The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 68

অন্ধকার রাতে ছাদে হাঁটছে রুহী।বেশ অবাক রোয়েন।ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো হঠাৎ।চোখ খুলে দেয়াল ঘড়িটাকে দেখে নেয় রোয়েন।দুটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে রোয়েন কিন্তু ঘুম আসেনা।উঠে বসে ও।রুহীকে দেখে আসা উচিৎ।কি করছে কে জানে?রোয়েন উঠে নেমে আসে খাট থেকে।তারপর পা টিপেটিপে রুহীর রুমে এসে খেয়াল করে বিছানা খালি।রোয়েন রুহীর বাথরুম ব্যালকনি চেক করে।কোথাও নেই ওর মায়াবতী।রোয়েন এবার সিড়ি বেয়ে নিচে ড্রয়িংরুম আর ডাইনিং রুম ও খুঁজতে থাকে।রুহী কই?অন্যরুম গুলা তালা বন্ধ।রোয়েন বেশ অবাক হয়।এতো রাতে কই গেলো এই মেয়ে? এবার ওপরে উঠে ছাদে চলে আসে।রুহীকে এবার দেখতে পায় রোয়েন।ছাদে হাঁটছে রুহী।শুধু হাঁটছে।একটু দাঁড়াচ্ছে ও না।রোয়েন দাঁড়িয়ে দেখছে রুহীকে।হঠাৎ রুহী রেলিং ধরে দাঁড়ায় কিছুটা ঝুঁকে যায় ও।রোয়েন বুঝতে পারছেনা ঠিক কি করতে চাচ্ছে রুহী? আর অপেক্ষা না করে রুহীর পিছনে এসে দাঁড়ায় রোয়েন।রুহীর শরীরটা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে।ভিতর থেকে স্মিত কান্নার শব্দ বেরিয়ে আসছে।রোয়েন এবার পিছন থেকে রুহীর পেটে দুহাত আড়াআড়ি ভাবে বেঁধে নেয়।রুহীর ঘোর কাঁটে।চোখের পানি মুছতে পারছেনা ও কারন ওর হাতদুটো রোয়েনের দুহাতের নিচে চাঁপা পড়ে গেছে।রুহী কিছু বলতে যাবে তখনই নিজের কাঁধে কারোর গরম নিশ্বাস অনূভব করতে থাকে।রোয়েন রুহীর কাঁধে মুখ ডুবিয়ে রুহীকে শক্ত করে নিজের সাথে বেঁধে রেখেছে।রুহীর চোখ ভারি হয়ে আসছে।বুকের ভেতর টা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।ও ভেঙ্গে পড়তে চায়না।লোকটা অনেক কষ্ট দিয়েছে ওকে।তাকে ও কষ্ট পেতে হবে।
.
.
-”রুহী আর কতো বলো তো??আর কতো?আমি যে পারছিনা।আমার জীবনীশক্তি কমে আসতে চাইছে।প্লিজ রুহী এবার রাগটা ঝেড়ে ফেলো।রাতে ঘুম আসতে চায়না।বুকটা চিনচিন করে ব্যাথা করে।তোমার নিশ্বাসের মিষ্টি ঘ্রানটাকে বড্ড মনে পড়ে।তোমার সকালের মায়াভরা মুখটাকে অনেকদিন দেখা হয়না রুহী।চলো না আবার এক হয়ে যাই।”
.
.
রুহী স্তব্ধ হয়ে গেছে।রোয়েনের কথা গুলো ওর ভিতরটাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।ও ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য করছে।কিন্তু রুহী শক্ত হতে চায়।এতোটাই শক্ত যে রোয়েন ওর সাথে বাজে ব্যাবহার করার আগে অনেকবার ভাববে।রুহী নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে।কিন্তু রোয়েনের শক্ত বাঁধনে কোনভাবেই নিজেকে আলগা করতে পারছে না ও।রুহী এবার বলল,
.
.
-”কেন বারবার কাছে আসেন বলেন তো?আমি একা থাকতে চাই।কেন বুঝেননা?কেন একা থাকতে দিতে চাননা?কেন বারবার কষ্ট দিতে চলে আসেন?”
.
.
রুহীর কথা গুলো কানে আসতেই রোয়েন রুহীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।রুহী চোখ বড় করে রোয়েনের দিকে তাকায়।রোয়েন রুহীকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।তারপর বলল,
.
.
-”তুমি যাই বলো রুহী আমার শূন্যতা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে।আর দূরে থেকোনা প্লিজ।কেন নিজে কষ্ট পাচ্ছো রুহী?বকা দাও আমাকে মারো কিন্তু এভাবে দূরে থেকোনা।মানতে পারছিনা আমি আর।”
.
.
বলে রুহীর মুখে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে থাকে রোয়েন।রুহী শেষ হয়ে যাচ্ছে তার স্বামীর ছোঁয়া গুলোয়।রোয়েনের স্পর্শ গুলো ওকে রোয়েনের দিকে টানছে বারবার।তারপর ও নিজেকে সামলায় রুহী।রোয়েনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে।
.
.
