The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 43
→রেজোয়ান মাহবুব চলে যাওয়ার পর বেশ অবাক হয় রুহী।বাবা কি বললো?কি ভুল করলো ও?নানা নানুকেই তো দাওয়াত করেছে শুধু এখানে কি ভুল হয়ে গেছে ওর?অজানা ভয় রুহীকে জেঁকে ধরেছে।আসলেই কি কোন ভুল হয়ে গেছে ওর দ্বারা?ভাবছে রুহী।এবার ধীর পায়ে রোয়েনের রুমে আসে।লোকটা জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।রুহী তার পিছনে এসে দাঁড়ায়।এতোদিন যা করেছিলো এখন কিভাবে কথা বলবে লোকটার সাথে? রুহীর লজ্জা হচ্ছে।তারপর ও কোনমতে নিজেকে সামলে রুহী বলল,
.
.
-”এতোদিন যা করেছিলাম সব কিছুর জন্য সরি।আর থ্যাংক ইউ নানা নানুকে দাওয়াত করেছেন।সত্যি আমার খুব ভালো লাগছে।”
.
.
রুহীর কথা শেষ হলে রোয়েন সামনে ফিরে।ওর চোখজোড়া শান্ত তবে চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রাগ অভিমান জমে আছে প্রেয়সীর প্রতি।রুহীর খুব খারাপ লাগছে।
কষ্ট দিয়ে ফেলেছে লোকটাকে।যাকে অনেক ভালবাসে তাকে।রোয়েন এবার শান্ত গলায় বলতে শুরু করলো,
.
.
-”তোমার নানা নানুকে দাওয়াত দিয়েছি বলে মনে করোনা ওনাদের মেনে নিয়েছি।তোমার কল্যান চাই যার কারনে কোন খারাপ মানুষ তোমার সাথে থাকবে সেটা চাইনা আমি।কিন্তু সেটা বুঝোনা তুমি।তোমার নানা নানু কেমন সেটা তুমি না জানলে ও আমি জানি।তাই ওনাদের আনতে চাইনি আমি।কিন্তু বুঝোনি তুমি।আমাকে আর আমার ভালবাসাকে অপমান তাদের এখানে আনার জন্য।তাই ওনাদের দাওয়াত করেছি।কিন্তু আজ থেকে তোমার আমার ভালবাসার সব কিছু শেষ।তোমাকে বিয়ে করবো কারন ভালবাসি।কিন্তু আজ থেকে আমার কাছে আসবেনা আমার সাথে থাকবেনা।এখন থেকে আমাদের সম্পর্ক এমনই থাকবে।তোমাকে বিয়ে করবোনা বলে তোমার অসম্মান করতে চাই না।কিন্তু তোমার আর আমার মাঝে যেই সম্পর্ক ছিলো তা আর থাকবেনা।ঠিক যেভাবে চাও থাকতে পারো।বাঁধা দিবোনা।কিন্তু আমার কাছে আসার ট্রাই করবানা।”
.
.
এতসময় কথা গুলো শুনার মাঝেই রুহীর চোখজোড়ায় অশ্রু কনা গুলো ঘন হতে থাকে।চোখ ঘোলাটে হচ্ছে।বুক ভেঙ্গে কান্নার দমক উতলে উঠছে।হাত পা সব অসাড় হয়ে আসছে।কি করবে ও?কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুহী আবার ও রোয়েনের দিকে তাকায়।রোয়েনের ডান হাতের দিকে চোখ পড়ে ওর।হাতের কাঁটা ফুলে উঠেছে।ঔষধও লাগানো হয়নি।রুহী কিছু বলতে যাচ্ছিলো। রোয়েন ওকে কিছু বলতে না দিয়ে সেখান থেকে সরে যায়।রুহীর এবার হুঁশ হয়।দৌড়ে রোয়েনের পিছু পিছু আসে।ওর হাত জড়িয়ে ধরে রুহী,
.
.
