The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 48
ইয়ারাবী পাকঘরে এসে দাঁড়ালো মিসেস অাজহার অর্থাৎ আরাভের আন্টির পাশে।বৌকে দেখে মিষ্টি হাসেন মিসেস আজহার।
..কি মামনি খিদে পেয়েছে?
..ইয়ারাবী লজ্জা পেয়ে যায়।শ্বশুর বাড়িতে আজ ওর প্রথম দিন।উঠলো দেরি করে।তারওপর শ্বাশুড়ি অমন মায়াভরা কন্ঠে বলল ওর খিদে পেয়েছে কিনা?না মা।আমি সবজি গুলো কেঁটে দেই?
..একদম না মামনি।তুমি কোন কাজ করবেনা।আজ এবাসায় প্রথম দিন তোমার।
..তা কি হয়েছে মা?দিন না আমি রুটি গুলো সেঁকে দেই।
..ইয়ারাবী তুমি গিয়ে ওখানে বসো।সবার সাথে গল্প করো যাও।মিসেস আজহার বললেন।
..মা তা কি হয়।একটু তো কিছু করতে দিন।
..কোন কথা শুনবানা আমার তাইনা?আদুরে কন্ঠে বললেন মিসেস আজহার।
..একদম না।মিষ্টি হেসে বলল ইয়ারাবী।
..ঠিক আছে সেঁকে নাও রুটি গুলো।
সেলিনা ফুপি নিচে এসে খেয়াল করলেন ইয়ারাবী রুটি সেঁকছে।তারান্নুম ওনার পিছু পিছু আসছে।সেলিনা ফুপি তারান্নুম কে নিয়ে পাকঘরের সামনে এসে দাঁড়ান।কি ভাবি তোমার বৌ কি গোসল করেই পাকঘরে ঢুকেছে না কি নাপাক শরীরে পাকঘরে চলে এসেছে।
তৎখনাৎ মিসেস আজহার বললেন,
..আপু টেবিলে বসুন নাস্তা নিয়ে আসছি আমরা।
সেলিনা ফুপি গাল ভেংচি দিয়ে সরে যায়।তারপর ডাইনিং টেবিলে বসে পড়েন।ইয়ারাবী মন খারাপ করে রুটি সেঁকছে।মিসেস আজহার ইয়ারাবীর কাঁধে হাত রেখে বলেন,
..একদম কষ্ট নিবানা ওনার কথায়।
..মাথা নাড়ায় ইয়ারাবী।না মা কষ্ট পাইনি।
এরই মধ্যে সবাই নিচে চলে আসে নাস্তা করতে।আরাভ কালো শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে নিচে নামে।সবাই ডাইনিংটেবিলে বসে পড়েছে।ইয়ারাবী আর মিসেস আজহার নাস্তা টেবিলে সাজায় দুজনে মিলে।আরাভের পাশেই তারান্নুম দৌড়ে এসে বসলো।আরাভ তারান্নুম কে দেখে সামনে ইয়ারাবীর দিকে তাকায়।ইয়ারাবী সবাইকে নাস্তা বেড়ে দেয়ায় ব্যাস্ত।তবে তারান্নুমকে ভালো লাগেনি ইয়ারাবীর।মিসেস আজহার ইয়ারাবীকে একটা চেয়ারে বসিয়ে নাস্তা দিয়ে বললেন,
..খেয়ে নাও ইয়ারাবী।
ইয়ারাবী আরাভ আর তারান্নুমকে দেখে যাচ্ছে।মিসেস আজহার নিজ হাতে নাস্তা খাওয়ালেন ইয়ারাবীকে।আরাভ উঠে কোট গায়ে জড়িয়ে অর্পনকে নিজের সাথে নিয়ে দরজার সামনে এলো।ইয়ারাবী ভাবছিলো ওকে হয়ত ডাকবে আরাভ কিন্তু তা হলো না।
..অর্পন আমাদের এলবামটা ইয়ারাবীকে দেখা।
..ভাই ওটায় তোমার ছবি আছে।ভাবি চিনে নেবে।
..সেজন্যই বলছি।দেখা ওকে ছবি।
..অর্পন অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় বলল ওকে।
আরাভ ইয়ারাবীকে আবার দেখে বেরিয়ে গেলো।নাস্তা খেয়ে রুমে আসে ইয়ারাবী।লাগেজের কাপড় ভাজ করে আলমারিতে রাখছিলো ও তখনই অর্পন দরজায় টোকা দিলো।ইয়ারাবী পাশে তাকিয়ে বলল,
..আসুননা ভাইয়া।
..ভাবি কেমন লাগছে আমাদের বাসা?
