তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 52

হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার। জানালা দিয়ে কড়া রোদ এসে পড়ছে বিছানায়। কটা বাজে কে জানে? বালিশের নিচে থেকে অলস হাতে ফোনটা নিলাম সময় দেখবো বলে। এমা! ১২ঃ৩০ টা! ১২ঃ৩০ টা বেজে গেছে আর কেউ আমায় ডাকলো না? কি অদ্ভুত! আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসতেই অবাক হলাম আমি। সারা বাড়ি মোটামুটি সাজানো হয়েছে। কিচেন থেকে বাহারী রান্নার সুঘ্রাণ ভেসে আসছে নাকে। কাহিনী কি? কপাল কুঁচকে একঝাঁক চিন্তা মাথায় নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম। ভাইয়া সোফায় বসে গেইম খেলছে। আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলাম –
.
ওই? অফিস যাস নি?
.
গেলে এখানে থাকতাম কি করে? দিন দিন তো হাদা নাম্বার ওয়ান হচ্ছিস।
.
তুই হাদা, তোর বউ হাদা। এনিওয়ে…কাহিনী কি রে ভাইয়া? আজকে মা জননী এতো শান্ত কেন? চিল্লাইয়া আমার ঘুমও ভাঙালো না। তুই অফিস যাস নি তবু কিছু বলছে না। এক্চুয়াল জটটা কোথায় ভাইয়া? তোকে মেয়েপক্ষ দেখতে টেখতে আসছে না তো?
.
আমার কথায় ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো এক ধমক-
.
ওই? কি বলতে চাস তুই? আমাকে কেন দেখতে আসবে? আমি কি মেয়ে? বেয়াদব মাইয়া। (আবারও ফোনটা হাতে নিয়ে) দেখতে তো আসছে তোকে।
.
আমাকে মানে?(চিৎকার করে) আমাকে দেখতে আসছে মানেটা কি? আরে আমার বর আছে। আমাকে দেখতে আসে কোন শালায় ?(রাগী গলায়)
.
আমার কথায় ভাইয়ার কোনো ভাবান্তর হলো না। ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলো –
.
শালা না দুলাভাই! দুলাভাই দেখতে আসছে।
.
মানে?(অবাক হয়ে)
.
মানে তোর বর আসছে উইথ হিজ ফ্যামিলি। বউকে নাকি অনেকদিন দেখে না। আহা! কতো প্রেম! (ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই) এমনে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। যা আমার জন্য একগ্লাস পানি আন। ভাইয়ের সেবা কর বুঝলি….তোর জন্য পুরো একটা দিনের ছুটি কাটলো আমার।।
.
তোকে বলছি আমি বসে থাকতে। যা না অফিসে,,,অফিসে তুমি যে তোমার সুন্দরী পি.এ র সাথে লাইন মারতে যাও তা আমি খুব ভালো করেই জানি। হুহ।
.
ভাইয়া এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর বিস্মিত গলায় বলে উঠলো –
.
আমার পি.এ একজন পুরুষ। ম্যান্টাল! না জেনে কথা কস কেন?
.
ভাইয়ার কথায় দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়েই কেটে পড়লাম। কিচেনে একটু উঁকিঝুকি দিয়েই রুমে ঢুকে গেলাম। সিরিয়াসলি শুভ্র আসছেন? কিন্তু হঠাৎ? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটা লং শাওয়ার নিয়ে শরীরে জড়ালাম কচুপাতা রঙের শাড়ি। চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। কেন জানি হাজার মুছলেও আমার চুল বাবাজি শুকানোর নামই নেয় না উল্টো পানিতে ভাসিয়ে বন্যা বানিয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ফোনের রিংটোন কানে এলো। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো-
.
এই রোদপাখি? ব্যাগ গুছিয়েছো?
.
ব্যাগ গুছাবো মানে?(অবাক হয়ে)
.
কেনো কাল রাতেই তো বললে। ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসবে।
.
আরেহ্ আমি তো মজা করেছি। আ..
.
এটুকু বলতেই পেটে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। কাঁধে গরম নিঃশ্বাসের বহর ফেলে,, ঠোঁট ছুইয়ে সেই চেনা কন্ঠটা বলে উঠলো –
.
কিন্তু আমি তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছি রোদপাখি।
.
আমি উনার দিকে ফিরতেই মিষ্টি হেসে তোয়ালে টা টেনে নিয়ে চুল মুছতে লাগলেন উনি। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি টেনে বলে উঠলেন –
.
ভেজা চুলো তোমাকে একদম…..
.
একদম কি?(ভ্রু কুঁচকে)
.
বাকিটুকু ও বাড়িতে যখন যাবে তখন বলবো। এখন বললে লজ্জা পাবে।
.