-”মাফ করে দেন রোয়েন।বুঝতে পারছিনা কেন আপনি ওনাদের ওপর এতো রাগ?প্লিজ আমার সাথে রাগ করে থাকবেননা।”
.
.
রোয়েন কিছু না বলে রুহীর হাত জোর করে ছাড়িয়ে চলে যায়।রুহী কাঁদতে কাঁদতে দরজায় নক করতে থাকে কিন্তু দরজা খোলেনি রোয়েন।অনেকসময় পর্যন্ত নক করে রুহী কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।রুহী নিজের রুমে চলে আসে।ওয়াশরুমে ঢুকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ও।পরদিন সকালে রোয়েনের নাস্তা বানিয়ে কফি বানিয়ে নেয় রুহী। কফি নিয়ে রোয়েনের রুমের কাছে আসতেই ভিতর থেকে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়।রুহী কেঁপে উঠে।সেদিন নাস্তা না করে বেরিয়ে যায় রোয়েন।রুহী কান্না করতে শুরু করে।কান্না থামছেনা। কি করে ফেললো ও?লোকটাকে তো খুব কষ্ট দিয়ে ফেললো।এদিকে রোয়েন নিজে ও ভালো নেই।ভালো থাকবেই বা কি করে?মায়াবতীকে খুব ভালবাসে।কথা গুলো না চেয়ে বলেছে ও।রোয়েন নিজে জানে কথা গুলো বলার মুহূর্তে কতোটা খারাপ লাগছিলো ওর।মেয়েটার চোখে পানি দেখে কিভাবে নিজেকে সামলেছে সেটা শুধু রোয়েন নিজেই বুঝতে পারে।কিন্তু মেয়েটা ওকে আর ওর ভালোবাসা কে অপমান করলো।ওর কথা না মেনে ওর নানা নানুকে বিশ্বাস করলো যারা কিনা ওকে না ওর টাকাকে চিনেছে।কিন্তু রুহী বুঝতে পারছেনা।রোয়েনকে খুব কষ্ট দিয়েছে মায়াবতী খুব!!!।
কয়েকদিন পেরিয়ে যায় রুহী রোয়েনের সাথে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন কথাই বলছেনা রোয়েন।এমনকি রুহীকে কাছে আসতে ও দিচ্ছেনা।রুহী ভাবছে মরে গেলে হয়ত শান্তি পেতো কিন্তু মরে গেলে প্রিয়মুখ গুলো না দেখে কিভাবে থাকবে।তার চেয়ে বড় রোয়েন ছাড়া কিভাবে থাকবে ও?ভাবতেই নিশ্বাস আটকে আসতে চায় রুহীর।রোয়েন রুহীর কথা হয়না চারদিন আজ।সেদিন রুহীকে দেখতে মামী আর সামায়রা আসে।মামা নাকি বাবার সাথে বাহিরে গেছে।তাই মামী তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন।রুহী আছরের নামাজ পড়তে বসেছিলো।সালাম ফিরিয়ে শুনতে পায় কলিংবেলের আওয়াজ।রুহীর মনে হতে থাকে হয়ত দরজা খুলে তাকে দেখবে।কারন রোয়েনের দেখা পাওয়াটা আজকাল বড্ড দুঃসাধ্য মনে হয়।রুহী এবার দৌড়ে আসে দরজা খুলতে।ছোট্ট গোল ছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে দেখে মামী আর সামায়রা।রুহী সরে এসে চোখ মুছে নেয়।লোকটা কথাই বলছেনা ওর কাছে ও আসছেনা।রুহী আর পারেনা।কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেনা।দরজা খুলে দেয় রুহী।মামী আর সামায়রা ভিতরে ঢুকে।
.
.
-”ভালো আছিস রুহী?”
-”জি মামী।ভিতরে আসুন।”
-”হুম।”
-”আমি নামাজ শেষ করে আসছি।বসুন আপনারা।”
.
.
