Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 78

রুহীকে খাওয়াতে চেষ্টা করছে রুপন্তী প্রায় ঘন্টা খানেক যাবৎ।কিছুই খাচ্ছেনা বোনটা।খাওয়ালেই বমি করে শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছে।
রুপন্তী কোন মতেই খাওয়াতে পারছেনা বোনকে।বোন তো নিজেই বাচ্চা হয়ে গেলো।কি করবে আপু কে নিয়ে এখন।জিজু থাকলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে খাইয়ে দিতে পারতো।কোনমতে দু লোকমা খাইয়ে উঠে রুহীর রুম থেকে বেরিয়ে এলো রুপন্তী।হাত শুকিয়ে গেছে একদম।রুপন্তী সামনে আগাতেই রেহান ওর পথ আগলে দাঁড়ালো।
-ভাবি খেলো?জিজ্ঞেস করে উঠে রেহান।
-দুলোকমা খাওয়াতেই জান শেষ।শুধু বলছে ভালো লাগেনা।না খেলে ও তো অসুস্থ হয়ে যাবে।মন খারাপ করে বলল রুপন্তী।
-হুম।এই ভাইয়াটাও কই চলে গেলো?ভাবির এ অবস্থায় চলে যাওয়াটা মোটেই ঠিক হয়নি ভাইয়ার।মাঝে মাঝে যে কি হয় ভাইয়ার বুঝিনা।বলতে থাকে রেহান।
-হয়ত কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গেছে।আমরা আছি বলেই চলে গেছে।বলে উঠে রুপন্তী।
-তাও ভাবি থেকে এখন কোন কিছুই বেশি ইম্পরট্যান্ট না রুপন্তী।আফ্টার অল বাবা হতে যাচ্ছে ভাইয়া।তার খেয়াল রাখা উচিৎ ভাবির প্রতি।বলে উঠে রেহান।
-দেখেন রেহান।জিজু যেমনই হোক আপনার বড় ভাই।ওনার সম্পর্কে এভাবে কথা বলতে পারেননা।ওনি হয়ত কোন সমস্যায় আছেন।ভাইয়ের চিন্তা না করে উল্টাপাল্টা বকে যাচ্ছেন।ধুর!!বলতে বলতে রেহানের পাশ কেঁটে বেরিয়ে গেলো রুপন্তী।
রেহান পিছু ফিরে রুপন্তীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।এমন বিহেভ করছে কেন?ভাবতে ভাবতে রুহীর রুমের দিকে তাকায় রেহান।হয়ত ভাবি কে নিয়ে টেনশনে আছে।ভেবেই রুপন্তীর পিছু নিতে থাকে রেহান।
রোয়েন বনানীর রায়হান ম্যানশনে যাচ্ছে।ড্রাইভ করছে ও।চোখজোড়া জলে ভরে এসেছে রোয়েনের। বুক বরাবর কে যেন ছুড়িকাঘাত করছে।
সেই বাসা সেই পরিবেশ সেই পরিচিত রাস্তাঘাট সেই পরিচিত মুখগুলো কিন্তু মানুষ গুলো পাল্টে গেছে।পাল্টে গেছে সবার জীবন ধারা।পাল্টে গেছে সব।সবাই নিজের পরিবার চায়,মা বাবা চায় তাদের ভালোবাসা চায়।কিন্তু সবাই সব পায়না।
সব কিছু সবার নসিবে লেখা ও থাকেনা।রোয়েন নিজের সন্তান কে খুব ভালোবাসবে।কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দিবেনা।সবসময় সবাই একসাথে থাকবে।ভালো থাকবে, সুখে থাকবে।
রোয়েনের চোখে ভেসে সেই মমতাময়ী আর ছোট্ট বাচ্চাটার মিষ্টি চেহারা।
হৃদয় ভেদ করে সেই মনভুলানো দিন গুলি।মায়ের আদর মাখা সময় গুলি।
-রোনু খেয়ে নে বাবা।আর এক লোকমা আছে শুধু।বলে উঠেন মমতাময়ী মা।
-না মাম্মা আমার পেট বড় হয়ে যাবে।তারপর কোন মেয়ে পছন্দ করবেনা।দুষ্ট ৫ বছরের ছেলেটা বলে উঠে।
-ছেলের মুখে এমন কথা শুনে হাসি থামাতে পারেননা মা।হেসে দিয়ে বলেন দুষ্ট ছেলেটা আমার।এখনই প্রেমের চিন্তা করিস।
-টিচার বলে Think of your future.তাই তো ভাবিষ্যত কেই ভাবছি মাম্মা।
-বাবা রোনু তুই অনেক ছোট।ভালোমতো খেয়ে বড় হতে হবে,শক্তিশালী হতে হবে।তাইনা?খেয়ে নে বাবা।এমন করিসনা।
-শক্তিশালী হয়ে দুষ্টু লোকদের মারবো তাইনা মাম্মা?বাবাকে শাস্তি দিবো।তাহলে তোমাকে আর কষ্ট দিবেনা কখনো।
