একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 18
১৮.
গাড়ির ঝাঁকানিতে সাফার ঘুম ভেঙে যায়।আদো আদো চোখ খুলে সে চারদিকে একবার তাকায়।বুঝার চেস্টা করছে আসলে সে কোথায় আছে।নিভ্র জানালার সাথে ঠেসে বসে আছে।চোখ ছোট করে সে সাফার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েরা এতটা ঘুমাতে পারে কি করে??তার হসপিটালের মহিলা গুলোকেও মাঝে মাঝে দেখা যায় রোগী দেখতে এসে তাদের বিছানায় আরাম করে ঘুমায়।মেয়ে জাতিকে বুঝা যেমন দায় এদের ঘুমের টাইম মেন্টেন করাও দায় বলে মনে হয় নিভ্রর।সাফা হাই তুলতে তুলতে নিভ্রর দিকে তাকায়।তিন নাম্বার হাইটা নিভ্রর মুখ দেখে আঁটকে যায়।সাফা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল……
—“এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছি কিভাবে??আপনি কি উড়ে উড়ে গাড়ি চালান নাকি??
নিভ্র সোজা হয়ে বসে।সাফার দিকে তির্যক দৃষ্টি দিয়ে তাকায়।তারপর হাতা ঠিক করতে করতে বলল…..
—“না আমি উড়ে উড়ে গাড়ি চালাই না।কিন্তু তুমি স্বপ্নে ভেসে ভেসে ঘুমের আতল সাগরে হারাও।তাই দুনিয়ার খবর তোমার নেই।”
.
সাফা বুঝতে পারে সে ঘুমে বিভোর ছিলো। এবার চোখ নামিয়ে নিজের দিকে তাকায়।নিজের গায়ে নিভ্রর ব্লেজার দেখে একবার চোখ তুলে নিভ্রকে দেখে। নিভ্র সিটবেল খুলতে ব্যস্ত। সিট বেল খুলে সাফার দিকে তাকায় নিভ্র চোখ দিয়ে ইশারা করে। যার অর্থ.. তাকিয়ে আছো কেনো??
সাফা মাথা নাড়ায়। নিজের গায়ে ব্লেজারটা আর একবার ভালো করে জড়িয়ে নেয়।নিভ্র ভ্রুকুঁচকে সে দৃশ্য দেখে।তার মনের মাঝে ভালো লাগার এক ফালি আনন্দ খেলে যায়।মুখে হাসি ফুটে। শব্দ বিহিন সে হাসি আবার মুখেই মিশে যায়।নিভ্র গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গার্ডস দিয়ে গাড়ির জিনিস বের করতে বলে।সাফা একবার পিছনে তাকিয়ে হাসে।মনে মনে বলে ভাগ্যিস আগে জিনিস গুলো গাড়িতে রেখে গিয়েছিল। তা না হলে পালানোর সময় সব ফেলে আসতে হতো।কত সুন্দর চুড়ি গুলো যদি ফেলে আসতে হতো ইশশ্ কি কষ্টইনা হতো।
.
.
দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে পরে দুজনেই।শরীর ভিজেঁ এখনো ঝুম ধরে আছে।সাফার ইচ্ছে করছে নিভ্রর ব্লেজার গায়েই রেখে দিতে কিন্তু নিভ্র হয়তো ভালো মাইন্ডে নিবে না ভেবে সাফা গাঁ থেকে সরিয়ে নিভ্রর দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল….
