তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 37

ভার্সিটির মাঠের মাঝ বরাবর হাঁটছি সাথে আছে চিত্রা।কিন্তু বেচারীর মন আসলেই আমার সাথে আছে কিনা তাতে বেশ সন্দেহ হচ্ছে আমার।সে চারদিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে কাউকে খু্ঁজছে।আমি কিছু জিগ্যেস করতেই অমায়িক হাসি দিয়ে মাথা নিচু করছে।।আমার চোখও যে চারপাশে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে না, তা কিন্তু নয়।আমিও খুঁজচ্ছি, শুভ্রকে!!জানি পাবো না তবু খুঁজছি….যদি পেয়ে যাই….. একটা বার যদি উনার নেশাভরা চোখের দেখা মেলে!!কিন্তু বারবারই হতাশ হতে হচ্ছে আমায়….এইযে আমি এখানে জ্বলে মরছি,,উনাকে একবার দেখার জন্য পাগল হচ্ছি..উনার কি সেদিকে খেয়াল আছে?সে নিশ্চয় বইয়ের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে এখন….এতো বইয়ের মেলায় রোদ নামক বউয়ের কথা তার কি মনে আছে??নিশ্চয় নেই!!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই দেখি কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের শিশির স্যার।আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে ইয়াং স্যার বলা যেতে পারে উনাকে…দেখতে একদমই বাচ্চা বাচ্চা লাগে। গায়ে সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট হাতে কালো ডায়ালের ঘড়ি আর কালো ব্যাগ।চোখে কালো ফ্রেমের চশমা…বেশ গোছালো!!আমরা কাছাকাছি যেতেই হাসিমুখে বললেন-
.
গুড মর্নিং গার্লস.

উনার কথায় আমি আর চিত্রা দুজনেই থতমত খেয়ে গেলাম।উনি খুবই স্বল্পবাসী ব্যক্তি,,উনার সাথে আমাদের কোনো দিন সামনাসামনি দেখা হয় নি বললেই চলে।।ভার্সিটির এতো এতো মেয়ের মধ্যে আমাদের মতো অপরিচিত মেয়েকেই কেন যে গুড মর্নিং জানাতে হলো উনার কে জানে??চিত্রা তো রীতিমতো কাঁপছে..আমার হাত খামচে ধরে আছে সে।।আমি ভ্রু কুঁচকে চিত্রার দিকে তাকালাম….ওর এই বাড়াবাড়ি ধরনের নার্ভাসনেসের কারণটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না আমি।।তারপর স্যারের দিকে ফিরে হাসিমুখে থেমে থেমে বললাম-
.
গুড মর্নিং স্যার!!ভালো আছেন?
.
ইয়াহ…আই এম গুড! তো তোমরা কেমন আছো?
.
জি স্যার ভালো।
.
গুড…তোমার নামটা যেনো কি?নৌশিন আহমেদ রোদেলা রাইট?ব্রেভ গার্ল…ভার্সিটির প্রথম দিনই সিনিয়রের গালে চড়!!আই লাইক ইট…
.
স্যারের কথায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম আমি।উনি আসলেই আমার প্রশংসা করছেন নাকি খোঁচা দিচ্ছেন বুঝতে পারছি না।।আমি কয়েকটা ঢোক গিলে বললাম-
.
এক্চুয়েলি স্যার!দেট ওয়াজ আ মিসটেক …আসলে..
.
কুল মিস. আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড (মুচকি হেসে)বাট ইউ আর লাকি বিকজ দেট পার্সোন ওয়াজ শুভ্র!!এনিওয়ে বাসার সবাই কেমন আছে??
.
এবার বেশ বিরক্ত লাগছে আমার।আমার বাসার খবর জেনে উনার কি লাভ শুনি?বাসায় কি ত্রান পাঠাবেন নাকি??তাহলে বলুক না একটা লিস্ট করে গলায় ঝুলিয়ে দিই উনার।।এদিকে চিত্রা খামচাতে খামচাতে হাতের অবস্থা বেকাহিল করে তুলেছে আমার….অলরেডি জ্বালা পুড়া শুরু করে দিয়েছে উফফ…..তবু মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম-
.
জি স্যার ভালো।।
.
স্যারও মুচকে হেসে বিদায় নিলেন।উনার মুখের প্রশান্তি দেখে মনে হচ্ছে আমার বাসার মানুষ ভালো আছে শুনে তার সকালটা আজ ধন্য হয়ে গেলো।।স্যার যেতেই এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়েই রাগী চোখে তাকালাম।।চিত্রা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…..আমি তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে রাগী গলায় বলে উঠলাম –
.
খবরদার কাছে ঘেষবি না।তিনহাত দূরে গিয়ে দাঁড়া…অসভ্য মেয়ে! হাতের কি অবস্থা করেছিস দেখ।।তোর জামাইয়ের সম্পত্তি নাকি আমার হাত???ইশশ রীতিমতো জ্বলছে…
.
সরি রে দোস্ত।স্যারকে দেখে আমি একটু বেশিই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম তাই…
.
স্যার কতো কিউট একটা ছেলে।তাকে দেখে এতো নার্ভাস হওয়ার কি আছে বুঝলাম না।।তোর ভাব দেখে মনে হচ্ছে উনি তোকে পিটাতে আসছে…(ভ্রু কুচঁকে)
.
চিত্রা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই পেছনে কারো ফিসফিসানোতে দু’জনেই ঘাড় বেকিয়ে তাকালাম।।আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রাতুল ভাইয়া ফোনে ফিসফিস করে কথা বলে চলেছেন।।আমরা ভ্রু কুঁচকে কান খাড়া করতেই কানে এলো…
.
দুলাভাই?থুক্কু ভাই? ভাবি শিশির স্যারকে কিউট বলছে এক মিনিট আগে।।না না ভাই ওই বুইড়া শিশির স্যার না…ওইযে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের মুহিব চৌধুরী শিশির আছে না??ওইটা!!

