তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 38

আপনাকে জ্বালাচ্ছি আর আমি??ইম্পসিবল… সারাদিনে একবারও আপনার সাথে দেখা হয় নি আমার….তাহলে জ্বালালাম কিভাবে শুনি??
.
আমার কথায় হয়তো হাসলেন উনি…কিছুক্ষণ পর বলে উঠলেন –
.
তুমি তো প্রাণনাশীনি….দূর থেকেও খুন করে দিতে পারো আমায়….তারমধ্যে বসে আছো আমার বুকের এই মধ্যে খানটায়…আর ক্রমাগত আঘাত করে চলেছো।এই মেয়ে সত্যি বলো তো?মায়া দয়া নেই বুঝি তোমার??
.
উনার কথায় থতমত খেয়ে গেলাম আমি…কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না একদম। আচ্ছা আমি কি লজ্জা পাচ্ছি??এমা!!আমি তো সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি…ইশশ।নিজের লজ্জাকে ধামাচাপা দিয়ে মিনমিন করে বলে উঠলাম –
.
আমার যথেষ্ট দয়া মায়া আছে।।আপনি জানেন? আমি সবাইকে কতো হেল্প করি…ভিক্ষুককে ভিক্ষাও দেই…যারা মিথ্যে বলে ভিক্ষা চায় তাদেরও দিই….তাহলে আমি নির্দয় কি করে হলাম বলুন?
.
সবার প্রতি এতো দয়া?শুধু আমার প্রতিই তুমি এতো নির্দয়??কেন বউ কেন?
.
উনার মুখে “বউ” ওয়ার্ডটা শুনেই কেঁপে উঠলাম আমি।।কথাগুলো আটকে গেলো গলায়…তবু কাঁপা গলায় বললাম-
.
কি চায় আপনার??কি করলে নির্দয় থেকে সহৃদয়বান হবো আমি?
.
তোমাকে চাই।। এই তুমি টাকেই দিয়ে দাও আমায়…দিবে??
.
উনার কথায় আবারও থম মেরে গেলাম আমি….উফফ..এই লোকটা অলওয়েজ এমন সব কথা বলে কেন শুনি??আমাকে লজ্জায় ফেলার কতো প্রচেষ্টা তার…কিছুক্ষণ চুপ থেকে “আপনার পাঁচমিনিট হয়ে গেছে” কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম আমি।।ফোনটা কেটে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই চোখদুটো বুজে নিলাম। ।চোখ বুঝতেই ঘুমেরা যেনো পালালো আর মাথায় চাপলো উনার বলা কথাগুলো…”উফফ কি লজ্জা!!” কথাটা বলেই কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম আমি।।আজ যে আর ঘুম হবে না তা বেশ বুঝা হয়ে গেছে আমার….
.
🍁
.
সাহেল ভাইয়া দেশ ছেড়েছে আজ একসপ্তাহ হতে চললো।।।শুভ্রও খুব বিজি থাকে এখন…দিনে ভার্সিটিতে ক্লাস নেয় আর সন্ধ্যা থেকে অফিস।।ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগ দেওয়ার কোনো ইচ্ছেয় ছিলো না তার কিন্তু ভার্সিটি স্যারদের রিকুয়েষ্টে একরকম বাধ্যই হয়েছেন উনি।।এখন উনার পাত্তা পাওয়ায় দায় হয়েছে আমার….এখন ভার্সিটিতে স্টুডেন্ট নয় টিচার হিসেবে যান উনি… শুধু শুধু যান না….একদম সেজেগুজে সং সেজে যান….উনাকে ফর্মাল গেটাপে দেখে আমার সামনেই হাজারো মেয়েরা হা-হুতাশ করে মরে…..ইচ্ছে তো করে একেকটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।।এজন্যই বলেছিলাম এতো হ্যান্ডসাম পোলা বিয়ে করবো না…কিন্তু ওইযে?কপাল!!আগের মতো এখন আর সুযোগ পেলে আমার কাছে আসার সুযোগ নেই তার….. টিচার মানুষ… এখন কি আর রোমিও গিরি করলে চলে??আমি যে উনার লাইফে এক্সিট করি তাই হয়তো ভুলে গেছেন উনি।।মাঝে মাঝে কান্না পায় খুব…আমাদের সম্পর্কটা ঠিক কেমন সম্পর্ক তাই বুঝে উঠতে পারি না আমি।।সত্যিই কি স্বামী স্ত্রী আমরা??হাজারো অভিমান নিয়ে আজ তিন ধরে আমিও বন্ধ করেছি ফোন..বন্ধ করেছি ভার্সিটি যাওয়া,,,,,রাত প্রায় ১১ঃ৩০ বাজে। বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলাম আমি…শরীরে কারো নিঃশ্বাস পড়ায় হঠাৎ ই ঘুমটা ছুটে গেলো আমার….চমকে গিয়ে চোখ মেলতেই দেখি শুভ্র!!চোখদুটো লাল হয়ে আছে তার…চোখে যেনো হাজারো তৃষ্ণা আর নেশার ছড়াছড়ি!!এতো রাতে উনাকে আমার বিছানার উপর দেখে হালকা চেঁচিয়েই বলে উঠলাম আমি-
.
