সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 26
আমার পাশে বসে উনি কিছু একটা কাজ করছিলেন।আমি মাথাটা ছেড়ে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।ভাবছি উনি নিজের চুল কেটে ফেলেছেন।আমার মাথায় চুল নেয় বলে? উঠে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে আরাম করে বসলাম আমি।বাম হাতাটায় স্যালাইন চলছে আমার।ডান হাতের কনুই দিয়ে উনাকে সাড়া দিতেই উনি ঘুরে তাকালেন আমার দিকে।আমাকে বসে থাকতে দেখে উনি এগিয়ে কাছে চেপে বসলেন।একটা মুখ উজ্জ্বল হাসি দিয়ে আমার গালটা ধরে বললেন,
-আমাকে কেমন লাগছে আরু?
আমি কিছু না বলে উনাকে সরিয়ে দিলাম।উনি আমাকে টেনে ধরলেন আমি উনার বুকে হাত বাঁধিয়ে উনাকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলাম।উনি বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি চোখ মুখ ছোট করে নাক ফুলিয়ে বললাম উনাকে,
-খুব বাজে দেখতে লাগছে আপনাকে।
উনি কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন।মুখটা ভারী করে বললেন,
-সত্যি কি বাজে দেখতে লাগছে?
আমি কিছু বললাম না।উনি আমার কপালে নিজের কপালটা ঠেকিয়ে বললেন,
-দেখাক বাজে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, আরু তোমাকে আমি অনেক কস্ট দিয়েছি।জানি কখনো তোমার কস্টের ভাগ নিতে পারবো না আমি।আর তুমিও পারবে না আমাকে শাস্তি দিতে।তুমি যখন খুব ছোট ছিলে অনেক দুষ্টু ছিলে তখন।আমাকে কত জ্বালিয়েছো তোমার হয়তো মনেও নেই।তোমার ছোট ছোট হাত দিয়ে আমাকে খাইয়ে দিয়েছো।কত রাত আমার বুকে ঘুমিয়েছো তুমি।যেদিন তুমি তোমার বাবাকে বিশ্বাস করে আমার মাকে ওসব বলেছিলে।আমার খুব রাগ হয়েছিলো।আমি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে তোমাকে বলেছিলাম আমাদের সাথে চলে আসতে কিন্তু তুমি আসলে না।অপমান করে তারিয়ে দিয়েছিলে আমাদের।আমার বাবার সব কিছু ঠকিয়ে তোমার বাবা লিখে নিয়েছিলো।সেদিন প্রথমবার তাকে বাবা বলে ডেকেছিলাম আমি।হয়তো আমার ডাক শুনতে পাই নি সে।আমার মা আবার বিধবা হয়েছিলো।যতোবার চেয়েছি তোমার কাছে যাবো পারি নি।মায়ের কস্টটা চোখের সামনে ভেসে আসতো।আর তোমার বলা কথাগুলোও।জানি তুমি তখন খুব ছোট ছিলে।কিচ্ছু বোঝার বয়স তোমার ছিলো না।তবুও এতোটা রাগ ছিলো তোমার উপর যে রোজ তোমাকে দেখতাম।দূর থেকে তোমাকে দেখেও তোমার চড়, অপমান এগুলো আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতো।মা আমাকে কতশত মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেস্টা করেছিলো।আমি করিনি।সুপারস্টার আহান খান আজ পর্যন্ত একটা মেয়ের দিকেও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় নি।যখন তুমি বড় হলে তখন শুটিং এর নাটকটা সাজিয়ে তোমাকে আমার করে নিলাম।কিন্তু আমি পারিনি তোমাকে ভালো রাখতে।আমার ভালোবাসা! যার জন্য আমি এগুলো বছর অপেক্ষা করেছি।যাকে একবার দেখবো বলে প্রতিটা রাতে ছটফট করেছি।তাকে আমি অনেক কস্ট দিয়ে ফেলেছি।যেদিন তুমি আমাকে ডিভোর্সের কথা বললে সেদিন আমার ভেতরটা ব্যাথায় চিনচিন করছিলো।উকিলের সাথে কথাও বলে রেখেছিলাম।একটাবারও তোমাকে বলার সুযোগ পাই নি ভালোবাসি খুব।সেদিন রাতে আমি হার্ট অ্যাটাক না করলে তুমি হয়তো মায়ের কাছে কিছুই জানতে পারতে না।হয়তো পরেরদিনই হতো তোমার আমার শেষ দেখা।
উনার মুখটা চেপে ধরলাম আমি।অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এসব কথা এখন কেন বলছেন?
