The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 03
দিনটা শুক্রবার,বেশ ভালোই যাবে মনে হচ্ছে আরাবীর।ঘরে রেস্ট করা যাবে।প্রত্যেকদিন অফিসে যাওয়া আসায় জীবনটা কেমন যন্ত্রে পরিনত হয়েছে।অফিসে যাও কাজ করো আর কাজ করো।কোন বিনোদন নেই।তবে ঘরে থাকলে ও রেস্টে থাকতে পারেনা আরাবী।মাম্মার সাথে কাজে হাত লাগাতে হয়।
বাবা ও এদিন টায় ঘরেই কাঁটান।তবে বিকেলে একবারের জন্য হলে ও হাসপাতালে চক্কর মেরে আসেন।নাহলে পেশেন্টরা ঘরেই চলে আসে।বাবার নাম ডাক অনেক।তবে বিজনেসের দিক দিয়ে আরাবীর খ্যাতি ও পিছিয়ে নেই।
পড়াশুনার পর বাবাই ওকে বিজনেস টা খুলে দিয়েছে।ওদের অফিসের নাম চৌধুরী কোম্পনী এন্ড লিমিটেড।
আর আরাবী সেখানকার সিইও।
অফিসের সকল কাজেই পার্ফেক্টনেস পছন্দ ওর।সকল কাজই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে পছন্দ করে আরাবী।ঘরে থাকলে মাকে সাহায্য করা হয় সময় পেলে অফিসের কাজ নিয়ে বসতে হয়।
তবে আরেকটি বড় দায়িত্ব পালন করতে হয় আরাবীকে।সেটা হলো খালাতোবোন ইয়ারাবী কে পড়ানো।মেয়েটা সবে মাত্র ম্যাট্রিক দিয়েছে।তবে ইন্টারের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে।বিকেলেই পড়তে আসবে ইয়ারাবী।পড়ানো শেষে ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে আরাবী।ইয়ারাবী অনেক দিন ধরেই বলছিলো কোথাও ঘুরতে যাবে।কিন্তু আরাবী সময় হয়ে উঠেনি।
আজ কোথাও বের হবে ওকে নিয়ে।কথা গুলো ভাবতোই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আরাবী।আজ ভীষন ফুরফুরা লাগছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আরাবী নিজেকে দেখলো কিছুক্ষন দেখলো।লম্বা কোঁকড়ানো চুল গুলো কেমন ফুলে খড়ের গাঁদি হয়ে আছে।চুল গুলো কে আঁচড়িয়ে পাঞ্চক্লিপে আটকে নিয়ে কোনমতে নিস্তেজ করে নিলো ও।সবাই বলে মায়ের চুল পেয়েছে ও।আসলেই তাই।
ওয়াশরুমে চলে যায় আরাবী। ফ্রেশ হয়ে একটা হলুদ ফতুয়া আর সাদা প্লাজো পরে বের হয়ে এলো।
ভিজা চুল গুলো শুকিয়ে পিঠের ওপর এলোমেলো করে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংরুমে আসতেই নিউজপেপারে মগ্ন রোয়েনের দিকে চোখ পড়ে আরাবীর।
কোন মতে নিজেকে সামলে নিলো আরাবী।তারপর বলতে লাগলো,
-বাবাই!!!!