..খুব ভালো।মিষ্টি হেসে বলল ইয়ারাবী।
..ভাবি এখানে এসো কিছু দেখাবো তোমায়।ডেকে উঠে অর্পন।
ইয়ারাবী খাটে এসে বসলো।অর্পন এলবাম খুলে ইয়ারাবীর সামনে।তারপর দেখাতে থাকে ছবি গুলো।অর্পনের খুব ছোট্টকালের একটা সামনে আসতেই অর্পন সেটাকে জলদি পাল্টে দিলো।
..কি ভাইয়া পাল্টে দিলেন যে?জিজ্ঞাস করে ইয়ারাবী।
..না ভাবি তেমন কিছুনা।বলে উঠে অর্পন।
..ইয়ারাবী দেখছিলো ছবিটা।তাই হেসে দিয়ে বলল আচ্ছা ঠিক আছে।
অর্পন আবার ছবি দেখাতে শুরু করে।অাকরাম আজহারের বিয়ের ছবি সামনে এলো।অর্পন বলল,
..দেখুন মা বাবাকে কতো সুন্দর লাগছে।তখন মার বয়স এগারো বছর ছিলো।আর বাবার ২৫ ছিলো।
..অনেক এজ ডিফারেন্স। বিস্ময়ের সাথে বলল ইয়ারাবী।
..তখনকার সময়ে এমনই হতো ভাবি।
ইয়ারাবী ছবি দেখার একপর্যায়ে ওর চোখ আটকে গেলো একটা ছবির ওপর।সেটায় ওর জেঠাতো ভাই আরাভের মতোই একজন অর্পনকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সেদিন আরাবী আপুর রুমে হুবুহু এই ছেলেটাকেই দেখে ইয়ারাবী।অর্পন যতো ছবি দেখাচ্ছে ইয়ারাবী আর ও বেশি নিশ্চিত হচ্ছে যে এটাই রোয়েন জেঠু আর রুহী খালামনির ছেলে আরাভ।ইয়ারাবীর হাত কাঁপছে।তারপর ও নিজের ফোনে আরাভের ছবিটার ছবি তুলে নিলো।
..ভাইয়া থামেন।বলে উঠে ইয়ারাবী।
..অর্পন এলবামের পাতা উল্টানো বন্ধ করলো।
..এটা আপনার ভাই আরাভ তাইনা?জিজ্ঞাস করে ইয়ারাবী।
..জি ভাবি।কেন?বলে উঠে অর্পন।
..ওনি তো জেঠুর ছেলে আরাভ ভাইয়া।
অর্পন কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।ইয়ারাবীর মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।ওনি কে আসলে? জেঠুর ছেলে নাকি!!!
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
আরাবী স্নিগ্ধা আস্মিতা আর ইস্পিতাকে ফোন দিয়ে জানালো আজ ও ইয়ারাবীকে দেখতে যাবে ওরা কি কেউ যাবে কিনা?ওরা রাজি হলো।আরাবী বলল ওদের কল দিলে ওরা যেন রোয়েনের বাসায় চলে আসে।আরাবী রেডি হওয়ার সময় ওর ফোন বেজে উঠলো।ফোন রিসিভ করে চোখের নিচে কাজল দিচ্ছে আরাবী।অপর পাশ থেকে ওর পিএস বলল,
..ম্যাম একজন বয়স্ক লোক এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।ওনি বললেন খুব ইমার্জেন্সি।
..ওকে।ওনাকে বসতে বলো আমি আসছি।
আরাবী রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।তবে রোয়েন রুহীকে জানালো অফিস থেকে ইয়ারাবীকে দেখতে যাবে ও।অফিসে নিজের কেবিনে আসতেই আরাবী সুদর্শন একজন বয়স্ক লোককে দেখতে পায়।
আরাবী কেবিনে ঢুকতেই লোকটি দাঁড়িয়ে বলল
..তোমার অপেক্ষায় ছিলাম মিস আরাবী চৌধুরী।
..আরাবী নিজের জায়গায় বসে বলল আসসালমু আলাইকুম। বলুন কি হেল্প করতে পারি?
..আর্ভিন মাহবুব কে চিনো তো।
..জি চিনি।বলে উঠে আরাবী।
..আমি ওর বাবা ইশরাক মাহবুব।
পরক্ষনেই আরাবীর মুখ শক্ত হয়ে এলো।তবে গোপনে ফোনের রেকর্ডার অন করলো।কারন এ লোক সম্পর্কে ভালো জানা আছে ওর। নিজেকে সামলিয়ে বলল
..ওহ।তারপর???
..আমার ছেলের পিছে অনেক মেয়ে ঘুরে।ওর বিছানায় তোমার চেয়ে ও সুন্দরী মেয়েরা পড়ে থাকে।আর আমার ছেলে তোমার পিছনে ঘুরছে।তোমার মাঝে আমার ছেলে এতো কি পেয়েছে জানিনা।শক্ত গলায় বলল ইশরাক মাহবুব।
..সেটা আপনার ছেলের ব্যাপার।আমি তো আপনার ছেলেকে ভালোবাসিনা।মুখ শক্ত হয়ে আসে আরাবীর।
..হোয়াটএভার।তোমার জন্য আমার কাছে একটা অফার আছে।আই থিংক তোমার পছন্দ হবে।
..আরাবী মাথা তুলে তাকায় কি সেটা?