আপনি??
.
আমার চেঁচানোতে যেনো বেশ বিরক্ত হলেন উনি।আমার উপর থেকে সরে গিয়ে কপাল কুঁচকে বললেন-
.
আহ্ রোদ…অযথা চেঁচাচ্ছ কেন?আমি চুরি করে ঢুকি নি তোমার রুমে….সবার সামনে দিয়েই ঢুকেছি…দেখি সরো তো শুতে দাও আমায়।।তিনদিন যাবৎ ঘুমাই না….একটু ঘুম পাড়াও তো আমায়….
.
এবার আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে,,, ফর্মাল গেটাপেই আছেন উনি….অফিস থেকে এলেন বুঝি??জুতোটাও তো খুলেন নি দেখি…ব্লু শার্ট আর ইয়েলো জিন্সে একদম চকলেট বয় লাগছে উনাকে…কিন্তু মুখটা কেমন যেনো শুকনো ফ্যাকাশে হয়ে আছে তার….আমি নরম গলায় বললাম-
.
এভাবেই ঘুমাবেন?ড্রেস চেঞ্জ করবেন না?খেয়েছেন এসে?
.
এবার উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন –
.
ও মাই গড…আমার খাওয়া নিয়েও তাহলে চিন্তা হয় তোমার??আমি তো ভেবেছিলাম,, আমি মরে গেলেও তেমন একটা যায় আসবে না তোমার…
.
এভাবে কথা বলছেন কেন?কি…
.
আমি এটুকু বলতেই আবারও আমার উপরে এসে পড়লেন উনি….বিছানায় চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন –
.
বুঝো না তুমি কেন বলি??সত্যি বুঝো না??তুমি তো বাচ্চা নও রোদ…যথেষ্ট এডাল্ট।।তবু কেন এমন করো??তিন তিনটা দিন ধরে তোমার মুখ দেখা তো দূর কন্ঠটাও শুনতে দাও নি আমায়…কেন বলো তো?কি করেছি আমি?সারাদিন এতো কাজের চাপের পর এই মানুষিক যন্ত্রণা সহ্য হয় না আমার,, রোদ।। তুমি কি পাগল করে ফেলতে চাও আমায়??নাকি মেরে ফেলতে চাও??যা ইচ্ছে করো…কিচ্ছু বলবো না…মেরেই ফেলো…
.
উনি কি বলছেন কিছুই যেনো কানে ঢুকছে না আমার।আমি হতভম্ব চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি …কোনোরকম ডান হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উনার কপালে হাত রেখে কাঁপা গলায় বলে উঠলাম আমি-
.
আপনার তো জ্বর….. অনেক জ্বর!!!এতো জ্বর নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন??
.
উনি বাঁকা হেসে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়েই পাশে শুয়ে পড়লেন।।চোখদুটো বন্ধ করে বললেন-
.
তাতে তোমার কি?হতে দাও জ্বর….পুড়ে যাক শরীর… এমনিতেও তো পুড়েই মরছি।।(জোরে শ্বাস নিয়ে) মাথায় একটু হাত রাখো তো রোদপাখি….এবার একটু ঘুমোতে চাই আমি।।শান্তির ঘুম!
.
আমি এবার উঠে বসে আবারও উনার কপালে হাত রাখলাম।হাত-পা কাঁপছে আমার….কি ভয়ানক জ্বর উনার।।শরীরটা যে পুড়ে যাচ্ছে উনার।।নিজের অজান্তেই চোখ ভরে এলো আমার….কান্না পাচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে আমার।।কেন জ্বর হবে উনার?পুরো পৃথিবীতে কি মানুষের অভাব হয়েছিলো যে উনারই জ্বর হতে হলো??মুখ-চোখটা কেমন শুকিয়ে গেছে উনার….কথাটা ভেবেই মুখটা চেপে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠলাম আমি।।এবার উনি চোখ মেলে তাকালেন…..আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন –
.