-হুম।নিউজপেপারে তাকিয়ে জবাব দিলো রোয়েন।
-আহমেদ কোম্পানীর সাথে যে ডিলটা করছিলাম সেটা পেয়ে গেছি আমি।
-মুগ্ধ হেসে নিউজপেপার থেকে মুখ তুলে রোয়েন।কংগ্রাচুলেশনস মাই চাইল্ড।
-থ্যাংকস বাবাই।
সেখানে আর অপেক্ষা না করে পাকঘরের দিকে এগোলো আরাবী।মা রুটি বানাচ্ছেন।আরাবী মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে রুটি গুলো তাওয়ায় সেঁকতে লাগলো।
বিকেলে চারটা বাজে ১৫ মিনিটে ইয়ারাবীর উদয় হলো রোয়েনের বাসায়।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাবা রেহানের গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় ইয়ারাবী।
-আম্মু তোমার পড়া হলে পাপা কে কল দিও।আমি নিতে আসবো।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয় বলে রেহান।
-নাহ পাপা আজ আরাবী আপুর সাথে ঘুরতে যাবো।তুমি এসোনা।আদুরে গলায় বলে ইয়ারাবী।
-ওকে আম্মু জলদি ফিরে এসো।
-ওকে পাপা। ইয়ারাবী গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই রেহান গাড়ির দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে যায়।
দরজার দিকে হেঁটে যেতে থাকে ইয়ারাবী।লম্বা সোজা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।ওর সারামুখে সোনালী আলোর আভা ফুঁটে উঠেছে।চোখ গুলো রাতের তারার মতো জ্বলজ্বলে।কি মোহনীয়তা প্রকাশ পাচ্ছে ওর চোখ মুখ জুড়ে বলার মতো না।মায়াপরী থেকে কম নয় ইয়ারাবী।ফর্সা গালজোড়া রোদে গোলাপী হয়ে উঠছে।দরজার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ দেয় ইয়ারাবী।
আরাবী ফোনে কথা বলতে দরজা খোলার জন্য এগিয়ে আসে।ফোন কাঁধ দিয়ে কানে আটকে ধরে দরজা খুলে আরাবী।
-আসসালমু আলাইকুম আপু।হাস্সোজ্বল মুখে বলে ইয়ারাবী।
-ওকে মিঃ কামরুল আপনার সাথে পরে কথা হচ্ছে।আল্লাহ হাফেজ।ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছিস ইয়ারাবী?কান থেকে ফোন সরিয়ে বলল আরাবী।
-জি আপু আলহামদুলিল্লাহ। ভিতরে চলে আসে ইয়ারাবী।
ড্রয়িংরুমে টিভি দেখছিলো রোয়েন আর রুহী।ইয়ারাবী কে দেখে মুখে হাসি ফুঁটে উঠে ওদের।ইয়ারাবী এসে রোয়েনকে সালাম দিয়ে রুহীর গলা জড়িয়ে ধরলো।
-খালামনি!!!!
-কিরে মা ভালো আছিস?মায়াভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে রুহী।
-এইতো খালামনি।জেঠু ভালো আছেন?রুহীর থেকে সরে এসে রোয়েনকে জিজ্ঞেস করলো ইয়ারাবী।
-ভালো মা। কার সাথে এসেছো?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-পাপার সাথে এসেছি।বলে উঠে ইয়ারাবী।
-রুহীর দিকে তাকায় রোয়েন।রেহান ভিতরে আসলো কেন? তারপর ইয়ারাবীর দিকে তাকায় রোয়েন।তোমার পাপা ঘরে আসেনি কেন?
-একটা ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং এ যাচ্ছে পাপা।বলে উঠে ইয়ারাবী।
কিছুক্ষন পর আরাবী এসে ইয়ারাবী কে পড়াতে নিয়ে যায়।একাউন্টিং করছে ইয়ারাবী আরাবীর কাছে।হঠাৎ টেবিলের ওপর থাকা ফেমেলি ফটো তে চোখ আটকে যায় ইয়ারাবীর।একে অনেকবার দেখেছে কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি ওর।আমতা আমতা করে আরাবী কে জিজ্ঞেস করলো ইয়ারাবী,
-আপু এই ছেলেটা কে?আরাভের ছবিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ইয়ারাবী।
-আরাবী পিছনে তাকিয়ে ভাইয়ের ছবি দেখতেই মনটা ভীষন খারাপ হয় ওর।ও আরাভ আমার ভাই।
-ভাইয়া কই এখন?জিজ্ঞেস করে ইয়ারাবী।
-চলে গেছে।মন খারাপ করে বলে আরাবী।
-আর আসবেনা?জিজ্ঞেস করে ইয়ারাবী।
-বড় নিশ্বাস ছাড়ে আরাবী জানিনা রে।
কালো স্টোরহাউজের মতো ঘরটায় আফ্রিকান লোকটা বসে আছে।তার হাত পা বাঁধা।ঠোঁট জোড়াও সাদা একটা কাপড় দিয়ে বাঁধা।লোকটার গায়ের সাদা শার্টটা ছিড়ে গেছে।লোকটা ডেভিড লুইস।
লোকটার চোখে মুখে ভয় প্রকট ভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠে সে।বেল্ট হাতে কেউ একজন তার দিকে এগিয়ে আসছে।লুইস চেয়ার নিয়ে পিছনে যাওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছেনা।
হঠাৎ লোকটা সামনে।এসে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে লুইসের চেয়ার আটকে ধরে লুইসের দিকে নিচু হলো।লুইসের মুখের কাপড় খুলে ওর থুতনি জোরে চেঁপে ধরলো আরাভ।
-আই হেট বিট্রেয়ার্স!!!!কড়া গলায় বলে আরাভ।
-ইউ আর মিসআন্ডার্স্ট্যান্ডিং মি স্যার।আই ডিডনট হাইড দ্যাট ফাইল।ভয়ার্ত কন্ঠে বলল লুইস।
-ইউ আর লাইং এগেইন এগেইন।গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে বলে চেয়ারটাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয় আরাভ।
-লুইসের ঠোঁট ফেঁটে রক্ত গড়াতে থাকে।
.
