The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 108
বাবু হওয়ার চার কি পাঁচদিন পর রামীলা পাগল হয়ে গেলো রুহীকে দেখার জন্য।রুহী কে নিয়ে আসার পর থেকে নাকি কেঁদে কেঁটে অস্থির।কারন সেদিন রুহী যখন নামাজের বিছানায় চিৎকার করে কাঁদছিলো তখন নামাজ ছেড়ে উঠে এসেছিলো রামীলা।রোয়েন তখন রুহীকে জড়িয়ে সবাইকে কল দিচ্ছিলো।রামীলার বুঝতে দেরি হয়নি লেবার পেইন শুরু হয়ে গিয়েছে।মেয়েটা তখন থেকে কাঁদছে।তাই জোর করে আনিলার সাথে চলে এসেছে।রুহীকে দেখেই বাবুর কথা ভুলে গেলো রামীলা।দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো রুহীকে।কাঁদছে মেয়েটা। কেঁদে কেঁদে বারবার বলছিলো,
”আফু আপনে ভালো আছেন?জানেন কতো পরান পড়ছিলো আপনের লাইগা।”
রুহীর চোখ ভরে আসে। একটু হেসে বলল,
”পাগল হয়ে গেছিস?ভালো আছি আমি।বাবুকে দেখবিনা?”
সরে আসে রামীলা।তারপর বলল,
”ভুইল্যাই গেছিগা বাবুর কথা।”
”তোর পিছনে বাবু।”
রামীলা পিছনে চেয়ে দেখলো রোয়েন বাবুকে কোলে নিয়ে আদর করছে।রামীলা জানে বাবু মানেই খুব ছোট।কিন্তু পেটে যে বড় হয়ে ও যেতে পারে সে বিষয়ে আইডিয়াই নেই ওর। দ্রিধা কে দেখে বলল,
”আফু আপনের মাইয়া এডা?”
”কেন কি হলো?”
”এতো বড় ক্যান?”
”ও বড় হয়ে গিয়েছিলো।”
”ওমা!!”
গালে হাত রামীলার। তারপর বাবুর দিকে এগুলো।রুহী পিছন থেকে বলল,
”রামীলার কোলে দাও ওকে।”
রোয়েন খুব সতর্কতার সাথে বাবুকে কোলে নেয়।তারপর মুগ্ধতার হাসি দিয়ে বলল,
”আফু খুব সুন্দর আপনের মাইয়া।ভাইয়ার মতন লাগে।”
রোয়েন রুহী দুজনের মুখে হাসি। প্রায় সতের দিন পর রুহীকে রিলিজ দেয়া হয়।শামীম এসে ওদের বাসায় নিয়ে যেতে।বাবুকে কোলে নেয় রোয়েন।রুহী অবশ্য অতোটা দূর্বল হয়ে যায়নি।বেশ শক্ত আছে।ওরা বেরিয়ে পড়লো ঘরের উদ্দেশ্যে।তেমন কাউকে জানায়নি রোয়েন আজ আসবে।কারন বেশ ক্লান্ত ওরা।সবারই একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। পরে নাহলে বড় করে অনুষ্ঠান করবে।আনিলা বাসায় ছিলো।রান্না বান্না হয়েই গেছে।আনিলা বাবুকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলেন,
”নানু মনি এসে গেছে।”
রুহী মুচকি হেসে আনিলাকে জড়িয়ে ধরে।ও বলল,
”মা কেমন আছো?”