আমি কিছু বলবো তার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ কানে এলো। আমরা তাকাতেই অভ্র ভাইয়া হাসিমুখে বলে উঠলো –
.
সরি গাইস! আজ কিন্তু ইচ্ছে করে ডিসটার্ব করি নি। একটা কাজে এসেছিলাম।
.
অভ্র ভাইয়ার কথায় শুভ্রর তেমন একটা ভাবাবেগ হলো না। নিজের মতো চুল মুছতে মুছতে বলে উঠলেন-
.
সেদিনের ডিস্টার্বের অপেক্ষায় এই ডিস্টার্ব কিছুই না। রিভেঞ্জ আমিও নিতাম, একমাত্র বউমনির কথা ভেবে তোকে ছেড়ে দিলাম। যাহ্ ভাই জি লে আপনি জিন্দেগী। এখন বল কি কাজ?আমার বউয়ের কাছে তোর কিসের কাজ?
.
ওই ওটা শুধু তোর বোন সরি সরি বউ হে হে শুধু তোর বউ না। আমার বোন, শালিকা কতো কিছু। সো সাইডে যা।
.
কথাটা বলে শুভ্রকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো অভ্র ভাইয়া-
.
রোদ? ব্যাথার স্প্রে আছে?
.
হ্যা আছে। কিন্তু কেন ভাইয়া? কোথাও ব্যাথা পেয়েছেন?
.
আরে না। রুহির মেবি মাথা ধরেছে। কখনো তো কিছু বলেই না….দাও তো একটু স্প্রে টা। ওর রুমে খুঁজে পাচ্ছি না।

আমি ড্রয়ার থেকে স্প্রে টা নিয়ে উনাকে দিতেই একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন –
.
থেংকিউ বোন। আর হ্যা…হলুদের শুভেচ্ছা।
.
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলেন উনি। আমি অবাক চোখে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্রর দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম –
.
হলুদ শুভেচ্ছা মানে?
.
শুভ্র হাসলেন। আমাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন –
.
তুমিই তো বলেছিলে আজ বাসায় যাবে। বউ আমার কিছু চাইবে আর আমি দিবো না তা তো হয় না। সো…বউ নিতে আসছি। এখন সাজুগুজু করে ড্রয়িং রুমে চলে যাও সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে। গিয়েই দিদাকে সালাম করবে। ওরা কিন্তু তোমায় আজ দেখতে এসেছে। পাত্রী দেখা যাকে বলে আরকি। তারপর পছন্দ হলে আংটি পড়াবে। হয়ে যাবে আমাদের এনগেজমেন্ট।
.
আর যদি পছন্দ না হয়?(করুণ মুখে)
.
ধূর বোকা! পছন্দ হবে না কেন? আর এগুলো তো জাস্ট সবাই মিলে মজা করার জন্য। আমাদের বিয়েতে কিছু হয় নি তাই মেয়ে দেখা থেকে শুরু করে রিসেপশন সব হবে। বিকেল তিনটায় হলুদ, রাত আটটায় বিয়ে, রাত দশটায় কনে বিদায়, ১২ টায় বাসর(চোখ টিপে) আর কাল রিসেপশন। হয়ে গেলো সব…
.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। একদিনেই এতোকিছু? কখন প্ল্যান করলেন এসব? আর গেষ্ট?
.
আচ্ছা? বিয়েতে শুধু আমরাই থাকবো? মানে গেস্ট?
.
নো টেনশন বিবি সাহেবা….কাছের আত্মীয় সবাইকে বলা হয়ে গেছে। সবাই তিনটার মধ্যে চলে আসবে। আর বাকি গেষ্টদের রিসেপশনে ইনভাইট করে হয়েছে। আপনার বেস্টু আর তার হাফ জামাইও কিন্তু অলরেডি চলে এসেছে। শুধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটাই এলো না। খুব মিস করছি ওকে…..
.
কথাটা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে জানালার দিকে মুখ করে পকেটে হাত দিয়ে স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়ালেন উনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলে উঠলেন –
.
এখন হয়তো ওদিকে রাত। সাহেল ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। ওকে ছাড়া কখনো কিছু করি নি আমি আর আজ….ওকে খুব মিস করছি রোদপাখি।
.
কথা বলতে বলতে হঠাৎই হেসে উঠে বলে উঠলেন উনি-
.
সাহেল বলেছে ও হুট করেই বিয়ে করে ফেলবে। রিভেঞ্জ ইজ রিভেঞ্জ ইউ নো? আমাকে বলবেই না তারপর হুট করে বউকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবে, এই নে তোর ভাবি!!
.
আমি মায়া মায়া চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কি আশ্চর্য বন্ধুত্ব উনাদের…আমি মুখে হাসি টেনে কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনই দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে এলো চিত্রা। ওর চোখে-মুখে খুশি যেনো ধরছেই না। আমার সামনে এসে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলে উঠলো –
.
