তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 61

রাত ১ টা। আমি বই কোলে নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর পর করুণ চোখে সোফার দিকে তাকাচ্ছি। আমার করুণ চাহনীকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করে চলেছেন শুভ্র। ল্যাপটপের পাশেই কাঠের স্কেল! আমি শুয়ে পড়ার কথা বললেই সেই কাঠের স্কেল দিয়ে মারতে উদ্যত হন উনি।৷ আমার একটাই অপরাধ উনার দেওয়া পড়াগুলো কমপ্লিট করি নি আমি। যে পড়াগুলো এক্সাম শুরু হওয়ার আগে একঘন্টায় মুখস্থ করে ফেলি সেই পড়াটায় আজ সারাদিন ধরে পড়েও আয়ত্ত করতে পারি নি। আয়ত্ত তো দূরের কথা ইংলিশ ওয়ার্ডগুলোই মাথায় ঢুকাতে পারি নি আমি। এটা কি আমার দোষ? কখনোই আমার দোষ নয়। এই কথাটায় সেই কখন থেকে বুঝানোর চেষ্টা করছি আমি। অফিস থেকে ফিরে আমার পড়া নিতে গিয়ে আমার আগেই ফটফট করে বলে দিয়েছেন উনি,
— পড়াটা পারবে কিভাবে? শিটটা টাচ করেছিলে?(আমি কিছু বলতে চাইলে) স্টপ রোদ, তোমাকে কষ্ট করে বলতে হবে না আমিই বলছি। আমি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর ৪ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত মালিকাকার সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে কদম ফুল, হিজল ফুল পেড়েছো। ৫ টায় ভাইয়া আর বউমনির সাথে হাঁটতে বেরিয়ে হাবিজাবি খেয়ে ফিরেছো ঠিক ৭ টায়। ৭ টা – ৮ টা দিদার সাথে গল্প করছো। ৮ থেকে ৮ টা ২০ এই বিশ মিনিট শীটের পাতা উল্টিয়েছো,, আমি শিউর একটা সেনটেন্সও মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখো নি তুমি। তারপর ৯ টা পর্যন্ত চিত্রার সাথে ফোনে কথা বলেছো। ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত টিভিতে গান ছেড়ে নাচানাচি করেছো। ১০ টা থেকে ১১ টা ৩০ পর্যন্ত ফোনে ব্যস্ত থেকেছো। আর আমি বাসায় ফিরার পর আমার সাথে খাওয়া-দাওয়া করে এখন এখানে দাঁড়িয়ে আছো। কি ঠিক বললাম না?(ভ্রু নাঁচিয়ে)
আমি শুধু অবাক চোখে তাকিয়েই ছিলাম তখন। এতো টাইম মেইনটেইন করে তো আমারই মনে নেই তাহলে উনি কিভাবে? কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে উনার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনই গম্ভীর স্বরে বলে উঠেছিলেন,
— নো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল রোদপাখি। আই এম অলওয়েজ আ স্ট্রিক্ট টিচার। সো, চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসো। পড়া কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত ঘুমের নাম মুখে নিবে না। গো…

উনার সেই কথার ফলশ্রুতিতেই এখন আমি বই কোলে বসে আছি। কিন্তু পড়া নামক জিনিসটা মাথায় ঢুকছেই না। কিছুক্ষণ থম ধরে বসে থেকেই বই আর শীটগুলো পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালাম আমি। উনি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই দৌঁড়ে গিয়ে উনার কোলে বসে পড়লাম আমি। আমার বিহেভিয়ারে উনি যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
— এসব কি রোদ? উঠো!
আমি উনার বুকে মুখ গুঁজে আরাম করে বসে ধীর কন্ঠে বলে উঠলাম,
— না।
— না মানে? রোদ তোমার পড়া কমপ্লিট হয় নি।
— না হোক। আমি এখন ঘুমাবো। একদম ডিস্টার্ব করবেন না।
— রোদ। কোল থেকে উঠে গিয়ে পড়তে বসো।
— না। পড়বো না। আর আপনার কোল থেকেও উঠবো না। বিছানায় বসলে ভয় লাগে।
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকালেন উনি। কপাল কুঁচকে বলে উঠলেন,
— কিসের ভয়?
— আপনার ভয়।
— আমাকে ভয় পাচ্ছিলে? তো এখন যে একদম কোলে উঠে বসে আছো। এখন ভয় লাগছে না?
— না লাগছে না। যে জিনিসটা দূর থেকে ভয় লাগে সেটা কাছ থেকে ভয়ঙ্কর লাগে না। যেমন দূর থেকে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি আপনি রেগে গিয়ে চড় বসাবেন গালে। কিন্তু এইযে আমি আপনার এতো কাছে অথচ এখন আপনি তেমন কিছুই করবেন না। কারণ আমি জানি আমি যদি আপনার খুব কাছে থাকি তাহলে আপনি রেগে থাকতে পারেন না।
আমার কথায় হেসে উঠলেন শুভ্র। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
— ভালোবাসি পিচ্চি।
আমিও হাসলাম। উনার কথার উত্তরে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ উনার বুকের সাথে মিশে গেলাম। উনি কানের কাছে ফিসফিসয়ে বলে উঠলেন,
— যাও, বিছানায় গিয়ে ঘুমাও। আমার কাজ আছে।
— উহু।

