়ে বলতে লাগলো….
— “আন্টিকে ফোন করেছিলাম, উনি বলল তুমি নাকি হাসপাতালে গিয়ে ছিলে। কিছু কি হয়েছে মিরু?”
নিজের হাত ছাঁড়াতে ছাঁড়াতে বললাম…
— “আমার কিছু হয় নি। দীঘির জন্য হাসপাতালে ছিলাম।”
— “ও থ্যাংক গড তোমার কিছু হয় নি। আমার তো জানই বেরিয়ে গিয়েছিলো। প্রথমে তোমার সাথে দেখা করতে হাসপাতালে যাবো ভেবেছিলাম। তখন আন্টি বলল তোমরা নাকি হাসপাতাল বদল করবে৷ তাই আর যাই নি।”
আমি কিছু বললাম না। দিহানের দিকে একবার তাকিয়ে রেয়ানের দিকে তাকালাম। উনি চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছেন। চোখ খুলেই প্রথমে দিহানের দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছে এখনই রক্তচক্ষু দিয়ে দিহানকে খেয়ে ফেলবেন! নিজেকে শান্ত করে একটু হাসার চেষ্টা করলেন উনি। দিহানকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
— “অন্যের বউকে জড়িয়ে ধরা কি ধরণের মেনারস মিস্টার!”
অবাক হলো দিহান। সাথে আমিও! বিস্মিত কণ্ঠে সে রেয়ানকে বলল….
— “মানে?”
এবার মুখ কঠিন হয়ে গেল রেয়ানের। এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন। বললেন…
— “মিরা আমার হবু বউ। বিয়ে হবে আমাদের।”
.
.
#চলবে🍁