সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 07

হাত দু’টো শক্ত করে চেপে ধরে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড় করান রেয়ান।হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠেন…..
—” ৫ মিনিটের ভেতর চেঞ্জ করে আসুন। ”
—” কেন? ”
—” আমরা এখন বাইরে যাবো তাই। ”
—” আমি যাবো না। ”
—” আপনি বাধ্য! ”
—” দেখুন….”
—” বেশি কথা বলবেন না মিস মরুভূমি। বেশি কথা আমার পছন্দ নয়। এক বাক্যে যা বলব তা করবেন।নাহলে কথায় কথায় রিভলবারটা বের করতে বাধ্য হবো। ”
—” আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? ”
—” ইয়েস বেইনি! ”

আমি আর কিছু বললাম।এ লোকের সাথে কথা বলাটাও সময় নষ্টের কাতারে পরে। কেন যেন সহ্য হয় না উনাকে আমার। অতিরিক্ত অসভ্য মানুষটা! নির্বাকভাবে চলে গেলাম ওয়াশরুমে। প্যাকেট খুলতেই দেখি একটা সাদা রঙের গাউন। সাথে হিজাবের ওড়না। কিছুক্ষন সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে রেডি হতে লাগলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি রেয়ান আগেই রেডি হয়ে বসে আছেন বিছানায়।গেমস্ খেলছে সে! আমাকে দেখেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন উনি। একপলক আমার দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিড়িয়ে নিলেন আর বললেন….
— ” রেডি তাহলে, যাওয়া যাক। ”
—” আমরা কোথায় যাবো? ”
—” সে নাহয় গিয়েই দেখবে।এখন আর কোনো কথা না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। ”
অবাক আমি। মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা আমার। সেটা না হয়ে উল্টা উনার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।কেন? উনার এসব আচরণ দেখে বরাবরই রাগ হয় আমার। এখনও তাই-ই হচ্ছে।তবে নিজেকে সামলে নিলাম। কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরেন উনি। তারপর নিয়ে যেতে লাগলেন বাইরের দিকে।

আজকে দীঘিকে দেখতে যেতে পারেনি আবদ্ধ। হঠাৎ-ই একরাশ কাজ এসে তার মাথায় চেপে বসেছে। শ্বাস নেওয়ারও সুযোগ নেই তার। সেখানে দীঘিকে দেখতে যাওয়া তো পরের ব্যপার। তবে মনটা যে মানছে না। পিচ্চিটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব! আবার কাজ ফেলেও যেতে পারছে না। আপাতত দীঘির কথা বাদ দিয়ে কাজে মন দেওয়া দরকার। অনেক লস হয়ে গেছে ইতোমধ্যে আবদ্ধের। এগুলো পূরণ না করলে কঠিন কিছু সময়ের মধ্যে যেতে হবে তার। যা আবদ্ধ চাচ্ছে না।আনতত এ মুহুর্তে না!
কাজ করতে করতে প্রায় অনেকটা দেড়ি হয়ে যায় আবদ্ধের।এখন বাসায় যাওয়ার পালা। অনেক ক্লান্ত সে। আপাতত বাসায় গিয়ে লম্বা একটা ঘুমের প্রয়োজন।টেবিল থেকে ওয়ালেট,ফোন আর গাড়ির চাবি নিয়েই বের হয়ে পড়ল সে। বাসায় গিয়ে রুমে ঢুকেই সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আবদ্ধ। ক্লান্তিতে চোখ মেলে তাকানোও দায় হয়ে পড়েছে! কিছুক্ষন চোখ বন্ধ রেখে উঠে বসে সে।ফোন হাতে নিতেই দেখে ফোন বন্ধ। একবার টাইম দেখা উচিত। তাই ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত ১টা ছুঁই ছুঁই! ততক্ষনাত দাঁড়িয়ে গেলো সে। ফোন চার্জে দিয়ে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
.
বিছানায় গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছি আমি। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন রেয়ান। কেমন একটা ভয় কাজ করছে তার মধ্যে। বারবার মনের দরজায় ভয় জিনিসটা কড়া দিচ্ছে। আচ্ছা, মরুভূমি কি পারবে এ-ই মানোসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে?আমি কি পারব তাকে এসব থেকে বের করতে? প্রশ্নগুলো সারাক্ষনই মাথায় ঘুরঘুর করে রেয়ানের। সে তো মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে আমাকে ঠিক করার। আমাকে এখানে এজন্যই তো এনেছে সে। যেন বিশুদ্ধ বাতাসে মিলিয়ে যেতে পারি আমি। প্রাণ ভরে যেন নিশ্বাস নি! অতীতকে ফেলে বর্তমান নিয়ে বাঁচি। আজকে সেটার শুরুই করছিল সে। ভেবেছিলো রাঙামাটির সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় ঘুরিয়ে আনবে আমায়। এতে হয়তো আমার মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু আফসোশ! সেটা আর হয় নি। বাইরে নিয়ে যাওয়ার কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। কারনটা রেয়ানের অজানা নয়!

একেবারে শাওয়ার নিয়েই বের হয় আবদ্ধ। চুল একহাত দিয়ে ছাঁড়তে ছাঁড়তে এগিয়ে যায় ফোনের দিকে। ফোন হাতে নিয়ে চালু করতেই তার কানে এসে বারি খায় অনেকগুলো “টংটাং” শব্দ। একটা দীঘির বাবার নাম্বার থেকে অনেকগুলো কল আর মেসেজ।আবদ্ধ মেসেজ অপেন করে সেটা পড়তেই তার যেন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্ন কড়া নাড়ছে। তবে কি সে চিরদিনের জন্য দীঘিকে হারিয়ে ফেলবে? না, এমন কেন হবে? কিছুতেই আবদ্ধ দীঘিকে ছাঁড়বে না।আজীবন নিজের সাথে মিশিয়ে রাখবে তাকে। ভাবতে ভাবতেই টেবিল থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিলো আবদ্ধ। আলমারি থেকে একটা টি-শার্ট নিয়ে সেটা পড়তে পড়তে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ল বাসা থেকে।
দীঘির এংগেজমেন্ট হয়েছে আজকে।স্কুল থেকে আসতেই তার মা-বাব জোড় করে তাকে এমনটা করতে।এস.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হতেই দীঘিকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে। এমতাবস্থায় দীঘি কি করবে বুঝতে পারছে না। সে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে না। আরও পড়তে চায় সে।যদি এমন হতো, বিয়ের পড়েও তারা তাকে পড়তে দিতো তাহলে দীঘি সেটা মেনে নিতো। কিন্তু এমনটা করতে পারবে না সে।এতে কঠর নিষেধ পাত্রপক্ষের। তারা আগেই সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে। উপায় না পেয়ে দীঘি নিজের বাবার ফোন দিয়ে আবদ্ধের নাম্বারে কল দেয়।কিন্তু আবদ্ধ ফোন সুইচড অফ দেখে মেসেজ করে দীঘি।
প্রায় সময়ই আবদ্ধ দীঘির বাবার নাম্বারে দীঘির স্যার হিসেবে পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বলত। তাই আবদ্ধের নাম্বারটা দীঘির বাবার ফোনে অনেক আগে থেকেই সেভ ছিল!
.
.
#চলবে🍁