— কি উহু?
— এখানেই ভালো লাগছে। এখানেই ঘুমাবো। সরবো না।
উনি সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলেন। কপালে গভীরভাবে চুমু দিয়ে বলে উঠলেন,
— ওকে ঘুমাও।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো ছয় ছয়টি মাস। এই ছয় মাসে বিবাহিত জীবন হিসেবে শুভ্রর পড়াশুনো নিয়ে প্যারা ছাড়া আর কোনো কিছুই তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তবে হ্যাঁ ছয়মাস আগের রুহি আপু আর এখনকার রুহি আপুর মাঝে বিরাট তফাৎ। আগে ছিলো শুকনো বাচ্চা টাইপের মেয়ে আর এখন একদম মোটো গুলুমুলু টাইপ মেয়ে। এখন আটমাস চলছে ওর। মামানি তো এখনই শপিং করা শুরু করে দিয়েছেন। খেলনায় খেলনায় পুরো ঘর বাড়ি ভরিয়ে তুলছেন সবাই। শুভ্রর উৎসাহও কম নয়। সবার মাঝে অভ্র ভাইয়ার মনটাই বেশ খারাপ। বেচারা টেনশনে টেনশনে শুকিয়ে গিয়েছেন একদম। আপুর হাতে-পায়ে পানি এসে অবস্থা বেশ খারাপ। একা হাঁটাটাও তার জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে আজকাল। ব্যাপারটায় আমিও বেশ চিন্তিত। কখন কি হয়ে যায় কে জানে? দু’দিন আগেই সিমিস্টার ফাইনাল শেষ হলো আমার। এবার থার্ড ইয়ারে উঠবো। শুভ্রর ছয় মাসের যন্ত্রণা যে কতোটুকু কাজে লাগবে আল্লাহ মালুম। বিকেলে আপুর সাথে খানিকক্ষণ গল্প করে রুম গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎ কোথা থেকে শুভ্র এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। ঘাড়ে মুখ গুঁজে ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
— সাহেল আসছে।
আমি উনার শার্ট ভাঁজ করতে করতে বললাম,

— তাই নাকি? দারুন তো। আপনার জন্য তো ঈদ লেগে গেলো মাষ্টার মশাই।
উনি হাসলেন। ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে টি-শার্টটা হালকা উঠিয়ে শক্ত করে কোমর চেপে ধরে বলে উঠলেন,
— সাথে ওর বউও আসছে।
আবার হাতটা থেমে গেলো আমার। উনার স্পর্শে শিহরিত হয়ে কিছুটা অবাক হয়েই বলে উঠলাম,
— বিয়ে করেছেন নাকি? বাহ্ শেষমেশ কথাটা রাখলেন উনি। না জানিয়ে হুট করেই বিয়ে করে নিলেন। তো? কবে করলেন বিয়ে?
শুভ্র আমার ঘাড়ে আরেকটা চুমু দিয়ে আমাকে ছেঁড়ে দিয়ে ড্রেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। টাইয়ের নাটটা ঢিল করতে করতে বলে উঠলেন,
— ওর বউ প্রেগনেন্ট রোদপাখি।
শুভ্রর বলা কথাটা কানে বাজতে লাগলো আমার। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। মুখটা যেনো অটোমেটিকলি “হা” হয়ে গেছে আমার। মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছে, “কেমনে কি? ”
#চলবে…
(পার্ট ছোট হওয়ার জন্য সরি!)