সে কি জানে Season 2 ! Part- 08
পায়ের ওপর পা তুলে বিছানায় বসে আছে আবদ্ধ। রাগে তার পুরো মুখশ্রী লাল হয়ে গেছে। বিশেষ করে চোখ দু’টো। আবদ্ধের এমন রুপে দীঘি ভয় পাচ্ছে প্রচুর। মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে আছে সে। মুখ দিয়ে একটি কথাও বের হচ্ছে না তার। বারবার ভয় জেঁকে বসছে মনের ভেতর। এদিকে আবদ্ধ রাগে ফুসছে। কোনো রকমেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। কিছুটা ধমক দিয়েই দীঘিকে বলে উঠে…..
—” তোর বাপের সাহস কেমনে হয় এগুলো করার? ও-ই ব্যটা যদি আমার হবু শ্বশুড় না হতো, আই সোয়ের মেরে ফেলতাম ওই লোককে। ”
এতটুকু বলে থেমে গেল আবদ্ধ। পরক্ষনেই আবার বলে উঠল…..
—” আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে রে পিচ্চি। তোর মা-বাবা কি ঘুমাচ্ছে? ”
মাথা ঝাঁকালো দীঘি। যার অর্থ ” হ্যাঁ ঘুমাচ্ছে তার মা-বাবা “। দীঘির উত্তরটা ঠিক পছন্দ হয় নি আবদ্ধের। তারা জেগে থাকলে ভালো হতো।অনেক বোঝা পড়া বাকি আছে তাদের সাথে। কিন্তু এখন কি করবে সে? দীঘিকে কালকেই বিয়ে করলে কেমন হয়? পরক্ষনেই মনে হলো…. না, বাচ্চা একটা মেয়ে। একে বিয়ে করলে কেমনে কি হবে।তারওপর পড়ালেখার উপরও হয়তো বিশেষ ভাবে প্রভাব পড়বে। কিন্তু হাতে হাত ধরে বসে থাকলেও তো হবে না। উফফ! এসব চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। একে তো বিজনেস লস হচ্ছে দিনদিন। বহুত কাজ পড়ে আছে, তারওপর দীঘির এ ঝামেলা। সব কছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আবদ্ধের।
কিছুক্ষন দম মেরে বসে থেকে দীঘির দিকে তাকালো সে। মেয়েটার মুখ এক পলক দেখলেই তার সকল বেদনা, মন খারাপ চলে যায়। শান্ত শান্ত লাগে নিজেকে। না, সে কিছুতেই দীঘিকে নিজের থেকে আলাদা করতে দিবে না। বিজনেস আর দীঘির বরাবর দেখাশোনা করবে। এতে তার যত কঠিন পরিশ্রম করতে হবে সে করবে। তারপরও তার দীঘিকে চাই-ই চাই।
ভেবেই মুচকি হাসলো আবদ্ধ।উঠে দাঁড়িয়ে দীঘির হাত ধরলো। এভাবে হুট করে হাত ধরায় কিঞ্চিত অবাক হলো দীঘি। চোখে-মুখে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে আবদ্ধের দিকে তাকালো সে। সাথে সাথে আবদ্ধ বলে উঠল…..
—” বাইরে যাবি? রাস্তায় হাঁটবো! ”
বিষম খেলো দীঘি। এত রাতে আবদ্ধের সাথে কিভাবে যাবে সে। তাছাড়া যদি মা-বাবা জেগে যায়। তাকে রুমে না দেখলে তো কেলেংকারি হয়ে যাবে। পরে আবার হয়তো তাকে মারবে। ভাবতেই অল্প ভয় পেলো দীঘি। আমতা আমতা করে বলে উঠল….
—” পারবো না আমি যেতে আপনার সাথে। মা-বাবা দেখলে বকবেন! ”
—” ট্রাস্ট মি! কেউ দেখবে না। প্লিজ আয় না পিচ্চি। এ-ই জ্যোছনা রাতে রাস্তায় হাতে হাত রেখে হাঁটবো। আমার যে ইচ্ছে করছে খুব। ”
আবদ্ধের দিকে একবার তাকালো দীঘি। তার যাওয়া কি উচিত। হয়তো না! কিন্তু দীঘির কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে! ধীর কণ্ঠে আবদ্ধকে বলল…..
—” চলুন ”
হালকা হাসলো আবদ্ধ। পরক্ষনে দু’জনেই চুপিচুপি আগাতে লাগলো দরজার দিকে।
.
