The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 51
পাহাড়ের কোনা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো রোয়েন।নিচে তাকিয়ে আছে ও।মাথা কাজ করছেনা ওর।সব কিছু যেন কেমন অচল হয়ে যাচ্ছে।ও হয়ত মারা গেছে আজ।কারন বেঁচে থাকার শেষ সম্বল টাও হারিয়ে ফেলেছে।নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে কি করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো যাকে এতোটা দিন যাবৎ বুকের মাঝে পুশে আসছিলো। এরই মাঝে রোয়েন পিছন থেকে কারোর চিৎকার শুনতে পায়।সাথে সাথে পিছে ফিরে ও।সেলিনা হামিদ আর হাসান হামিদ দাঁড়িয়ে আছে।দুজনে রোয়েনকে দেখছে।রোয়েন পকেটে রাখা গানটাকে স্পর্শ করলো।ওনারা এগিয়ে আসতে আসতে চিৎকার করে বলল,
.
.
-”এটা কি করলে তুমি?আমার নাতনীকে ফেলে দিলে কেন?”
.
.
রোয়েন এবার ওনাদের দিকে গানটিকে তাঁক করলো,
.
.
-”এদিকে আসবেননা। নাহলে আপনাদের পরিনতি ও রুহীর মতো হবে।”
-”সবাইকে বলে দিবো।তুমি আমাদের নাতনীকে মেরেছো।তোমার শাস্তি হবে রোয়েন তোমার শাস্তি হবে।”
.
.
কথা গুলো বলতে বলতে ওনারা চলে গেলো। রোয়েন আবার ও পাহাড়ের নিচে তাকায়।সব অন্ধকার ওর জীবনের মতো।চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই চোখ মুছে নেয় রোয়েন।তারপর অনেকক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।সেদিন খুব রাত করে ঘরে ফিরে আসে রোয়েন।কিন্তু নিজের রুমে যায়নি।সোফায় বসে রুহীর রুমের দিকে তাকায়।মনে হচ্ছে রুহী বসে আছে ওখানে।রোয়েন সে রুমের দিকে এগিয়ে আসে।বিয়ের সময় রুহী যে কাপড় পাল্টে পার্লারে গেছিলো সে কাপড় গুলো খাটে পড়ে আছে।রুহীর ব্যাবহার্য অনেক কিছু পড়ে আছে।রোয়েন জামাটা হাতে নিয়ে সেটা মুখে চেঁপে ধরে ঘ্রান নিতে থাকে।ও আজ হয়ত নিজের মাঝেই নেই।একটু আগে মায়াবতীকে শেষ করে ফেলেছে ও।কাপড়টিকে ধরে নিচে শুয়ে পড়ে ও।পরদিন সকাল ভোরে ফিজা আর ফিদা চলে যায়।ওরা যাওয়ার আগে রুহীর কথা জিজ্ঞেস করে।কিন্তু কাজের লোক জানায় রুহী কই তারা জানেনা।ফিজা আর ফিদা চলে যায়।এদিকে রেজোয়ান মাহবুবের বাসায় সকাল থেকে চিৎকার শুরু করেছে সেলিনা হামিদ আর হাসান হামিদ।বারবার রোয়েনকে গালাগাল করছে।রুহীকে মারার জন্য দোষারোপ করছে।কিন্তু কেউ ওনাদের কথায় বিশ্বাস করছেনা।শেষ পর্যন্ত রেজোয়ান মাহবুব রোয়েনকে কল দেন।রোয়েন শোয়ায় থেকে কল রিসিভ করে,
.
.
-”জি বাবা বলুন।”
-”আমার শ্বশুর শাশুড়ী এসব কি বলছে রোয়েন?রুহী কোথায়।?”
-”মেরে দিয়েছি ওকে।”
.
.
কথাটা অস্বাভাবিক শোনায়।রেজোয়ান মাহবুব বিশ্বাস করতে পারছেনা।বারবার আশ্বস্ত করতে থাকেন যে রোয়েন সত্যি বলছে কিনা।রোয়েন বলল,
.
.
-”বনানী তে যেখানে আমার মায়ের বাড়ি সেখানে উঁচু পাহাড় আছে।সেটার নিচে আপনারা খোঁজ নিন।”
-”জি।কিন্তু রোয়েন,,,,,”
-”আমি আর কোন কথা বলতে চাইছিনা।একা ছেড়ে দিন আমাকে।”
-”ওকে।”
.
.
সেদিনই রেজোয়ান মাহবুব দলের লোকদের নিয়ে রোয়েনের নির্দেশ মতো যায়।এবং সেখানে রুহীর কাপড় আর গয়না দেখতে পায়।সেগুলোয় রক্ত মাখা।ওর শরীরটাকে পায়না।এখানে বাঘ সিংহ আছে।হয়ত তারাই রুহীর শরীরটাকে খুঁবলে খেয়েছে।অবশ্য রুহীর এক হাত পেলো সেখানে।হাতে রক্ত লাগানো। রাতে রেজোয়ান মাহবুব আর রোয়েনের দলের লোকেরা রোয়েনের ঘরে আসে।রেজোয়াব মাহবুব কাঁদছেন।রোয়েন কে জিজ্ঞেস করেন,
.