.
.
.
.
.
আরাভ বেরিয়ে যায় দরজায় তালা মেরে।বাহিরে এসে হাত ধুয়ে গাড়িতে উঠে বসে আরাভ।চোখজোড়া ভীষন লাল হয়ে আছে আরাভের।
রাগের চোটে গ্লাসে খুব জোরে হাত দিয়ে বাড়ি লাগায় আরাভ।লুইসকে এতো সহজে ছাড়বেনা।লুইসের সাথে মিলিত সবাইকে চরম শাস্তি দিবে ও।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ঘরে ঢুকে আরাভ।ভাইকে এভাবে ঢুকতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় অর্পন।আরাভ সিড়ি দিয়ে না উঠে সোজা সুইমিংপুলের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যেতে থাকলো।
অর্পন ভয়ে ভয়ে ভাইয়ের পিছু নিতে থাকলো।আরাভ সুইমিংপুলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে গায়ের কাপড় চোপড় আর প্যান্ট খুলে পানিতে নেমে গেলো আরাভ।পানি ছিটিয়ে এসে অর্পন কে ভিজিয়ে দিলো।
সাঁতার কাঁটছেনা আরাভ।সোজা দাঁড়িয়ে আছে পানির ওপর।
-ভাই আর ইউ ওকে?কিছুটা ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করে অর্পন।
-এখান থেকে যা অর্পন।চিৎকার করে বলল আরাভ।
-ওকে ভাই।পিছনে ফিরে চলে যায় অর্পন।
আরাভ ভাবছে আর একটুর জন্য হলে ওর কোম্পানীটা রসাতলে যেতো।তবে এটা কখনোই হতে দিবেনা নেভার!!!মুখ শক্ত হয়ে আসে আরাভের।
ঘন্টাখানেক পানিতে থাকার পর উঠে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় আরাভ।
এক মগ হট কফি হলে খারাপ হতো না।ঠিক সেসময়েই রুমে প্রবেশ করে অর্পন কফি নিয়ে।
অর্পনকে দেখে হালকা হাসে আরাভ।
-কেমনে বুঝিস আমাকে এতো?জিজ্ঞেস করে আরাভ।
-ভাইয়ের দিকে মগ এগিয়ে দেয় অর্পন।তোমার সাথে এতো গুলো বছর কাঁটানোয় তোমার অভ্যাস গুলো জানা হয়ে গেছে ভাই।
-মুখ টা মুহূর্তে কালো হয়ে আসে আরাভের।কফি মগটা দুহাতের মুঠে নিয়ে বসে আছে আরাভ।
-ভাই কি হয়েছে বলবে?জিজ্ঞেস করে আরাভ।
-লুইস আর জাপানিজ দুজন এম্পলয়ি আছে না?চ্যাং আর মিয়াং?শক্ত গলায় বলে আরাভ।
-জি ভাই।বলে উঠে অর্পন।
-ওরা আমাদের কয়েকটা ফাইল হাইড করেছে।সেখানে আরো খুব ইম্পরট্যান্ট একটা ফাইল ছিলো যেটা কারোর হাতেই যাওয়ার কথা ছিলো না। হাউ কুড আই বি সো ইরেসপন্সিবল?কঠিন গলায় বলল আরাভ।
-ভাই ডোন্ট ওয়ারি।ফাইল গুলো পেয়ে যাবো আমরা।বলে উঠে অর্পন।
হাসপাতালে বসে আছে রোয়েন।রোগী মোটামুটি দেখা শেষ।এক কাপ কফি নিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো রোয়েন।
ডাক্তার সম্পার কাছে হামিদুল ইসলাম এসে দাঁড়ান।বেশ পাওয়ারফুল একজন রাজনীতিবিদ ওনি।