সকালের দিকে ঘুম ভেংগে গেল আমার। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলাম আমি। পাশে তাকাতেই অবাক হলাম। নিচে বসে বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন রেয়ান। তার এক হাত আমার এক হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে। হাত-টা ছাড়াতে নিলেই জেগে যান উনি। মাথা উঁচু করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নামিয়ে নেন। ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে বলে উঠেন…..
—” ঘুমাও মরুভূমি। এখনও সকাল হয় নি। ”
সাথে সাথে ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল ১০টা বাজে। এখনও কি সকাল হয় নি? তারওপর উনি এখন আমাকে তুমি বলে ডেকেছেন। ভাবতেই কেন যেন রাগ হলো আমার। চেঁচিয়ে বলে উঠলাম….
—” আপনি কোন সাহসে আমাকে তুমি বললেন? তারওপর আমার রুমেই ঘুমিয়ে আছেন। কেন? বেহায়া লোক কোথাকার। যান আমার রুম থেকে। ”
এতকিছু বলার পরও রেয়ান কিছু বললেন না। আমার দিকে তাকিয়ে হুট করে গালে একটা চুমু এঁকে দিলেন। হতবাক আমি! চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। এতে তার কোনো হেলদোল নেই। আমার গালে আরেকটা চুমু দিয়ে সোজা বের হয়ে গেলেন রুম থেকে।
কিছুক্ষন পর আবার এসে বলে গেলেন….
—” তাড়াতাড়ি রেডি হও জান।বাইরে যাবো। আর শুনো! কালকের মতো অজ্ঞান হইও না আবার। নাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলবো! ”
আমি এখনও অবাক। এ লোকের সমস্যাটা কি? এসব কেউ বলে? ভাবতেই মুখ থেকে আনমনেই বের হয়ে গেল….. “অসভ্য”!!
দীঘির বাবার সামনে সোফায় আয়েশ করে বসে আছে আবদ্ধ। চোখ মুখে বিস্ময় নিয়ে আবদ্ধের দিকে চেয়ে আছে দীঘির বাবা কামরুল আর মা সারমিন। কামরুলের কিছুটা দূরত্বেই স্কুল ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে আছে দীঘি। ভয়ে হাত-পা কাঁপাকাঁপি করছে তার। সবাই নিরবতা পালন করে যার যার পরিস্তিতে ঠায় হয়ে আছে। অস্থিরতা দমাতে না পেরে কামরুলই আগে বলে উঠে….
—” তুমি কে বাবা? এখানে কেন এসেছো? ”
আবদ্ধের সোজাসাপ্টা জবাব….
—” আপনার মেয়েকে নিজের করতে। ”
বিষম খেলো কামরুল। তারপর বলল….
—” মানে? ”
—” মানে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।ওর ১৮ বছর হতেই ওকে আমার কাছে নিয়ে যাবো। ”
—” অসম্ভব! দেখুন ওর বিয়ে…”
—” আমি জানি, তাই এখন এসেছি। আমি চাই না ও অন্য কারো হোক। তাছাড়া আপনারা ওর জন্য যাকে দেখেছেন তার থেকে হাজার গুণ ভালো আমি। সো সমস্যা কোথায়? ”
—” আছে সমস্যা আছে। আমি আপনার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারবো না। আপনি এখন আসতে পারেন! ”
আবদ্ধের চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল মুহুর্তই। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল…..
—” আপনি চান বা না চান, আপনার মেয়ের বিয়ে এ আবদ্ধের সাথেই হবে। মাইন্ড ইট! ”
বলেই দাঁড়িয়ে গেল আবদ্ধ। সোজা দীঘির কাছে গিয়ে ওর হাত চেপে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো বাইরে। কিন্তু দীঘি যেতে চাচ্ছে না। বারবার আবদ্ধকে মানা করছে কিন্তু সে তার কথায় পাত্তাই দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে থেমে যায় আবদ্ধ। নিচের দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে নিজের চুল আকড়ে ধরে। একটু শান্ত হতেই দীঘির দিকে তাকায় সে আর বলে….
—” চিন্তা করিস না। তোকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছি শুধু। অন্য কোথাও না। স্কুল ছুটির পরে আবার বাসায় দিয়ে যাবো। ”
আবার কতক্ষন চুপ থেকে আবদ্ধ বলে উঠে….
—” এত কিছুর পরও তোর বাবা হয়তো তোর বিয়ের কথা আর ভাববে না। আর যদি ভাবে! তাহলে আমিও দেখবো তোর বিয়েটা হয় কিভাবে! বিয়ে তো তোকে আমাকেই করতে হবে। ”
বলেই একটা দম ফেললো আবদ্ধ। তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলো।
.
.
#চলবে🍁