.
-”স্যার কি দোষ করেছিলো আমার মেয়েটা?”
-আমাকে কষ্ট দিয়েছে।ধোঁকা দিয়েছে আমাকে।আর আমার কাছে বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি মৃত্যু।সেটা যেই হোক।”
.
.
রোয়েনের কথায় রামীন বলল,
.
.
-”তোকে আমি চিনি না রোয়েন।কি করে মারলি রুহীকে।”
-”এক কথা বারবার বলা পছন্দ না।একা ছাড় আমাকে।সবাই চলে যান প্লিজ।”
.
.
কেউ আর কিছু বললনা।সবাই চলে যায়।এদিকে আশফিনা নীরা হামিদ সবাই জেনে গেছে রুহীর মৃত্যুর কথা।নীরা হামিদ খুব কাঁদছিলো।কারন রুহীকে খুব ভালবাসতেন ওনি।আশফিনাও খুব কেঁদেছে।রামীন নিজে ও ভালো নেই।রুহীকে খুব পছন্দ করতো ও।ছোট বোন ছিলো ওর।রোয়েন কিভাবে মারতে পারলো ওর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে।যে মানুষটার একটা সেকেন্ড কাঁটতো না রুহীকে ছাড়া সে কি করে রুহীকে মারতে পারলো।তাও এমন একটা ভুলের জন্য যেটা হয়ত রুহীর ছিলোইনা।রোয়েন কে অনেকবার কল দেয় রামীন কিন্তু ফোন ধরেনি ও।রামীনের নিজেকে অসহায় লাগছে।
ঠিক সেই সময়ে আশফিনা ওর বাসায় আসে।রামীন আশফিনাকে দেখে অবাক।তারপর বলল,
.
.
-”তুমি এসময়ে?”
-”কিছু উত্তর লাগবে আমার রামীন।আপনার বন্ধুর কাছ থেকে।কিন্তু তার কাছে যেতে ও ভয় লাগছে আমার।ঘিন্না লাগছে তারওপর।সাহস কি করে হয় রুহীকে মারার?এতোই ক্ষোভ থাকতে বিয়ে কেন করলো?আপনার বন্ধু আস্ত একটা খুনি।সে জানোয়ার।সব কিছুই করতে পারে সে।”
.
.
যতোই হোক রোয়েন রামীনের বন্ধু।প্রেমিকার মুখে রোয়েনকে নিয়ে এসব কথা কাঁটার মতো বিধছে ওর বুকে।ও জবাব দিতে চাইছে।কিন্তু জবাব দেবে কি? এটার উত্তর ওর কাছেই নেই।রামীনকে চুপ দেখে আশফিনা বলল,
.
.
-”আপনি চুপ কেন রামীন?আপনার এই নিস্তব্ধতা অসহ্য লাগছে আমার।কিছু বলেন?”
-”কি বলবো বলো?নিজেই বুঝতে পারছিনা রোয়েন কেন এমন করলো।এ রোয়েন নতুন।একে চিনতে পারছিনা।”
-”আমার রুহীকে ফিরিয়ে দিতে বলেন আপনার বন্ধুকে।নাহলে খুব খারাপ হবে রামীন খুব খারাপ হবে।
.
.
পুরো কলোনিতে শোকের ছায়া বর্তমান।রুহীকে সবাই খুব ভালবাসতো।সবার কলিজার টুকরা ছিলো ও।কিম্তু আজ কলিজার টুকরা টা নেই।শামীম পুরো সময় মন খারাপ করে থাকে।রুহী ও অনেকটা সময় ওর সাথে কাঁটাতো।মেয়েটা এমন করতে পারেনা।তাহলে কি হয়েছিলো ওর সাথে?
আর যেখানে বসের কথা সেখানে শামীম রোয়েনকে ভালো করে চিনে।এ মানুষটা উপর থেকে খুব শক্ত কিন্তু খুব ভালো মনের।সে কিভাবে এসব করবে?
এদিকে রোয়েন কারোর সাথে যোগাযোগ রাখেনা।ঘরেই থাকে।একদমই ভালো নেই।ওর মনে হতে থাকে রুহী আছে। এখানেই আছে।আসবে ওর কাছে।
সেদিন রাতে রোয়েন ঘুমাচ্ছিলো।ঘুমের মাঝেই রুহীর শেষ কথা গুলো ওর কানে আসতে থাকে।তারপর সব নীরব।হঠাৎ রোয়েন অনূভব করলো কারোর হাত ওর মাথা কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছে।রোয়েন এবার চোখ খুলে দেখে রুহী বসে আছে ওর সামনে।কিছু বলছেনা রুহী।সাদা শাড়ী পরে আছে ওর মায়াবতী ওর স্ত্রী।রোয়েন বসে পড়ে।রুহীর হাত ধরে কাছে নিয়ে আসে।
দুজনেই চুপ।রোয়েন রুহীর কপালে চুমু দিয়ে ওর দুচোখে চুমু খায়।রুহী এবার ফিসফিস করে বলল,
.
