The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 37

→রেজোয়ান মাহবুব মেয়েকে খাওয়াতে খুব চেষ্টা করে কিন্তু খেতে চায় না রুহী।শুধু কেঁদে বলছিলো রোয়েনের জ্ঞান ফিরলে খাবে।রেজোয়ান পারলেননা শেষ পর্যন্ত মেয়েকে খাওয়াতে।রোয়েনের জানালা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো রুহী।ওর মনে হচ্ছিলো ওনার আল্লাহ না করুক কিছু হলে ওর কি হবে?কি নিয়ে বাঁচবে।সুদূর মসজিদ থেকে যোহরের আজান শুনতে পায় রুহী।মাথায় ঘোমটা পরে অজু করতে চলে যায় ও।আশফিনা রামীনের পাশে বসে আছে।রামীনের চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।কেঁদে কেঁদে বলছে
.
.
-”বন্ধু হওয়ার যোগ্য রাখিনা আমি।কিভাবে ওকে একা ছেড়ে দিলাম?”
-”আএমন বলছেন কেন?আপনি অবশ্যই ইচ্ছে করে একা ছাড়েননি ভাইয়াকে।আপনি ও তো আঘাত পেয়েছেন।”
-”না আশফিনা আমি না গেলে ও ভালো থাকতো।দুজনে মারতাম কিশানোকে।আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি।”
-”এমন বলবেননা প্লিজ।ভাইয়া সুস্থ হয়ে যাবেন আল্লাহ ভরসা।”
-”ওকে খুব দেখতে মন চাইছে অাশফিনা।”
-”আপনি সুস্থ হয়ে নিন।তারপর যাবেন।”
.
.
আশফিনা রামীনের বুকে হাত রাখে।রামীন সেই হাতের ওপর নিজের ব্যান্ডেজ করা হাত রাখে।আশফিনা হঠাৎ বলল,
.
.
-”আজান দিয়েছে নামাজ পড়তে হবে।”
-”ওকে যাও।নামাজ শেষ করে আমার কাছে এসো।”
.
.
আশফিনা ভালোবাসার মানুষটির দিকে মুচকি হেসে বাহিরে চলে আসে।হাসপাতালের এক কোনায় রুহী মোনাজাত ধরে খুব কান্না করছে।পাশের এক বৃদ্ধা রুহীকে দেখে বারবার হুহতাশ করছেন।আশফিনা রুহীর পাশে এসে নামাজে দাঁড়ায়। বান্ধুবীকে এভাবে কাঁদতে দেখে চোখ ভরে আসে আশফিনার।রুহীর নামাজ শেষে উঠে দাঁড়াতেই বৃদ্ধা রুহীর কাছে আসে তারপর জিজ্ঞেস করে,
.
.
-”তোর এতো কিসের কষ্ট মা?”
-”ওনি খুব অসুস্থ দাদি দোয়া করবেন ওনার জন্য।”
-”আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তোকে সুখে রাখে খুব।তোর বর যেন জলদি সুস্থ হয়ে যায়।”
.
.
রুহী ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসে রোয়েনের রুমের সামনে।সেই আগের মতোই নিথর দেহে পড়ে আছে লোকটা।রুহীর হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠে।ওকে পড়ে যেতে দেখে শামীম দৌড়ে ধরে রুহীকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।তারপর দলের একনজকে দিয়ে জুস আর বিস্কুট আনায়।জুস খেলে ও কোনমতেই বিস্কিট খেলো না রুহী।রোয়েনের রুমের দিকে চেয়ে বসে রইলো।সেদিন বিকেল চারটায় জ্ঞান ফেরে রোয়েনের।অবজার্ভেশনের ডাক্তার এই সংবাদ দেয় সবাইকে।সে জানায় যেকোন একজন দেখা করবে।রেজোয়ান মাহবুব মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ান। রুহীকে বললেন,
.
.
-”যা মা ওনার জ্ঞান ফিরেছে।”
.
.
রুহীর মুখে হাসি ফু্ঁটে উঠে।উঠতে গেলে রেজোয়ান ওকে ধরেন।তারপর রোয়েনের রুমের সামনে দিয়ে আসেন।রুহী পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকে।রোয়েন অপরদিকে মাথা ফিরিয়ে শুয়ে আছে।রুহী রোয়েনের সামনে এসে দাঁড়ায়।লোকটার কপালে ব্যান্ডেজ,পায়ে ব্যান্ডেজ বুক আর পিঠে গোল করে একটা বড় ব্যান্ডেজ লাগানো।রুহীর কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে লোকটাকে এভাবে দেখে।রোয়েন চোখ বুজে ছিলো।রুহী ওর হাতের ওপর হাত রাখে।রোয়েন এবার বড় কষ্টে চোখ খুলল।
রোয়েনকে চোখ খুলতে দেখে কেঁদে দেয় রুহী।রোয়েন একটু হাত বাড়িয়ে রুহীর চোখ মুছে ওর গাল স্পর্শ করে।তারপর চুলে হাত বুলিয়ে আস্তে করে বলল,
.