-আমি ও ভালবাসি বলেই কাঁদি।কিন্তু আপনার বাজে ব্যাবহারগুলো আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে।কিছুসময় আমার থেকে দূরে থাকাটাই ভাল হবে আপনার জন্য।”
.
.
রোয়েন আবার রুহীকে টেনে নেয় নিজের কাছে।তারপর বলল,
.
.
-”যতো বেশি দূরে যাবে ততো বেশি কাছে পাবে।রোয়েন কখনোই তার মায়াবতী থেকে দূরে থাকতে পারবেনা।সেটা যদি তোমাকে বিরক্ত ও করে তাহলে আই ডোন্ট কেয়ার!!!!”
.
.
রুহী অবাক হয়ে রোয়েনের দিকে তাকায়।লোকটার চেহারায় আসলেই ডোন্ট কেয়ার ভাব আর আছে একটু রাগের ছোঁয়া।চোখ নিচে নামিয়ে চলে যাওয়ার জন্য নিজেকে ছাড়াতে চাইলে রোয়েন ওকে নিজের সামনে শক্ত করে ধরে।তারপর রেগে বলল,
.
.
-”চলে যেতে বলিনি।”
-”আমার ঘুম পাচ্ছে।”
-”তাই বলে এতো রাতে ছাদে হাঁটছো?”
-”আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।”
-”তোমার পারমিশন নিয়ে ধরিনি তোমাকে।সো ছাড়ার ব্যাপারটা নির্ভর করে সম্পূর্ন আমার ইচ্ছের ওপর।”
-”কি বলবেন,জলদি বলুন আমাকে নিচে যেতে হবে।”
-”বাহ আমার আদর পেতে এতো উতলা হচ্ছো।আজ মন ভরে ভালোবাসবো রুহী।যেন তোমার ভালোবাসায় নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে পারি।”
.
.
রুহী কিছু বলার জন্য পেলোনা শব্দ পেলোনা সুযোগ।কারন ওর ঠোঁটজোড়া রোয়েনের ঠোঁটের মাঝে আবদ্ধ।রোয়েন রুহীকে চুমু খেতে খেতে কোলে তুলে নেয়।তারপর নিচে নেমে আসে।রুহীকে নিজের রুমে নিয়ে আসে রোয়েন তারপর ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর গলায় চুমু খেয়ে রুহীর বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষন শুয়ে থাকে।রুহী নিজেকে শক্ত করতে পারছেনা।কিন্তু শক্ত হতে হবে ওকে।তাই কোনরকমে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে দেয় রোয়েনকে।রুহীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রোয়েন।রুহী বলল,
.
.
-”আপনি চলে যান।আমি ঘুমোবো এখন?”
-”ওকে গুড নাইট।রুহীর কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায় রোয়েন।
.
.
বিজলি বেগম খেয়াল করছেন তার আদরের নাতি জয় শেখাওয়াত কে।আসার পর থেকে কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে।সারাটাসময় ফোনে কি যেন করে।খাওয়া দাওয়া ও করছেনা ঠিক মতো।চিন্তা হয় বিজলি বেগমের।আদরের নাতি তার।ছেলেটাকে কখনো এমন দেখেনি।এদিকে তার বান্ধুবীর নাতনী স্নিগ্ধার কথাটা ও বলা হচ্ছেনা জয় কে।আর কতো অপেক্ষা করবে?ছেলেটার বিয়েট বয়স পেরুতে চলল।তাই সেদিন সাহস করে নাতির পাশে এসে বসে।জয় কি যেন দেখছে ফোনে।বিজলি বেগম বললেন,
.
.
-”তোকে কিছু বলবো?”
-”জি দাদী বলো।”
.
.
ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বিজলি বেগমের দিকে তাকায় জয়।ওনি বললেন,
.
.
-”তোর তো বয়স হলো।আমার ও অনেক বয়স হয়েছে কবে মরে যাই ঠিক নাই।”
-”বাজে কথা ছেড়ে যা বলার বলো।বের হবো আমি।”
-”তোর জন্য মেয়ে দেখেছি।তুই চাইলে কাল ওদের সাথে দেখা করবো।”
-”দাদী ওসব পরে ভাববো।আমাকে বের হতে হবে।”
.
.
উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের শার্ট পাল্টে নেয় জয়।বিজলি বেগম বললেন,
.
.
-”যা ভাবার জলদি ভেবে নিস।তোর উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো।”
.
.