..সেটা হলো আমার ছেলেকে ছয়মাসের জন্য বিয়ে করবে।ওর নানা ওর জন্য অনেক সম্পত্তি রেখে গেছে যেটা একমাত্র ও নিজের বিয়ের পর পাবে।ছয়মাস পর সম্পত্তি ওর হয়ে যাবে।তোমাদের ডিভোর্সের পর তোমাকে মোটা রকমের টাকা দিবো যেটা দিয়ে আয়েশ করতে পারবে তুমি।
..আরাবী উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।জানতাম খুব খারাপ লোক আপনি কিন্তু আজ জানলাম কতোটা জঘন্য নিচ আর ছোট লোক আপনি।নিজের ছেলের জন্য কিভাবে এমন প্রস্তাব আনতে পারেন আপনি?এতোদিন ভাবছিলাম আপনার ছেলে এতো খারাপ কেন।এখন বুঝলাম আপনার শিক্ষাই ভুল ছিলো।অবশ্য আপনাদের থেকে ভালো কিছু আশাও করা যায়না।আপনিই তো রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন যে কিনা নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তার সব দোষ আরাভ রোয়েন চৌধুরীর ওপর চাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।আপনাদের কারনে আরাভ রোয়েন চৌধুরী কে তার বাবা সবার সামনে চড় দিয়েছিলো।আপনাদের কারনে আরাভ রোয়েন চৌধুরী সাড়ে দশবছর যাবৎ তার পরিবার থেকে দূরে।শুধু আপনাদের কারনে সে বাবা মা ডাক থেকে বঞ্চিত।
বেশ রেগে যায় ইশরাক মাহবুব।এই মেয়ের সাহস হয় কি করে ওনাকে এভাবে অপমান করার?তারপর রাগী গলায় বললেন,
..এই মেয়ে কে তুমি?এতো কিছু জানো কি করে?
..আমি আরাবী চৌধুরী আরাভ রোয়েন চৌধুরীর বোন।আর আপনাদের মতো ছোটলোক মানুষের ঘরে আমি কখনো যাবো না বৌ হয়ে।বের হয়ে যেতে পারেন আপনি এখন।
ইশরাক মাহবুব রাগে কটমট করতে করতে কাঁচের দরজার সামনে গেলেন।তারপর দরজা একটু খুলে আবার পিছনে তাকিয়ে বললেন,
..তোমাকে দেখে নেবো আমি।
..আমি আরাবী চৌধুরী ভয় পাইনা আপনাদের।
ইশরাক মাহবুব বেরিয়ে গেলেন।আরাবী ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।তখনই ওর ফোন বেজে উঠে।আরাবী প্রথমবার কল কেঁটে দিলো।
কিছুক্ষন পর আবার ও ফোন বাজতে শুরু করে।আরাবী এবার ফোন বের করে দেখে ইয়ারাবী কল দিচ্ছে।নিজেকে কিছুটা শান্ত করে আরাবী তারপর কল রিসিভ করে,
..হ্যালো আপু।কেমন আছো?জিজ্ঞাস করে ইয়ারাবী।
..ভালো।তোর কি খবর?ঐ বাসায় সময় কেমন কাঁটছে তোর?
..ভালো আপু।আপু কিছু বলতে চাই তোমাকে।
..বল।
..আরাভ!!!!গলা কাঁপছে ইয়ারাবীর।
..হুম তোর হাসবেন্ড আরাভ কি হলো ওনার?
..আপু ওনি আরাভ ভাইয়া।মানে তোমার ভাই আরাভ।
..বুক ধড়ফড় শুরু করে আরাবীর।ক কি বলছিস?
..সত্যি আপু।দাঁড়াও হোয়াটস এ্যাপে ছবি পাঠাচ্ছি তোমাকে।
ইয়ারাবী আরাভের ছবি পাঠায় আরাবীর ফোনে।আরাবী হোয়াটসএ্যাপ ওপেন করতেই ওর মাথা ঘুরে এলো।
..আপু আছো তুমি?বলছিলাম না!!!বলে উঠে ইয়ারাবী।
..ই ই ইয়ারাবী এটাই তো আরাভ আমার ভাই আরাভ।ও কই এখন?কাঁপা গলায় বলল আরাবী।
..আপু ওনি অফিসে গেলো।
আরাবী ফোন কেঁটে তৎখনাৎ বেরিয়ে গেলো আরাভের অফিসের উদ্দেশ্যে।আরাবীর ভীষন খুশি লাগছে।নিজের ভাইকে দেখবে আজ।এতো কাছে থেকে ও কেন নিজের পরিচয় দিলিনা আরাভ????আরাবী কে জানালো আরাভ আসেনি অফিস।আরাবী অনেক খুঁজে আরাভকে কিন্তু পায়না।আরাভের সেল অফ আসছে।তখনই আরাবীর ফোন বেজে উঠে।ফোন কানে ধরে আরাবী।তখন অপরপাশ থেকে আর্ভিনের কন্ঠস্বর শুনতে পায় আরাবী।
..ভাইকে খুঁজছো না?
..সেটা কি করে জানলেন আপনি?
..কারন আরাভ আমার কাছে।ওকে কিডন্যাপ করে এনেছি আমি।
চলবে