—“থ্যাংকু।
নিভ্র মুখ মলিন করে।সাফার দিকে একবার খুদ্দ চোখে তাকায়।সে ভেবেছে সাফা হয়তো নিজের কাছে ব্লেজারটা রেখে দিবে।কিন্তু সাফা এমনটা করে নি তাই তার মনে ব্যথা হয়।নিজের হাত বারিয়ে একপ্রকার কেড়েই নিয়ে নেয় ব্লেজারটা।সাফা অবাক হয় নিভ্রর এমন অদ্ভুত কান্ডে।দুজনেই সামনে তাকায়।বড় সরো একটা ধাক্কা খায় তারা।পুরো পরিবার উপস্থিত। সবার চোখ তাদের দিকে।সাফা একটু নোড়ে দাঁড়ায়। তারপর হেঁটে সামনে যায়।ইফতেখারের মুখে চিন্তার মেঘ কেটেঁছে মাত্র কিন্তু কৌতুহল জাগে মনে।সাথে অদ্ভুত ভাবে তাকায় তিনি।কিছুক্ষণ ছেলের দিকে তারপর সাফার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললেন….
—“কোথায় ছিলে তুমি??চিন্তা করতে করতে তো আমার অবস্থা খারাপ।সাথে সবাই চিন্তিত তাই অপেক্ষা করছিলাম।তুমি কি নিভ্রর সাথে ছিলে??”
সাফা লজ্জা পায় কথাটা শুনে।একবার তাকায় ইফতেখারের মুখের দিকে তারপর উত্তর দেয়….
—“মেলায় গিয়েছিলাম।তাই দেড়ি হয়ে গেছে স্যরি।”
সাফার মিষ্টি করে স্যরি বলা দেখে সবাই হাঁসে। অভ্র একটু দুরে দাঁড়িয়ে দেখে।ভিঁজা জামায় সাফাকে স্নিগ্ধ লাগছে সাথে তার ভাইয়ের চেহারায় ফুটে উঠেছে অদ্ভুত এক আনন্দের ঝিলিক।ঝুড়ি ভর্তি চুড়ি দেখে সবাই যতটা না অবাক তার চেয়ে অবাক নিভ্রনীল সাখাওতের মেলায় যাওয়ার কথা শুনে।সবার অবস্থা এমন যেনো তারা ঘোরের মাঝে আছে।নিভ্র একটু রাগী ফেইস করে সবাইকে ধমকালেই সেই ঘোর কাটবে।সবাই অবাক হলেও দুজন হয়নি।এক অভ্র আর এক মাহবুব। মাহবুব সোফায় বসে আয়েশ করে।তারপর নিভ্রর চোখের দিকে তাকায়।কি যেনো পড়ে তিনি।তারপর মিটমিটিয়ে হাঁসে। সাফা খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে চুড়ির ঝুড়ি খুলে সবাইকে তার কিনে আনা জিনিস গুলো একটা একটা করে দেয়।বাড়ির দুই কাজের মেয়েকে ডেকেও তাদের হাতে কানের দুল চুড়ি মালা নাকফুল দেয়।সবাই অবাক হয়ে সাফার বিতরন দৃশ্য দেখে।নিভ্র পঞ্চবিমহিত চোখে তাকিয়ে আছে সাফার দিকে।সাফা দাঁত কেলিয়ে হাসে।একটা একটা জিনিস সবাইকে দেয়।কাজের মেয়েগুলোর চোখে খুশির আভা।এবার মাহবুব গলা উঁচু করে।অভিমানের সুরে বললেন……
—“এটা কি হলো দাদুমনি আজ আমরা ছেলে বলে এভাবে বঞ্চিত হলাম??এটা কি উচিত হয়েছে??
.
সাফা করুন চোখে তাকায়।তারপর মন খারাপের ভঙিতে বলে…..
—“স্যরি দাদু কিন্তু মেলায় ছেলেদের কিছু পেলাম না।তাই আনতে পারিনি।স্যরি এগেইন।
ছেলেরা হেসেঁ উঠে।অভ্র দেয়ালের কোন ঘেঁষে দাড়ায়।তারপর হাঁসে। সে হাসিতে কষ্ট লুকানো।চশমাটা ঠিক করে মনে মনে ভাবে এই স্যরির প্রেমেইত সে সিক্ত হয়েছে।স্যরি….শব্দটা একবার মুখে উচ্চারণ করে সে।তারপর আবার নিভ্রর দিকে তাকায়।সাফার প্রতি তার এই আবেগ নিভ্রতে সীমাবদ্ধ। নিভ্রর দিকে তাকালেই সে নিজেকে সংযোত করতে পারে।এটাই তো ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা।ত্যাগেই প্রকৃত সুখ খুঁজে বেড়ায় অভ্র।হঠাৎ সাফার মুখে নিজের নাম শুনে চমকায় অভ্র।নিভ্রর দিক থেকে চোখ তুলে তাকায় সে।সাফা আবার একই কথা উচ্চারণ করে বলে…..