কাঁদছো কেন রোদপাখি??
.
আমি মাথা নিচু করে কেঁদেই চলেছি….উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন –
.
আমার জন্য কাঁদছো?আরে বাবা…এই সামান্য জ্বরের জন্য কাঁদতে হয় নাকি??মরে তো যাই নি…. কান্না বন্ধ করো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার….
.
উনার কথায় কান্নার গতি বাড়লো বয় কমলো না।।উনি এবার আমার হাতটা টেনে নিজের কাছে নিয়ে একহাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়..মুচকি হেসে বলে উঠলেন –
.
এই পাগলী কাঁদছো কেন?তুমি আছো তো পাশে….ঠিক হয়ে যাবো আমি।।সামান্যই তো জ্বর…
.
উনার কথার জবাবে নাক টেনে বলে উঠলাম আমি-
.
একদম সামান্য নয়…অনেক জ্বর উঠেছে আপনার।।এখন কি করি আমি??(অসহায় মুখে)
.
আমার কথা শুনে হাসলেন উনি।।বুঝতে পারলাম হাসতেও কষ্ট হচ্ছে উনার….আমাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন –
.
কিচ্ছু করতে হবে না তোমায়….শুধু আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকো রোদপাখি।।
.
উনার কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে এবার…আমি উনাকে কোনোরকম সরিয়েই বাথরুম থেকে পানি আর টাওয়াল ভিজিয়ে আনলাম।।উনি আমার কান্ড দেখে হাসছেন…. আশ্চর্য হাসার মতো কিছু করেছি নাকি আমি??উনার জুতো মোজা খুলে…শার্টের বাটনে হাত দিতেই বলে উঠলেন উনি-
.
তোমার মতলব কি রোদপাখি??আমার অসুস্থতার সুযোগ নিবে না তো??(দুর্বল হাসি দিয়ে)
.
আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে তবু উনার ফাজলামো যায় নি মোটে।।এদিকে নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি তার উপর কিসব বলছেন উনি…অনেক কষ্টে শার্টটা খুলে শরীর মুছে দিয়ে কপালে জলপট্টি জড়ালাম….কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমছে না…বরং আরো বেড়েই চলেছে….ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে আমার।।আবারও কান্নারা বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে….মাকে ডাকতে হবে…এক্ষুনি ডাকতে হবে!!কথাটা ভেবে বিছানা থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই উনি হাত চেপে ধরলেন আমার….. আধো আধো কন্ঠে বলে উঠলেন –
.
কককোথায় যাচ্ছো?
.
মাকে ডাকতে….আপনি থাকুন আমি এক্ষুনি আসছি…এক্ষুনি!!
.
না…যাবে না তুমি।।আমার সাথে থাকো প্লিজ….তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে চাই আমি…তোমার শরীরের ঘ্রাণ পেতে চাই।।যেয়ো না কোথাও…যেয়ো না…
.
উনার হাতটা ছাড়িয়ে দৌড়ে মার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম।।কান্না আটকাতেই পাচ্ছি না আমি…মার রুমে কয়েকবার নক করেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি….কিছুক্ষণ পরেই খুলে গেলো দরজা।।আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে অবাক চোখে বলে উঠলেন বাবা

কাঁদছিস কেন মামনি?ভয় পেয়েছিস?ভয় পাবি কি করে?তোর রুমে না শুভ্র আছে!!
.
কান্নার চোটে কথায় বলতে পারছি আমি… গলায় কথাগুলো আটকে আছে যেনো।।মা চুলের খোপা করতে করতে এসে দাঁড়ালেন বাবার পাশে….উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলেন –
.
কাঁদছিস কেন রোদ??কি হয়েছে?শান্ত হো মা…
.
মমা…উনার খুব জ্বর…প্লিজ ডক্টরকে ফোন করো…প্লিজ!!
.
ঠিক তখনই দরজা খুলে উঁকি দিলো ভাইয়া….ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো –
.
কাঁদছিস কেন বুড়ি??কি হয়েছে?
.
উনার খুব জ্বর ভাইয়া….