-ছেলের কথায় মার চোখ জোড়া ভরে আসে।না বাবা ওভাবে বলিস না।সে তো বাবা তোর।বাবাকে নিয়ে এভাবে বলতে হয়না।
-সে তো অন্যায় করছে মাম্মা।টিচার বলে ওয়াইফের গায়ে হাত তোলা অন্যায়।বাবা তো অন্যায় করছে মা।বাবাকে শাস্তি পেতেই হবে।বলে উঠে ছোট্ট বাচ্চাটা।
নির্বিকার চোখে সন্তানের দিকে চেয়ে রইলেন মা।
ছেলেটা ঠিকই বলছে।তার বাবা অন্যায় করছে।নিয়মিত অত্যাচার করছে গর্ভবতী স্ত্রীকে।
রোয়েন আর কিছু ভাবতে পারছেনা।বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে ড্রাইভিংয়ে মন দিলো রোয়েন।
কিছুক্ষনের মাঝেই পৌছে গেলো বনানীর রায়হান ম্যানশনে।
বড় মেইন গেটটিতে ধুলো পড়ে গেছে একদম।একসাইডে পুরো জং ধরে গেছে।ভেঙ্গে পড়তে পারে।যে কোন সময়ে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে রোয়েন।হেঁটে হেঁটে গেটের কাছে এসে দাঁড়ায়।
ভিতরে সাজিদ রায়হানের লোকজন আছে।গেটের কাছেই একজন আসছে ফোনে কথা বলতে বলতে।রোয়েন একটু সরে দাঁড়ায়।লোকটা বেরিয়ে আসতেই রোয়েন পিছন থেকে ধরে তার ঘাড় মটকে দিলো।
লোকটা চিৎকার করার সময় টা ও পেলোনা।তারপর ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকতে থাকলো রোয়েন।
প্রায় সব লোককেই হয় ঘাড় মটকে না হয় শুট করে দিয়েছে ও।
হাঁটতে হাঁটতে বড় ম্যানশনটির সামনে এসে থামলো রোয়েন।চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওর প্রথম সাইকেল চালানোর দিন আর মাম্মার পিছনে পিছনে দৌড়ানোর কথা।
যেদিন সাইকেল চালাতে শিখেছিলো মাম্মা সেদিন ওর পিছনেই ছিলো।ওর ফুটবল খেলা ক্রিকেট খেলা মাম্মার সাথেই হতো।রোয়েন যেন সেই দিন গুলো দেখতে পাচ্ছে আবার।অতীত গুলো ওর মনে তাজা হয়ে উঠছে।
রোয়েন এবার একপা একপা করে সামনে এগুতে লাগলো।যদি ভিতরে কেউ থাকে।সে বের হয়ে আসবে তাহলে।কিন্তু কেউ বের হলো না।রোয়েন এবার দ্রুত হেঁটে ঘরে ঢুকে গেলো।
ঘরে ঢুকার পর পুরোনো অনূভুতি গুলো যেন জেগে উঠছে।সব আগের মতো আছে।এমন কি ওদের ফেমিলি ফটো টাও ঝুলানো আছে।বালু জমে ধূসর হয়ে গেছে সব।
রোয়েন একটা ছোট্ট ছেলে কে দেখতে পেলো।আকাশী রং এর শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরে দৌড়াচ্ছে ছেলেটা।
বাচ্চাটির কাছে আসতেই সব নাই হয়ে গেলো।রোয়েন চোখ মুছে নিয়ে সিড়ির দিকে তাকালো।মােম্মা সিড়ি বেয়ে নামছে।খুব বেশি জোয়ান লাগছে।
লম্বা চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে আছে।মাম্মা ভাতের প্লেট নিয়ে কাকে যেন ডাকতে ডাকতে নামছে।রোয়েনের পাশ ঘেষে মাম্মা চলে গেলো।
রোয়েন এবার সিড়ির হাতল ধরে উপরে যেতে লাগলো।
প্রত্যেকটা কক্ষে মাম্মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে রোয়েন।
-মাম্মা!!!!মাম্মা চিৎকার করে ডাকছে রোয়েন।
-মাম্মা কই তুমি?জবাব দাও।আমি চলে এসেছি।চিৎকার করে বলছে রোয়েন।
মাম্মাকে ডাকতে ডাকতে রোয়েন ওর বাবা মায়ের রুমের সামনে এসে থামলো। তারপর কিছু না ভেবেই জোরে ধাক্কা দিতেই রুমটি খুলে গেল।
নাহ নেই মাম্মা।রোয়েন সেই রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের সামনে এলো।ওর ছোট বেলার রুম।রুমের দরজা খুলতেই চেয়ারে বাঁধা সেন্সলেস রায়না রাহমান কে দেখতে পেলো রোয়েন।
দৌড়ে এসে রায়না রাহমানকে জড়িয়ে ধরলো রোয়েন।