”আলহামদুলিল্লাহ যা ফ্রেশ হয়ে নেয়।সেলাইতে পানি না লাগে যেন।”
”না মা লাগলে প্রবলেম নাই।”
”তারপর ও কাঁচা কিন্তু। ”
”আচ্ছা।”
রুহীকে নিয়ে রুমে চলে আসে রোয়েন।রুমে এসে হাফ ছাড়ে দুজন।রুহীকে টেনে বুকে নেয় রোয়েন। তারপর শত চুমু সারামুখে।রোয়েন কাপড় চোপড় নেয় দুজনের।তারপর বলল,
”আগে তোমাকে গোসল করিয়ে দেই।পরে আমি করবো।”
”আমি পারবো।”
রুহীর হাত শক্ত করে চেঁপে ধরলো রোয়েন তারপর বলল,
”কোন কথা না।চলো আমার সাথে।”
রুহীকে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দেয় রোয়েন। তারপর নিজেও গোসল করে।রুহী বেরিয়ে এসে খাটে আধশোয়া হয়।সেলাইয়ের জায়গাটা চুলকায় প্রায়ই।ব্যাথাও হয়।বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।রুহী চোখ মুখ কুঁচকে হালকা ভাবে চুলকে নেয় তখন ই আনিলা দ্রিধা নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। ফুঁপিয়ে কাঁদছে ঘুমের মাঝে।রুহী বলল,
”মা কি হয়েছে ওর?”
”মনে হয় খিদা পেয়েছে।”
”দাও আমার কোলে।”
রুহী হাত পেতে কোলে নেয় মেয়েকে।রুহীর ছোঁয়া পেয়ে মেয়ের কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।রুহী বাবুকে চুমু খেয়ে বলতে থাকে,
”এই যে আম্মু কাঁদেনা এখন। খিদা লেগেছে আম্মুটার?”
রুহী খাওয়াতে শুরু করে মেয়েকে।কান্না না থামায়। আনিলা বেরিয়ে যান।রোয়েন বেরিয়ে বলল,
”কাঁদছিলো কেন?”
”খাওয়ার জন্য।”
মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বলল রুহী।বাবু ঘুমিয়ে গেলে রামীলাকে বাবুর কাছে রেখে ওরা নিচে চলে গেলো।খেয়ে ওপরে চলে এলো রোয়েন আর রুহী।রামীলা বেরিয়ে গেলো।বাবুকে মাঝে রেখে দুজনে দুপাশে শুয়ে পড়ে।রোয়েন বাবুর ছোট্ট হাতটা ধরে বলল,
”সব নতুন লাগছে রুহী।”
”আমার ও।”
”আমরা পরিপূর্ন রুহী।”
”হুম।”
”সব মনে হচ্ছে নতুন করে শুরু হলো।”
”তুমিই তো সবচেয়ে বড় খুশি দিলে আমাকে।আমি আজ সত্যিই পরিপূর্ন।তোমাকে পেয়ে আমি সত্যিই পরিপূর্ন।ভালবাসি তোমাকে।”
”খুব ভালবাসি।”
দুজনে একসাথে বাবুর দুগালে চুমু খায়।তারপর রোয়েন মুখ সরিয়ে রুহীর ওষ্ঠে গভীর চুমুর স্পর্শ দেয়।
ফাহমিন রোয়েনের বাসায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।কেন যেন দ্রিধাকে খুব দেখতে মন চাইছে।অবশ্য আজ ফ্রেন্ডদের ও পুনর্মিলনী।তখনই ফোন বেজে উঠে ফাহমিনের।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সামায়রা কল করেছে। ফাহমিন একটু হেসে ফোন রিসিভ করে।অপরপাশ থেকে সামায়রা কাঁদছে।ফাহমিনের বুক ধক করে উঠে।কেন যেন জানে পরিনত হয়েছে মেয়েটা। কাঁপন ধরা কন্ঠে ফাহমিন জিজ্ঞেস করে,
”কি হয়েছে তোমার?”
”পা কেঁটে গেছে রক্ত বেরুচ্ছে কি দিবো বলুন।”
”তোমার?”
”না মিমির। ”
”মিমি?”
”হ্যা।”
”সে আবার কে?বান্ধুবী?”
”নাহ।আমার হ্যামস্টার।”
”হ্যা??”