এই যে মিষ্টার! এখানে কেন? মেয়ে দেখতে এসে সরাসরি মেয়ের রুমে ঢুকে গেছেন। কি সর্বনাশের কথা! যান বেরুন….(আঙ্গুল নেড়ে)
.
শুভ্র দুষ্টু হাসি টেনে নিয়ে চিত্রার মাথায় চাটি মেরে বেরিয়ে গেলেন। চিত্রা সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো –
.
চল চল সাজাই। আজ বুঝবা শোপিজের মতো বসে থাকতে কেমন লাগে….হে হে হে।
.
চিত্রার কথা শেষ না হতেই রুমে ঢুকলো আপু। হাতে খয়েরী রংঙের শাড়ি। শাড়িটা বিছানায় রাখতে রাখতে বলে উঠলো –
.
আমি দুই পক্ষেই বুঝলি রোদু? এখন তোর পক্ষ হয়ে সাজাবো আর দেখার সময় দেবরের জন্য পাত্রী চুজ করার মতো উল্টে পাল্টে দেখবো। হিহিহিহি।
.
আপু আর চিত্রা মিলে আমাকে সং সাজিয়ে দিলো মুহূর্তেই। মাথায় ঘোমটা এঁটে দিয়ে এই সেই কতো উপদেশ ছুঁড়ছে তারা। চিত্রার ভাবভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে আমি কোনো যুদ্ধে যাচ্ছি আর সে আমার প্রশিক্ষণ দাতা। অবশেষে মার তাড়াহুড়োই আমাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাওয়া হলো। সোফায় সবাই আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে। ভাবটা এমন যেন জীবনে প্রথমবার তারা আমাদের চৌকাঠ মারিয়েছে। আমি একটু এগিয়ে যেতেই মামানি মিষ্টি হেসে বললেন- ” বসো মা” আমি চুপচাপ বসে পড়লাম। ওদের তাকানোর ভাব দেখে নিজেকে কেমন এলিয়েন এলিয়েন লাগছে আমার। আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বসে আছি। হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন দিদা-

নাম কি?
.
জি? (অবাক হয়ে)
.
নাম কি নাম?এই? মেয়ে কি কানে কম শুনে নাকি রেনু?(মামানির কানে ফিসফিসানির মতো করে) কি হলো গো মেয়ে নাম বলো।
.
জি আমার নাম নৌশিন আহমেদ রোদেলা।
.
ওহ্ ভালো নাম। তা পড়াশোনা কতদূর?
.
জি অনার্স করছি। এবার ২/১ এ আছি।
.
পাশ থেকে মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন মামু –
.
তা মা আয়তুল কুরসি পারো?
.
আমি বিস্ফারিত চোখে মামুর দিকে তাকালাম। এসব কি হচ্ছে? আমি একটা ঢোক গিলে বললাম- ” জি, পারি।” দিদা এবার গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন-“শুনাও দেখি” এবার কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা আমার। অসহায় চোখে মার দিকে তাকাতেই মা আগুন চোখ নিয়ে বলতে ইশারা করলো। ভাবখানা এই,এবার বিয়েটা ভাঙলে তোর খবর আছে। আমি মুখ ফুলিয়ে এক নিঃশ্বাসে আয়তুল কুরসী বলা শেষ করে আড়চোখে শুভ্রর দিকে তাকালাম। এমা! উনি আপু আর অভ্র ভাইয়ার সাথে কি নিয়ে হাসাহাসি করছেন। শালা খাটাস একটা….তোকে তো….!! এটুকু ভাবতেই পাশ থেকে মামানি বলে উঠলেন-
.
রান্নাবান্না পারো মা?
.
জি..

কি কি রাঁধতে পারো?
.
মোটামুটি সব।
.
দিদা এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
.
মাথার ঘোমটা সরিয়ে চুলগুলো খুলে দাও তো দেখি। চুল আছে তো? একটু হেঁটে দেখাও তো।
.
আমি রাগ নিয়ে মাথার ঘোমটা টা সরাতেই মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন মামানি-
.
মাশাআল্লাহ!! আপা?মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। ছেলে মেয়ে আলাদা একটু কথা বলে নিক। ততক্ষণে আমরা বাকি আলাপ সেরে ফেলি।
.
আমি সরু চোখে তাকিয়ে আছি। বলে কি? নতুন করে আলাদা কথা বলার কি আছে?উনাকে কি আমি নতুন চিনি নাকি? তবু আম্মুর সম্মতিতে উঠতে হলো। উনাকে নিয়ে রুমে ডুকতেই ভাব নিয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
তো?আপনার নামটা যেনো কি? আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো সমস্যা নেই তো?
.
কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে এসে দুই হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন –
.
কি?সমস্যা আছে?
.
#চলবে🍁