-মাম্মা!!! তোমার রোনু আসছে।নিয়ে যাবে তোমাকে।বলেই রায়না রাহমানের বাঁধন খুলে মাকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসে রোয়েন।গাড়িতে রায়না রাহমানকে বসিয়ে নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
রুপন্তী কিচেনে রুহীর প্লেট টা ধুয়ে নিচ্ছে।
রেহানকে ওর কাছে আসতে দেখে ও কিছু না বলে কাজে মন দিলো।
রেহান রুপন্তীর পাশে দাঁড়িয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে রুপন্তীর দিকে তাকিয়ে পানি গুলো পান করে নিলো।
রেহান এবার রুপন্তীর পিছনে দাঁড়িয়ে আর কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে সেখানে চুমো এঁকে দিলো।রুপন্তী কাজ করেই যাচ্ছে।
রেহান রুপন্তীর ঘাড়ে গরম নিশ্বাস ছাড়ছে।রুপন্তীর হাত কাঁপছে।কাজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে ও।রুপন্তীর নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে।
-র র রেহান প্লিজ কাজ করতে দিন।কাঁপা গলায় বলে উঠে রুপন্তী।
-রেহানের হাত জোড়া ধীরে ধীরে রুপন্তীর কাঁধ ছাড়িয়ে নামছে।
রুপন্তী নিশ্বাস নিতে পারছেনা।রেহানের হাত দুটো রুপন্তীর হাতজোড়া আঙ্গুল গুলোর ভাজে ভাজে ঢুকিয়ে নিয়েছে।
তারপর সেই হাত দুটো ভাজ করে রুপন্তীর পেট জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো রেহান।
রুপন্তী ভয় পেয়ে রেহানের কাঁধ দুহাতে চেঁপে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো রুপন্তী।
রেহান রুপন্তীর দু চোখের পাতায় চুমু দিয়ে ওর ঠোঁটজোড়া মুখে পুরে নিলো।
রায়না রাহমানকে হসপিটালে এডমিট করিয়ে দিলো রোয়েন।
ডাক্তার বলেছে দুদিন কি আরো বেশিও লাগতে পারে মায়ের জ্ঞান ফিরতে।
রোয়েন সাইফ রাহমানের নম্বরে কল দিলো।
অপরপাশ থেকে কল রিসিভ করলেন সাইফ রাহমান।
-হ্যালো রোয়েন।তোমার মাকে পেয়েছো?জিজ্ঞেস করে উঠেন সাইফ রাহমান।
-জি।মাকে হাসপাতালে এডমিট করিয়েছি।ডাক্তার বলল দুদিন অথবা আরো বেশি দিন লাগতে পারে মায়ের জ্ঞান ফিরতে।
-ওহ।ভালো লাগছে শুনে।তুমি ঘরে এসে কিছু খেয়ে নাও।পরে আমরা একসাথে হাসপাতালে আসবো।বলে উঠলেন সাইফ রাহমান।
রোয়েন রায়না রাহমানের রুমের দিকে তাকিয়ে বললেন ওকে আসছি আমি।
ঘন ঘন নিশ্বাস নিয়ে রেহানের ছোঁয়া গুলো উপভোগ করছে রুপন্তী।
রেহান রুপন্তীর গলায় ঠোঁট বুলাতে বুলাতে রুপন্তীর উড়নায় হাত দিতেই রুপন্তী রেহানের হাত চেঁপে ধরলো।
-প্লিজ না।বলে উঠে রুপন্তী।
বাঁধা পেয়ে মাথা তুলে তাকায় রেহান।তারপর ধড়ফড় করে উঠে বসলো।
-সরি!!!এমন ইন্টেনশন ছিলোনা রুপন্তী।বলে উঠে রেহান।
-ইটস ওকে।শোয়া থেকে উঠে বসে রুপন্তী।
দুজনেই চুপ।হঠাৎ রেহান বলে উঠলো ভাবির কোন খবর নেই।
আরে আসলেই তো।আপু কই?চিন্তিত হয়ে বলে উঠে রুপন্তী।তারপর দ্রুত খাট থেকে নেমে রেহানের রুম থেকে বেরিয়ে রুহীর রুমে এলো।
রুহী রোয়েনের ছবি নিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষন পর পর সেখানে চুমু দিচ্ছে।
রুপন্তী মুচকি হেসে বোনের পাশে বসলো।
-আপি!!!জিজু কে মিস করছিস?
রুহী পাশে ছবিটা রেখে বোনের দিকে তাকালো।
-জানিস এসময়ে যার ছবি বেশি দেখবো আমার সোনা বাচ্চাটা ঠিক তার মতো হবে দেখতে।
আর আমি চাই ছেলে মেয়ে যেই হোক সে যেন তোর জিজুর মতো হয় দেখতে।কথাটা শেষ না করতেই ফোন বেজে উঠে রুহীর,,,,,,,,,
চলবে