.
-”আই লাভ ইউ রোয়েন।”
-”আই লাভ ইউ রুহী আই নিড ইউ।”
.
.
কথা গুলো বলার মাঝেই রোয়েন অনূভব করলো আসলে কেউ নেই ওর সামনে ও একা সম্পূর্ন একা।রোয়েন মনে মনে বলল বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলে রুহী।আমাকে ঠঁকাচ্ছিলে তুমি।এর উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছো তুমি।কিম্তু এখন আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি রুহী।আমার হৃদস্পন্দন ক্রমশ শেষ হয়ে যাচ্ছে।অচল হচ্ছে প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেগুলোর চলার মাধ্যম একমাত্র তুৃমিই ছিলে।আমি একা রুহী বড্ড একা।এ জীবন টা আজ পরোকালের সমান আমার কাছে।যে আমি তোমার কারনে সম্পূর্ন ছিলাম সে আমি আজ আবার একা হয়ে গেলাম।অাবার অপূর্ন হয়ে গেলাম।তুমি ছাড়া।এমনই আরো কয়েকটা রাত রুহীকে অনুভব করে রোয়েন।যেন রুহী ওর পাশেই আছে।
আজ কাল রোয়েনের কাজের লোক গুলো ওর কাছে আসতে ও ভয় পায়।কারন যে মানুষ তার প্রিয়তমাকে খুন করতে পারে সে অনেক কিছুই করতে পারে।রোয়েনের দিন গুলো কাঁটে রুহীকে মনে করে।ওদের সুন্দর সময় গুলো মনে করে।রাতটা কাঁটে বারান্দায় সিগারেটে ফুঁক দিয়ে।রুহীকে বড্ড মনে পড়ে।কিন্তু ওর সেই ভিডিও এর কথা মনে পড়ে তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা রোয়েন। রাগ লাগে ওর।এদিকে সেলিনা হামিদ আর হাসান হামিদ রোয়েনের বিরুদ্ধে কেস করতে চাইছে।কিন্তু পুলিশ অফিসার গন কেস করবেননা।রোয়েন দিচ্ছেনা তাদের কেস করতে।কিছুদিন যেতেই ওনারা বেশ উৎপাত শুরু করেছেন কেস করার জন্য যার কারনে রোয়েন ওনাদের ডেকে পাঠায়।ওনারা চলে আসে রোয়েনের ঘরে।সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে রোয়েন,
.
.
-”কি চাইছেন আপনারা?”
-”তোমাকে শাস্তি দিবো।আমাদের রুহীকে মেরেছো।”
-”শাস্তিটা ওর প্রাপ্য ছিলো।”
-”তুমি শাস্তি দেয়ার কে?আমাদের রুহী অনেক ভালো ছিলো।তুমি যে দোষ ওর ঘাড়ে চাঁপাচ্ছো সেটা কখনো ও করতেই পারেনা।”
-”আপনারা এসব বললে সত্যিটা লুকাবেনা।আপনাদের সত্যি।”
-”আমাদের সত্যি?”
-”জি। আপনারা রুহী কে ভালবাসতেন ওর টাকার জন্য।কখনো ওকে নাতনি হিসেবে ভালবাসা দেননি সেটা ভালো করেই জানি।”
.
.
রোয়েনের কথায় নানা নানু একে অপরের দিকে তাকাতাকি করতে শুরু করে।ওনাদের তাকাতাকি উপেক্ষা করে রোয়েন বলল,
.
.
-”একটা ডিল করতে চাই আপনাদের সাথে।
-”কজ সেটা?”
-সেটা হলো আপনাদের পঞ্চাশ কোটি টাকা দিবো।আর আমার এলাকায় দামি ফ্ল্যাট আছে পাঁচটা।সেখান থেকে তিনটা আপনাদের।এর বদলে আপনাদের মুখ বন্ধ রাখতে হবে।আর যতো দ্রুত সম্ভব চলে যেতে হবে।”
.
.
রোয়েনের এমন প্রস্তাবে ওনারা বুঝতে পারছেননা কি করবেন ওনারা?তারপর কিছুক্ষন পর ওনারা বললেন,
.
.
-”আমরা চিন্তা করে তোমাকে জানাচ্ছি।”
.
.
ওনারা চলে গেলো রোয়েনের বাসা থেকে।সেদিন রেজোয়ান মাহবুব খেয়াল করেন ওনাদের ফোন বাজছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছেননা ওনারা।অবশেষে ফোন রিসিভ করে বসেন সেলিনা হামিদ।কিছুক্ষন কথা বলে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন ওনি।
চলবে