—-“অভ্র ভাইয়া+স্যার এদিকে আসেন।
.
অভ্রর বুক কাঁপে।নিভ্র তাকায় অভ্রর মুখের দিকে।চোখে চোখ পরে দুজনের।এক অদ্ভুত জ্বালা হয় দুজনেরই।অভ্র সাফার কাছে এসে দাঁড়ায়। সাফা নিজের হাতের একগুচ্ছ নীল চুড়ি এগিয়ে দেয় তার দিকে।নিভ্র এবার থমকায়।হাত দুটি বুক থেকে সরিয়ে নেয়।কলিজায় ব্যথার আভিরভাব হয়।নিভ্রর চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলে।তার মনে হচ্ছে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে।নিভ্রর শ্বাস আঁটকে আসে।নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়।গলায় চিৎকারের শব্দরা জমাট বাধে।সাফার পরের কথা শুনার জন্য অপেক্ষায় আছে অভ্র সাথে নিভ্র।সাফা হাসি মুখে এবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে…
—“দেন পরিয়ে দেন”
.
নিভ্রর হাত পা কাপঁছে সাথে অভ্রর ও। এটা কি হচ্ছে। সাফা কি তাহলে অভ্রকে…কথাটা নিজের মনেই আটকা পরে।সাফা এবার চোখ বাঁকায়। বিরক্তি মুখে এনে বলে …….
—“আরে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো??আপনার আম্মুকে চুড়ি গুলো পড়িয়ে দেন।ইংলিশ টিচাররা এমন বোকা হয় আমার জানা আছে।”
.
নিভ্রর কলিজায় শীতলতা দোল খায়।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়েই শব্দ করে হেঁসে উঠে।সবার দৃষ্টি তার দিকে।আজ বহুবহু বছর পরে সবাই নিভ্রকে শব্দ করে হাসতে দেখেছে।সবাই অবাক হয়ে সে হাসি দেখে।রাফা এত সময় চুপ করে সব পর্যবেক্ষণ করেছে।এবার সে উচ্চশব্দে নিজেও হেঁসে উঠে।হেঁসে বলে….
—-“সাফা তুমি মনে হয় ভুল করে নিভ্র ভাইয়ার জমজ ভাইকে তুলে এনেছ।এটা আমাদের নিভ্র ভাইয়া হতে পারে না।কি সব আজগোবি কথা বলছো??এনি কি তোমার সাথে মেলায় যাওয়ার পত্র??
—“আরে আপু সত্যিই উনি গিয়েছে। আচ্ছা উনার জমজ ভাই আছে নাকি??
সাফার সিরিয়েস প্রশ্নের ভাব দেখে রাফা হেঁসে সাফার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল….
—“আরে না।আমি মজা করছিলাম।দেখো ভাইয়ার কেরেক্টারের সাথে মেলা বা শব্দ করে হাসি এগুলো যায় না তবুও হচ্ছে তাই ডাউট হয়েছে এই আর কি।
সাফাও হাসে।নিভ্র অপ্রস্তুত হয়।সবাই তাকে নিয়েই অদ্ভুত অবাকতায় ভুগছে।সাথে সে নিজেও।নিভ্র হাঁটা দেয় সামনের দিকে। নিজের রুমে যাবে সে।সাফা চেঁচিয়ে উঠে বলে….
—“আরে আরে ডাক্তার নিভ্রনীল যান কই??দাঁড়ান আপনিও আপনার মাকে চুড়ি পড়িয়ে দেয়।
.