উনার কথা শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না যে উনি ঠিক কার সাথে কথা বলছেন।।ওপাশে কি বলা হলো জানি না।তবে রাতুল ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন –
.
ভাই?আমার কিন্তু ব্যাপারটা কেমন জানি লাগছে….এই স্যার…
.
এইটুকু বলার সাথে সাথেই আমি আর চিত্রা উনার সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম।উনি আমাদের দেখে যেনো চমকে গেলেন…..একটা ঢোক গিলে জোড়পূর্বক হাসি দিলেন।।আমি আর চিত্রা একসাথে ভ্রু নাঁচাতেই বলে উঠলেন উনি-
.
স্যার তো অনেক ভালো মানুষ ভাই।।উনার মতো ভালোমানুষ এই দুনিয়াতে নাই।উনি তো ভাবির দিকে মা মা থুক্কু বোন বোন নজরে তাকায় ভাই।। হে হে আপনি একদম চিন্তা কইরেন না ভাই…..সব সেট!! রাখি তাহলে ভাই?
.
আমি আর চিত্রা হাত ভাঁজ করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।রাতুল ভাই ডানহাতের উল্টোপাশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বেক্কলের মতো হাসি দিয়ে বলে উঠলেন –
.
দুলাভাই থুক্কু ভাবি ভালো আছেন??
.
কাহিনী কি? আপনি আমাদের ফলো করছেন??(রাগী গলায়)
.
নাহ নাহ আস্তাগফিরুল্লাহ!!! (আমি রেগে তাকাতেই) আসলে জি ভাবি!
.
উনার কথায় চিত্রা হিসহিসিয়ে বলে উঠলো-
.
কেনো?আপনি কি দুদকের লোক?যে গোয়েন্দাগিরি করছেন!!কি সাংঘাতিক ব্যাপার রোদ….উনি আমাদের ইনফরমেশন লিক করছেন… আমার ব্যাগে যে এক ডজন চকলেট আছে তাও নিশ্চয় লিক করে দিয়েছেন উনি!!ওহ মাই গড…আজ সকালেই ছোট বোনের ড্রয়ার থেকে সরিয়ে ছিলাম ওগুলো।।এখন আমার কি হবে??উনাকে এক্ষনি পুলিশে দেওয়া উচিত রোদু….হুহ

চিত্রার কথায় রাতুল ভাই অসহায় মুখে বললেন….
.
ভাবি?আমি কোনো ইনফরমেশন লিক করি নাই।ভাই আমাকে বলছে আমি যেনো ভার্সিটি থাকাকালীন আপনার পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকি আর একঘন্টা পর পর আপনি কি কি করলেন,, কার সাথে কথা বললেন সব রিপোর্ট করি,,নয়তো মাইর!! কঠিন মাইর।।একদম হার গুঁড়ো করা টাইপ মাইর ভাবি।।আমি তো শুধু মার থেকে বাঁচার জন্য ফলো করছিলাম,(আমি ভ্রু কুঁচকাতেই) কসম ভাবি!!.
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম শুভ্রকে এই মুহূর্তে জাস্ট খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।একে তো নিজে বইয়ের রাজ্যে ডুবে আছেন,,তার উপর আমার কাছে পাঠিয়েছে এক জলদস্যু,, ভাবা যায়??
.
🍁
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে মাত্রই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠলো।।বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো আমার,,,এই ফোন অলওয়েজ রং টাইমেই বাজে কেন?হুয়াই?ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই দেখি আননোন নাম্বার…মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম…এই ব্যাটাকে ইচ্ছে মতো ঝারবো আজ…আমার ইচ্ছেয় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে ওপাশ থেকে অস্থির গলায় বলে উঠলো কেউ-
.
রোদপাখি?জাস্ট পাঁচমিনিট!! আমি তোমার সাথে জাস্ট পাঁচ মিনিট কথা বলবো…..একদমই টাইম নেই বুঝলে?এতো পড়া…উফফ!! আবার তোমার কন্ঠটা না শুনেও থাকতে পারছিলাম না….একদম নিঃশ্বাস আটকে আসছিলো আমার….এতো জ্বালাও কেন আমায় বলো তো??কলিজা টা ভাজা ভাজা করে দিলে আমার….
.