.
উনি টা কে??
.
শুভ্র ভাইয়া….
.
শুভ্র তার ভাই হয় নাকি??আশ্চর্য!! আমি তো ভেবেছিলাম ও তোর বর…
.
ফাজলামো বাদ দে ভাইয়া….উনার এই অবস্থায় তুই মজা করছিস?? (কাঁদতে কাঁদতে)
.
🍁
.
ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে আছি আমি….আর মাঝে মাঝে হেঁচকি তুলে চলেছি।।আমার পাশে মা….টেনশনে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আছে আমার।।জ্বরের তীব্রতায় জ্ঞান হারিয়েছেন শুভ্র…ডক্টর প্রায় আধাঘন্টা ধরে চেকাপ করে চলেছেন….একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন ডক্টর..
.
নিউ জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা নিজেদের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে….এমনি এখন জ্বরের মৌসুম…. তারওপর সারাদিন নিশ্চয় বেগার খাটে।। অতিরিক্ত শারীরিক এবং মানুষিক পরিশ্রমের জন্য এমনটা হয়েছে….তারমধ্যে কিছুদিন যাবৎ হয়তো খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুই ঠিক ভাবে করে না।।প্রেশারের অবস্থাও ভয়াবহ….কিছুদিন ফুল রেস্টে রাখুন উনাকে…খাবারে দাবারের দিকেও খেয়াল রাখবেন… আমি সিম্পল কিছু মেডিসিন দিচ্ছি…ঠিকঠাক কেয়ার নিলে জলদি সেরে উঠবেন ইনশাআল্লাহ!!
.
ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ আমার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন –
.
কে হয় তোমার?স্বামী?(আমি মাথা নাড়তেই মুচকি হাসলেন উনি) ঠিক হয়ে যাবে মা…চিন্তা করো না!!এখন বুঝতে পারছি কেনো এতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উনি….বউ যদি একটু অসুস্থতায় এতো কাঁদে…তাহলে বউয়ের আদরমাখা কান্না দেখতে যেকোনো ছেলেই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে রাজি হয়ে যাবে….আমি তো এই বয়সেও রাজি…হা হা হা!!
.
উনার কথায় হালকা হাসলাম আমি।।
.
.
রাত প্রায় ১ঃ৩০…. আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছি,,উদ্দেশ্য উনার জন্য স্যুপ বানাবো ….স্যুপটা চুলোয় দিতেই চিন্তিত মুখে মা এসে দাঁড়ালেন আমার পাশে।।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন-
.
আমি একটা জিনিস ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না রোদ…(আমি চোখে প্রশ্নবোধক চিন্হ ঝুলিয়ে উনার দিকে তাকাতেই)শুভ্রদের খুঁজে পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি কখনোও তোকে আর শুভ্রকে একসাথে দেখি নি।।তোদের মধ্যে কখনো “কেমন আছো” টাইপ কথাও হয় না…দুজন অলওয়েজ দু’দিকে।।শুধু মাত্র রুহির এনগেজমেন্টে আদিবের ওমন বিহেভিয়ারের পর শুভ্র কিছুক্ষণের জন্য তোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো তবুও সেটা ছিলো সাময়িক।।তুই ওর বন্ধু সাহেলের সাথে যতটা কথা বলিস শুভ্রর সাথে তার তিন ভাগের একভাগও বলিস না….আমার তো সন্দেহ হয় তোদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কোনো কথায় হয় নি….তবুও তোদের দেখে মনে হয় তোদের দু’জনের মধ্যে খুব ভালো একটা কেমিস্ট্রি আছে…কিন্তু কিভাবে??অদ্ভুত…

মার এমন একটা কথার উত্তর হিসেবে ঠিক কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না আমি।।সত্যিই তো ফ্যামিলি মেম্বারদের সামনে কখনো কথা বলি নি আমরা….হয়তো প্রয়োজনই পড়ে নি।।মাকে যে কি করে বলি…তিনি তার ভাতিজাকে যতোটা ভদ্র ভাবেন সে ততটা ভদ্র নয় আস্ত শয়তান…..তাদের অগোচরে অনেক কিছুই করে সে….অনেক ভয়ানক কিছু…কিন্তু চোখে পড়ে না মোটেই।।থেংক গড চোখে পড়ে না…নয়তো নিজের মেয়ের সাথে কি কি করেছে তা দেখলে নির্ঘাত হার্ট করতেন উনি।।নিজের মনেই একটু হেসে স্যুপটা বাটিতে নিয়েই মার দিকে তাকালাম।।উনি এখনও বেশ চিন্তিত যেনো নিউটনের সূত্রের মতো মহামূল্যবান কোনো সূত্র এখনি আবিষ্কার করে ফেলবেন উনি….আমি মুচকি হেসে মাকে বললাম-
.