সাফার কথায় সম্পূর্ণ বাড়ি নিস্তব্ধতায় ছেঁয়ে যায়।খুশিতে রমরম করা পরিবেশের বদল ঘটে।ইফতেখার চকিতেই তাকায় সাফার দিকে।তার বুক কেঁপেকেঁপে উঠে।নিভ্র থমকায়।তার মনে মায়ের জন্য জমানো ভালোবাসারা এক সাথে হানা দেয়।পিছনে ঘুরতে ইচ্ছে হয় খুব। তার মনে পরে মায়ের হাতে লাল চুড়ি মারাত্মক লাগে।ছোটবেলায় একবার কিনেছিলো।কিন্তু মা তখন সস্তা ভেবে আর পড়ে নি।তখন খুব মন খারাপ হয়েছে তার।নিভ্র ঘুড়ে তাকায়।মুখে তাছিল্যের ভাব এনে বলে…..
—-“উনি কি সস্তা কাঁচের চুড়ি পড়বে নাকি??এগুলো উনি পরেনা সাফা।চুড়ির দাম মাত্র ৫৫টাকা।উনি মাসহুর বিজন্যাস মেনের ওয়াইফ সাথে আবার নাম করা সংবাদিকা ছিলেন। উনি তো পাচঁ লক্ষটাকার চুড়ি পড়তে পছন্দ করে।সবার তোমার মত ক্ষুদ্র জিনিসে আগ্রহ থাকে না।”
সাফা যেনো বিষম খেলো।ভয়ঙ্কর চাহনি নিয়ে তাকায় তাদের মা ছেলের দিকে।এতটা দূরত্ব কেনো তাদের মাঝে।সাফা মিলাতে পাড়ছেনা। এত ভালো মিশুক আর অমাইক একজন ভালো মাকে নিভ্র কিভাবে এতগুলো কথা শুনাতে পারে।সাফার রাগ হয়।রেগে বলল…..
—-“আম্মুকে এভাবে আপনি বলতে পারেনা।উনি আপনার মা।শত হোক।মা মাই হয়।বুঝলেন।”
ইফতেখারের চোখ বেয়ে পানির ঝরনা নামে।সাফার কষ্ট হয়।সাথে নিভ্ররও। নিভ্র মায়ের দিকে একবার তাকায়।নিজের কথার জন্য নিজেই অনুতপ্ত হয়।আসলেই তো শত হোক মা মাই।একবার জন্ম দেওয়ার পাশা পাশি একবার মেরে ফেলারও অধিকার আছে তার।যদিও অন্যায়।নিভ্র শান্ত গলায় বলে…..
—-“উনি কি পড়তে চায়??”
নিভ্রর এমন কথায় সবাই চমকায়।সাখাওত ছেলের দিকে হা করে তাকায়।মাহবুব সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।সবার চোখে মুখে বিস্ময়।ইফতেখার নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পাড়ছেনা। তার যে এখন হ্যাঁ বলা উচিত তাও তিনি ভুলে গেছেন।মোহনা একগাল হেঁসে ইফতেখারকে ধাক্কা দেয়।ইফতেখারের হুশ ফিড়ে।কান্নায় আটকে আসা গলা ছেড়ে বলে……
—-“হ্যাঁ বাবা আমি পড়তে চাই এই মহা মুল্যবান চুড়ি।”
সাফার খুশিতে লাফালফি ঝাঁপাঝাঁপি করতে ইচ্ছে করছে।ইশশশ্ মা ছেলের কি আবেগ।নিভ্র এগিয়ে আসে কয়েক কদম।তারপর ঝুড়ি থেকে নিজেই পছন্দ করে লাল চুড়ি নেয়।ইফতেখারের হাতের কাছে এসেই নিভ্র থামে।তার কেমন যেনো লাগছে।মন বলছে একবার মাকে জড়িয়ে নিতে।কিন্তু তাও পারছেনা। ইফতেখার ছলছল চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়।রাফা সহ বাড়ির সবার চোখে পানি।রহমত গামছায় চোখ মুছে।অভ্র অশ্রু সিক্ত চোখে নিজের মায়ের হাত ধরে।নিভ্রর হাত কাঁপে।