সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 21

ঘুমের মাঝেই অনুভব করলাম আমার হাতটা কেমন ভাড়ি ভাড়ি লাগছে৷ মনে হচ্ছে কোনো ভাড়ি কিছু রাখা হয়েছে হাতে। পাশাপাশি তরল জাতীয় কিছু হাতে বেয়ে বেয়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ রেখেই ভ্রুঁ কুঁচকালাম আমি। কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছি মাত্র! কিছুক্ষন পর চোখ খুললাম আমি। রেয়ান আমার হাতের ওপর মাথা রেখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। চোখগুলো লাল হয়ে ফুলে একাকার হয়ে গেছে। তবে তার দৃষ্টি শান্ত। চোখে-মুখে বিস্ময় আমার। তার এমন অবস্থা হলো কিভাবে? কি হয়েছে উনার? এরমধ্যে মামী এসে হাজির। আমাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখে তার মলিন মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলালেন উনি।
রেয়ান এতক্ষন খেয়াল করেন নি মামীকে। এখন দেখা মাত্রই ঠিক হয়ে বসলেন। মামী হেসে বলে উঠলেন…
— “রেয়ান বাবা এখন তো যাও কিছু খেয়ে নাও। সেই কালকে রাত থেকে কিছু খাও নি। আবদ্ধ, দীঘি আর বেয়াইন আছে নিচে। ওদের কাছে যাও। নিচে টেবিলে নাস্তা আছে।”

রেয়ান আমার দিকে তাকালেন একবার। সে চাহনি ছিল একটু অভিমান, রাগ আর ভালোবাসার সংমিশ্রণ। পরক্ষনেই চোখ ফিরিয়ে নিলেন আবার৷ কিছু না বলে বের হয়ে গেলেন রুম থেকে। সম্ভবত নিচে গেছেন, আবদ্ধদের কাছে!
.
মামী পরম যত্নে খাবার খাওয়াচ্ছেন আমায়। খেতে খেতে ঘড়ির দিকে তাকালাম আমি৷ দুপুর ৩টা বাজে। এতক্ষন জ্ঞান ছিল না আমার! ভাবতেও অবাক লাগছে। হঠাৎ মামী আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলে উঠলেন…
— “জানিস মিরা কালকে রাতে যখন রেয়ান তোকে অজ্ঞান অবস্থায় এনেছিল আমরা সবাই অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। রেয়ানের কাছে তোর জ্ঞান হারানোর ব্যপারে জানতে চাইলেই ও তোর সাথে ঘটা সব কিছু বলে আমাদের। বিশ্বাস কর তখন যদি তোর জ্ঞান থাকতো কয়েকটা চড় মেরে দিতাম তোকে। তুই যখন জানিস জায়গাটা নির্জন, তাহলে কাউকে সাথে নিলি না কেন? একা একাই আসতে হলো? ভাগ্য ভালো রেয়ান সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। নাহলে কি যে হতো!”
থামলেন মামী। হাতে আরেকটু খাবার নিয়ে মুখে পুড়ে দিলেন আমার। তারপর আবার বলতে লাগলেন…
— “ছেলেটা আসলেই অনেক ভালো মিরা। সারারাত তোর রুমে বসে বসে তোর সেবা করেছে।”
টনক নড়ল আমার। সারারাত রেয়ান আমার রুমে ছিলেন? বিশ্বাস ভালো তবে অতি বিশ্বাস না! মামীকে এসব বিষয়ে অতিরিক্ত লাগে আমার৷ বিরক্তি নিয়ে বললাম…
— “উনি আমার রুমে সারারাত ছিল। আর তোমরা তাকে থাকতে দিলে?এটা কেমন কথা মা?”