সম্পা একজন গাইনী ডাক্তার।একজন বয়স্ক লোককে তার রুমে এভাবে আসতে দেখে কিছুটা অবাক হয় সম্পা।
-জি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?জিজ্ঞেস করেন সম্পা।ডাক্তার সম্পা খেয়াল করলেন আঠারো উনিশ বছর বয়সী একটা মেয়ে হামিদুল ইসলামের সাথে।মেয়েটি কাঁদছে আর লোকটার হাত ছাঁড়াতে চাইছে।
-এবরশন। বলে উঠেন হামিদুল ইসলাম।
-কার এবরশন হবে?জিজ্ঞেস করে ডাক্তার সম্পা।
-মেয়েটির উদ্দেশ্য করে হামিদুল ইসলাম বললেন আমার মেয়ের।
-দেখুন এমন অবৈধ কাজ আমরা করাইনি।আপনি চলে যান।বলে উঠে ডাক্তার সম্পা।
-করাতেই হবে,নাহলে আপনার চাকরি খেয়ে নিবো।জোর গলায় বলেন হামিদুল ইসলাম।
-শুনুন হাসপাতাল এটা।আপনার বাসা নয় যে যা তা করবেন এখানে।বের হন।রেগে যায় সম্পা।
সম্পা অনেক চেষ্টার পর ও বের করতে পারছেননা লোকটাকে।সম্পাকে হামিদুল ইসলাম বিচ্ছিরি ভাষায় গালা গালি ও করছে।না পেরে সম্পা রোয়েনের নম্বরে কল দেয়।
অপরপাশ থেকে কল রিসিভ করে রোয়েন,
-জি সম্পা বলেন।
-স্যার রাজনীতিবিদ হামিদুল আমার চেম্বারে।ওনি নিজের মেয়ের এবরশন করাতে চান।বার বার বারন করার পর ও জোর করছেন আর গালা গাল ও করছেন।এক নাগাড়ে বলে সম্পা।
-আমি আসছি।বলে কল কাঁটে রোয়েন।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার সম্পার চেম্বারে আসে রোয়েন।রোয়েন ঢুকতেই হামিদুল ইসলাম পিছনে ফিরে বিশ্রী হাসি দেন।
সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সম্পার দিকে তাকায় রোয়েন।
-কি প্রবলেম ডাক্তার?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-আমি বলছি।বলেন হামিদুল ইসলাম।
-জি বলুন।ভ্রু কুঁচকে বলে রোয়েন।
-এটা আমার মেয়ে অভিসালী।কান্নারত মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন হামিদুল।
-জি তো?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-এবরশ করান ওর।কঠিন গলায় বলে হামিদুল ইসলাম।
হামিদুলের কাছে এসে দাঁড়ায় রোয়েন এসব অবৈধ কাজ।আর এসব হবে না হাসপাতালের মতো পবিত্র একটা জায়গায়।বেরিয়ে যান!!শক্ত গলায় বলে রোয়েন।
হামিদুল ইসলাম রোয়েনের অনেক কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল অনেক টাকা দিবো প্রফেসর।করে দিন কাজটা।
রোয়েন হামিদুল ইসলামের শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করলে বড় ভুল করবেন মিঃ হামিদুল ইসলাম।
হামিদুল ইসলাম নিজের শার্টের কলার ছাড়িয়ে বলল দেখিস প্রফেসর কি হাল করি তোর।আর অপেক্ষা ন করে বেরিয়ে পড়লেন হামিদুল ইসলাম।
চলবে