কাপাঁ হাত এগিয়ে দিয়ে মায়ের ঠান্ডা হয়ে আসা হাত ধরে।নিভ্র একটু থামে।ভাবে হাত এত ঠান্ডা কেনো।পরেই বুঝতে পারে টেনশনেই এমনটা হচ্ছে। রাফা ফোনবের করে কিছু ছবি তোলে।নিভ্র লাল লাল চুড়ি গুলো মায়ের হাতে পরিয়ে দেয়।সাথে অভ্রও।নিভ্র একবার মায়ের দিকে তাকায়।মায়ের গাল বেয়ে পানি পরছে।নিভ্রর পানি চোখের কোটারেই আটকে আছে।সে কখনোই কারো সামনে কাদঁতে পারেনা।নিভ্র মায়ের চোখের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারেনা।গট গট করে পা ফেলে নিজের গন্তব্যের উদ্যেশে চলে যায়।বাড়ির অন্দরমহলে খুশির রমরম অবস্থা। ইফতেখার সাফাকে জড়িয়ে ধরে।সাফা অবাক হয়।ইফতেখার বলে……
—-“তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তোমার এই উপহারের কথা জীবনের শেষ দিনেও মনে থাকবে।
সাফা না বুঝেই মুচকি হাসে।তবে মনে তার অনেক প্রশ্ন।
.
.
সাফা বালিশ আর কোলবালিশ কাঁথা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গরমের দিনেও সে কাঁথা নিয়ে ঘুমায়।ইফতেখারের বেশ কষ্ট হয়েছে সাফার জন্য কাঁথা খুঁজতে। সাফা দাঁড়িয়ে আছে রাফার রুমের সামনে। সাফার আজ অনেক কিছু জানার আছে।তাই এখানে ঘুমাবে বলে ঠিক করেছে।সে জানে না রাফা তাকে বলবে কি না।তবু এসেছে।সাফা দরজায় কড়া নাড়ে।হালকা একবার বারি দিতেই ভিতর থেকে আওয়াজ আসে…..
—-“এসে যাও মিষ্টির দোকান।”
সাফা আকর্ষীক ভাবে ঝাটকা খায়।সাথে ভয়ও পায়।মনে মনে ভাবে রাফা আপু কি ভূত??নিজেকে সামলিয়ে সাফা ভিতরে ডুকে। রাফার অবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছে সে যানতো সাফা আসবে।তাই আগে থেকেই বিছানার একপাশ সাফার জন্য রেখে দিয়েছে।সাফাকে দেখে মিষ্টি করে হেঁসে বলে……
—-“এসে পরো মিষ্টি দোকান।তোমার অপেক্ষায় ছিলাম
সাফা ভয়মাখানো কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে……
—-“আপনি কিভাবে যানতেন আমি আসবো??”
—“নিচে যা হাঙ্গামা হয়েছে এতে তোমার পিচ্চি মাথা কিছুই বুঝেনি আবার অনেক কিছু বুঝেছে।তাই আমি জানি তুমি জানতে আসবে।বসে পরো।
—“আপনি আমাকে সব বলবেন??”
—“অবশ্যই মাই মিষ্টির দোকান।
.
সাফা খুশি হয়।রাফার পাশে সে বসে।রুমে একবার চোখবুলিয়ে মনে মনে বলে…এখানেও টিভি সোফা সব আছে প্রতিটা রুম মনে হয় একটা বাড়ি।রাফা গলা ছেড়ে বলতে শুরু করে…….
—-“নিভ্র ভাইয়া আর অভ্র ভাইয়া ছয়মাসের বড়ছোট। তবে তাদের মাঝে সমবয়সী ভাবটাই বেশি।তারপরই আমি তাদের পাচঁ বছরের ছোট।আর আমার তিন বছরের ছোট নুহা।
নুহা নামটা শুনেই সাফা প্রশ্ন করে….