চোখ বড় হয়ে গেলো ফাহমিনের। ও সত্যি ডাক্তারি করেছিলো কিন্তু নিজেকে পশুপাখির ডাক্তার মনে হয়নি কখনো।ফাহমিন বলল,
”ক্যান ইউ রিমেম্বার আমি একজন সার্জন কোন ভেট নই।”
”ওহ।ও মরে যাবে হাঁটতে পারছেনা। আচ্ছা রাখি।”
মন খারাপ করে কল রাখতে যাচ্ছিলো সামায়রা।ফাহমিন কি মনে করে বলল,
”ওয়েট ওকে আমার চেম্বারে নিয়ে আসো।”
”সত্যি?”
”জি ম্যাম চলে এসো।জলদি করো কিন্তু।”
”ওকে হেসে দেয় সামায়রা। ”
ফাহমিন ফোন রেখে সেটাকে সামনে এনে বলল,
”ভালবাসি তোমাকে তোমার সরলতাকে তোমার মন তোমার অশ্রুকে।”
সামায়রা এসে যায় ফাহমিনের চেম্বাারে।ফাহমিন দেখলো মেয়েটার চোখ ফুলে গেছে। কিছু টা লাল হয়ে আছে।ফাহমিন আস্তে করে হাত বাড়িয়ে চোখজোড়ার পাতা স্পর্শ করে দেয়।সামায়রার কেমন যেন ভালো লাগার সৃষ্টি হয়।ফাহমিন হাত সরিয়ে বলল,
”তোমার ইন্দুররে দাও।”
ভ্রু কুঁচকায় সামায়রা।ওর হ্যামস্টার কে কি বলল এই লোক?
”ইন্দুর কি?”
”ইন্দুর চিনোনা?ইদুর।যাই হোক দাও ওকে।”
”প্লিজ ওকে এভাবে ডাকবেননা। কিউট একটা নাম আছে।”
”মিমি?”
”ওকে তোমার মিমিকে দাও।”
হ্যামস্টারটিকে ফাহমিনের হাতে তুলে দিতেই ফাহমিন দেখলো বেশ পরিষ্কার মিমি।গলায় রেড স্টোনের একটা মালা।পাথরটাও দামি মনে হচ্ছে। ফাহমিন ঠোঁট উল্টে পা দেখলো ওটার।আসলেই কেঁটে গেছে। রক্ত ও ঝরছে।ফাহমিন প্রথমেই রক্ত বন্ধ করলো পরে পরিচিত এক ভেট কে কল দেয়।সে কিছু নির্দেশনা দেয় সে অনুযায়ী মিমির পায়ে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়।ফাহমিন এখন বলল,
”ও ভালো হয়ে যাবে এখন।”
”থ্যাংক ইউ। ”
সামায়রা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
”আসি।”
ও বেরিয়ে যেতে নিলে ফাহমিন ওর কাঁধ ধরে থামিয়ে নিজের দিকে ফিরায়।তারপর বলল,
”বিল কে দেবে ম্যাম?”
”সরি তাড়াহুড়োয় টাকা আনিনি।আমি কাল দিয়ে দিবো।কতো দিবো?”
ফাহমিন কিছু বলছেনা।শুধু এক নজরে মেয়েটাকে দেখছে।সামায়রা আবার বলল,
”কিছু বলুন।”
ফাহমিন এখন ও চুপ। সামায়রা বলল,
”বাসায় যাবো।”
ফাহমিন তো ওকে দেখছে শুধু।তারপর সামায়ারা ঠোঁটের কোনা ঘেঁষে চুমু খায় ফাহমিন।সামায়রার চোখজোড়া বড় হয়ে যায়।ফাহমিন এখনো সরেনি।সামায়রার ভালো লাগছে কিন্তু ভয়টাই কাঁবু করে ফেলেছে।ফাহমিনের মনে পড়ে কি করছে ও?সরে আসতেই সামায়রা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।ফাহমিন ও পিছু পিছু দৌড়ে গেলো।সামায়রা গাড়িতে ঢুকে যেতে নিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো হাসপাতালের গেটের সামনে ফাহমিন দাঁড়ানো।