মা উনি একা আছেন….তুমি চিন্তা করতে থাকো…আমি গেলাম…
.
মা চিন্তিত মুখেই ঘাড় নাড়ালেন…রুমে এসে স্যুপটা টেবিলে রেখে উনার কাছে যেতেই দেখি জেগে গেছেন উনি…আমাকে দেখেই হেঁচকা টানে নিজের উপর ফেলে শক্ত করে চেপে ধরলেন আমায়….এতো জ্বরেও এতো জোড়?? নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতেই বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন উনি-
.
একদম নড়বে না…ছাড়বো না আমি।।ছাড়বো না…ছাড়বো না।।তুমি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাও কেন?
.
আমি কখন পালালাম??(অবাক হয়ে)
.
পালালেই তো…আমায় রেখে কোথায় গিয়েছিলে তুমি??তুমি না আমার বউ??তুমি শুধু আমার কাছে থাকবে…আর কোথাও যাবে না।।সাহেলের কাছেও না….ওই ওই হারের ডাক্তারের কাছেও না…তুমি শুধু শুভ্রর সাথে থাকবে…শুভ্রর সাথে থাকবে…শুভ্রর সাথে থাকবে…নয়তো শুভ্র কাঁদবে….(মুখ ফুলিয়ে)
.
আমি এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম।উনার কপালে হাত রেখে বুঝলাম জ্বর বেড়েছে…তাই এতো পাগল পাগল কথা…এখনি মেডিসিন দিতে হবে উনাকে….নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে উনাকে উঠে বসতে বললাম….সাথে সাথেই আমাকে আরো জোরে চেপে ধরে বলে উঠলেন –
.
নাহহহহহহ….উঠবো না।।কেনো উঠবো??কিছুতেই উঠবো না….তুমিও উঠবে না… দুজনেই শুয়ে থাকবো….তুমি জানো না…”তুমি আমি পাশাপাশি আছি বলেই জীবন হয়েছে মধুময়” তাই পাশাপাশি থাকতে হবে… উঠা যাবে না।।
.
এবার যেনো কেঁদেই উঠবো আমি….একদিকে উনার গায়ে এতো তাপ তারওপর এতো শক্ত করে ধরে আছেন….শ্বাস আটকে আসছে আমার।।এমন পাগলামো কেউ করে??শেষমেষ পাগলের বউ হলাম আমি?আমাকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে বলে উঠলেন উনি-

রোদপাখি??কাঁদছো কেন তুমি??
.
আপনি উঠছেন না…খাবার খাচ্ছেন না…তাই কাঁদছি।।(মুখ ফুলিয়ে) আপনি আমার কোনো কথায় শুনেন না…কখনোই না..
.
শুনি তো!!আচ্ছা উঠবো আমি…কিন্তু তোমায় ছাড়বো না…তাহলে তুমি পালিয়ে যাবে…তোমাকে ধরে রাখতে হবে বুঝলে??
.
আমাকে না ছাড়লে উঠবেন কিভাবে??(অধৈর্য হয়ে)
.
না ছাড়বো না…ছাড়বো না….
.
আচ্ছা ঠিক আছে না ছেড়েই উঠুন তবু উঠুন প্লিজ।।
.
উনি খাটের সাথে হেলান দিয়ে আমাকে কোলের উপর বসিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বসে আছেন…আর বাচ্চাদের মতো চপচপ করে স্যুপ খাচ্ছেন।।উনাকে একদমই বাচ্চাদের মতো লাগছে…কিউট বাচ্চা!! এই মুহূর্তে একটা কথায় মনে হচ্ছে আমার…আমার যখন বেবি হবে বেবিটা যেনো একদম উনার মতোই কিউট হয়….কথাটা ভেবেই মনের আনন্দে চুমু এঁকে দিলাম উনার কপালে…সাথে সাথেই খাওয়া বন্ধ করে..ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন উনি-
.
তুমি আমায় আদর দিচ্ছো রোদপাখি??
.
.
#চলবে….🍁