The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 73
ইয়ারাবীর আট মাস চলছে।এখন খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় ও।হাঁটতে ও প্রচুর কষ্ট হয়।কোমড়ে ও প্রচুর ব্যাথা এখন।কোনমতে শাড়ী টাকে একটু গুঁজে ওয়াশরুম থেকে বের হলো ও।আরাভ ঠিক করে পরিয়ে দেবে শাড়ী।আজ দাওয়াত আছে পাপার বাসায়।সেদিন পাপা কল দিয়ে রোয়েনের পরিবার আর আরাবী আর্ভিনকে দাওয়াত করেছে।ইয়ারাবী ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।আরাভ কালো সিম্পল শেরওয়ানী পরেছে।সেই সাথে কালো দামী ঘড়ি আর গায়ে মন মাতানো সুঘ্রান ছড়ানো পারফিউম।ইয়ারাবী রুমে ঢুকে চোখজোড়া বুজে ঘ্রান নিতো থাকলো।ইশশ এই ঘ্রানে মিশে যেতে পারলে ভালো হতো।নিজেকে আয়নায় একবার দেখে নিলো আরাভ।তারপর ওয়াশরুমের দিকে চোখ পড়তেই আরাভের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠলো।বৌটা কেমন চোখ বুজে পারফিউমের ঘ্রান নিচ্ছে।আরাভ ইয়ারাবীর কাছে এসে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো।ইয়ারাবী ও স্বামীকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।তার বুকে মুখ গুঁজে দিয়েছে।আরাভ ওকে সামনে আনলো।তারপর শাড়ীটা পরিয়ে দিলো।
তারপর ইয়ারাবী একটু সেজে নিলো।রুপন্তী রেহানের বাসায় চলে এলো সবাই।ইয়ারাবীকে দেখে রুপন্তী দৌড়ে মেয়ের কাছে এলো।আরাভ ইয়ারাবীর হাত ধরে ঘরে ঢুকালো।
আরাভ রুপন্তীকে দেখে ওর পায়ে ধরে সালাম করতে গেলে রুপন্তী থামায়।
.
.
-না আব্বু পা ধরে সালাম করতে হবেনা।
-আচ্ছা খালামনি।
-ইয়ারাবীর হাত ধরে রুপন্তী চল ভিতরে।
রেহান আরাভের সামনে এলো।
-আসসালামু আলাইকুম চাচ্চু।
-কেমন আছিস বাবা?
-এই তো আলহামদুলিল্লাহ্।
-ভাইয়া আর ভাবি কই?
-পরের গাড়িতে আসতেছে।
-ওকে।এসে বোস।
.
.
রেহান আরাভ কে নিয়ে সোফায় বসায়।রুপন্তী মেয়ে কে ইয়ারাবীর রুমে এনেছে।নিজের রুম দেখে চোখ ভরে আসে ইয়ারাবীর।রুপন্তী মেয়ে কে ধরে খাটে বসালো।কিছুসময়ের মাঝেই রোয়েন রুহী আর্ভিন আরাবী ও চলে এলো।আজ আরাভ আর্ভিন ভীষন সমাদর চলছে।খাওয়ার পর বিভিন্ন রকমের মিষ্টি সাজালো দুই জামাইয়ের সামনে।আর্ভিন খেতে শুরু করলো।আরাভ একটা মিষ্টি নিয়ে একটু খেয়ে রেখে দিলো।
.
.
-কিরে আব্বু খাচ্ছিস না কেন?জিজ্ঞেস করে রেহান।
-চাচ্চু মিষ্টিটা পরে খাই।এখন খেতে পারবোনা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।রুপন্তী চা দাও সবাইকে।
-আরে খালু খালামনি সারাদিন খাঁটছে এখন একটু রেস্ট করুক।আমরা কেউ চা খাবোনা।বলে উঠে আরাবী।
-আরে না আরাবী।জামাইরা আছে জিজু আছে।এটা কোন কথা?বলে উঠে রুপন্তী।
-খালামনি তাহলে বসো তুমি আমি চা করে আনছি।
-আরে বানাচ্ছি আমি তুই বোস।
-খালামনি বসো তুমি।আমি করছি।
.
.