—“এই নুহাটা কে আপু??”
—“বলছি তো।নুহা নিভ্র ভাইয়ার ছোট বোন।মনে আমাদের সবার ছোট বোন।কাকি মা আত্ননীর্ভরশীল একজন নারী।তার কাছে আগে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো নিজের ক্যারিয়ার।উনি খুব নাম করা সংবাদিক ছিলেন।চাচ্চু সব সময় তাকে সাপোর্ট করতেন তাই তিনিও উড়ে বেড়িয়েছে।নানা দেশে তাকে কাজের জন্য যেতে হতো।ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে সে সংসার জীবন থেকে সরে যায়।সে ভুলেই যায় তার সংসার আছে। পৃথিবীতে নারী একদিকে পারদর্শী হলে হয় না।তাকে দুইদিক ম্যানেজ করে চলতে হয়।এটা সে ভুলে গেছে।তারপর নিভ্র ভাইয়ার জন্ম হয়।কিন্তু উনার মা হওয়ার দায়িত্বের চেয়ে কাজ বড় হয়ে যায়।নিভ্র ভাইয়ার জন্য অনেক কাজের লোক রাখা হয়।রহমত চাচা আছেনা উনিই নিভ্র ভাইয়াকে ছোট থেকে দেখাশুনা করেছে।মাকে কাছে না পেয়ে নিভ্র ভাইয়া একটু যিদ্দি হয়ে যায়।রাগী বদমেজাজি তার উপর দুষ্টু। কাকিমা তার সাথে তেমন কথাও বলতো না।মাঝে মাঝে সাপ্তাহে একবার দুবার কথা হতো।ভাইয়া মা ভক্ত ছিলো।বাচ্চারা মাকে ভালোবাসে স্বাভাবিক কিন্তু ছেলেরা একটু বেশিই হয়।মেয়েরা হয় বাবা ভক্ত। নিভ্র ভাইয়া মায়ের জন্য নিজের জমানো টাকা থেকে অনেক কিছুই নিয়ে আসতো।তা দেখে কাকিমা বকা দিতো।বলতো সে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই সব ফুটপাতের জিনিস কেনো কিনতে যায়।আরো অনেক কিছু।ভাইয়া বেশিরভাগ সময় মা আর দাদুর সাথেই থাকতো।তারপর হয় নুহা।নুহার জন্মের পরেই নিভ্র ভাইয়া অনেক দায়িত্ববান ভাই হয়ে উঠে।তাকে নিজে খাওয়াতে চাইতো।নিজে কোলে নিয়ে ঘুড়তো।নিজের কাছে রাখতো।কাকিমার কাজের চাপ বাড়ে।দুই বাচ্চা নিয়েও সে হিবিজিবি অবস্থায় পরে।তারপর নিভ্র ভাইয়াকে হোস্টেলে দিয়ে দিবে বলে ঠিক করে। কিন্তু ভাইয়া কান্না করে, জিদ করে, রাগ দেখিয়ে আর যায় না।তাকে সবাই খুবই ভালোবাসে এমন কি অভ্র ভাইয়াও তাকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসে।তাই সেবারের মত তার যাওয়া থামানো হলেও একটা ঘটনার কারনে তাকে আবার হোস্টেলে দিয়ে আসা হয়।ভাইয়া একটা ছেলের সাথে নাকি মারামারি করে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।যদিও এটার আসল কাহিনী যানা নেই।তবুও এর কারনে কাকিমা রাগ করে তাকে হোস্টেলে দিয়ে আসে।তার কিছুদিন পরেই নুহা অসুস্থ হয়ে পরে।কাকিমা এর মাঝেই তাকে রেখে একটা কাজের জন্য দুইদিন সিলেট থাকে।কিন্তু তিনি যানতেন না এই দুইদিন তার জীবনের জঘন্য অধ্যায়ের সূচনা পৃষ্ঠা ছিলো।