.
-”রুহী!!!”
-”আমি নিজেকে শক্ত রাখতে পারিনি সরি।”
-”তোমার কারনেই রুহী ফিরে আসতে পেরেছি।”
-”আপনাকে আমার লাগবে রোয়েন।সারাজীবনের জন্য লাগবে।আর কোথাও যাবেননা আমাকে ছেড়ে।”
-”দেশের জন্য হলে যেতেই হবে”।
.
.
রুহী রোয়েনের হাত ধরে কাঁদতে থাকে।রোয়েন চোখ বুজে সুখের হাসি দেয় তারপর বলল,
.
.
-”সারাদিন কিছু খাওনি মনে হয়।ঠিক ভাবে কথা ও বলতে পারছোনা।”
-”আপনার সাথে খাবো”।
-”রুহী কথা রিপিট করা একদম পছন্দ না তুমি জানো।যাও খেয়ে নাও।”রেগে যায় রোয়েন।
-”এখনও বকা দিচ্ছেন?”
-”বকার মতো কাজ করলে বকা দিবোই,যাও।”
.
.
রুহী রাহি হয়ে রোয়েনের গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো।ঠিক কিছুসময় পর রেজোয়ান মাহবুব রুমে ঢুকেন।রোয়েন রেজোয়ান মাহবুবকে দেখে হেসে বলল,
.
.
-”ভালো আছেন বাবা?”
-”স্যার আপনার মুখে বাবা শুনতে খুব ভালো লাগে।”
-”বাবার মুখে স্যার শুনতে একদম ভালো লাগেনা।”
-”জি!!তাহলে কি ডাকবো?”
-”নাম ধরেই ডাকবেন।”
-”কিন্তু!!!”
-”Its my order.”শক্ত গলায় বলল রোয়েন।
-”ওকে।আমি চেষ্টা করবো।অনেক সময়ের অভ্যাস তো।”
-”বাবা আমি রুহী কে দ্রুত বিয়ে করে ঘরে তুলতে চাইছি।”
-”এটা আমার ভাগ্য যে আপনার ঘরে রুহী যাবে।”
-”হুম।শরৎ, রাসেল,রাজিব ওদের এর মাকে আমি জবাব দিবো?বুঝতে পারছিনা।”
-”অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।কিন্তু এখন আপনাকে রিল্যাক্স থাকতে হবে।ওসব নিয়ে আমরা পরে ভাববো।”
-”বাবা আপনি কি এখন বের হবেন?”
-”জি আপনাকে রেস্ট করতে হবে।”
-”হুম।”
-”আমি তাহলে আসি পরে কথা হবে।”
-”জি”।
.
.
রেজোয়ান মাহবুব বেরিয়ে গেলেন।সেদিন রাতে রোয়েনকে কেবিনে দেয়া হলো।রুহীকে হোটেলে ফিরে যেতে বলা হয়েছিলো কিন্তু ও যায়নি।রোয়েনের সাথে থেকে যায় রুহী।রোয়েন শুয়ে আছে। রুহী ওর পাশে বসে আস্তে আস্তে চুল টেনে দিচ্ছে।রোয়েনের বেশ আরাম লাগছে।তবে ঘুমোতে চায়না ও।রুহীর সাথে অনেক কথা বলা বাকি।নিজের চুল থেকে রুহীর হাত নিয়ে সেটা বুকের ওপর রাখে রোয়েন।রুহী হেসে বলল,
.
.
-”বলছিলেননা মাথা ব্যাথা করছে?”
-”কমে এসেছে।”
-”এত জলদি?”
.
.
রুহীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রোয়েন ওর হাত হ্যাচকা টেনে একদম কাছে নিয়ে এলো।তারপর বলল,
.
.
-”এখন এভাবেই শুয়ে থাকবে আমার বুকে।”
-”ব্যাথা লাগছে আপনার।”সরে যেতে চাইলো রুহী।
-”এখন তুমি নড়লেই ব্যাথা পাবো আমি।সো চুপচাপ এভাবে শুয়ে থাকো।”
-”ঠিক আছে।”
.
.
সেদিন রাতে রুহী ওভাবেই রোয়েনের সাথে অনেকক্ষন পর্যন্ত গল্প করে।শেষ রাতে রুহীকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যায় রোয়েন।বড্ড মিস করছিলো মায়াবতীকে।কতোটা ভালোবাসে বলে বুঝাতে পারবেনা রোয়েন।পরদিন রামীন রোয়েনের কেবিনে আসে আশফিনা সহ।বেচারার কপালে হাতে ব্যান্ডেজ করা।রোয়েন মুচকি হাসে বন্ধুর দিকে চেয়ে।রোয়েনের পাশে বসে রামীন।
.