পাকঘরে এলো আরাবী তারপর চা বানালো সবার জন্য।চা খেয়ে সবাই রেস্ট নিতে চলে গেলো।ইয়ারাবী রুহী রুপন্তী আরাবী একসাথে বসেছিলো।গল্প করছে ওরা সবাই।
.
.
-আপু তোর মনে আছে কলেজের সামনের আচার ওয়ালার কথা?জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।
-ঐযে রহিম কাকার আঁচার?
-হুম।জানি রহিম কাকার ছেলে বসে আঁচার নিয়ে।
-রহিম কাকা কই?
-মারা গেছে পাঁচ বছর হলো।
-ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহে রাজিউন।যা মজার ছিলো আঁচার গুলা তাইনা?
-হ্যারে।এখন আর মজা লাগেনা।
.
.
ওদের গল্পের মাঝেই রেহান রোয়েন আর আরাভ প্রবেশ করলো।আর্ভিন ঘুমাচ্ছে।
আরাভ এসে খাটে ইয়ারাবী যে পাশে বসেছিলো সেই পাশে দাঁড়ায়।ইয়ারাবী এবার হেলান দেয়ার মতো কাউকে পেলো।আরাভের গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসলো ইয়ারাবী।
.
.
-জিজু খাওয়া ভালো ছিলো?জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।
-চমৎকার ছিলো।বলে উঠে রোয়েন।
-বিরিয়ানী টা আপুর মতো কখনোই হয়না।বলে উঠে রুপন্তী।
-স্টুডেন্ট থাকাকালীন রুহী বিরিয়ানী নিয়ে গেছিলো।সেদিন অনেক ক্ষুধার্ত ছিলাম।কিভাবে যে খেয়েছিলাম সেগুলো!! ড্রাইভার আমার মুখের দিকে তাকায় ছিলো কতক্ষন।বলে উঠে রোয়েন।
-তারপর ও সেদিন মূল্য বুঝলানা এ বিরিয়ানীর।বলে উঠে রুহী।
-রুহী প্লিজ এখন ওসব বলোনা।বলে উঠে রোয়েন।
.
.
রুহী চুপ হয়ে গেলো।
.
.
-জিজু আর আপির সম্পর্কের দিনগুলা মনে রাখার মতো ছিলো।বলে উঠে রুপন্তী।
-হুম অসাধারন ছিলো সময় গুলা।সেদিন মনে আছে আইস্ক্রিম খাইতে গেছিলাম ভাবির কথায়?বলে উঠে রেহান।
.
.
রুহীর মনে পড়ে যায় সেদিন ও বলেছিলো আইস্ক্রীমের কথা।ঘরে ফিরার সময় রোয়েনের কত গুলো কামড় খেয়েছিলো ও।রোয়েন অন্যদিকে তাকিয়ে হাসে।
.
.
-আপি আর জিজু এ্যাংগেজমেন্টের পরপরই তো বান্দরবান গেছিলো।
-আর কেউ যায়নি?জিজ্ঞেস করে ইয়ারাবী?
.
.
রুহী বেশ লজ্জা পেলো।এখন কি জবাব দেবে রুপন্তী?রুপন্তী ও লজ্জা পেলো।কথা পাল্টিয়ে রুপন্তী বলল,
.
.
-আরাবী আরাভ কি যে সুন্দর ছিলো ছোটবেলায়।
-কেন খালামনি এখন সুন্দর না?জিজ্ঞেস করে আরাবী।
-অবশ্যই সুন্দর তখন খুব বেশি কিউট ছিলা।
-আপু প্রথম জন্মদিনের কথা মনে আছে?জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।
-মনে থাকবেনা আবার!!!! হেসে দেয় রুহী।
-আরাভ কি কান্না প্যান্ট পরবেনা।প্যাম্পার্স ও পরতে চাইছিলোনা।তারপর তুই যে থাপড় দিলি আপু।তখনই তো প্যাম্পার্স পরলো।
.
.
সবাই স্বশব্দে হেসে উঠলো।ইয়ারাবী হাসি থামিয়ে স্বামীর দিকে তাকায়।আরাভ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে হাসছিলো ইয়ারাবী তাকাতেই মুখ গম্ভীর করে নিলো।
.
.