সে জায়গাটি পুনরায় স্পর্শ করে গাড়িতে ঢুকে পড়ে সামায়রা।ফাহমিন সহ সব বন্ধুরা এলো রোয়েনের বাসায়।পরিবারের কেউই আসবেনা আজ।তাই বন্ধুদের ডেকে এনেছে রোয়েন।কারোর বৌ এসেছে তো কারোর আসেনি।রামীন আশফিনা হাসপাতাল থেকে বেরুলো।দুজনের মুখে হাসি।দুই জন আজ খুব খুশি।রামিনের হাতে একটা রিপোর্ট।রোয়েনের বাসার জন্য বেরিয়ে পড়লো ওরা।সবাই দ্রিধা কে খুব আদর করছে। এরই মাঝে রামীন আর আশফিনা ও এসে গেলো।রোয়েন আর রুহী সবার সাথে হেসে গল্প করছে।ফাহমিন আর রামীন কি নিয়ে যেন কথা বলছে।দুজনের তেমন দেখা হয়না।ওরা ও বেশ ক্লোজ ফ্রেন্ড।খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে।
রুহী ভাবিদের সাথে ব্যাস্ত।বাবু আনিলার কাছে।আনিলার ভিষন মায়া লাগে বাবুটার জন্য।নানু ও হয়ে গেলো কিভাবে কিভাবে।তখনই রেজোয়ান মাহবুবকে আসতে দেখা যায়।নাতনিকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে এসে যান।আর দেখলেন রোয়েনের বন্ধুরা এসেছে।ওনি সবার সাথে হালকা কথা বলে বাবুর খোঁজ লাগান।রুহী উঠে এসে বাবা কে জড়িয়ে ধরে।
”ভালো আছো বাবা?”
”হ্যারে মা।তোর কি খবর?”
”এই তো ভালো আছি।”
”দ্রিধা কই?”
”মায়ের কাছে।”
”ওকে।তুই গল্প কর আমি ওর কাছে যাই।”
”আচ্ছা বাবা।”
রেজোয়ান মাহবুব আনিলার কাছে আসেন। আনিলা নাতনীকে আদর করছেন।স্বামীকে দেখে খুব খুশি হন।রেজোয়ান মাহবুব এসে খাটে বসে দ্রিধা কে কোলে তুলে চুমু খান।আনিলা বলেন,
”কেমন আছো?”
”ভালো।তেমার কি খবর?”
”এই তো যাচ্ছে।”
”আমাকে মনে পড়েনা? ”
চুপ হয়ে যান রেজোয়ান মাহবুব।তারপর বলেন,
”খুব মনে পড়ে।”
খাবার শেষে সবাই উঠে যায়।আনিলাকে জোর করে রেজোয়ান মাহবুবের সাথে পাঠিয়ে দেয়া হয়।কারন দুজনেই কষ্ট পাচ্ছেন।রুহীর ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু মা বাবার খুশির জন্য পাঠাতে হলো।সবাই চলে গেলে রামীন দৌড়ে এসে দ্রিধা কে চুমু দিতে থাকে।রোয়েন আর রুহী খুব অবাক।আশফিনা মুখ টিপে হাসছে।রামীন মেয়ে কে চুমু খেতে খেতে বলল,
”রোয়েন দ্রিধা মামনি সৌভাগ্য বয়ে এনেছে।”
”মানে?”
”তুই আমাকে একজন বিদেশী ডাক্তারের খোঁজ দিয়েছিলি।ওনি আশফিনার টেস্ট করাতে বলে এবং রিপোর্ট গুলো লন্ডনে পাঠায়।সেগুলো আজ এসেছে।আমরা বাবা মা হতে পারবো।চান্স খুব কম।অপারেশন করালে ঠিক হয়ে যাবে।”
রামীন হেসে দ্রিধা কে আবার চুমু দিয়ে বলল,
”ওকে আজ থেকে লক্ষী বলে ডাকবো।আমার লক্ষী আম্মুনি।এতো সুখের খবর এসেছে ও আসার সাথে সাথে।”
রোয়েন আর রুহী খুব খুশি।রোয়েন বলল,
”তাহলে আর দেরি কিসের অপারেশন টা করিয়ে নেয়।”
রামীন দ্রিধা কে আদর করতে থাকে।
চলবে