নুহার নিউমোনিয়া হয় তাই অতি ঠান্ডায় সে মারা যায়।কাকিমা এর পরে ভেঙে পরে।মেয়েকে হারিয়ে পাগল পাগল অবস্থা। চাকরি ছেড়ে দেয়।রুম বন্ধি করে রাখে নিজেকে।তারপর ভাইয়াকে নিয়ে আসে।ভাইয়া বোনকে না পেয়ে অতি শোকে পাথর হয়ে যায়।মায়ের প্রতি অভিমান গুলো জন্ম নেয় ঘৃনাতে।আর নিজেকে সামান্য নিভ্রনীল থেকে সে ডাক্তার নিভ্রনীল তৈরি করে।আর বাড়ি আসেনি ভাইয়া।সব রকম ভাবে নিজেকে ব্যস্ত করে তুলে।মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।নিজেকে কাজে, পড়ার মাঝে ডুবিয়ে রাখে।মডেলিংয়ে ছোটবেলায়ই ডুকে সে।শুধু মাত্র নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য।শূন্যে জায়গা গুলো সে কাজের মাঝেই পুরোন করতে চাইতো।তাই একটা মিনিট সময়ও তিনি অবসরে কাটাতেন না।কম কথা বলা, কাজ বেশি করাই তার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাকিমা অনেক শাস্তি পেয়েছে জীবনে।নিজের কিছু ভুল তাকে অনেক ভাবে কষ্টে রেখেছে।মেয়েকে হারিয়ে ছেলের থেকে দূরে থেকে উনি মানুষিক ভাবেও ভেঙে পরে।তবে নিভ্র ভাইয়া নিজের লেখাপড়া শেষ করে বাড়ি ফিড়লে তিনি ক্ষমা চায় ছেলের কাছে।কিন্তু ভাইয়া নিজেকে কঠিন মানুষ তৈরি করে ফেলেছে তাই মাকে ক্ষমা করতে পারেনি।আজই অনেক বছর পরে তিনি নিজের মায়ের হাত ধরেছে।
.
.
কথাগুলো বলে রাফা দীর্ঘশ্বাস নেয়।সাথে গড়িয়ে পরে কয়েক ফোটা পানি।সাফার চোখের সাগর শুকিয়ে যাবে যাবে ভাব।জামা ভিঁজে একাকার। রাফাও কেঁদেছে। সাফা বুঝতে পাছেনা সে কার জন্যে কাঁদছে নিভ্রর জন্যে, নাকি তার মায়ের জন্য,নাকি নুহা নামের সেই বাচ্চাটার জন্য।সবাই পরিস্থিতির শিকার।
.
________________
নিভ্রর সারা রাত নির্ঘুম কেটেঁছে। সারা রাত সে শুধু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকেছে।হাতে সাফার খামছির দাগ বসে গেছে।তার এই এত বছরের জীবনে এটি কোনো মেয়ের দেওয়া প্রথম খামছি।নিভ্র এই সারা রাত শুধু হাতই দেখেনি।একটা ছবিও এঁকেছে।মনের অজানতেই সেই ছবি সাফাতে রূপ নিয়েছে।সেই দিনের নীল জামদানি আর লাল জবার ছবি।টোল পড়া গাল।সেই ঘাড়, কাধ,ঠোঁট,চোখ কপাল,চুল সেই নাক সেই হাসি সবই তাকে ঘায়েল করেছে।সেই ক্ষতবিক্ষত হৃদয় দিয়েই এঁকেছে এই ছবি।নিভ্র তাকিয়ে আছে ছবির দিকে।দৃষ্টি তার নড়চড় হচ্ছে না।এক হাতে তার সেই রুমালটা। যেটা সে সাফার ব্যাগ থেকে নিয়েছে।সে চুরি করেছে এটা তার মনেই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে একমুঠ আবেগ নিয়ে বসে আছে।পাশে তার একঝাঁক জোনাকি।সামনেই সেই জোনাকির আলো।……..
.
.