জয় কোন উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যায়।এদিকে আশফিনার বাঁচাটা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।বাবা প্রতিনিয়ত ভয় রাখছে ওকে।এ ছেলে সে ছেলে দেখে যাচ্ছে।আশফিনা যতো মানা করছে ততোই ওর ওপর বাবার আচরন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।যা তা ভাষায় গালাগালি এমনকি মারধর ও খেতে হচ্ছে ওকে।সেদিন রাতে জয় ঘরে ফিরে।ওর বুকের অস্থিরতাও আরো অনেকটা বেড়ে গেছে।কারন আজ সেই মিষ্টিপাখির দেখা অনেকদিন পর পেয়েছে।মেয়েটাকে দেখেছে একটা কলেজ গেট থেকে বের হতে।গায়ে ছিলো সাদা স্যালোয়ার কামিজ।দূর থেকে মন ভরে দেখে নিয়েছে মিষ্টি পাখিটাকে।কিন্তু সেদেখা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।কালো একটা গাড়ি আসতেই মেয়েটা গাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে।গাড়িটা মেয়েটাকে নিয়ে চলে যায়।
রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে চলে যায় জয়।শাওয়ার ছেড়ে মেয়েটাকে মনে করতে থাকে পানির ঠান্ডা কনা গুলোয়।কয়েকদিন ধরে আনিলা শোহরাব রোয়েন রুহীকে দাওয়াত দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।সেদিন রেজোয়ান মাহবুবকে রাতে ঘুম থেকে তোলেন।রেজোয়ান মাহবুব ঘুম ভেঙ্গে পাশে তাকান।আনিলা শোহরাব রেগে আছেন।
.
.
-”কি হলো অতো রাতে জাগিয়ে রাগ দেখাচ্ছো যে?”
-”তো কি করবো?সুন্দর ভাবে বললে কিছুই তোমার কানে যায়না।”
-”হুহ।”
-”তোমার হুহ হাহ বাদ দাও।আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে কবে দাওয়াত করছো?”
.
.
আনিলা যখন রুহীকে নিজের মেয়ে বলে তখন বেশ ভালো রেজোয়ান মাহবুবের।আনিলার প্রতি তখন তার ভালোবাসাটা অনেকটুকু বেড়ে যায়। কিন্তু প্রকাশ করতে চান না উনি।এদিকে রেজোয়ান মাহবুবকে চুপ দেখে আনিলা বলেন,
.
.
-”কিছু বলো আর না বলো পরশু ওদের দাওয়াত করছি আমি।”
-”আচ্ছা।”
-”বাজার করে আনবে তুমি।কাজের লোকদের পাঠাবেনা।আমি চাইনা কোন ঘাটতি থাকুক।রান্না করবো আমি শেফরা না।”
-”আচ্ছা করে নিও।এখন ঘুমাও।”
.
.
অপরপাশে ফিরে শুয়ে পড়ে রেজোয়ান মাহবুব।পরদিন সকালে কাজে চলে যায় সবাই রোয়েন সবাই কে ডেকে আনে নিজের রুমে।সব জড়ো হয় ওর সামনে।রোয়েন বলল,
.
.
”পনের দিনের জন্য সুইজারল্যান্ড যেতে হবে। সেখানে আমাদের অফিসে মিটিং আছে।আমি যতোদিন থাকবো না আপনাদের সব দেখে রাখতে হবে।”
.
.
রোয়েনের কথায় সবাই চুপ।রোয়েন সবাইকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ করে।বেরিয়ে যায় সবাই রেজোয়ান মাহবুব ব্যাতীত।ওনি রোয়েনের সামনে বসে বলল,
.
.
-”আপনার ফ্লাইট কবে?”
-”পরশুদিন রাতে।কেন?”
-”নাহ আসলে আনিলা জেদ করছিলো রুহী আর আপনি এক বেলা খাবেন আমাদের সাথে।”
-”ওহ আচ্ছা।”
-”কাল চলে আসেন।রুহীকে আনিলা কল করবে।আমি ও বলবো।আপনারা আসলে খুব ভালো লাগবে আমাদের।”
-”আচ্ছা।আসবো আমরা।”
-”তাহলে আমাকে ছুটি দেন।বাজার করতে যাবো।”
-”আপনি কেন করবেন?কাজের লোকরা আছে তো?”
-”নাহ আনিলা চাইছে আমিই যেন বাজার করি।”
.
.
শ্বশুরের কথায় হেসে দেয় রোয়েন।তারপর বলল,
.
.
-”আচ্ছা বাবা যান তাহলে।আমরা চলে আসবো।”
.
.
রেজেয়ান মাহবুব বেরিয়ে যান।রোয়েন কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।সেদিন বিকেলে আনিলা শোহরাব রুহীকে কল দেন।অচেনা নম্বর দেখে প্রথমে একটু অবাক হয় রুহী।প্রথমে কল ধরেনা ও।দুতিনবার কল আসার পর রুহী রিসিভ করে।আনিলা বললেন,
.
.
-”নম্বর চিনতে পারোনি তাইনা?”
.
.
আনিলার কন্ঠে একটু চমকে উঠে রুহী তারপর বলল,
.
.
-না আসলে সেভ করা ছিলনা তাই।”
-”বুঝতে পেরেছি।ভালো আছো?”
-”জি আপনারা?”
-”এইতো আছি।শুনো কাল তুমি আর জামাই দুপুরে আসছো বাসায়।লাঞ্চ করবে আমাদের সাথে।তোমার নানাও আসবে।ওনার সাথে ও দেখা হবে তোমার।জলদি এসো কিন্তু।কোন না শুনবো না।”
.
.
আনিলার কথায় আপত্তি করার সুযোগ পায়নি রুহী।তাই রাজি হয়ে যায়।
চলবে