— “আরে ও একা ছিল নাকি! আবদ্ধ আর দীঘিও ছিল। তোর ভাইকে তো তুই চিনিস। রেয়ান তোকে বাসায় আনার পর থেকেই ও তোর সাথে সাথে ছিল। সকালের দিকে তোর রুম থেকে বের হয়েছে। দীঘির আজকে পরীক্ষা তাই। নাহলে তো তাও বের হতো না।”
একটা প্রশান্তির শ্বাস ফেললাম আমি। যাক তাহলে উনি একা ছিলেন না। আবার মামী তাকালেন আমার দিকে। বলে উঠলেন…
— “তো যা বলছিলাম…”
— “মা রেয়ানকে নিয়ে কিচ্ছু বলোও না আর। উনার কথা শুনতে শুনতে আমি তেক্ত!”
— “আরে শুন, এটা মজার কথা। সকালে পুলিশ এসেছিল আমাদের বাসায়।”
চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার। মনে এক কৌতূহল জেগে উঠল। আধশোয়া থেকে আরেকটু ভালো ভাবে বসলাম আমি৷ বললাম…
— “কেন এসেছিলো?কাহিনী কি?”
— “তোর কাহিনী।”
— “মানে?”
মামী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। প্লেটের শেষটুকু খাবার খাইয়ে দিয়ে পুরো ঘটনা বললেন আমায়। কালকে রেয়ান ছেলেগুলোকে অনেক মেরেছিলেন। লাঠি জাতীয় জিনিস দিয়ে মারায় শরীরের জায়গায় জায়গায় দাগ হয়ে গেছিল। সবচেয়ে বেশি মেরেছিলেন শরীরের এক বিশেষ অঙ্গে। ফলে বাবা হওয়ার চান্স একেবারে নাই হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় আধমোরা হয়ে পরে ছিলো ওই জানোয়ার গুলো। রেয়ানই ওদের পরে হাসপাতালে এডমিট করান। তবে খারাপ মানুষ তো খারাপই থাকে৷ ওরা ওদের বাবাকে দিয়ে পুলিশ কেস করে রেয়ানের নামে। যার ফলে ওদের এখানে আসা। কিন্তু রায়হান আহনেদ রেয়ানকে জেলে নেওয়া কি এত সোজা? মোটেও না। উনি এমন এমন সব যুক্তি দেখিয়েছেন পুলিশদের যে তারা নিজেই গোলকধাঁধায় পরে যায়। তাছাড়া রেয়ানকে, তার বাবাকে আর অবদ্ধকে কম বেশি সবাই-ই চিনে। তারা কেমন আর কি তা সবারই জানা। তাই এক প্রকার নিরাশ হয়েই পুলিশদের যেতে হয় এখান থেকে।

১২.
বিকেলটা আজ মেঘলা মেঘলা। তবুও দু’জন বসে আছে তাদের সেই চিরচেনা জায়গায়, নদীর পাড়ে! একজন তাকিয়ে আছে নদীর দিকে আর একজন তার প্রেসয়ীর দিকে। আবদ্ধের এভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে দীঘি। কোনোমতে আমতা আমতা করে বলে উঠে…
— “এভাবে কি দেখছেন?”
— “তুই বুঝবিনা রে পিচ্চি। আমার বড্ড প্রেম প্রেম লাগছে।”
— “আপনি একটা বেহায়া, লাগামহীন মানুষ।”
— “জানি তো।”
— “আপনি একটা অসভ্য।”
— “তাই?”
— “হুম তাই।”
— “আচ্ছা।”
আবদ্ধের এরুপ ব্যবহারে তার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো দীঘি। এ মানুষটার মতিগতি ভালো ঠেকছে না। কিছুক্ষন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সে বলে উঠে…
— “আর কতক্ষন এখানে থাকবেন? বাসায় যাবেন না।মিরাপু হয়তো আপনার অপেক্ষা করছে।”
— “ও সীট! আমার তো মনেও ছিল না। চল চল তাড়াতাড়ি চল। বাসায় যাইতে হবে।”
বলেই দীঘির হাত টেনে দাঁড় করালো আবদ্ধ। দীঘির দিকে তাকিয়ে একবার গাল টানলো সে। তারপর এগোতে লাগলো গাড়ির দিকে।
.