নামাজ শেষ করে এসে মামী আর সামায়রার সাথে অনেকসময় পর্যন্ত গল্প করে রুহী।আজ অনেকদিন পর একটু হাসলো রুহী।তবে হাসার মাঝেই কান্নার দমক আটকে রাখতে পারেনা।কেঁদে দেয় হাসার মাঝে।নীরা হামিদ রুহীকে জড়িয়ে বলল,
.
.
-”দেখ রুহী ওনার কথা না মেনে ঠিক করিসনি।ওনি তোর নানা নানুকে দেখতে পারেনা।তুই কেন এমন করলি?”
-”মামী আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মামী।আমি শান্তি চাই শান্তি চাই।ওনাকে বলুননা কথা বলতে।আমি পারছিনা আর মামী।”
-”দেখ রুহী এতো সহজে হাল ছাড়িসনা।ওনি তোকে অনেক ভালোবাসে।সুন্দর করে মানিয়ে নেয়,মেনে যাবে।যারা আমাদের ভালোবাসে এতো সহজে ছাড়তে পারেনা।আর যেখানে ওনার কথা হয়ত কঠিন হৃদয়ের আজ হোক কাল হোক মেনে নিবে।”
-”হুম।”কাঁদতে থাকে রুহী।
.
.
রুহী আর পারছেনা লোকটা থেকে দূরে থাকতে।বড্ড ভালোবাসা পেতে মন চায় তার থেকে।তাই সেদিন রুহী রোয়েনের জন্য নিজ হাতে কেক বানায়।আর ওর পছন্দের কিছু খাবার।রুহী ও আজ সেজেছে খুব সুন্দর করেই সেজেছে।কালো শাড়ী পরেছে আর সাথে চোখে কাজল আর কালো কাঁচের চুড়ি।সন্ধ্যায় ফিরে আসে রোয়েন।ঘরটাকে বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে রুহী।সন্ধ্যায় ফিরে আসে রোয়েন।ঘরে এসে খেয়াল করলো খুব সুন্দর করে সাজানো তার বাসাটা।রোয়েন সেদিকে তোয়াক্কা না করে রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।রুহী কেক নিয়ে চেয়ারে বসে থাকে।রোয়েন বেরিয়ে আসতেই রুহী উঠে দাঁড়িয়ে যায়।মুখে মুচকি হাসি আর হাতে কেক।রুহী বলল,
.
.
-”সরি রোয়েন।”
.
.
রোয়েন এবার রেগে গিয়ে ওর হাত জোরে চেঁপে ধরে।যার কারনে কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে ঢুকে যেতে থাকে। রোয়েন চিৎকার করে বলল,
.
.
-”এভাবে সেজে গুজে আসলে মনে করবেনা তোমাকে আবার মেনে নিবো।যেখানে আমার ভালোবাসার আর আমার অপমান হয়েছে সেখানে কিভাবে মানবো তোমাকে আমি?”
-”রোয়েন প্লিজ রেগে থাকবেননা।প্রয়োজনে আঘাত করুন আমাকে তারপর ও রেগে থাকবেননা।”
-”ঢং করবানা একদম।আর লাস্ট বারের মতো বলছি কথা ও বলবানা কাছে আসার চেষ্টা ও করবানা।”
.
.
কথা গুলো বলে রুমে ঢুকে দরজা লাগায় রোয়েন।রুহী কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে।হাত থেকে রক্ত পড়ছে গড়িয়ে।এদিকে রোয়েন রুমে ঢুকে হাতটা সামনে আনে।হাতে রক্ত ওর মায়াবতীর রক্ত।রাগান্বিত চোখ জোড়া ও বড় দূর্বল হয়ে যায়।হাতটিকে দেয়ালে জোরে বাড়ি দেয় রোয়েন।কতোটা সুন্দর লাগছিলো মায়াবতী কে কিন্তু ছুঁয়ে দিতে পারেনি রোয়েন।পারেনি আবার এক হতে।রুহী কিছুক্ষন পর ক্লান্ত পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে ধাপ করে পড়ে গিয়ে ভীষন ব্যাথা পায়।তবে এই ব্যাথা হৃদয়ের যন্ত্রনা থেকে গভীর নয়।
চলবে