উনি মুখ থেকে আমার হাতটা সরিয়ে দিলেন।আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে বললেন,
-আজ আমার জন্য তুমি তোমার বোনটাকেও হারালে।কিন্তু বিশ্বাস করো রুহান খুব ভালো ছেলে।বড্ড ভালোবাসে তোমার বোনকে।সেদিন ওর সাথে তোমার বোনের বিয়ে না দিলে আজ তোমার বোন একটা বাজে লোকের রক্ষীতা হয়ে থাকতো।
আমি উনার মাথাটা টেনে আমার কোল থেকে উঠিয়ে দিলাম।ভ্রু কুঁচকে মুখটা ভারী করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আবার? কি হয়েছে আপনার বলুন তো? আমি জানি রুহান খুব ভালো ছেলে।ঠিক করেছেন আপনি রুহানের সাথে মাইশার বিয়ে দিয়েছেন। আমার বোনটা বোকা তাই নিজের সংসারটা ধরে রাখতে পারলো না।রুহান তো এখনও ওর অপেক্ষায় আছে।ওর জন্য কাঁদছে। তাহলে আপনি নিজেকে কেন দোষ দিচ্ছেন?
উনি অন্য দিকে তাকিয়ে নিচু দৃষ্টিতে বললেন,
-জানি না আমি কি বলছি।
-তাই বলে এসব কথা বলবেন?
-তো কি করবো? খুব টেনশনে ছিলাম তোমাকে নিয়ে। তোমার অপারেশনের পর ডাক্তার বলেছিলো ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে তুমি কোমায় চলে যাবে।তাই!
-তাই এসব বলবেন? কাঁদিয়ে দিয়েছেন আপনি।এমন একটা ভুলের কথা বললেন যেটা আমার মনেই নেই।আমি খুব ছোট ছিলাম তখন
আহান।ছরি বলেছিলাম না? ভুলে যান না।আমিও তো সব ভুলে গিয়েছি।এসব কথা মনে রাখার কি দরকার বলুন তো?
উনার হাতটা পেটে রেখে বললাম,
-যে আসছে তার কথা ভাবুন।
🍁
সেনডি পুরো বাড়িটা মাথায় করে রেখেছে। আজ রুহানের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে বিশাল বড় পার্টির আয়োজন করেছে সে।শহরের বড় বড় সেলিব্রেটি, নায়ক, নায়িকা, গায়ক, গায়িকা সবাই এসেছে রুহানের জন্মদিনের পার্টিতে।টিভিতে লাইভ দেখানো হচ্ছে রুহানের জন্মদিনের পার্টি।চুমপুয়িং রুহানের গানের অনেক বড় ফেন।সোফায় পা তুলে বসে চিপস খেতে খেতে টিভি দেখছে।রুহানকে খুঁজছে সে।অদ্ভুত ব্যাপার! যার জন্মদিন তারই খোঁজ নেই অথচ মা, বোন, গালফ্রেন্ড সবাইকেই দেখানো হচ্ছে।
রুহান কিছুতেই এই জন্মদিনের পার্টিতে আসতে চাই নি।অনেক বুঝিয়ে সেনডি রুহানকে রাজি করিয়েছে। এদিকে ঘুমে টলোমলো চোখ নিয়ে জগ হাতে কিচেনে আসে পানি নিতে মেয়েটা।কিচেন থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো নিজের রুমে।এমন সময় টিভিতে মাইক হাতে বলে উঠলো সেনডি, আপনাদের অপেক্ষার সময় এখন শেষ।চলে এলো বার্থডে বয় রকস্টার রুহান।কথাটা শুনতেই মেয়েটার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। হাত থেকে পরে গেলো পানির জগটা।ঘুরে তাকিয়ে দেখলো তার স্বামীটা।যার মুখের উপরে পার্টির সমস্ত লাইট এসে পরেছে।দুচোখ বেয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো মেয়েটার।সেনডি এসে রুহানের হাত ধরে সিঁড়ি থেকে নামছে।এই দৃশ্য দেখে মেয়েটার বুকের ভেতরটা ব্যাথায় চিনচিন করছে।ভাবছে কে ওই মেয়েটা? উনার বউ নাকি প্রেমিকা? মেয়েটা আগ্রহ নিয়ে একটু সামনে আগালে টিভিতে মাইক হাতে রুহানের মাকে বলতে দেখা যায়, সবাই দেখে নাও এই মেয়েটাকে।যে এই পার্টির সমস্ত আয়োজন নিজের হাতে করেছে।এই হলো আমার ছেলে রকস্টার রুহানের হবু বউ সেনডি।কথা শুনতেই মেয়েটা নিজের কান চেপে ধরে চিৎকার করে ওঠলো।চিৎকার করে বলল, সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
-টিভি বন্ধ করো।আমি পারছি না এসব শুনতে। দয়া করে টিভিটা বন্ধ করো।
চুমপুয়িং এক লাফে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে রিমোট হাতে টিভিটা বন্ধ করে ছুটে আসে মেয়েটার কাছে।মেয়েটা নিচে বসে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে।চুমপুয়িং শুদ্ধ বাংলা ভাষায় মেয়েটার কাছে যানতে চাইলেন,
-কাঁদছো কেন তুমি? কি হয়েছে আমাকে বলো?