রাতে বিছানায় আধশোয়া হয়ে গল্প পড়ছি আমি। রেয়ান আমার রুমেই আছেন৷ আজকে আবদ্ধের রুমে আবদ্ধের সাথে এখানে থাকবেন উনি৷ ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আমার। মামী একটু বেশিই পছন্দ করেন রেয়ানকে। যা মোটেও ভালো ঠেকছে না আমার! বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পড়েই বই থেকে মাথা তুলে রেয়ানের দিকে তাকালাম আমি। উনি সোফায় বসে দু’হাত গালে রেখে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। নেশাভরা সেই দৃষ্টি। কেমন যেন অস্বস্থি লাগতে লাগলো আমার। আমতা আমতা করে বলে উঠলাম…
— “আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না রেয়ান। আমার অস্বস্থি লাগে।”
— “আমি তো তোমার দিকে তাকাচ্ছি না৷ আমি তো ভাবছি।”
— “কি ভাবছেন?”
— “ভাবছি আমি কত লাকি। আমি নিজ হাতে তোমার ডেলেভারি করব। আমার হাতে আমার বেবির জন্ম হবে। ভাবতে পারো হাও লাকি আই এম!”
— “রেয়ান!”
হাসলেন রেয়ান। বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলে উঠলেন…
— “জানো মরুভূমি! তোমার মুখে আমার নামটা শুনলে মনে হয়- উফফ! কি সুন্দর নামই না রেখে আমার মা-বাবা। ইউ নো ওয়াট! আই লাইক মাই নেম।”
চোখ পাকিয়ে তাকালাম আমি। এ মানুষটা আসলেই পাগল, নির্লজ্জ। কিভাবে লাগামহীন কথাবার্তা বলে এখন হাসছেন। অসভ্য কোথাকার! বই দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললাম আমি। পড়ায় মনোযোগ দিলাম আবার। কিছুক্ষন পরই একটা প্রশ্ন খেলে গেল মাথায়। রেয়ানের দিকে তালিয়ে বলে উঠলাম…
— “রেয়ান আপনি না সাইকোলজিসড! তাহলে আপনি কিভাবে বেবি ডেলিভারি করতে পারবেন? তাছাড়া কুহুর সাথে দেখা হয়েছিলো আমার। ও বলল আপনি নাকি ওর হাসবেন্ডের চিকিৎসা করছেন?”
— “তোমাকে কে বলল আমি সাইকোলজিসড?”
— “মা বলেছে।”

ডান হায়ের সাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে একবার কপাল চুলকালেন রেয়ান। হেসে বললেন…
— “আমি আসলে সাইকোলজিসড না। আমার ফ্রেন্ড সাইকোলজিসড। আমি আবার মানুষ হাসাতে পারি। তাই ওর সাথে যখন ওর হোসপিটালে দেখা করতাম তখন ওর পেসেন্ডের সাথে টুকটাক হাসি তামাসা করতাম এই আরকি।”
— “তাহলে মা যে বলল?”
— “উনি ঠিকই বলেছেন। মানে আমার মার একটু বাড়িয়ে বলার অভ্যাস। তোমার মা মানে আমার হবু শ্বাশুড়ি তো মার ভালো বন্ধবী। একদিন বাসায় এসেছিলেন দেখা করতে। তখন কথায় কথায় আমার হবু শ্বাশুড়ি তোমার কথা বললেন। আমার মাও কথায় কথায় বললেন আমি ডাক্তারির পাশাপাশি টুকটাক সাইকোলজিও পারি। ব্যস,এ কথার পরই হবু শ্বাশুড়ি মা আমাকে তোমার সুস্থতার দ্বায়িত দেন। আমিও মানা করতে পারিনি। আসলে কৌতূহল কাজ করছিলো তখন আমার মাঝে৷ আমার ফ্রেন্ডের সাথে যতগুলো পাগল ঠিক করেছি সব গুলো ছেলে ছিল। মেয়ে পাগল কেমন হয় তা দেখার জন্যই মূলত তোমার সাথে দেখা করা। এন্ড ইউ নো ওয়াট মেয়ে পাগলটা কিন্তু অনেক হট!”
বলেই চোখ টিপ মারলেন উনি। সাথে সাথে বালিশ ছুঁড়ে মারলাম উনার দিকে।
.
.
#চলবে🍁