-আরাবী টা যে কি দুষ্টু ছিলো।ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলে আরাভের মুখে খাঁমচানো শুরু করতো যতক্ষন না পর্যন্ত আরাভের ঘুম ভাঙ্গে।বলে উঠে রুহী।
.
.
আরাভ বোনের দিকে রাগী চোখে তাকায়।
.
.
-কোন দিন জানি আরাভ ওর পাশে ছিলোনা।আমি হাসপাতাল থেকে এসে শুইছি।ও আমার মুখে খাঁমচি দেয়া শুরু করছে।পরে পাশে তাকায় যখন দেখে আমি তারপর কি কান্না মনে হয় ওরে কেউ মার দিছে।বলে উঠে রোয়েন।
আবার ও হেসে দিলো সবাই।
.
.
-আমি দেখছি তো যখন দুইটা খেলতো আরাবী আরাভরে খেলনা দিয়ে যে মারতো।বেচারা খালি কান্না করতো।আরাবীরে জীবনো মারে নাই।বলে উঠে রুপন্তী।
-তুই ওদের ঈদের কথা ভুলে গেছোস রুপন্তী!!!জিজ্ঞেস করে রুহী।
-কোন ঈদ আপু?
-রোজার ঈদে আরাবী আরাভের পাঞ্জাবীতে লিপস্টিক লাগায় দিছিলো।আরাভ এসে ওর চুলে যে টান দিছে।পরে তোর জিজু যেয়ে ছাড়াইছে দুইটারে।তারপর একজনকে ও সালামী দেয়নাই ওই ঈদে।বলে উঠে রুহী।
.
.
ইয়ারাবী প্রচন্ড এক্সাইটমেন্ট নিয়ে গল্প গুলো শুনছিলো।সব যেন ওর চোখের সামনে তাজা হয়ে উঠছে।সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এলো ওরা।ইয়ারাবী খাটে শুয়ে আছে।আর আরাভ রুমে হাঁটাহাঁটি করছে।একবার বাহিরে যাচ্ছে আবার ভিতরে আসছে।ইয়ারাবী পেটে হাত বুলিয়ে বলল,
.
.
-জানো আব্বু একটা ছেলে এখন কতো ঢং করে প্যান্ট শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়।আর সে নাকি ছোট বেলায় প্যাম্পার্স ও পরতে চাইতোনা।নেংটু হয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতো।
.
.
আরাভ ভ্রু কুঁচকে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো। ইয়ারাবী বলল,
.
.
-জানো বাবা ঐ ছেলেটা নিজের মায়ের চড় খেয়ে প্যাম্পার্স পরে জন্মদিন পালন করছে।এটা কোন কথা?তোমাকে মা ছোটবেলা থেকে ডায়পার প্যান্ট লুঙ্গি সব পরানোর অভ্যাস করবো ঠিক আছে আব্বু?
.
.
আরাভ রুমে ঢুকতেই এ কথা গুলো বলতে শুরু করে ইয়ারাবী।
আর সহ্য হলো না আরাভের।
.
.
-এই কি বলছো এসব?ধমক দিলো আরাভ।
-আরেহ আমি কি আপনাকে বলেছি।আপনি তো এমন করতেই পারেননা।আমি তো একটা নির্লজ্জ ছেলের কথা বলছি আরাভ।
-হুহ রেগে গিয়ে শার্ট খুলে নিলো আরাভ।
-এখন কি আপনি ওই ছেলের মতো করবেন?
.
.
আরাভ রেগে ইয়ারাবীর পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ে।ইয়ারাবী এবার আরাভের কানে কানের পিছে আরাভের গলায় ঘাড়ে চুমু খাচ্ছে।আরাভ এবার ওর দিকে ফিরে ওকে বুকে নিয়ে নিলো।
.
.
-দুষ্টুমি ছেড়ে ঘুমাও।
-ওকে।
.
.
.
.
.
আরাভকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে ইয়ারাবী।
এদিকে সেদিনের পর থেকে অর্পন ফেন্সি কে অনেক খুঁজেছিলো কিন্তু পায়নি।ফোন নম্বর ও বন্ধ করে রেখেছে ফেন্সি।অফিসে ও যাচ্ছেনা।ওর কাছে পৌছানোর সকল রাস্তা বন্ধ।অর্পন চোখে অন্ধকার দেখছে।মেয়েটাকে সব কিছু বুঝাতে চাইছে।মাফ চাইতে চাইছে।কিন্তু মেয়েটা যোগাযেগ করছেনা একদমই।সেদিনের পর থেকে চারমাস পার হয়ে গেছে।অর্পন ফেন্সিকে ভুলতে পারছেনা।কি করে ভুলবে?মেয়েটাকে খুব ভালবাসতো ও।আর সেই রাতটা ওর মনে বসে গেছে।কোনরকমেই যাচ্ছেনা।সকালে ফেন্সি অর্পনকে না বলেই চলে গিয়েছিলো।কিন্তু কেন?এমনই হাজারটা প্রশ্ন অর্পনের মাথায় খেলা করছে।
সেদিনের পর থেকে ফেন্সি একদমই চুপচাপ।নিজের বাবা হয়ে এমন কথা কেমনে বলতে পারলো।সেদিন শুধু অর্পনের ওয়াইনে মেডিসিন মেলানোর কথা ছিলো কিন্তু ওরটাতে ও মিশানো হয়।ফেন্সি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অর্পনের বাহুডোরে পেয়েছিলো।অর্পনের দিকে তাকিয়ে থাকে ও।তার পর সরে এসে নিজের ফোন চেক করে দেখলো ওদের ভিডিও।ফেন্সি চটজলদি সেটা ডিলিট করে দিলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে ঘরে চলে আসে খুব ভোরে যেন ল্যাপটপের ভিডিও টাও ডিলিট করতে পারে।
ল্যাপটপ নিয়ে বসতেই হানিফ খান ওকে থামায়।
.
.
-কি করছিস?
-ভিডি ও ডিলিট করবো।
-না।তুই জানিস এ ভিডিও দিয়ে আরাভের ওপর প্রতিশোধ নিবো আমরা।ওর বিজনেস হাতিয়ে নিবো।
-না বাবা।আরাভের সাথে শত্রুতামি নেই আমার।অর্পনকে ভালোবাসি আমি।
-তারমানে তুই এ মিশনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবি?
-জি।এ মিশন সলভ হতে দিবোনা।
-যদি এমন করিস ফারহান কে দিয়ে এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবো।
-বাবা আমি তোমার মেয়ে!!!অশ্রুসজল চোখে বলল ফেন্সি।
-আমার মিশনে যেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে সবার ক্ষতি করবো।কারোর ভালো করবোনা।
.
.
কথা গুলো বলে হানিফ খান মেয়ের সামনে থেকে ল্যাপটপ নিয়ে চলে গেলেন।রুমে চলে আসে ফেন্সি।বুক ফাঁটা কান্নায় ভরে উঠে চার দেয়াল।
সেদিনের পর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেছে ফেন্সি।ঘর কুনো হয়ে গেছে ও।ওর সিমটা ও নেই।বাবা ভেঙ্গে দিয়েছে।অর্পনকে সত্যিই ভালোবাসে ও।
আরাভ অফিসে আসে।আসার আগে ইয়ারাবীর সব কিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছে।কাজে মনযোগ আসছে আরাভের।একমনে কাজ করছে ও। ঠিক তখনই একজন সুদর্শন লোক ওর কেবিনে এলো।
রাগী চোখে লোকটার দিকে তাকায় আরাভ।
.
.
-কারোর কেবিনে এলে নক করতে হয়।এতোটুকু ও ম্যানার্স জানা নেই?
-সরি মিঃ চৌধুরী।
-ইটস ওকে।বসতে পারেন।
-থ্যাংকস আমি ফারহাম আয়মান খান।ফেন্সির বড় ভাই।
-হুম।কি হেল্প করতে পারি?দাঁতে দাঁত চাপে আরাভ।
-আপনার ভাই আর আমার বোনের মাঝে সম্পর্ক চলছে আপনি হয়ত জানেননা।
-ফালতু কথা বলতে এখানে এসেছেন?রেগে গেলো আরাভ।
-জানতাম বিলিভ করবেননা।তাই প্রমান ও এনেছি।
.
.
ফারহান আরাভের সামনে ফোনে সেই ভিডিও ছাড়লো।আরাভ রাগে ফুঁসছে।বেশি দূরে আগানোর আগেই আরাভ ফোনটা হাতে নিয়ে ছুড়ে মারলো।
চলবে