.
-”কেমন আছিস দোস্ত?”
-”আগের চেয়ে বেটার।তোর খবর বল।”
-”আমি কি বলবো রোয়েন।নিষ্ঠুর হয়ে গেছি আমি।”
-”এভাবে কেন বলছিস?”
-”তোর সাথে থাকতে পারলামনা।”
-”তুই নিষ্ঠুর না রামীন।এখানে তুই নিজেকে নিষ্ঠুর বললে আমি কি?এতো গুলো লোক মারা গেলো কাউকে বাঁচাতে পারলামনা।আমি কি তাহলে?”
-”সরি দোস্ত।কেন যেন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছিলো।তাই বলে ফেললাম।কিন্তু সেখানে থাকা উচিৎ ছিলো আমার।”
-বাদ দেয়।আমি ঠিক আছি।
-হুম।
.
.
এদিকে রুহী খুব খেয়াল রেখেছে রোয়েনের হাসপাতালে কাঁটানো দিন গুলোয়।প্রায় সাতদিন পর রোয়েনকে রিলিজ দেয়া হলো।প্রথম দিন হোটেলে থেকে যায় ওরা।পরদিন সন্ধ্যায় ওদের ফ্লাইট কারন এ অবস্থায় গাড়ির ঝাঁকুনিটা মোটেই প্রযোজ্য মনে হয়নি কারোরই।পরদিন সন্ধ্যায় ওর খুলনার আঞ্চলিক বিমান বন্দরে চলে আসে।নির্দিষ্ট সময়ের মাঝেই পৌছে যায় ঢাকায়।সেখান থেকে রোয়েনের গাড়ি চলে আসে।রুহী আর শামীমকে নিয়ে রোয়েন গুলসানে নিজের বাসার জন্য রওনা হয়।আরো কিছু গাড়ি ও এসেছে বাকিদের নেয়ার জন্য।বাসায় পৌছালে রুহী আর শামীম মিলে রোয়েনকে ধরে রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়।ডান পায়ে ব্যান্ডেজ তাই সেটা নাড়াতে পারছেনা রোয়েন।
শামীম বেরিয়ে যায়। রুহী রুমাল পানিতে ভিজিয়ে রোয়েনের মুখ হাত পা মুছে ওর শার্ট পাল্টে একটা এ্যাশ কালারের গেঞ্জি পরিয়ে দিলো।রোয়েন রুহীকে দেখছে।রুহী বলল,
.
.
-”ফ্রেশ হয়ে আপনার খাবার রেডি করছি।”
-”তুমি রেস্ট করো।পরে খাবো আমি।”
-”একদম কোন কথা না।সুস্থ হতে হলে বেশি করে খেতে হবে আর আমি ঠিক আছি।
-”ঠিক আছে যাও।”
.
.
রুহী মুচকি হেসে রোয়েনের ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
.
.
-”এটার অপেক্ষায় ছিলাম।”
.
.
কথাটা বলে রুহী আর অপেক্ষা করলোনা।দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।ফ্রেশ হয়ে সুপ আর দুধ বানিয়ে রোয়েনের রুমে নিয়ে আসে রুহী।রোয়েন ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিলো।রুহীকে দেখে সেগুলো টিটেবিলে রাখতে ইশারা করে।খাবার গুলো রেখে রুহী বসে পড়ে পায়ের ব্যান্ডেজ পাল্টাতে।কারন ডাক্তার বলেছিলো প্রতিদিন ব্যান্ডেজ পাল্টাতে হবে।রুহী কাঁচি, ব্যান্ডেজ আর কস্টিপ নিয়ে বসলো।
ব্যান্ডেজ পাল্টানোর মাঝেই কথা শেষ হয় রোয়েনের।রোয়েনকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ নিতে গেলে রুহীর হাত ধরে উপরে টেনে নেয়।রুহী বলল,
.
.
-”আপনার মেডিসিন আছে”
-”শশশ আগে আমার ডেজার্ট খেতে দাও,তারপর।”
-”আগে ঔষধ খেয়ে নিন।”
-”উফ বেশি কথা বলো।আমি এখনই আমার ডেজার্ট খাবো।”
-”আমি নিয়ে আসি আগে। ”
-”তুমি জানোনা আমি কিভাবে ডেজার্ট খাই?”রেগে যায় রোয়েন।
.
.
রোয়েনের কথা বুঝতে পেরে গাল লাল হয়ে আসে রুহীর। রোয়েন এবার রুহীর ঠোঁটজোড়া শুষে নিতে থাকে।কিছুক্ষন পর রুহীকে ছেড়ে দিলে রুহী ওকে ঔষধ খাইয়ে দেয়।