মেয়েটা কান্না করতে করতে বলল,
-আমার স্বামীটা আমাকে খুব ভালোবাসতো।আমি জানতাম উনি আমাকে কখনো ভুলবেন না।শ্বাশুড়ি, ননদের সাথে আমাকে নিয়ে যেন উনার ঝামেলা না হয় তাই চলে এসেছি। মায়ের বাড়িতেও যাই নি।কারণ উনি ঠিক মায়ের কাছ থেকে আমাকে আবার নিজের বাড়িতে নিয়ে যেত।আমি চেয়েছিলাম আমার জন্য তার সাথে শ্বাশুড়ি, ননদের যেন ঝামেলা না হয়।আর উনি অন্য কাউকে বিয়ে করছেন।
-কে তোমার স্বামী?
-রকস্টার রুহান।
-কি বলছো? তার ওয়াইফ তো এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো।কি যেন নাম তার ওয়াইফ এর…
-মাইশা।আমি মাইশা।উনার স্ত্রী।উনার জন্য আমি আমার আপনজনদের থেকে দূরে চলে এসেছি।উনিই যখন ভুলে গেলো আমাকে তখন আমি আর এখানে থেকে কি করবো? চলে যাবো কাল সকালে মায়ের কাছে।কতোদিন মায়ের হাতে খাওয়া হয় না।
চুমপুয়িং কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাইশাকে উঠিয়ে দাড় করালেন।কড়া গলায় বললেন,
-কোথাও যাবে না তুমি।আজ যারা তোমাকে এভাবে ভুলে গেছে।তোমাকে অযোগ্য মনে করেছে।তাদের কাছে যোগ্য প্রমাণ করতে হবে তো নিজেকে? পারবে না তুমি নিজেকে ওই মেয়েটার থেকে বেশি যোগ্য করে তুলতে? বলো মাইশা পারবে না?
কথাটা মাইশাকে ঝাকিয়ে বললেন চুমপুয়িং।
🍁
পার্টিতে সকলের সামনে পাগলের মতো আচারণ করছে রুহান।জন্মদিনের কেকটা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে।রুহানের মা, বোন, সেনডি সবাই রুহানকে শান্ত করার চেস্টা করছে।রুহান তার মা, বোনকে নিজের থেকে দূরে থাকতে বলছে।আর সেনডিকে কেঁদে কেঁদে বলছে, আমি শুধু মাইশার।আমার বউটা ছাড়া আর কারও না।ও ফিরে আসবে।একদিন ঠিক বুঝবে আমার কস্টটা। তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না সেনডি।সেনডি টলমল চোখে মাথা কাত করে বলল, ঠিক আছে।করতে হবে না আমাকে বিয়ে।রুমে চলো।পার্টি এখানে অফ।মাইক হাতে সেনডি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল, একটু আগে যেটা শুনেছেন আপনারা সেটা মজা ছিলো।আপনারা সকলে খেয়ে যাবেন।সেনডি রুহানকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে যেতে লাগে মিডিয়া এসে সেনডিকে ঘিরে ধরে।সেনডিকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে রকস্টার রুহান কি পাগল হয়ে গেলো।সেনডি রেগে মিডিয়াকে অনেক কথা শুনিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
চলবে,,,