সে কি জানে Season 2 ! Part- 06
সবার সামনে পাজাকোলে নিয়ে হোঁটেলের দিকে এগোচ্ছেন রেয়ান।আশেপাশের সব মানুষ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। অস্বস্তির শেষ সীমায় আমি। নামার জন্য ছটপট করছি তাও কোনো লাভ হচ্ছে না। এবার অনেকটা রেগেই গেলাম। রেয়ানের চুল শক্ত করে টেনে বলে উঠলাম……
—” সমস্যা কি আপনার?এভাবে কোলে নিয়েছেন কেন আমায়?বেশরম লোক কোথাকার! ”
রেয়ান কোনো কিছু বললেন না।শুধু একবার আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিলেন। বুঝতে পারছি না এতটা অসভ্য মানুষ কেমনে হয়। আমি কি লেংড়া? আমাকে কোলে নেওয়ার কি আছে? আমি তো নিজে নিজেই হাঁটতে পারবো তাই না! তার এসব আদিখ্যেতা বিরক্তির শেষ সীমায় নিয়ে যাচ্ছে আমায়। তারওপর মানুষের এভাবে তাকানো! উফফ! অসহ্য।
লিফটে উঠতেই রেয়ান আমার কানে জোড়ে একটা কামড় বসিয়ে দেন।পরক্ষনেই সেখানে চুমু দিয়ে বলে উঠেন……
—” মিস মরুভূমি! আপনি তো দেখি মরুভূমির সাপের মতো নড়াচড়া করতে পারেন।এত নড়াচড়া মানুষ করে? চুপচাপ থাকতে পারেন না? ”
—” চুপচাপ মাই ফুট। আমাকে একটা কথা বলুন তো, লজ্জা করে আপনার এভাবে একটা মেয়েকে বিরক্ত করতে? এটাই কি আপনার রোগীদের ঠিক করার ট্রিটমেন্ট?? ”
—” অবশ্যই না! এগুলো তো শুধু আপনার জন্য মাই ডিয়ার মরুভূমি। ”
—” কেন? কেন? শুধু আমার জন্য কেন? তাছাড়া আমার নাম মিরা,মরুভূমি না। তাই এ নামে আমাকে ডাকবেন না। বুঝছেন? ”
—” আপনি বললেই হলো।আমার এ নাম ভালো লাগে আমি এ নামেই ডাকবো। আর কি যেন বললেন? আমি আপনাকে এভাবে ট্রিটমেন্ট কেন করি রাইট? ”
—” হুম সেটাই! আমাকেই এভাবে ট্রিটমেন্ট কেন করান।শুনেন আমার আপনাকে একদম ভালো লাগে না।প্রচন্ড রকমের অসহ্য লাগে।সো প্লিজ আমাকে আমার মামীর কাছে দিয়ে আসুন। ”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রেয়ান। কিছুক্ষন লিফটের ওপরে ছোট স্ক্রিনে থাকা নাম্বারের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার দিকে তাকালেন।শান্ত সরে বলে উঠলেন…..
—-” বিয়ে করবেন আমায় মরুভূমি? ”
উনি কথাটা যত না শান্ত ভাবে বলেছেন ততটাই ভয়ংকর এ-র অর্থ। কিন্তু এ মুহুর্তে তার কথাটি আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে। আসলেই কি বলতে চাইছেন উনি? মাথা ঠিক আছে তো উনার?
রুমে বসে ছটফট করছে আবদ্ধ।কেন যেন দীঘিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে তার। একবার দেখে আসলে কেমন হয়? তাছাড়া এখন তো মাত্র সন্ধ্যা।যাওয়াই যায় ওর কাছে। ভেবেই আবদ্ধ টেবিল থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয়। তারপর বের হয়ে যায় বাসা থেকে। উদ্দেশ্য দীঘির বাসায় যাবে!
দীঘির বাসায় পৌঁছাতেই প্রথমে দীঘির রুমের জানালার কাছে দাঁড়ায় সে।দীঘি টেবিলে বসে পড়ছে! কেউ যে জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে এতে তার কোনো খেয়াল নেই। আবদ্ধ কিছুটা ফিসফিসিয়ে দীঘির নাম ধরে ডাকিতেই জানালার দিকে তাকায় দীঘি। আবদ্ধকে দেখে বড় ধরণের অবাক হয়েছে সে। তাড়াতাড়ি আবদ্ধের কাছে গিয়ে বলে উঠে…..
—” আপনি এখানে এত রাতে? ”
—” এত রাত কোই? এখন তো মাত্র সন্ধ্যা নামলো।তাছাড়া তোকে দেখতে ইচ্ছে করছিম তাই চলে এলাম। ”
—” তাই বলে এখন? সকালেই না দেখা হয়েছে আমাদের। ”
—” চুপ বেশি কথা বলবি না তো। যা আমার জন্য কফি নিয়ে আয়। তোর সাথে গল্প করব আর কফি খাবো। ”
কিন্তু দীঘি যাচ্ছে না। যে জায়গায় ছিল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এতে আবদ্ধ কিছুটা বিরক্ত হয়। বিরক্তি নিয়ে বলে…..
—” কি হয়েছে? তোকে কি বলেছি আমি পিচ্চি? ”
এবার মুখ খুললো দীঘি। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে উঠল….
—” আমাদের ঘরে কফি নেই। চা হলে হবে?”
কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আবদ্ধ দীঘির দিকে। তারপর বলল……
—” যা নিয়ে আয়। আমি অপেক্ষা করছি। ”
আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না দীঘি। চলে গেল চা বানাতে।
চা বানিয়ে রুমে আসতেই দেখে আবদ্ধ তার বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।কিঞ্চিত অবাক হলো দীঘি। পরক্ষনেই আবদ্ধের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলল…..
—” আপনার চা। ”
—” দে! ”
সোজা হয়ে বসল আবদ্ধ। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আয়েশ করে চা খাচ্ছে সে। দীঘি পাশের চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে আছে। ঠিক বুঝতে পারছে না এখন কি করা উচিত। তাই মাথা নিচু করে বসে থাকাই এখন তার জন্য উত্তম।
কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই আবদ্ধের চা খাওয়া শেষ হয়ে যায়। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে দাঁড়িয়ে যায় সে। তারপর দীঘির হাত ধরে দাঁড় করায়। দীঘির কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে দীঘির ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলে একটা আংটি পড়িয়ে দেয় আবদ্ধ। আর দীঘি! সে এখন বিস্ময়ের শেষ প্রান্তে। বুঝতে পারছে না কি করবে। সব উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। শুধু আমতা আমতা করছে সে। তা দেখে আবদ্ধ দীঘির গাল টেনে হেসে বলে উঠে….
—” এত টেন্সেন করার কিছু নেই। তোকে শুধু নিজের করে রাখলাম। বুঝেছিস? আর শুন! এটা খুলবি না কখনও। ”
ততক্ষনাত দীঘি মাথা ঝাঁকালো। যার অর্থ “খুলবে না সে”। দীঘির এমন ইশারায় মুচকি হাসলো আবদ্ধ। তারপর বলল…..
—” যাই রে পিচ্চি। খেয়াল রাখিস। ”
দীঘি কিছু বলল না। নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকলো। তার দৃষ্টি এখন হাতে থাকা আংটি-র দিকে।
.
চেয়ারে বসে হাতে থাকা রিভলভার এপাশ-ওপাশ ঘুরাচ্ছেন রেয়ান।আর আমি! আমি বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছি। ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।আমার দোষ এটাই যে উনার সেই কথাটা বলার পর আমি কিছু না ভেবেই উনাকে থাপ্পড় মেরে দিয়েছিলাম। যার ফল স্বরুপ আমাকে এভাবে রিভলভার দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন উনি। কিছুটা সাহস নিয়ে ধীর কণ্ঠে তাকে বলি…..
—” এ বন্দুক আপনার কাছে কিভাবে? ”
—” আমার সেফটির জন্য আমি রাখি। লাইসেন্সও আছে। কে জানে কখন কাজে লেগে যায়। এ-ই ধরেন এখন! আপনাকে শায়েস্তা করার জন্য এ বন্দুক-টা কত কাজে লাগছে আমার। ”
—” কি করবেন আপনি আমাকে? দেখুন আপনি একজন ডক্টর। পেসেন্টের সাথে এমন করছেন কেন? এটা কি ধরণের ব্যবহার? ”
—” আপনাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আপনি আমার পেসেন্ট ছাড়াও অন্য কিছু। সো আপনাকে কি করতে হবে না করতে হবে সেটা আপনি আমাকে বলবেন না। ”
—” প্লিজ আমাকে আমার মামীর কাছে দিয়ে আসুন।আমি থাকবো না আপনার কাছে। ”
একটা জোড়ে ধমক দিলেন রেয়ান আমাকে। আমার একদম কাছে এসে বসে আমার কপালে বন্দুক তাক করলেন। দৃঢ় কণ্ঠে বললেন….
—” কি বললেন আবার বলুন তো! ”
মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আমার। চুপ করে আছি শুধু। আমাকে কিছু বলতে না দেখে আবার ধমক দিলেন রেয়ান। এবার কিছুটা কেঁপে উঠলাম। আমতা আমতা করে বললাম…..
—” আমার ক্ষুধা লেগেছে। কিছু খাবো। ”
রেয়ান বন্দুক সরিয়ে ফেললেন আমার কপাল থেকে আর বললেন…..
—” ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আমার রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি। তারপর খাবার নিয়ে আসবো। ”
কিছু বললাম না আমি।এদিকে রেয়ান এক,দু’পা এগিয়েই দাঁড়িয়ে যান। পিছনে ফিরে আবার বলে উঠেন…..
—” ভাববেন না যে ছেঁড়ে দিয়েছি আপনাকে। শাস্তি এখনও বাকি আছে।খাবার আনছি, আমাকে খাইয়ে দিবেন আর নিজেও খাবেন। ”
বলেই চলে গেলেন উনি। রেয়ান যেতেই যেন হাফ ছেঁড়ে বাঁচলাম।তবে সব কিছু অসহ্য লাগছে। মাথায় চিনচিন ব্যথা করছে সেই কখন থেকে। এখন তো মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে ঘুমিয়ে পড়ব।কিছু ভালো লাগছে না আমার।এ-ই রুমের সব জায়গায় আলো আর আলো। আগের রুমের মতো অন্ধকার নয়। ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে মামীর কাছে চলে যাই। দরজা আটকিয়ে রুমের মধ্যে বসে থাকি শুধু।যেখানে না আছে এমন কলরব, আলো আর না আছে বিভিন্ন রুপের মানুষের আনাগোনা!
.
.
.
#চলবে🍁
Comments